‘হাঙর সুরক্ষা পরিকল্পনা’ অনুমোদন
পানামার রাজধানী পানামা সিটিতে বিপন্ন প্রজাতিগুলোকে নিয়ে ব্যবসা করা বিষয়ে সারা বিশ্ব থেকে আসা বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞ ও উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের শীর্ষ সম্মেলনে গতকাল শুক্রবার হাঙরের ৪৫টির বেশি প্রজাতিকে সংরক্ষণের জন্য একটি পরিকল্পনা অনুমোদন করা হয়েছে।
তারা যৌথভাবে কর্ম পরিচালনা করবেন যার মাধ্যমে হাঙরের পাখনার তীব্রভাবে লাভজনক বিক্রি কমানো সম্ভব হবে।
রেকুয়েম এবং হ্যামারহেড হাঙরের বিক্রি শক্তভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে। এ জন্য প্রয়োগ করা হবে আন্তর্জাতিকভাবে বিপন্ন প্রজাতিগুলোকে সংরক্ষণের জন্য সম্মেলনের নীতিমালা ও সিদ্ধান্তগুলো।
টানা দুই সপ্তাহের শীর্ষ সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেছেন ১৮৩ দেশের প্রতিনিধি এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্যরা।
তারা শেষদিনে চূড়ান্ত প্রস্তাবটিকে অনুমোদন করেছেন। তাতে আরও আছে, ৫২টি প্রস্তাবনা। এগুলোর মাধ্যমে প্রজাতিগুলোকে সুরক্ষা প্রদানের বর্তমান নীতিমালা পরিবর্তন করা হয়েছে।
অন্য বিতর্কগুলো করেছেন তারা এবং সিদ্ধান্ত নিয়েছেন-গ্লাস ফগ নামের বিশেষ প্রজাতির ব্যাঙ, কুমিরের বিপন্ন বিভিন্ন প্রজাতি, গিটারফিশ এবং কচ্ছপের কয়েকটি বিপন্ন প্রজাতি নিয়ে।
পানামার প্রতিনিধি শেলি বাইন্ডার এএফপিকে বলেছেন, ‘এই ঐতিহাসিক সিদ্ধান্তটির মাধ্যমে প্রায় ৯০ শতাংশ হাঙরই বাজারে বিক্রি হয়ে যাওয়া এখন থেকে প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে।’
তিনি আরও বলেছেন, ‘এশিয়াতে হাঙরের ডানার একটি অতিলোভী ও ক্ষুধার্ত বাজার আছে। ক্রেতারা সেখানে তাদের রাতের খাবারের টেবিলে হাঙরের ডানা নানাভাবে রান্না করে খান। হংকং, তাইওয়ান এবং জাপান তাদের মাধ্যমে অনুপ্রাণিত হয়ে হাঙর বিক্রি করে। যদিও হাঙরের পাখনা প্রায় স্বাদহীন খাবার। নরম ও আঠালো একটি বিশেষ স্যুপ তৈরি করা হয়। তারপরও মার্জিতভাবে হাঙরের পাখনা খাওয়াকে উপস্থাপন করা হয়। এই খাওয়াকে উপভোগ্য মনে করেন খুব বড়লোকেরা। প্রায়ই তাদের বিয়ের অনুষ্ঠান ও ব্যয়বহুল ভোজগুলোতে স্যুপটির অর্ডার থাকে।’
হাঙরের পাখনার প্রায় ৫শ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বাৎসরিক বাজার আছে। প্রতি কিলোগ্রাম বা ২.২ পাউন্ড হাঙরের পাখনা প্রায় ১ হাজার মার্কিন ডলারে বিক্রি হয়।
শার্ক প্রটেকশর ফর দ্য এনজিও ওয়াইল্ড লাইফ কনজারভেশন সোসাইটি’র পরিচালক লুক ওয়ারেক বলেছেন, ‘বিশ্বের হাঙর ও রেগুলোর বিলুপ্তি ঠেকাতে যেহেতু আমরা ঐক্যমতে পৌঁছেছি, ফলে এই দিনটি স্মরণীয় হয়ে থাকবে।’
তিনি আরও জানিয়েছেন, ‘পরের ধাপ আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কেন না সেখান থেকেই এই আলোচনা, সিদ্ধান্তগুলোকে বাস্তবায়ন করা শুরু হবে। নিশ্চিত করা হবে সাগরের প্রাণীগুলোকে শক্তিশালী উপায়ে ব্যবস্থাপনা ও তাদের কেনা, বেচা পরিমাপ। যত দ্রুত সম্ভব আমাদের কার্যক্রম শুরু হবে।’
শত্রু থেকে প্রিয়তম
৪শ মিলিয়নেরও বেশি সময় ধরে সাগরে রাজত্ব করা হাঙরকে দীর্ঘকাল ধরে সাগরদানো হিসেবে বিবেচনা করা হয়। সিনেমাগুলোতে তাদের ভয়ংকর হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তারা প্রায়ই মানুষকে আক্রমণ করে।
তবে এই প্রাচীন সাগর শিকারীরা তাদের পুরোনো চিত্রিত বিবরণ পাল্টে ফেলতে পেরেছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে হাঙর সংরক্ষণকর্মীরা তাদের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাকে সবার সামনে তুলে ধরছেন। তারা জানাচ্ছেন, হাঙর সাগরের বাস্তুতন্ত্র নিয়ন্ত্রণে অপরিহার্য ভূমিকা পালন করে।
পিউ এনভারমেন্ট গ্রুপের হিসেবে, প্রতি বছর ৬৩ থেকে ২৭৩ মিলিয়ন হাঙর মারা হয়। তাদের এই করুণ মৃত্যুর কারণ প্রধানত ডানা সংগ্রহ। শিকারীরা অন্যান্য অংশও কেটে নেন।
অথচ হাঙরের জীবন দারুণ বৈচিত্র্যময়। অনেক প্রজাতি যৌন সক্ষমতা অর্জনে জীবনের প্রথম ১০ বছর পার করে। হাঙরের সন্তান জন্মদানের হার অত্যন্ত কম। এই অবস্থায় নিয়মিতভাবে, চরম আকারে মারার ফলে তারা হারিয়ে যাচ্ছে।
ওএফএস/এমএমএ/