শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ | ১৫ চৈত্র ১৪৩০
Dhaka Prokash

দারসবাড়ি মসজিদ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ

দারসবাড়ি মসজিদ। পুব দেয়ালের সামনে পিলারগুলির ভগ্নাংশ চোখে পড়ে

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার সবচেয়ে দর্শনীয় পুরাকীর্তিগুলোর একটি হলো দারসবাড়ি মসজিদ। শিবগঞ্জ উপজেলায় সোনামসজিদ বর্ডার পোস্টের প্রায় দেড় কিলোমিটার আগে মহাসড়কের পশ্চিম পাশে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত ঘেঁষে মসজিদটির অবস্থান।

বাংলাদেশের চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা এবং পশ্চিমবঙ্গের মালদহ জেলার অধিকাংশ এলাকাজুড়ে এই অঞ্চলকে প্রাচীনকালে বলা হতো গৌড়। মসজিদটির নির্মাণকালে গৌড় এলাকার তৃতীয় এবং বাংলাদেশ অঞ্চলের বৃহত্তম মসজিদ ছিল এই দারসবাড়ি মসজিদ। মসজিদটির শিলালিপিতে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী এটি সুলতানি আমলে সুলতান শামসুদ্দীন ইউসুফ শাহ-এর নির্দেশে ওয়ালী মোহাম্মদ বিন আলী নামে এক ব্যক্তি ১৪৭৯ সালে নির্মাণ করেন। সুলতান ইউসুফ শাহ প্রায় কাছাকাছি সময়েই মালদহে সাকমোহন মসজিদ, তাঁতিপাড়া মসজিদ ও কদমরসুল মসজিদ নির্মাণ করিয়েছিলেন। শিলালিপিটি বর্তমানে কোলকাতার ভারতীয় জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে।

মসজিদের পশ্চিমের দেয়াল

কে ছিলেন সুলতান শামসুদ্দীন ইউসুফ শাহ
১৩৫২ থেকে ১৫৭৬ সাল, এই ২২৪ বছরের সময়কে বলা হয় বেঙ্গল সালতানাত, বা সহজ ভাষায় সুলতানি আমল। এই সময়ে পুরো শাসন ব্যবস্থা হয়েছে বঙ্গকে ঘিরেই। বেশ কয়েক বছর রাজধানীও ছিল সোনারগাঁয়। এই আমলেই দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে ফার্সির পাশাপাশি বাংলাকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। আদালতে আইনি ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। সম্পদে ও অর্থনীতিতে বঙ্গের গুরুত্ব বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত হয়। রপ্তানি পণ্য হিসেবে বাংলার ধান ছড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন দেশে। ব্যবসার জন্য একটি সম্ভাবনায় দেশ হিসেবে বঙ্গের স্বীকৃতি দেয় ইউরোপের দেশগুলি। এই আমলেই “টাকা” নামে প্রথমবার মুদ্রা ছাপানো হয়। ১৫০০ সালে বঙ্গের রাজধানী যখন গৌড়ে নিয়ে যাওয়া হয়, জনসংখ্যার হিসেবে গৌড় ছিল পৃথিবীর পঞ্চম বৃহত্তম নগরী। চট্টগ্রামকে একটি গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক বন্দর হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছিল এই আমলেই।

সুলতানরা ছিলেন সুন্নি মুসলিম। তারাই এই অঞ্চলে প্রবর্তন করেন শরিয়া আইন। গোটা বঙ্গ জুড়ে অসংখ্য মসজিদ নির্মাণ হয়েছে এই সময়ে। ইসলামি স্থাপত্যকে এই অঞ্চলে সম্প্রসারণের জন্য মসজিদগুলোতে আনা হয়েছিল শিল্পের চর্চা।

এই আমলেই একজন সুলতান ছিলেন শামসুদ্দীন ইউসুফ শাহ। ১৪৭৪ সালে তার পিতা রুকুনুদ্দিন বরবক শাহের মৃত্যুর পর তিনি সুলতান হিসেবে দায়িত্বে আসেন। মাত্র সাত বছর পর ১৪৮১ সালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তার আমলেই নির্মিত হয়েছিল দারসবাড়ি মসজিদ। শুধু তাই নয়, তিনি এই মসজিদে অন্তত একবার এসে নামাজ আদায় করেছেন, তারও প্রমাণ আছে এই মসজিদে।

ছাদ ভেঙে পড়লেও কতটা সুঠাম কাঠামো ছিল বুঝাই যায়

মসজিদের বিবরণ
প্রায় সম্পূর্ণ ইটে গড়া দারসবাড়ি মসজিদটি দৈর্ঘ্যে প্রায় ১১২ ফুট এবং প্রস্থে প্রায় ৬৮ ফুট হলে। ভেতরের দৈর্ঘ্যই প্রায় ১০০ ফুট এবং প্রস্থ প্রায় ৩৪ ফুট। মসজিদটির দেয়াল প্রায় ৬ ফুট চওড়া। পুবপাশে প্রবেশের মুখেই রয়েছে উত্তর-দক্ষিণে লম্বা ১০ ফুট প্রশস্থ একটি বারান্দা। পাথরে নির্মিত পিলার গেঁড়ে তার চারপাশে ইট গেঁথে মসজিদটির স্তম্ভগুলি নির্মাণ করা হয়েছিল। চারকোণে চওড়া ইঠের পিলার বানিয়ে মসজিদের অবকাঠামো দৃঢ় করা হয়েছিল। ৭টি খিলান আকৃতির উন্মুক্ত দরজা দিয়ে বারান্দায় প্রবেশ করে তারপর মসজিদে প্রবেশ করতে হতো। উত্তর দিকে দুইটি ও দক্ষিণে তিনটি দরজা দিয়েও প্রবেশ করা যেত।

নামাজের কক্ষটি ছিল তিনভাগে বিভক্ত। মাঝখানের মূল কক্ষটি বড়, আর দুই পাশে ছোট দুটি অংশ। উত্তরের অংশে পাথরের স্ল্যাব বসিয়ে দোতলায় একটি কক্ষ বানানো ছিল, যেটির জন্য ছিল একটি ভিন্ন প্রবেশ পথ ও সিঁড়ি। এর দরজার সামনে থাকত রক্ষী। সম্ভ্রান্ত কোনো অতিথি বিভিন্ন ওয়াক্তের জামাতের সময় ব্যতিত অন্য কোনো সময়ে এই মসজিদে কখনো একা নামাজ পড়তে এলে তার জন্য এই অংশটি খুলে দেওয়া হতো। এজন্য এই অংশের নাম ছিল মসজিদের রাজকীয় গ্যালারি। তবে জুম্মার নামাজের সময় এটি হয়ে যেত নারীদের নামাজ পড়ার স্থান।

মসজিদটির ছাদটি নির্মাণ করা হয়েছিল একটু ভিন্ন ধরনের ডিজাইনে। মূল কক্ষের মাঝখানে ছিল একটি বিশাল চৌচালা গম্বুজ। তার সামনে ও পেছনে ছিল একটি করে ছোট চৌচালা গম্বুজ। এই তিনটির দুই পাশে ছিল এক সারিতে তিনটি করে ছয়টি গোলাকার মাঝারি আকারের গম্বুজ। উত্তর ও দক্ষিণের ছোট কক্ষগুলির উপর ছিল ছয়টি করে ছোট গোলাকার গম্বুজ। বারান্দার উপর মাঝখানে একটি চৌচালা এবং এর দুই পাশে তিনটি করে ছয়টি গোলাকার ছোট গম্বুজ। অর্থাৎ, মোট ছিল চারটি চৌচালা এবং ২৪টি গোলাকার গম্বুজ। দারসবাড়ি মসজিদের গম্বুজের এই নকশাটিকেই গৌড়ীয় নকশার পথিকৃৎ হিসেবে বিবেচনা করা হতো। এই আদলে ভারতবর্ষব্যাপী আরও বেশ কিছু মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছিল।

ছাদ নির্মাণে ইটের কারুকাজের ডিটেইল

ভেতরে পশ্চিম দেয়ালে রয়েছে মোট ১১টি মেহরাব, যার দুটি রয়েছে রাজকীয় গ্যালারিতে। ভেতরের দেয়ালে কোনো প্লাস্টারের কাজ করা হয়নি কখনই। পুরো দেয়ালে ছিল শুধু ইটের কারুকাজ। আর মেহরাবগুলি সাজানো হয়েছিল অবিশ্বাস্য সুন্দর এবং নিখুঁত টেরাকোটায়।

মসজিদটিতে যাওয়ার সময় পূর্ব ও দক্ষিণের দেয়াল দুটিই চোখে পড়ে। পূর্বের দেয়ালে খিলান ছাড়া আর তেমন কোনো চিহ্ন নেই। দক্ষিণের দেয়ালে কিছু টেরাকোটা এবং বেশ কিছু খোদাই করা ডিজাইন চোখে পড়ে। উত্তরের দেয়ালেও প্রায় একই। পশ্চিমের দেয়ালটি একেবারেই ভিন্ন। মাঝখানে মূল মেহরাবের অংশটি কিছুটা বের করা। বাকি পুরো দেয়ালের ইটে খোদাই করে নকশা করা। নির্দিষ্ট দূরত্ব পরপর একই ডিজাইনের পুনরাবৃত্তি করা হয়েছে। এপাশে সাতবার, ওপাশে সাতবার। দীর্ঘ সময়, বৈরি আবহাওয়া ও নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে কিছু কিছু খোদাই করা অংশ ক্ষয়ে গেছে। কিন্তু তারপরও অপূর্ব সুন্দর লাগে দেখতে।

মসজিদের মূল কেন্দ্রীয় মেহরাব, ছাদের উচ্চতা বোঝাই যায়

মসজিদের পুবপাশে বড় একটি পুকুর। তার পরেই হলো দারসবাড়ি মাদরাসা। ১৫০৪ সালে আলাউদ্দিন হোসেন শাহ এটি নির্মাণ করেছিলেন। কুমিল্লার শালবন বিহারের আদলে নির্মিত চতুর্ভূজাকার ভবনটির একেক দিকের দৈর্ঘ্য ১৮২ ফুট। রুমগুলো সব চারিদিকে। এতে রয়েছে ১০ ফুট X ১০ ফুট মাপের ৪০টি রুম, চার কোণে চারটি ছোট ক্লাসরুম ও চত্ত্বরের মাঝখানে একটি বড় ক্লাসরুম।

গৌড়ের সমসাময়িক চারটি মসজিদের মধ্যে কেবল এখানেই একটি মাদরাসা স্থাপন করা হয়েছিল।

টেরাকোটার বিশেষত্ব
কত সহস্র টেরাকোটা টালি যে ব্যবহার করা হয়েছিল মসজিদটির ভেতরে, তার হিসাব নেই। বেশ কিছু জায়গায় ভেঙে গেলেও এখনো যেটুকু টিকে আছে, দেখে মুগ্ধ হতেই হবে। জ্যামিতিক আকার, ফুল ও লতার ডিজাইনে নির্মাণ করা হয়েছিল এই টালিগুলো। একেকটি একেক রকম, পাশাপাশি বসিয়ে পুরো নকশাটি সৃষ্টি করা। দূর থেকে দেখলে সবগুলি মেহরাবে একইরকম মনে হলেও কাছে গিয়ে দেখলে বুঝা যায় একেকটি মেহরাবের ডিজাইন ডিটেইলে সামান্য কিছু পার্থক্য রাখা হয়েছিল। এতটা ডেলিকেট ও নিখুঁত টেরাকোটা ডিজাইন কোনো মসজিদের ভেতর খুব কমই দেখা যায়নি। শুধু যে দেয়ালের উপর সাঁটা, তাই নয়। ভাবতে অবাক লাগে, সাড়ে পাঁচশত বছর আগে এতটা পাতলা পুরুত্বের ঝুলন্ত দেয়ালইবা কীভাবে নির্মাণ করা হয়েছিল, আর তাতে টেরাকোটা টালিই বা কীভাবে গাঁথা হয়েছিল? কয়েকটি মেহরাবের উপর সেই ঝুলন্ত দেয়াল এখনো টিকে আছে!

দক্ষিণ দরজা থেকে ভেতরের দৃশ্য। খিলানের পর খিলান। উত্তরে দ্বিতল রাজকীয় গ্যালারি

টেরাকোটার ডিজাইন ডিটেইল দেখলেই বুঝা যায় এগুলি কোনো ছাঁচে তৈরি করা হয়নি। হাতের সুক্ষ্ম কাজে এগুলি নির্মাণ করা হয়েছিল। দূর থেকে দেখে যেটিকে একটি বৃত্তাকার ডিজাইন বলে মনে হয়, কাছ থেকে দেখলেই দেখা যায় একেকটি বৃত্ত ৬-৮টি টালি পাশাপাশি বসিয়ে নির্মাণ করা হয়েছিল।

মসজিদের একটি মেহরাবের উপর একটি অংশ দেখে বুঝা যায় দেয়ালের ইট কেটে দুটি টালি পরে বসানো হয়েছে। মূল ডিজাইনে ছিল একটি ফুলদানি। এর উপর পরে বসানো হয়েছে একটি পতাকার স্ট্যান্ড এবং তার ডান পাশে একটি লম্বা ত্রিভূজাকার পতাকা। কেবলমাত্র সুলতান যেসব মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়তেন, শুধু সেই মসজিদগুলোতে তার উপস্থিতির প্রমাণস্বরূপ তার পতাকা সজ্জিত করা হতো। এই দুটি টালি থেকেই নিশ্চিত হওয়া যায়, তৎকালীন সুলতান শামসুদ্দীন ইউসুফ শাহ দারসবাড়ি মসজিদে এসেছিলেন এবং নামাজ আদায় করেছিলেন।

মসজিদের নামকরণ
কোনো কোনো গবেষকের মতে মসজিদটি স্থাপনের সময় স্থানীয় এলাকার নামানুসারে এর নাম ছিল ওমরপুর মসজিদ। পরে মাদরাসা স্থাপনের পর এটিও দারসবাড়ি নাম ধারণ করে। নামটির পেছনে যুক্তিও আছে বলে ধারণাটি ফেলে দেওয়া কঠিন।

সুলতানি আমলে দাপ্তরিক ভাষা ছিল ফার্সি। এই ফার্সি ভাষায় “দার্স” শব্দটির অর্থ “পড়া”। তাই পড়ালেখার জন্য বিশাল এই আবাসিক প্রতিষ্ঠান (মাদরাসা) প্রথম থেকেই “দার্সবাড়ি” নামেই পরিচিত ছিল। এর ছাত্রেরা এই মসজিদেই ওয়াক্তের নামাজ আদায় করত বলে মসজিদটির “দার্সবাড়ি মসজিদ” নাম হয়ে যায়। দার্সবাড়ি থেকে দারসবাড়ি হতে সময় লাগেনি!

এই এলাকাটিও এখন দারসবাড়ি নামে পরিচিত। এখানে মানুষ দারসবাড়ি মসজিদ ও দারসবাড়ি মাদরাসা নামেই এগুলোকে চিনে।

সুলতান শামসুদ্দিন ইলিয়াস শাহ-এর পতাকার টালি

মসজিদটির ভাঙন
কোনো একটি ভূমিকম্পে দারসবাড়ি মসজিদ ও মাদরাসা, দুটিই মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মসজিদের গোটা ছাদ ভেঙে গুঁড়িয়ে যায়, কিছু দেয়াল ও সামনের বারান্দা ভেঙে যায়। মাদ্রাসাটির ছাদ ও দেয়ালের বিপুল ক্ষতি হয়। ভাঙনের পরিমাণ এতটাই মারাত্মক ছিল যে এর কোনোটিকেই আর পুনর্নির্মাণ করে ব্যবহার করার অবস্থায় থাকে না। তাই এগুলিকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করতে হয়। মসজিদ ও মাদরাসা একত্রে গুঁড়িয়ে যাওয়া এবং পরিত্যক্ত ঘোষণার ফলে স্থানীয় মানুষ “সৃষ্টিকর্তার গজব নামতে পারে” এই ভয়ে দ্রুত এলাকা ছেড়ে অন্যত্র চলে যায়। পুরো এলাকাটাই জনশূন্য হয়ে পড়ে। কয়েক বছরের মধ্যে এলাকাটি গাছ-গাছালিতে ভরে যায়। এতে ধুলা-বালি আটকে পড়ে মাদ্রাসার অবশিষ্ট অংশের অনেকখানিই মাটির নিচে চাপা পড়ে যায়।

স্বাভাবিকভাবেই ধরে নেওয়া হয়, এটি ছিল ১৮৯৭ সালের ভূমিকম্পের ফল। কিন্তু একটি ঘটনার কারণে এই সময়কাল প্রশ্নবিদ্ধ।

মসজিদটির যে শিলালিপিটি কলকাতা জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে, সেটি কাছাকাছি এলাকায় একটি জঙ্গল থেকে উদ্ধার করেছিলেন মুন্সী এলাহী বখশ নামে এক ব্যক্তি। কিন্তু এটি কলকাতা জাদুঘরে জমা দেওয়া হয়েছিল ১৮৭৬ সালে। এই লিপিটির সংরক্ষণ নম্বর ৩১৩৯। বিশাল শিলালিপিটি দৈর্ঘ্যে ১১ ফুট ৩ ইঞ্চি এবং প্রস্থে ২ ফুট ১ ইঞ্চি। উদ্ধারের সময়ই এটি দুই ভাগে বিভক্ত ছিল। তাহলে তো আর মসজিদের ভাঙন ১৮৯৭ সালের ভূমিকম্পের ফলাফল হতে পারে না।

একটি মেহরাব, টেরাকোটা নকশা খসে পড়ছে। শিলালিপি চুরি হয়ে গেছে

১৮৯৭ সালের ১২ জুন আসামে রিকটার স্কেলে ৮.৩ মাত্রার যে ভূমিকম্পটি হয়েছিল, তাতে বাংলাদেশেরও অধিকাংশ নির্মিত ভবনের ব্যাপক ক্ষতি হয়। তবে এর আগে ১৮৫০ সালের ১৫ আগস্ট তিব্বতে ভূমিকম্প হয়েছিল ৮.৬ মাত্রার, যা আসামে ও বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের কিছু জেলাতে ব্যাপকভাবে অনুভূত হয়। এই তীব্র ভূমিকম্পেই ব্রহ্মপুত্র নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়ে গেছিল। তাহলে হতে পারে, এই ১৮৫০ এর ভূমিকম্পেই ভেঙে পড়েছিল দারসবাড়ি মসজিদ ও মাদরাসা।

মসজিদ ও মাদ্রাসার সংস্কার
১৯২০-২১ এর কোনো এক সময়ে বানভাসি বেশ কিছু মানুষের পুনর্বাসনের উদ্দেশ্যে এই এলাকার জঙ্গল পরিষ্কার করার সময় খুঁজে পাওয়া যায় মসজিদ ও মাদ্রাসার ভগ্ন অংশ। সরকারের প্রচেষ্টায় ১৯২৪ সালে একটি বড় পদক্ষেপ নেওয়া হয় সংস্কারের। মসজিদের পশ্চিমের দেয়ালের যে অংশগুলি ভেঙে গেছিল, দাঁড়িয়ে থাকা অংশের সঙ্গে মিল রেখে তা নিখুঁতভাবে সংস্কার করা হয়। উত্তর ও দক্ষিণের দেয়ালেও কিছু সংস্কার করা হয়। কিন্তু বারান্দা ও ছাদ পুনর্নির্মাণ করা সম্ভব হয়নি।

পাকিস্তান আমলে আইয়ুব খান সরকার আবার বেশ কিছু সংস্কার কাজ করে। এর প্রধান কাজ ছিল সমস্ত দেয়াল থেকে শ্যাঁওলা তুলে পরিষ্কার করা। কিন্তু ছাদ আবারও নির্মাণ করা সম্ভব হয়নি। তবে মাদরাসাটিকে একটি হেরিটেজ দর্শনীয় স্থান হিসেবে সংস্কার করা হয়।

বাংলাদেশ আমলে রাষ্ট্রপতি এরশাদ এলাকাটি পরিদর্শন করার পর ১৯৯০ সালে এটিকে আবার সংস্কার করার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল। তবে দেয়ালগুলোকে পরিষ্কার করা ছাড়া আর তেমন কিছু করা যায়নি।

ছাদ ছাড়া একটি মসজিদ তো আর ব্যবহার করা যায় না। এক শতাব্দীর রোদবৃষ্টিতে মসজিদের মেঝেতে গজিয়েছে সুন্দর ঘাস। চারদিকে পুরোনো লাল ইটের দেয়ালের মাঝে মনে হয় যেন একটি চমৎকার মসৃণ সবুজ গালিচা। ব্যবহার না হলেও দেখতে ভারি চমৎকার লাগে।

মেহরাবের সম্মুখভাগে পাতলা ঝুলন্ত দেয়ালে টেরাকোটা নকশার ডিটেইল

এলাকায় জ্বিনের উপাখ্যান
দারসবাড়ি এলাকাটি বাংলাদেশের আর দশটি গ্রামীণ এলাকার মতো নয়। হয়তো বর্ডারের খুব কাছাকাছি বলে, অথবা একটি জনশ্রুত কাল্পনিক ভয়ে, এলাকাটিতে খুব বেশি মানুষ বাস করে না। “আল্লাহর গজব নামবে” এই ভয়ে যারা পালিয়েছিল, তারা আর কখনই ফেরেনি। বানভাসী যাদের পুনর্বাসন করা হয়েছিল তাদেরও অনেকেই পালিয়েছে জ্বিনের ভয়ে। তাদের দৃঢ় বিশ্বাস, মসজিদের ছাদ জ্বিনে নিয়ে গেছে।

১৯২৪ সালে যখন প্রথম মসজিদটির সংস্কার কাজ করা হয়, প্রথম কাজ ছিল ধসে পড়া ইট ভেতর থেকে সরানো। পুরো ছাদের লক্ষ লক্ষ ইট বাইরে সরিয়ে পরিষ্কার করার পর স্তুপাকারে সাজিয়ে রাখা হয়, পুনর্ব্যবহারের জন্য। কিন্তু ছাদটি যেহেতু মেরামত করা সম্ভব হয়নি, ইটগুলি সেভাবেই স্তুপে স্তুপে থেকে যায় মসজিদটির এক পাশে। ১৯৬০ এর দশকে আবার সংস্কারের সময় দেখা যায় ইটের স্তুপে বাসা বেঁধেছে বিষধর সাপ, তাই সেগুলি সরিয়ে পরিষ্কার করে অন্য একটি পাশে আবার স্তুপ করে রাখা হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ছাদটি পুনঃনির্মাণ করা হয়নি। ১৯৯০ সালে একই কাজটি আবার করা হয়।

১৯৯১ সালে স্থানীয় কিছু ক্ষমতাবান ব্যক্তির নজরে আসে ফেলে রাখা লক্ষ লক্ষ ছোট ইট। কিন্তু এমনি এমনিই তো আর নিয়ে যাওয়া যায় না। তারা এলাকায় প্রচার করা শুরু করলেন যে এলাকাটিতে জ্বিনের আছর আছে বলে ব্রিটিশ, পাকিস্তান বা বাংলাদেশ, কোনো আমলেই মসজিদটির ছাদ পুণঃনির্মাণ সম্ভব হয়নি। এই ইটগুলি এখন জ্বিনে নিয়ে যাবে। এলাকার মানুষকে সাবধানে চলাফেরা করতে হবে।

ডিটেইল দেখলেই বুঝা যায় নকশাগুলো ছাঁচে নয়, হাতের সুক্ষ্ম কাজে নির্মাণ করা

এলাকাটিতে যেহেতু বিদ্যুতের সংযোগ নেই, রাস্তা থেকেও বেশ ভেতরে, সন্ধ্যার পরই নেমে আসত বেশ অন্ধকার। এক অমাবশ্যার রাতে শুরু হলো অ্যাকশন। মশাল হাতে কিছু মানুষকে পাঠিয়ে দেওয়া হলো বাজি-পটকা নিয়ে। তারা গভীর রাতে মসজিদের সামনে ফোটাতে থাকলো পটকা। মুখে কেরোসিন ভরে ফুঁ দিয়ে ছুটাল আগুনের হল্কা। দূর থেকে আগুনের ছটফটানি দেখেছে কিছু মানুষ। ভয়ে পালিয়ে গেছে ঘরে। পরদিন এলাকায় আলোচনা বসল রাতের জ্বিনের কাণ্ড কারখানা নিয়ে। কিছু মানুষ পালিয়ে গেল। বাকিরা রাতে প্রয়োজন হলেও ঘর থেকে বের হওয়া বন্ধ করে দিল। পরের অমাবশ্যায় আবার অ্যাকশন। বাজি-পটকা ফুটাবার পর কয়েকটি গরুর গাড়ি নিয়ে চুরি হলো ইট। পরদিন লোকে দেখল বেশ কিছু ইট নাই হয়ে গেছে। এভাবে মাস ছয়েকের মধ্যে পুরো ইট খালি হয়ে গেল। এর পরও বেশ কয়েক রাতে ফুটল বাজি-পটকা।

এখন বেড়াতে গেলে দেয়ালে গাঁথা ইট ছাড়া একটি ইটও কোথাও পড়ে থাকতে দেখা যাবে না! দশক দশক পরেও মানুষ বিশ্বাস করে মসজিদের ছাদের সব ইট জ্বিনে নিয়ে গেছে।

মসজিদ থেকে বের হয়ে মহাসড়কে উঠে বর্ডার চেকপোস্টের দিকে আধা কিলোমিটারের মতো গেলে হাতের ডানে পড়বে একটি রাস্তা। এলাকাটির নাম সম্ভবত বালিয়াদিঘী। এই রাস্তায় কয়েকশত গজ এগোলেই রাস্তার দুই ধারে চোখে পড়বে কিছু বস্তিবাড়ি। সবগুলি ছোট ছোট ইটে গড়া। স্থানীয় সরকার স্থানীয় এক কন্ট্রাক্টরকে দিয়ে দরিদ্র মানুষের জন্য কিছু ঘর বানিয়ে দিয়েছে। মসজিদের ছাদের ইট জ্বিনে আসলে বেশি দূরে নিয়ে যায়নি!

কীভাবে যাবেন
চাঁপাইনবাবগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড থেকে অটোরিকশায় যাওয়া যায়। দূরত্ব প্রায় ৩৫ কিলোমিটার। সময় লাগবে ৪৫ মিনিট থেকে ১ ঘণ্টা। আর বর্ডারের জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত বাস পেলে তো কথাই নেই!

তবে দারসবাড়ি মসজিদ ও মাদরাসা দেখার পর একদম কাছেই ১৪৮০ সালে নির্মিত খনিয়াদিঘি মসজিদ (চামচিকা মসজিদ), ১৪০০ শতাব্দীর ধনাইচক মসজিদ, ১৭০০ শতাব্দীর শাহ সুজার তাহখানা কমপ্লেক্স এবং ছোট সোনা মসজিদ দেখে আসতে ভুলবেন না। একদিনে ৮টি হেরিটেজ ভবন + একজন বীরশ্রেষ্ঠর কবর!

ভ্রমণ যখন বা যেখানেই করি না কেন, পরিবেশের পরিচ্ছন্নতার দিকে লক্ষ্য রাখা প্রয়োজন। সবাই যে করে, তা নয়। এই স্থাপনাগুলি দেখলে তা আরও বেশি চোখে পড়ে। আপনার পরবর্তী প্রজন্মের ভ্রমণ পীপাসুদের জন্য হলেও আপনার ব্যবহৃত জিনিস নির্ধারিত জায়গায় ফেলুন বা সঙ্গে করে নিয়ে আসুন।

এসএন

আজকের ইফতারের সময় (ঢাকা)

0

ঘণ্টা

0

মিনিট

0

সেকেন্ড

‘জিম্মি নাবিকদের মুক্তিপণের বিষয়ে এখনো কথা হয়নি’

ছবি: সংগৃহীত

ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ান জলদস্যুদের হাতে জিম্মি ২৩ বাংলাদেশি নাবিকসহ জাহাজের বিষয়ে মুক্তিপণ নিয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানিয়েছেন জাহাজটির মালিক পক্ষ।

শুক্রবার (২৯ মার্চ) বেলা ১১টার দিকে একটি গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন কবির গ্রুপের মিডিয়া উপদেষ্টা মিজানুল ইসলাম। এর আগে দেশের কয়েকটি গণমাধ্যম ‘মুক্তিপণ চূড়ান্ত হয়েছে’ বলে খবর প্রচার করেছে।

মিজানুল ইসলাম বলেন, জলদস্যুরা যে তৃতীয়পক্ষ নিয়োগ করেছে, তাদের সঙ্গে আমাদের নিয়মিত যোগাযোগ হচ্ছে। তবে আমাদের (কবির গ্রুপ) সঙ্গে দর কষাকষি করে মুক্তিপণ চূড়ান্ত হয়নি। যেহেতু মালিক পক্ষের হয়ে আমি গণমাধ্যমে কথা বলছি, তাই দৃঢ়ভাবে বলতে পারি আমি এমন কিছু জানায়নি। আসলে এখনো তারা মুক্তিপণের বিষয়টি সামনে আনেনি। তবে আমরা এমন কিছু হতে পারে ধরে নিয়ে অগ্রিম কিছু পদক্ষেপ নিয়ে রেখেছি।

তিনি বলেন, ১৩ বছর আগে এমভি জাহান মনিকে যেভাবে দস্যুদের কবল থেকে মুক্ত করা হয়েছিল, সেই অভিজ্ঞতার আলোকেই তারা এগোচ্ছেন। নাবিকরা মুক্তি পেলে তাদের বিমানযোগে দেশে আনা হবে। এছাড়া জাহাজ ফিরিয়ে আনার জন্য অপর একটি দলকে পাঠানো হবে, সেটিও আগেভাগে ঠিক করে রাখা হয়েছে।

পূর্ব অভিজ্ঞতা অনুযায়ী এবং পরামর্শক প্রতিষ্ঠানগুলোর নির্দেশনা অনুসারে কাজ করছে জানিয়ে প্রতিষ্ঠানটি বলে, অনেকের মতো আমরাও আশা করছি, ঈদের আগে নাবিকদের ফিরিয়ে আনা যাবে। তবে এটা সম্পূর্ণ জলদস্যুদের হাতে, ওরা না চাইলে আমরা নিজের থেকে কিছু করতে পারবো না।

এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক পরিসরে অনেকের সঙ্গে আলোচনা চলছে। একই সঙ্গে বিমাকারী প্রতিষ্ঠান প্রোটেকশন অ্যান্ড ইনডেমনিটি (পিঅ্যান্ডআই) এবং ক্রাইসিস টোয়েন্টিফোর জিম্মি জাহাজ ও নাবিকদের উদ্ধারে কাজ করছে। তবে ঠিক কার সঙ্গে কোথায়, আলোচনা হয়েছে বা হচ্ছে, তা নির্দিষ্ট করে বলেননি মিজানুল।

তিনি আস্বস্থ্য করেন যে, জলদস্যুরা এখন জাহাজের খাবার তেমন একটা ব্যবহার করছেন না। তারা বাইরে থেকে খাবার নিয়ে আসছেন।

এর আগে, জাহাজে জিম্মি ওয়েলার মোহাম্মদ শামসুদ্দিন তার পরিবারের কাছে ফোন করে জানান, তারা সুস্থ আছেন। তবে, কিছুদিন ধরে জাহাজে এক ইংরেজি জানা লোক যুক্ত হয়েছেন। ধারণা করা হচ্ছে, তার মাধ্যমে দস্যুরা জাহাজ মালিক পক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে মুক্তিপণ দাবি করেছে।

গত ৪ মার্চ আফ্রিকার দেশ মোজাম্বিকের মাপুটো বন্দর থেকে যাত্রা শুরু করে এমভি আবদুল্লাহ। জাহাজটি কয়লা নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ১২ মার্চ দুপুরে ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ান জলদস্যুদের কবলে পড়ে জাহাজটি।

২০১০ সালের ৫ ডিসেম্বর আরবসাগরে একই প্রতিষ্ঠানের জাহাজ ‘এমভি জাহান মণি’ জলদস্যুদের কবলে পড়েছিল। পরে ওই জাহাজের ২৫ নাবিক ও প্রধান প্রকৌশলীর স্ত্রীকে জিম্মি করে দস্যুরা। পরে নানাভাবে দেনদরবার ও দরকষাকষি শেষে দস্যুদের সঙ্গে সমঝোতা করে ২০১১ সালের ১৪ মার্চ তাদের বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনা হয়।

প্রাথমিকের শেষ ধাপের পরীক্ষা আজ

ফাইল ছবি

সারাদেশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম দুই ধাপে ছয় বিভাগের ৪০ জেলায় পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ শুক্রবার (২৯ মার্চ) ঢাকা-চট্টগ্রাম বিভাগের ২৪ জেলার ৪১৪টি কেন্দ্রে শেষ ধাপের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এতে তিন লাখ ৪৯ হাজার ৪৩৮ জন চাকরিপ্রার্থী আবেদন করেছেন।

সকাল ১০টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। তৃতীয় ধাপে ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের জেলাগুলোতে সহকারী শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয় ২০২৩ সালের ১৮ জুন।

জানা গেছে, প্রার্থীকে অবশ্যই রঙিন প্রিন্ট করা প্রবেশপত্র ও জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে কেন্দ্রে আসতে হবে। কেন্দ্রের সব প্রবেশপথ তালাবদ্ধ থাকবে এজন্য পরীক্ষা শুরুর কমপক্ষে দেড় ঘণ্টা আগে প্রার্থীদের কেন্দ্রে প্রবেশ করতে হবে। পরীক্ষা শুরুর ৩০ মিনিট আগে সতর্কীকরণ ঘণ্টা বাজিয়ে কেন্দ্রের সব প্রবেশপথ বন্ধ করে তালাবদ্ধ করা হবে। এরপর কোনো প্রার্থীকে প্রবেশ বা বের হতে দেওয়া হবে না। দায়িত্বরত ম্যাজিস্ট্রেট ছাড়া আর কাউকে কেন্দ্রে প্রবেশ করতে বা বের হতেও দেওয়া হবে না।

পরীক্ষা কেন্দ্রে কোনো বই, উত্তরপত্র, নোট বা অন্য কোনো কাগজপত্র, ক্যালকুলেটর, মোবাইল ফোন, ভ্যানিটি ব্যাগ, পার্স, হাতঘড়ি বা ঘড়িজাতীয় বস্তু, ইলেকট্রনিক হাতঘড়ি বা যে কোনো ধরনের ইলেকট্রনিক ডিভাইস, কমিউনিকেটিভ ডিভাইস বা এ জাতীয় বস্তু সঙ্গে নিয়ে প্রবেশ করা বা সঙ্গে রাখা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কোনো পরীক্ষার্থী এসব দ্রব্য সঙ্গে নিয়ে পরীক্ষাকেন্দ্রে প্রবেশ করলে তাৎক্ষণিক তাকে বহিষ্কারসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

পরীক্ষার কক্ষে নিজ আসনে কান খোলা রেখে বসতে হবে প্রার্থীদের। কোনো ইলেকট্রনিক ডিভাইস নিয়ে প্রার্থীরা কেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারবেন না। তা নিশ্চিত করতে পরীক্ষা কেন্দ্রের ফটকে প্রার্থীদের দেহতল্লাশি করা হবে। নারী প্রার্থীদের নারী পুলিশ ও পুরুষ প্রার্থীদের পুরুষ পুলিশ সদস্যরা তল্লাশি করবেন। প্রার্থীর কাছে কোনো ডিভাইস আছে কি না, তা মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে শনাক্ত করা হবে।

এদিকে পরীক্ষা ঘিরে শিক্ষা অধিদপ্তরের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতেই চাকরি হবে। অর্থ লেনদেন বা অন্য কোনো অনৈতিক উপায়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগ পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।

এতে আরও বলা হয়, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ কার্যক্রম নিয়োগ বিধিবিধান অনুসরণ করে সম্পূর্ণ স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতার সঙ্গে সম্পন্ন করা হয়। প্রার্থীদের রোল নম্বর, আসনবিন্যাস, প্রশ্নপত্র পাঠানো ও মুদ্রণ, উত্তরপত্র মূল্যায়ন, ফলাফল প্রস্তুতসহ যাবতীয় কাজ সফটওয়্যারের মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে করা হয়।

এ ছাড়া জেলা প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তায় পরীক্ষাকেন্দ্রের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। গোয়েন্দা তৎপরতা জোরদার রয়েছে। কোনো ধরনের অবৈধ হস্তক্ষেপের সুযোগ নেই।

এমতাবস্থায়, দালাল বা প্রতারকচক্রের প্রলোভনে প্রলুব্ধ হয়ে কোনো ধরনের অর্থ লেনদেন না করা এবং ডিজিটাল পদ্ধতিতে কোনো প্রকার অসদুপায় অবলম্বনের জন্য কোনো দালালচক্রের সঙ্গে সম্পৃক্ত না হতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সতর্ক করাসহ অনুরোধ করা হলো।

অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াত বলেন, সম্পূর্ণ মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে চাকরি হবে। কেউ অর্থের বিনিময়ে চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেখালে তাকে নিকটবর্তী থানায় সোপর্দ করা অথবা থানা বা গোয়েন্দা সংস্থাকে অবহিত করার জন্য অনুরোধ করেছে অধিদপ্তর।

সেতু থেকে খাদে পড়ে ৪৫ বাসযাত্রী নিহত, অলৌকিকভাবে বেঁচে গেল শিশু

ছবি: সংগৃহীত

দক্ষিণ আফ্রিকায় ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় ৪৫ জন নিহতের ঘটনা ঘটেছে। দেশটির উত্তর-পূর্ব লিম্পোপো প্রদেশে যাত্রীবাহী একটি বাস সেতু থেকে গভীর খাদে পড়ে যাওয়ার পর প্রাণহানির এই ঘটনা ঘটে। ভয়াবহ এই দুর্ঘটনায় সবাই মারা গেলেও অদ্ভুদভাবে একটি মেয়ে শিশু বেঁচে গেছে।

পরে আহত অবস্থায় তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। শুক্রবার (২৯ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দক্ষিণ আফ্রিকায় একটি বাস সেতু থেকে প্রায় ৫০ মিটার (১৬৫ ফুট) গভীর খাদে পড়ে যাওয়ার পর পঁয়তাল্লিশ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। অবশ্য এই ঘটনায় আট বছর বয়সী এক মেয়ে শিশুকে একমাত্র জীবিত অবস্থায় পাওয়া গেছে এবং গুরুতর আহত অবস্থায় পরে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।

বিবিসি বলছে, উত্তর-পূর্ব লিম্পোপো প্রদেশে বাসটি একটি ব্যারিয়ারে ধাক্কা দেওয়ার পর দুর্ঘটনার কবলে পড়ে এবং পরে এটিতে আগুন ধরে যায়। যাত্রীরা সবাই ছিলেন তীর্থযাত্রী এবং তারা বতসোয়ানার রাজধানী গ্যাবোরোন থেকে মোরিয়া শহরে ইস্টার সার্ভিসে যাচ্ছিলেন।

দক্ষিণ আফ্রিকার পাবলিক ব্রডকাস্টার এসএবিসি জানিয়েছে, গাড়িটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে জোহানেসবার্গের প্রায় ৩০০ কিলোমিটার (১৯০ মাইল) উত্তরে মোকোপানে এবং মার্কেনের মধ্যে মামামতলাকালা পর্বত গিরিপথে একটি সেতু থেকে ছিটকে পড়ে।

উদ্ধার তৎপরতা বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত চলেছে এবং ধ্বংসস্তূপের মধ্যে নিহত কয়েকজনের কাছে পৌঁছানো কঠিন হয়ে পড়েছে বলে জানা গেছে।

পরিবহন মন্ত্রী সিন্দিসিওয়ে চিকুঙ্গা দুর্ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন এবং পরে তিনি ‘মর্মান্তিক বাস দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর প্রতি আন্তরিক সমবেদনা’ জানান। তিনি বলেন, দক্ষিণ আফ্রিকার সরকার মৃতদেহ ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করবে এবং দুর্ঘটনার কারণ খতিয়ে দেখতে পূর্ণ তদন্ত করবে।

তিনি আরও বলেন, ‘এই কঠিন সময়ে আমাদের চিন্তাভাবনা এবং প্রার্থনা আপনার সাথে আছে। আমরা এই ইস্টার উইকএন্ডে আমাদের রাস্তায় আরও বেশি লোক থাকায় আরও বেশি সতর্কতার সাথে সবসময় দায়িত্বশীল ভাবে ড্রাইভিং করার জন্য অনুরোধ করছি।’

অবশ্য দক্ষিণ আফ্রিকার খারাপ সড়ক নিরাপত্তার রেকর্ড রয়েছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।

সর্বশেষ সংবাদ

‘জিম্মি নাবিকদের মুক্তিপণের বিষয়ে এখনো কথা হয়নি’
প্রাথমিকের শেষ ধাপের পরীক্ষা আজ
সেতু থেকে খাদে পড়ে ৪৫ বাসযাত্রী নিহত, অলৌকিকভাবে বেঁচে গেল শিশু
স্বাস্থ্যমন্ত্রীর আশ্বাসে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের কর্মবিরতি স্থগিত
ফিলিস্তিনি নারীদের অন্তর্বাস নিয়ে অশ্লীল খেলায় মেতেছে ইসরায়েলি সেনারা
যত জঙ্গি গ্রেপ্তার করেছি, একজনও মাদরাসার ছাত্র নন : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ার বিরোধিতা করায় সাংবাদিকের কারাদণ্ড
বাতিঘরের শ্যুটিংয়ে হিমাচলে শিরোনামহীন ব্যান্ড
যৌনস্বাস্থ্য ভালো রাখতে প্রতিদিন খাদ্যতালিকায় রাখুন এ সব
গাজায় নিহত আরও অর্ধশতাধিক ফিলিস্তিনি
৮ এপ্রিলের ট্রেনের টিকিট বিক্রি শুরু আজ
ডিজিটাল হুন্ডির মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকা পাচার, গ্রেপ্তার ৫
দূষণে বাংলাদেশে বছরে ২ লাখ ৭২ হাজার মানুষের অকালমৃত্যু: বিশ্বব্যাংক
বরিশালে নামাজ চলাকালে মসজিদে এসি বিস্ফোরণ
নওগাঁয় পরীক্ষার রুটিন পরিবর্তনের দাবিতে শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন
গুলি করে মারা হলো বিশ্বের সবচেয়ে বড় সেই সাপটিকে
দুঃসময় অতিক্রম করছি, সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে: মির্জা ফখরুল
মাকে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ায় শিক্ষক কারাগারে
বাংলাদেশ থেকে আম-কাঁঠাল-আলু নিতে চায় চীন
ঢাবির ভর্তি পরীক্ষায় চার ইউনিটে প্রথম হলেন যারা