শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ | ১৫ চৈত্র ১৪৩০
Dhaka Prokash

বঙ্গবন্ধু: বাঙালি জাতিসত্তার প্রধান শিকড়

কিছু মানুষ থাকেন যারা ইতিহাসে উদ্ধৃত হন, কেউ কেউ আছেন যারা  ইতিহাসের অংশ হয়ে যান; আর এমন সামান্য কিছু মানুষ আছেন যাঁরা নিজেরাই ইতিহাসের স্রষ্টা হয়ে যান। বঙ্গবন্ধু এই শেষোক্ত পর্যায়েরই মানুষ। যাঁকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হয়েছে ইতিহাস, সৃষ্টি হয়েছে গাঙ্গেয় বদ্বীপের একটি বিশাল জাতির জন্মগাঁথা। এই একটি মানুষ যাঁর কর্মজীবনের প্রতিটি স্তরে রচিত হয়েছে এক মহান মুক্তিসংগ্রামের অমর পংক্তিমালা। বাঙালির হাজার হাজার বছরের ইতিহাসে কখনও তার আত্মপরিচয়ের সন্ধান ছিল না, কখনও তার আত্মপরিচয়ের ইতিহাস ছিল না। এই মহান মানুষটি এই জাতির অপ্রাপ্তির যাতনার অবসান ঘটিয়েছেন। এখন বাঙালি জাতির একটা ঠিকানা আছে, একটা জাতীয় সঙ্গীত আছে, একটা পতাকা আছে, একটা স্বাধীন সার্বভৌম ভূখণ্ড আছে। এসব কিছুর পেছনে যাঁর অখণ্ড অবদান, তিনি হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি হিসেবে বিশ্বনন্দিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

আমরা ইতিহাসে অনেক রাষ্ট্রনায়কের রাষ্ট্র পরিচালনার কিংবা সিদ্ধান্ত নেয়ার অনেক কাহিনী শুনেছি। পাঠ করেছি অনেক গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে আন্তর্জাতিক নেতৃবৃন্দের নানা ধরনের নির্দেশ। কিন্তু বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অনবদ্য ভূমিকা সমস্ত তুলনার ঊর্ধ্বে। আমরা এমন একটা সময় নিয়ে আলোচনা করছি যে সময়টা একটি নতুন জাতির আবির্ভাবের পূর্বক্ষণ, একটি রাষ্ট্র ব্যবস্থার মধ্যে নতুন শক্তির স্ফূরণের লগ্ন। পুরনো রাষ্ট্রব্যবস্থার অচলায়োতন চূর্ণবিচূর্ণ করে নতুন রাষ্ট্র নির্মাণের অসম সাহসী সন্ধিক্ষণ। ঠিক সেই মুহূর্তে অত্যন্ত নির্মোহভাবে যিনি নির্ণয় করতে পারেন ইতিহাসের গতিমুখ, তাঁকে আমরা কোন অভিধায় অভিষিক্ত করবো? তিনি তো মানুষের সাধারণ গুণাবলীর আরও ঊর্ধ্বে অসাধারণ মহিমায় উদ্ভাসিত এক মহামানব। যিনি সেই উত্তাল সময়ে ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের অনবদ্য এক ভাষণের মধ্য দিয়ে ইতিহাসের গতিমুখ নির্ণয় করলেন। যার ধারাবাহিকতায় বিশ্বের মানচিত্রে একটি স্বাধীন, সার্বভৌম দেশের অভ্যুদয় ঘটলো।

বাঙালির ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা ৭ই মার্চ অবিস্মরণীয় একটি দিন। বাঙালি জাতির চরম ক্রান্তিকালে এদিন ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানের উত্তাল জনসমুদ্রে সভামঞ্চে ‘রাজনীতির কবি’ বঙ্গবন্ধু ‘দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয়’ নিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সেদিন ১০ লক্ষাধিক মানুষের সামনে পাকিস্তানি দস্যুদের কামান-বন্দুক-মেশিনগানকে পরোয়া না করে বজ্রকণ্ঠে বাঙালি জাতির হাজার বছরের কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা ও মুক্তির দাবি আদায়ের ঘোষণা করলেন। এরও আগে ২ মার্চ থেকেই বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে পুরো দেশজুড়ে পাকিস্তানি দুঃশাসনের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলন চলছিল। তৎকালীন পাকিস্তানি জনগণই শুধু নয়, পুরো বিশ্ব তাকিয়ে ছিল বঙ্গবন্ধু তাঁর ভাষণে কী বলবেন সেই দিকে। পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্য এটি ছিল একটি অন্তিম মুহূর্ত। বস্তুত, ১৯৪৮ সালে ভাষার দাবিতে আন্দোলন শুরু করার সময়ই বঙ্গবন্ধু বুঝে গিয়েছিলেন স্বাধীনতা ব্যতীত এই জাতির চূড়ান্ত মুক্তি মিলবে না। আর তাই তিনি স্বাধীনতার চেতনায় প্রদীপ্ত বাঙালি জাতির জন্য এই ভাষণের মধ্যদিয়েই পাকিস্তানি ঔপনিবেশিক শাসন-শোষণের নাগপাশ ছিন্ন করে জাতীয় মুক্তি ও কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে চূড়ান্ত সংগ্রামের সূচনা করেছিলেন। পরবর্তীতে আমরা দেখেছি একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধকালে এই ভাষণ রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধাদের শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কতটা অনুপ্রাণিত করেছে। এই একটি ভাষণই বিশ্বের বুকে একটি স্বাধীন জাতিরাষ্ট্রের উদ্ভব ঘটায়; যা বিশ্বের ইতিহাসে একটি অনন্য নজিরবিহীন ঘটনা।

মাত্র ১৯ মিনিটের এক ভাষণ যেটি বিশ্ববাসীর কাছে বিশেষ করে বিশ্বের প্রতিটি মুক্তিকামী মানুষের কাছে এক আলোর দিশারী। বঙ্গবন্ধু তাঁর সংক্ষিপ্ত সেই তেজস্বী ভাষণে পাকিস্তানের ২৩ বছরের রাজনীতি ও বাঙালির বঞ্চনার ইতিহাস তুলে ধরেন, পাকিস্তান রাষ্ট্রের সঙ্গে বাঙালির দ্বন্দ্বের স্বরূপ উপস্থাপন করেন, অসহযোগ আন্দোলনের পটভূমি বিশ্লেষণ ও বিস্তারিত কর্মসূচি ঘোষণা করেন, শান্তিপূর্ণ উপায়ে সমস্যা সমাধানে তাঁর সর্বাত্মক প্রচেষ্টার কথাও ব্যক্ত করেন, পূর্ব বাংলার প্রতিটি ঘরে ঘরে প্রতিরোধ গড়ে তোলার নির্দেশ প্রদান করেন। তিনি জানতেন এই প্রতিরোধ সংগ্রামই শেষাবধি মুক্তিযুদ্ধের রূপ পরিগ্রহ করবে। তাই তিনি শত্রুর মোকাবিলায় গেরিলাযুদ্ধের কৌশল অবলম্বনের কথাও বললেন তাঁর ভাষণে। যেকোনো উসকানির মুখে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখার পরামর্শদান সহ বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরার পর ঘোষণা করলেন: ‘ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলো। তোমাদের যা কিছু আছে, তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করতে হবে। রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরও দেব। এ দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব, ইনশা আল্লাহ।......এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। জয় বাংলা।’

রেসকোর্সের জনসমুদ্রে দেয়া জাতির পিতার এই কালজয়ী ভাষণেই ধ্বনিত হয়েছিল বাংলার গণমানুষের প্রাণের দাবি। বঙ্গবন্ধু তাঁর এই ভাষণে বাঙালি জাতিকে স্বাধীনতার জন্য ঐক্যবদ্ধ করেন। একইসঙ্গে সশস্ত্র সংগ্রামের দিক-নিদের্শনাও দিয়ে যান। ২ মার্চের ডাকে ৭ মার্চ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ পাওয়ার জন্য জনসমুদ্রের ঢেউ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের দিকে ধাবিত হতে থাকে। তিনি তাদেরকে শত্রুর মোকাবিলার জন্য নির্দেশ দেন, ‘তোমাদের যা কিছু আছে, তাই নিয়ে প্রস্তুত থাকো।’

বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ বিশেষ বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত। বস্তুত বঙ্গবন্ধুর এই ভাষণ ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতারই ঘোষণা। তবে সরাসরি তা ঘোষণা না করে তিনি কৌশলের আশ্রয় গ্রহণ করেন। এই ভাষণই নিরস্ত্র বাঙালি জাতিকে রাতারাতি সশস্ত্র করে তোলে। একটি ভাষণকে অবলম্বন করে স্বাধীনতার জন্য ৩০ লাখ বাঙালি জীবন উৎসর্গ ও কয়েক লাখ মা–বোন সম্ভ্রম বিসর্জন দেন। বিশেষত ভাষণের শেষ পর্যায়ে তিনি ‘স্বাধীনতার’ কথা এমনভাবে উচ্চারণ করলেন যাতে স্বাধীনতা ঘোষণার কিছু বাকিও থাকল না; আবার তাঁর বিরুদ্ধে একতরফা স্বাধীনতা ঘোষণার অভিযোগ উত্থাপন করাও পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর পক্ষে সম্ভব ছিল না।

আমরা ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখতে পাব, বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে তখন বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এমন ছিল যে, কোনো কোনো বিদেশি পত্রিকাও তখন জানিয়েছিল, ৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধু হয়তো পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীনতা ঘোষণা করবেন। একাত্তরের ৫ মার্চ লন্ডনের গার্ডিয়ান, সানডে টাইমস, দি অবজারভার এবং ৬মার্চ ডেইলি টেলিগ্রাফ পত্রিকায় সেসময় ৭ই মার্চের স্বাধীনতা ঘোষণার পূর্বাভাস দেওয়া হয়। একাত্তরের ৬ মার্চ লন্ডনের ডেইলি টেলিগ্রাফ পত্রিকায় ছাপা হয়, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আগামীকাল (৭ই মার্চ) পূর্ব পাকিস্তানের একতরফা স্বাধীনতা ঘোষণা করতে পারেন।’ আমরা দেখেছি পরবর্তীকালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু একাত্তরে ৭ই মার্চ সরাসরি কেন স্বাধীনতা ঘোষণা করেননি, তার ব্যাখ্যা তিনি নিজেই দিয়েছেন। ১৯৭২-এর ১৮ জানুয়ারি স্বাধীন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ব্রিটিশ সাংবাদিক ডেভিড ফ্রস্টকে এনডব্লিউ টিভির জন্য দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ৭ই মার্চের ওই ঘটনা বর্ণনা করেন। ফ্রস্ট জাতির পিতার কাছে জানতে চান, ‘আপনার কি ইচ্ছা ছিল যে, তখন ৭ই মার্চ রেসকোর্সে আপনি স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের ঘোষণা দেবেন?’ বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘আমি জানতাম এর পরিণতি কী হবে এবং সভায় আমি ঘোষণা করি যে এবারের সংগ্রাম মুক্তির, শৃঙ্খল মোচন এবং স্বাধীনতার।’ ফ্রস্ট আবার প্রশ্ন করেন, ‘আপনি যদি বলতেন, আজ আমি স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের ঘোষণা করছি, তো কী ঘটত?’ বঙ্গবন্ধু উত্তর দেন, ‘বিশেষ করে ঐ দিনটিতে আমি এটা করতে চাইনি। কেননা, বিশ্বকে তাদের আমি এটা বলার সুযোগ দিতে চাইনি যে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন এবং আঘাত হানা ছাড়া আমাদের আর কোনো বিকল্প ছিল না। আমি চাইছিলাম তারাই আগে আঘাত হানুক এবং জনগণ তা প্রতিরোধ করার জন্য প্রস্তুত ছিল।’ পরবর্তীতে পুরো বিশ্ব জানলো, ৭ই মার্চ সরাসরি স্বাধীনতা ঘোষণা না করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শতভাগ সঠিক কাজটিই করেছেন।

জাতির জনকের ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ আজ   বিশ্ব ঐতিহ্য সম্পদ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। ইউনেস্কোর মেমোরি অব ওয়ার্ল্ড রেজিস্ট্রারে বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ তথ্যচিত্রের ঐতিহ্যের তালিকাভুক্ত হয়ে এর মাহাত্ম্য আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। সম্প্রতি জেকোভ এফ. ফিল্ডের গ্রন্থে প্রায় আড়াই হাজার বছরে মানবজাতির ইতিহাসে বিশ্বের শ্রেষ্ঠ নেতা, রাষ্ট্রনায়ক ও মিলিটারি জেনারেলদের উদ্দীপনামূলক বক্তব্যে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ অন্তর্ভুক্ত হয়েছে এবং অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচিত হয়েছে। তার বিবেচনায় বিশ্বে শ্রেষ্ঠ ৪০টি ভাষণ এতে সংকলিত হয়েছে। গ্রন্থের নাম নির্বাচন করেছেন- ‌We Shall Fight on the Beaches: The Speeches that Inspired History. আমরা দেখেছি, নিউজ উইক সাময়িকী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘রাজনীতির কবি’ হিসেবে অভিহিত করেছে। এছাড়া, ইউনেস্কোর স্বীকৃতির আগেই বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় একাডেমিক স্বীকৃতি পায়। এসমস্ত তথ্যই পরিষ্কারভাবে ৭ই মার্চের মাহাত্মকেই তুলে ধরে। 

বাঙালির বীরত্বপূর্ণ সংগ্রাম ও সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে জাতির পিতার এই দিকনির্দেশনায় ছিল বজ্রকঠিন জাতীয় ঐক্যের মূলমন্ত্র। এ অঞ্চলের মানুষ যে ভাষায় কথা বলতো তা তাদের মাতৃভাষা। এই মাতৃভাষাকে তিনি আত্মপরিচয়ের ভাষায় পরিণত করার অসামান্য পারদর্শিতা দেখিয়েছেন। সবচেয়ে বড় কথা তিনি এই জাতিকে একটি ভৌগোলিক ঠিকানা দিয়েছেন। সার্বভৌমত্বের অধিকার নিশ্চিত করেছেন। পৃথিবীর মানুষকে পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিয়েছেন যে এটা এমন একটি জাতিরাষ্ট্র যা কারও অনুগ্রহের ভেতর দিয়ে জন্ম লাভ করেনি। নিজস্ব শক্তিতে, নিজস্ব ক্ষমতায়, অনেক রক্ত-ঘাম এবং ত্যাগের বিনিময়ে তার নিজের অস্তিত্বকে প্রমাণ করেছে। আজ বাঙালির একটা নির্দিষ্ট রাষ্ট্রব্যবস্থা আছে, নিজের পরিচয় আছে, নিজের কৃষ্টি-সংস্কৃতি-ঐতিহ্য রয়েছে-যা সম্ভব হয়েছে বঙ্গবন্ধুর কীর্তিতে। তিনি এমনই একটি দেশ উপহার দিয়েছেন পৃথিবীকে, যেই পৃথিবীর প্রতিটি বাঙালি অত্যন্ত গর্বের সঙ্গে উচ্চারণ করতে পারে-আমার একটি দেশ আছে, যে দেশের নাম বাংলাদেশ। আর সেই দেশটির অস্তিত্ব নির্মাণের চূড়ান্ত মুহূর্তই ছিল বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ। পৃথিবীর ইতিহাসে কালজয়ী এ ভাষণ নির্দ্বিধায় বিশ্বের শোষিত, বঞ্চিত ও মুক্তিকামী মানুষের কাছে পরাজয়ের শিকল ভাঙার চিরন্তন পাথেয় হয়ে থাকবে।

রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধ ও বহু ত্যাগের বিনিমিয়ে আমরা ১৬ই ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করি। একটি ভাষণ কীভাবে গোটা জাতিকে জাগিয়ে তুলতে পারে; স্বাধীনতার জন্য জীবন বাজি রেখে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্যে উৎসাহিত করতে পারে; বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ তারই এক উজ্জ্বল উদাহারণ। বঙ্গবন্ধু ১৯৬৬ সালের ‘ছয় দফায়’ বাঙালিকে স্বাধিকারের সাঁকো দিয়েছিলেন। ৭ মার্চের ভাষণের অমর বাণীতে বঙ্গবন্ধু সেই সাঁকোকে স্বাধীনতার স্বপ্নসেতুতে রূপান্তরিত করেছেন। পৃথিবীর যেকোনো শোষিত জাতির মুক্তির সংগ্রামে বঙ্গবন্ধুর অনাচার-নির্যাতন-শোষণ-বঞ্চনার বিরুদ্ধে দীর্ঘ সংগ্রামী জীবন তাদের অনুপ্রেরণা জোগাবে। তাঁর দেশপ্রেম, তাঁর দূরদর্শিতা, তাঁর জাদুকরী সাংগঠনিক ক্ষমতা, তাঁর মানবতাবাদী দৃষ্টিভঙ্গি অধিকতর ঔজ্জল্য নিয়ে পৃথিবীর সমস্ত জায়গায় পরিব্যাপ্ত হোক।

 

লেখক: প্রকাশক ও সম্পাদক, দৈনিক জাগরণ।

আজকের ইফতারের সময় (ঢাকা)

0

ঘণ্টা

0

মিনিট

0

সেকেন্ড

প্রাথমিকের শেষ ধাপের পরীক্ষা আজ

ফাইল ছবি

সারাদেশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম দুই ধাপে ছয় বিভাগের ৪০ জেলায় পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ শুক্রবার (২৯ মার্চ) ঢাকা-চট্টগ্রাম বিভাগের ২৪ জেলার ৪১৪টি কেন্দ্রে শেষ ধাপের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এতে তিন লাখ ৪৯ হাজার ৪৩৮ জন চাকরিপ্রার্থী আবেদন করেছেন।

সকাল ১০টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। তৃতীয় ধাপে ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের জেলাগুলোতে সহকারী শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয় ২০২৩ সালের ১৮ জুন।

জানা গেছে, প্রার্থীকে অবশ্যই রঙিন প্রিন্ট করা প্রবেশপত্র ও জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে কেন্দ্রে আসতে হবে। কেন্দ্রের সব প্রবেশপথ তালাবদ্ধ থাকবে এজন্য পরীক্ষা শুরুর কমপক্ষে দেড় ঘণ্টা আগে প্রার্থীদের কেন্দ্রে প্রবেশ করতে হবে। পরীক্ষা শুরুর ৩০ মিনিট আগে সতর্কীকরণ ঘণ্টা বাজিয়ে কেন্দ্রের সব প্রবেশপথ বন্ধ করে তালাবদ্ধ করা হবে। এরপর কোনো প্রার্থীকে প্রবেশ বা বের হতে দেওয়া হবে না। দায়িত্বরত ম্যাজিস্ট্রেট ছাড়া আর কাউকে কেন্দ্রে প্রবেশ করতে বা বের হতেও দেওয়া হবে না।

পরীক্ষা কেন্দ্রে কোনো বই, উত্তরপত্র, নোট বা অন্য কোনো কাগজপত্র, ক্যালকুলেটর, মোবাইল ফোন, ভ্যানিটি ব্যাগ, পার্স, হাতঘড়ি বা ঘড়িজাতীয় বস্তু, ইলেকট্রনিক হাতঘড়ি বা যে কোনো ধরনের ইলেকট্রনিক ডিভাইস, কমিউনিকেটিভ ডিভাইস বা এ জাতীয় বস্তু সঙ্গে নিয়ে প্রবেশ করা বা সঙ্গে রাখা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কোনো পরীক্ষার্থী এসব দ্রব্য সঙ্গে নিয়ে পরীক্ষাকেন্দ্রে প্রবেশ করলে তাৎক্ষণিক তাকে বহিষ্কারসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

পরীক্ষার কক্ষে নিজ আসনে কান খোলা রেখে বসতে হবে প্রার্থীদের। কোনো ইলেকট্রনিক ডিভাইস নিয়ে প্রার্থীরা কেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারবেন না। তা নিশ্চিত করতে পরীক্ষা কেন্দ্রের ফটকে প্রার্থীদের দেহতল্লাশি করা হবে। নারী প্রার্থীদের নারী পুলিশ ও পুরুষ প্রার্থীদের পুরুষ পুলিশ সদস্যরা তল্লাশি করবেন। প্রার্থীর কাছে কোনো ডিভাইস আছে কি না, তা মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে শনাক্ত করা হবে।

এদিকে পরীক্ষা ঘিরে শিক্ষা অধিদপ্তরের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতেই চাকরি হবে। অর্থ লেনদেন বা অন্য কোনো অনৈতিক উপায়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগ পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।

এতে আরও বলা হয়, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ কার্যক্রম নিয়োগ বিধিবিধান অনুসরণ করে সম্পূর্ণ স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতার সঙ্গে সম্পন্ন করা হয়। প্রার্থীদের রোল নম্বর, আসনবিন্যাস, প্রশ্নপত্র পাঠানো ও মুদ্রণ, উত্তরপত্র মূল্যায়ন, ফলাফল প্রস্তুতসহ যাবতীয় কাজ সফটওয়্যারের মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে করা হয়।

এ ছাড়া জেলা প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তায় পরীক্ষাকেন্দ্রের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। গোয়েন্দা তৎপরতা জোরদার রয়েছে। কোনো ধরনের অবৈধ হস্তক্ষেপের সুযোগ নেই।

এমতাবস্থায়, দালাল বা প্রতারকচক্রের প্রলোভনে প্রলুব্ধ হয়ে কোনো ধরনের অর্থ লেনদেন না করা এবং ডিজিটাল পদ্ধতিতে কোনো প্রকার অসদুপায় অবলম্বনের জন্য কোনো দালালচক্রের সঙ্গে সম্পৃক্ত না হতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সতর্ক করাসহ অনুরোধ করা হলো।

অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াত বলেন, সম্পূর্ণ মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে চাকরি হবে। কেউ অর্থের বিনিময়ে চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেখালে তাকে নিকটবর্তী থানায় সোপর্দ করা অথবা থানা বা গোয়েন্দা সংস্থাকে অবহিত করার জন্য অনুরোধ করেছে অধিদপ্তর।

সেতু থেকে খাদে পড়ে ৪৫ বাসযাত্রী নিহত, অলৌকিকভাবে বেঁচে গেল শিশু

ছবি: সংগৃহীত

দক্ষিণ আফ্রিকায় ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় ৪৫ জন নিহতের ঘটনা ঘটেছে। দেশটির উত্তর-পূর্ব লিম্পোপো প্রদেশে যাত্রীবাহী একটি বাস সেতু থেকে গভীর খাদে পড়ে যাওয়ার পর প্রাণহানির এই ঘটনা ঘটে। ভয়াবহ এই দুর্ঘটনায় সবাই মারা গেলেও অদ্ভুদভাবে একটি মেয়ে শিশু বেঁচে গেছে।

পরে আহত অবস্থায় তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। শুক্রবার (২৯ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দক্ষিণ আফ্রিকায় একটি বাস সেতু থেকে প্রায় ৫০ মিটার (১৬৫ ফুট) গভীর খাদে পড়ে যাওয়ার পর পঁয়তাল্লিশ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। অবশ্য এই ঘটনায় আট বছর বয়সী এক মেয়ে শিশুকে একমাত্র জীবিত অবস্থায় পাওয়া গেছে এবং গুরুতর আহত অবস্থায় পরে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।

বিবিসি বলছে, উত্তর-পূর্ব লিম্পোপো প্রদেশে বাসটি একটি ব্যারিয়ারে ধাক্কা দেওয়ার পর দুর্ঘটনার কবলে পড়ে এবং পরে এটিতে আগুন ধরে যায়। যাত্রীরা সবাই ছিলেন তীর্থযাত্রী এবং তারা বতসোয়ানার রাজধানী গ্যাবোরোন থেকে মোরিয়া শহরে ইস্টার সার্ভিসে যাচ্ছিলেন।

দক্ষিণ আফ্রিকার পাবলিক ব্রডকাস্টার এসএবিসি জানিয়েছে, গাড়িটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে জোহানেসবার্গের প্রায় ৩০০ কিলোমিটার (১৯০ মাইল) উত্তরে মোকোপানে এবং মার্কেনের মধ্যে মামামতলাকালা পর্বত গিরিপথে একটি সেতু থেকে ছিটকে পড়ে।

উদ্ধার তৎপরতা বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত চলেছে এবং ধ্বংসস্তূপের মধ্যে নিহত কয়েকজনের কাছে পৌঁছানো কঠিন হয়ে পড়েছে বলে জানা গেছে।

পরিবহন মন্ত্রী সিন্দিসিওয়ে চিকুঙ্গা দুর্ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন এবং পরে তিনি ‘মর্মান্তিক বাস দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর প্রতি আন্তরিক সমবেদনা’ জানান। তিনি বলেন, দক্ষিণ আফ্রিকার সরকার মৃতদেহ ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করবে এবং দুর্ঘটনার কারণ খতিয়ে দেখতে পূর্ণ তদন্ত করবে।

তিনি আরও বলেন, ‘এই কঠিন সময়ে আমাদের চিন্তাভাবনা এবং প্রার্থনা আপনার সাথে আছে। আমরা এই ইস্টার উইকএন্ডে আমাদের রাস্তায় আরও বেশি লোক থাকায় আরও বেশি সতর্কতার সাথে সবসময় দায়িত্বশীল ভাবে ড্রাইভিং করার জন্য অনুরোধ করছি।’

অবশ্য দক্ষিণ আফ্রিকার খারাপ সড়ক নিরাপত্তার রেকর্ড রয়েছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।

স্বাস্থ্যমন্ত্রীর আশ্বাসে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের কর্মবিরতি স্থগিত

ছবি: সংগৃহীত

ঈদের আগেই পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ট্রেইনি চিকিৎসকদের বকেয়া পরিশোধ ও আগামী এক মাসের মধ্যে ভাতা বৃদ্ধির আশ্বাসে কর্মবিরতির কর্মসূচি স্থগিত করেছেন চিকিৎসকরা।

পোস্ট গ্র্যাজুয়েট প্রাইভেট ট্রেইনি ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ডা. জাবির হোসেন বৃহস্পতিবার রাতে সাংবাদিকদের এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন আমাদের আশ্বস্ত করেছেন, ঈদের আগে রেসিডেন্ট, নন-রেসিডেন্ট ও এফসিপিএস ট্রেইনিদের বকেয়া ভাতা পরিশোধ করা হবে। সেইসঙ্গে পরবর্তী এক মাসের মধ্যে ভাতা বৃদ্ধির বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য জানানো হবে। ভাতা বাড়বে এই নিশ্চয়তা তিনি দিয়েছেন।

জাবির হোসেন বলেন, তার (স্বাস্থ্যমন্ত্রী) আশ্বাসে আগামী এক মাসের জন্য আমাদের আন্দোলন স্থগিত করা হলো। প্রধানমন্ত্রী এবং স্বাস্থ্যমন্ত্রীর ওপর পূর্ণ আস্থা রাখছি, দ্রুত সমস্যার সমাধান হবে।

এর আগে বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) বিকেলে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইন্সটিটিউটে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন আন্দোলনরত চিকিৎসকরা। এ সময় মন্ত্রী বলেন, ইন্টার্ন চিকিৎসকরাই একটি হাসপাতালের প্রাণ। তারা খেয়ে না খেয়ে হাসপাতালের রোগীদের সেবা করেন। আমি তাদের দাবিগুলোর যৌক্তিকতা বুঝে নিজেই ফাইল নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা বলেছি।

ডা. সামন্ত লাল বলেন, সিনিয়র চিকিৎসকরা রাউন্ড দিয়ে চলে গেলে এসব চিকিৎসকরাই রোগীদের নানারকম অসুবিধাগুলোর দেখভাল করেন। প্রধানমন্ত্রীর কাছে ফাইল নিয়ে যাওয়ার পর তিনি ফাইল গ্রহণ করেছেন। একইসঙ্গে তিনি অতি দ্রুত দেশের ইন্টার্ন চিকিৎসকদের জন্য ভাতা বৃদ্ধির সুরাহা করতে উদ্যোগ নেবেন বলেছেন।

সর্বশেষ সংবাদ

প্রাথমিকের শেষ ধাপের পরীক্ষা আজ
সেতু থেকে খাদে পড়ে ৪৫ বাসযাত্রী নিহত, অলৌকিকভাবে বেঁচে গেল শিশু
স্বাস্থ্যমন্ত্রীর আশ্বাসে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের কর্মবিরতি স্থগিত
ফিলিস্তিনি নারীদের অন্তর্বাস নিয়ে অশ্লীল খেলায় মেতেছে ইসরায়েলি সেনারা
যত জঙ্গি গ্রেপ্তার করেছি, একজনও মাদরাসার ছাত্র নন : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ার বিরোধিতা করায় সাংবাদিকের কারাদণ্ড
বাতিঘরের শ্যুটিংয়ে হিমাচলে শিরোনামহীন ব্যান্ড
যৌনস্বাস্থ্য ভালো রাখতে প্রতিদিন খাদ্যতালিকায় রাখুন এ সব
গাজায় নিহত আরও অর্ধশতাধিক ফিলিস্তিনি
৮ এপ্রিলের ট্রেনের টিকিট বিক্রি শুরু আজ
ডিজিটাল হুন্ডির মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকা পাচার, গ্রেপ্তার ৫
দূষণে বাংলাদেশে বছরে ২ লাখ ৭২ হাজার মানুষের অকালমৃত্যু: বিশ্বব্যাংক
বরিশালে নামাজ চলাকালে মসজিদে এসি বিস্ফোরণ
নওগাঁয় পরীক্ষার রুটিন পরিবর্তনের দাবিতে শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন
গুলি করে মারা হলো বিশ্বের সবচেয়ে বড় সেই সাপটিকে
দুঃসময় অতিক্রম করছি, সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে: মির্জা ফখরুল
মাকে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ায় শিক্ষক কারাগারে
বাংলাদেশ থেকে আম-কাঁঠাল-আলু নিতে চায় চীন
ঢাবির ভর্তি পরীক্ষায় চার ইউনিটে প্রথম হলেন যারা
বাংলাদেশে আসছেন সংগীতশিল্পী আতিফ আসলাম