মশক নিধন ও পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম আরও গতিশীল ও কার্যকর করার লক্ষ্যে কাউন্সিলরদের প্রতি সপ্তাহে অন্তত একবার সমন্বয় সভা করার নির্দেশনা দিয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম।
সোমবার (২৮ মার্চ) সকালে রাজধানীর গুলশান-২ এ নগর ভবনের হলরুমে ডিএনসিসির ২য় পরিষদের ১১তম করপোরেশন সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতির বক্তব্যে মেয়র এ কথা বলেন।
ডিএনসিসি মেয়র বলেন, আমরা জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে দায়িত্বে এসেছি। জনগণের সুরক্ষা নিশ্চিত করা আমাদের দায়িত্ব। এই দায়িত্ব পালনে কোনোভাবেই যেন অবহেলা না হয়। এ সময় তিনি কাউন্সিলরদের অনুমতি ব্যতিরেকে বিদেশ ভ্রমণ না করার বিষয়েও নির্দেশনা দেন।
সভায় দুর্ঘটনায় মৃত্যুবরণকারী মো. আহসান কবির খানের পরিবারের অসহায়ত্বের কথা বিবেচনা করে তার সন্তানদের শিক্ষাকার্যক্রম অব্যাহত রাখার স্বার্থে সন্তানদের মাস্টার্স/সমমানের ডিগ্রি অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত প্রত্যেক মাসে ২৫ হাজার টাকা হারে ডিএনসিসির তহবিল হতে আর্থিক অনুদান প্রদানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
করপোরেশন সভায় ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সেলিম রেজাসহ সব কাউন্সিলর এবং ডিএনসিসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
নির্বাচনের আগেই বিনা প্রতিদন্তীতায় নির্বাচিত হলেন গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি এ্যাড. এসএম সামশীল আরেফিন টিটু। চেয়ারম্যান পদে ৩ জন প্রার্থীর মধ্যে দু’জন প্রার্থী সেচ্ছায় মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন।
তারা হলেন- সমাজ সেবক হাসান মেহেদী বিদ্যুৎ এবং সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান সামসুল আজাদ শীতল গত সোমবার (২২ এপ্রিল) প্রার্থীতা প্রত্যাহারের শেষ দিন রিটানিং কর্মকর্তা ও জেলা নির্বাচন কর্মকতার নিকট লিখিতভাবে সেচ্ছায় নিজেদের প্রার্থীতা প্রত্যাহার করেন। ফলে আর কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতা প্রার্থী না থাকায় এ্যাড. সামশীল আরেফিন টিটু’র জন্য সাঘাটা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছে।
জানা যায়, সাঘাটা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এ্যাড.এসএম সামশীল আরেফিন টিটুকে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ৬ষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে সর্বসম্মত ভাবে চেয়ারম্যান পদে একক প্রার্থী করেন। অপর দু’জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করলেও একক প্রার্থী দেওয়ার ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের ঐকমত্য পোষণ করায় এ্যাড.সামশীল আরেফিন টিটুকে ভোটের আগেই চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। সোমবার (২২ এপ্রিল) প্রার্থীতা প্রত্যাহারের শেষদিন ওই দু’জন প্রার্থী নিজেদের প্রার্থীতা সেচ্ছায় প্রত্যাহার করায় আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী সামশীল আরেফিন টিটু’র বিনা প্রতিদ্বদ্বীতায় নির্বাচিত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হয়।
হাসান মেহেদী বিদ্যুৎ এবং সামসুল আজাদ শীতল এ দু’জনের প্রার্থীতা প্রত্যাহারের বিষয়টি নিশ্চিত করে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আব্দুল মোত্তালিব চেয়ারম্যান পদে দু’জন প্রার্থীর প্রার্থীতা প্রত্যাহারের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, প্রার্থী দু’জন নিজেদের প্রার্থীতা প্রত্যাহার করেছেন।
মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) তাদের প্রত্যাহারের বিষয়টি চুড়ান্তভাবে ঘোষণা করা হবে উপজেলা নির্বাচন কমিশন ও রিটার্নিং কর্মকর্তা মোহাম্মদ ওয়াজেদ আলী জানান।
এছাড়া সংরক্ষিত মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ২ জন প্রার্থী হলেন- রওশন আরা বেগম ও সাবেক সংরক্ষিত মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নাজনীন বেগম এবং সাধারণ ভাইস চেয়ারম্যান পদে সাখাওয়াত হোসেন রুবেল, মিলন কান্তি সরকার,আব্দুল মজিদ, রোস্তম আলী, শাহ্ মোখলেছুর রহমান,শাহজাহান আলী , উজ্জ্বল হোসেন, মমিতুল হক নয়ন ও আমির হোসেন সহ ১১ জন প্রার্থীর প্রার্থীতা চূড়ান্ত হয়েছে।
উল্লেখ্য, আগামী ৮ মে এ উপজেলায় চেয়ারম্যান ব্যতীত সংরক্ষিত মহিলা সহ ১১ জন প্রতিদ্বন্দ্বী ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীর মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। আগামীকাল মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) নিজেদের জন্য বরাদ্দকৃত প্রতীক নিয়ে চুড়ান্তভাবে ভোটের মাঠে নামবেন। এদিকে নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ করার লক্ষ্যে সংশ্লিষ্টি কর্মকর্তারা সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছেন বলে জানা গেছে।
ধান নয়, বাঁশের ফুলের বীজ থেকে তৈরি হচ্ছে চাল। তা দিয়ে রান্না হচ্ছে ভাত-পোলাও-পায়েস। এমনকি সেই চালের আটা তৈরি করে বানানো হচ্ছে রুটি। বাঁশ ও কঞ্চিতে ঝুলছে ধানসদৃশ দানাদার ফল। সেই ফল সংগ্রহ করা হচ্ছে বস্তায়। ময়লা পরিষ্কার করে রোদে শুকিয়ে চলছে মাড়াই। এভাবেই তৈরি করা হচ্ছে বাঁশের চাল।
চাঞ্চল্যকর এই ঘটনা ঘটেছে দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার এলুয়াড়ী ইউনিয়নের পাকাপান গ্রামে। বাঁশের ফল থেকে ধানসদৃশ দানাদার শস্য সংগ্রহ করে এলাকায় হইচই ফেলে দিয়েছেন গ্রামের তরুণ সাঞ্জু রায় (২৫)। সঞ্জু রায় উপজেলার ১নং এলুয়ারি ইউনিয়নের পাকাপান গ্রামের শিমুল চন্দ্র রায়ের ছেলে। পেশায় একজন কৃষিশ্রমিক।
গত এক সপ্তাহে প্রায় সাত মণ দানাদার শস্য সংগ্রহ করেছেন। ইতোমধ্যে দুই মণ চাল পেয়েছেন। নিজে যেমন রান্না করে খেয়েছেন, তেমনি আশপাশের মানুষের কাছে বিক্রিও করেছেন প্রতি কেজি ৪০ টাকায়। প্রতিবেশী বৃদ্ধের কাছে গল্প শুনে বাঁশফুলের বীজ থেকে দানা (চাল) সংগ্রহ করে এলাকায় তাক লাগিয়ে দিয়েছেন তিনি। বিষয়টি জানতে পেরে উৎসুক এলাকাবাসীর মধ্যে এ বীজ সংগ্রহের হিড়িক পড়েছে।
পাকাপান গ্রামের সাঞ্জু রায় ও প্রতিবেশী বৃদ্ধ কালিচন্দ্র রায় (৭০) দুজনই পেশায় দিনমজুর। তিনি সাঞ্জু রায়কে গল্প শোনান যে, ১৯৭১ সালে এরকম বাঁশফুলের দানা থেকে চাল সংগ্রহ করতে দেখেছেন। সে সময় অনেকেই এ দানা চাল হিসেবে ভাত রান্না করে খেয়েছেন।
সাঞ্জু রায়ের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির পাশের ঝাড় থেকে বাঁশের বীজ সংগ্রহ করছেন তিনি। তার মা বাঁশফুলগুলো কুলা দিয়ে ঝেড়ে পরিষ্কার করছেন। সেই বীজ পানিতে ধুয়ে সাঞ্জু রায় পরিষ্কার করে রোদে শুকাচ্ছেন। এরপর সেগুলো ধানের হাসকিং মিলে ভাঙাবেন। বাড়ির উঠানে প্রস্তুতকৃত এমন কয়েকটি বীজের বস্তা দেখা যায়। কিছু দানা ভাঙিয়ে রেখেছেন। গ্রামের অনেকেই তা কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।
বাঁশের ফুল থেকে চাল উৎপাদন করার বিষয়টি এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। এটি দেখতে প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকা থেকে দলে দলে উৎসুক মানুষ ভিড় করছেন তার বাড়িতে।
সাঞ্জু রায় বলেন, বাঁশের কঞ্চিতে ফলগুলো শুকিয়ে মাটিতে পড়ে যাচ্ছে। মাঝেমধ্যে কঞ্চি ধরে নাড়া দিলে ঝরে পড়ছে। এ পর্যন্ত এক দিনে সর্বোচ্চ ২০ কেজি সংগ্রহ করেছেন। এক কেজিতে চাল পেয়েছেন আধা কেজির মতো। রান্না করে খেয়েছেন। ভাতের মতোই স্বাদ। পায়েসও রান্না করেছেন। আটা বানিয়ে রুটিও খেয়েছেন। ইতোমধ্যে আড়াই হাজার টাকার চাল বিক্রিও করেছেন। এখনও পাঁচ বস্তা মজুত আছে। ভালোই লাগছে।
বাঁশগাছে পাওয়া দানাদার শস্যের চাল নিয়ে গেছেন পাড়ার সুনীল রায়, লিপি রানী ও কামিনী বালা। তারা জানান, সাঞ্জুকে ধানের চাল বদল দিয়ে বাঁশের চাল নিয়েছেন এক কেজি করে। রান্না করে খেয়েছেনও। খুবই সুস্বাদু।
বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) আঞ্চলিক কার্যালয় রংপুরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. রকিবুল হাসান বলেন, বাঁশের বীজ থেকে চাল উৎপাদন হয় এই প্রথম জানলাম। দেশের কোথাও এমন ঘটনা শোনা যায়নি। এটি বিরল ঘটনা। বিষয়টি নিয়ে আমরা শিগগিরই গবেষণার কাজ শুরু করব।
দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক নুরুজ্জামান জানান, বাঁশ এবং ধান একই প্রজাতির। ৫০ বছরে একটি বাঁশঝাড়ে একবার ফল আসে। পরে আর সেই বাঁশঝাড়টি আর টিকে থাকে না। তবে বাঁশফলের সেই দানা থেকে অবিকল চালের মতো দানা হয়। যার ভাতের স্বাদ ধানের চালের ভাতের মতোই। তবে এটি সম্ভাবনাময় নয়।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ বন গবেষণা ইনস্টিটিউটের সিভিকালচার জেনেটিকস বিভাগের চট্টগ্রাম বিভাগীয় কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান বলেন, বাঁশে সাধারণত ফুল হয় না। তবে প্রজাতিভেদে ২৫ থেকে ৬০ বছর পরে ফুল আসতে পারে। ফুল আসা মানেই ওই বাঁশের জীবনচক্র শেষ হওয়া। বাঁশফলটা দেখতে অনেকটা ধানের বীজের মতো।