শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫ | ৬ বৈশাখ ১৪৩২
Dhaka Prokash

রাজেকুজ্জামান রতন

মৃত্যু, মৃত্যুদণ্ড এবং তারপর?

 দেশের মানুষ যখন শুনেছিল সারারাত ধরে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্রকে তারই বিশ্ববিদ্যালয়ের সহপাঠীরা পিটিয়ে পিটিয়ে হত্যা করেছে। আহত সেই ছাত্র যন্ত্রণায় কাতরেছে, অনুনয় করেছে আর না মারার জন্য, নিজের পরিচয় দিয়ে বারবার বলেছে যারা তাঁকে মারছে সেও তাদের রাজনীতি করে, মার খেতে খেতে মৃত প্রায় সেই ছাত্র তরুণ যার নাম আবরার ফাহাদ একটু পানি খেতে চেয়েছিল কিন্তু পায় নি। কিল ঘুষি শুধু নয়, ক্রিকেট খেলার স্ট্যাম্প সহ লাঠি সোটা দিয়ে মারতে মারতে যখন দেখেছে মরেই গেল তখন তোষকে মুড়িয়ে সিঁড়ির নিচে রেখে এসেছিল তাঁকে। এই বর্ণনা দিয়েছিল যারা মেরেছে তাদেরই কয়েকজন। মানুষ পত্রিকায় এসব পড়ে শিউরে উঠেছে, অনেকেই পড়তে পারেন নি। কেউ কেঁদেছেন, কেউ স্তব্ধ হয়ে ভেবেছেন, এও কি সম্ভব !

 

দুই বছর আগে ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর বুয়েটের শেরেবাংলা হল থেকে তড়িৎ ও ইলেকট্রনিকস প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আবরার ফাহাদের আঘাতে আঘাতে প্রায় থেঁতলে যাওয়া লাশ উদ্ধার করা হয়। সারাদেশে প্রতিবাদের ঝড় উঠে। প্রথম দিকে বুয়েট এর ছাত্র ছাত্রীরা আতংকিত হলেও পরবর্তীতে তাঁরাও নেমে আসে প্রতিবাদ বিক্ষোভে। নির্যাতিত ও নিহত  আবরারের বাবা সন্তান হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে চকবাজার থানায় হত্যা মামলা করেন।

 

সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, প্রগতিশীল ছাত্র জোট সহ বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন, রাজনৈতিক মহল, সামাজিক সংগঠন দেশব্যাপী যে প্রতিবাদ গড়ে তোলে তার ফলে এই হত্যা মামলাটি দ্রুত তদন্ত করে বুয়েটের ২৫ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে ২০১৯ সালের ১৩ নভেম্বর পুলিশ আদালতে অভিযোগপত্র দেয়। তদন্ত প্রতিবেদন আমলে নিয়ে গত বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত। আসামিদের মধ্যে ২২ জনকে গ্রেফতার করা হয়। পলাতক হয়  তিনজন। ছাত্রলীগ বহিস্কার করে ঘটনার সঙ্গে জড়িত সকলকেই।

 

এরপর দুই বছর ধরে মামলা চলার পর সাক্ষ্য প্রমাণ শেষে বুয়েট ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যা মামলায় ২০ জনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। ৫ জনকে  যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। ৮ ডিসেম্বর  ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক এ রায় ঘোষণা করেন। শাস্তির রায় ঘোষণার যুক্তি হিসেবে আদালতে বিচারক বলেন, নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তির রায় দেওয়া হয়েছে।  


রাগে উত্তেজনায় কাউকে আঘাত করার মধ্যে খুব একটা অস্বাভাবিকতা নেই। দুই পক্ষের সংঘর্ষে লাঠির আঘাতে বা গুলিতে কেউ মারা যাওয়া বা টার্গেট করে কাউকে হত্যা করা বা অকস্মাৎ আঘাতে মরে যাওয়া এক কথা। কিন্তু  একজন সহপাঠীকে রাতভর পিটিয়ে পিটিয়ে হত্যা করার মধ্যে বিকৃত আনন্দ উপভোগ করা সম্পূর্ণ আলাদা কথা। আবরারকে পিটিয়ে অর্ধমৃত রেখে তারা রাতের খাবার খেয়েছে, খেলা দেখেছে। সবাই মিলে এ অবস্থায় যেতে পারলো কি ভাবে?  এই ধরণের  নৃশংসতার কোনও নজির কি আছে? অনেকেই বলেন  ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের এই নৃশংসতার তুলনা হতে পারে কেবল ছাত্রলীগের সঙ্গেই। ২০১২ সালে পুরান ঢাকায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা কুপিয়ে হত্যা করেছিল বিশ্বজিৎ দাসকে। এ দুটি ঘটনায় কোনটি বেশি নৃশংস তা নিয়ে তর্ক হতে পারে। অনেকেই বিশ্বজিৎ হত্যাকাণ্ডকেই শীর্ষে রাখবেন। কারণ, বিশ্বজিৎ হত্যাকাণ্ডটি ঘটেছিল দিনের বেলায় সবার চোখের সামনে। সব টিভির ক্যামেরায় তার ছবি আছে। এক্ষেত্রে বলা যায় ঘটনাটি তাৎক্ষনিক উত্তেজনায়, স্রেফ সন্দেহের ভিত্তিতে স্বল্পসময়ে ঘটেছে। কিন্তু আবরার হত্যাকাণ্ড তা নয়। প্রস্তুতি নিয়ে এই ভয়াবহ ও নৃশংস ঘটনা ঘটানো হয়েছে। একই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীকে রুম থেকে ডেকে নিয়ে দলবেঁধে দফায় দফায় পিটিয়ে হত্যা করার মধ্যে ঠান্ডা মাথায় নির্মমতার কি কোনও তুলনা হয়।  

 

আবরার ফাহাদের অপরাধ ছিল, তিনি বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের সমালোচনা করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন। এর জন্যে কি কাউকে পেটাতে হবে? ছাত্রলীগ তখন আইন হাতে তুলে নিয়ে কি বুঝাতে চেয়েছিল আওয়ামী লীগ সরকারের ওপর, আইনের শাসনের ওপর তাদের আস্থা নেই।
সাধারণত বলা হয়ে থাকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হলে অপরাধী ভয় পাবে এবং অপরাধ প্রবণতা কমবে। শাস্তি দেয়ার আইন, শাস্তি কার্যকর করার এত ব্যবস্থা সত্ত্বেও অপরাধ কি কমছে? শাস্তির ঝুঁকি আর অপরাধের ফলে অর্জিত সুবিধা এই দুইয়ের তুলনামূলক বিচারে সুবিধা পেতে শাস্তির ঝুঁকি নিতে পিছু পা হয় না অনেকেই। এর সাথে ক্ষমতার রসায়ন মিলে গেলে তো সোনায় সোহাগা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ছাত্রলীগের কোন কোন নেতা কর্মী শাস্তি পেয়েছে, বহিস্কার হয়েছে কিন্তু  ক্ষমতার দম্ভে ছাত্রলীগের বেপরোয়া আচরণ কি কমেছে?  দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বেআইনি কর্মকাণ্ড, হল দখল, গেস্টরুম, গণরুম- নানা প্রক্রিয়ায় তারা সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর নির্যাতন চালায়। কুয়েটে তাদের নির্যাতনে প্রভোস্টের মৃত্যুর ঘটনা ঘটে গেলো। তাদের নিজেদের অন্তর্দ্বন্দ্বেও বিপর্যস্ত হয় শিক্ষার পরিবেশ, বন্ধ হয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। কেউ মৃত্যুবরণ করলে  আলোচনার ঝড় উঠে কিন্তু  প্রতিদিন ছাত্রলীগের নির্যাতনের অসংখ্য  খবর অন্তরালে চাপা পড়ে থাকে।



এই যে  আদালতের রায়ে দণ্ডিত হলো বুয়েট ছাত্রলীগের ২৫জন নেতাকর্মী তারা কিন্তু খুনি হতে বুয়েটে ভর্তি হয়নি, ভর্তি হয়েছিল প্রকৌশলী হতে এবং তারা মেধার ভিত্তিতেই ভর্তি হয়েছিল।  কি প্রক্রিয়ায় বা কেন তারা এই মানসিকতা অর্জন করলো তা যদি বিচার করা না হয় তাহলে একটা দুইটা আলোচিত মামলার রায়ে মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়ে খুনি মানসিকতা তৈরির  এই প্রক্রিয়া বন্ধ হবে না। যারা তাদের খুনি বানায়, তাদেরকে কি খুঁজে বের করা হয়েছে কখনো?  আর অতীতেও অনেক কঠিন রায় হয়েছে কিন্তু ফলাফল কি? তাই শুধু কঠোর শাস্তির রায় হলেই  অপরাধ থামবে না। সে রায় কার্যকর হবে কি না তার নিশ্চয়তা নিয়েও সংশয় আছে, ক্ষমা পাওয়ার সম্ভাবনা আছে। যেমন ৯ বছর পরও নৃশংসভাবে নিহত বিশ্বজিৎ হত্যা মামলার রায় কার্যকর হয়নি। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি নিশ্চিন্তে ঘুরে বেড়াচ্ছে এই সমাজে কারণ তাদের রাজনৈতিক সুরক্ষা আছে এবং তারা ক্ষমতা বলয়ের আশেপাশেই আছে।   

রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ক্ষমতার দম্ভে বেপরোয়া হয়ে ওঠা ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের থামানোর আকুল আবেদন করছেন অনেকেই। কেউ আবার বলছেন ব্যবস্থা তো নেয়া হচ্ছে। কিন্তু নতুন নতুন ঘটনার কারণে এটা এখন দিনের আলোর মত পরিস্কার যে এতে কাজ হচ্ছে না। এই দুর্বৃত্তপনার  উৎসের সন্ধান করতে হবে। কারণ লতিফ সিদ্দিকী, সম্রাট, পাপিয়া, সাহেদ, শোভন বা জাহাঙ্গীর আলমের পরিনতি দেখেও তো নিবৃত্ত হয়নি ডা. মুরাদ হাসান। চাঁদাবাজির অভিযোগে কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদককে  বহিষ্কার করেও তো  থামানো যাচ্ছেনা ছাত্রলীগকে। 

 

নিম্ন আদালতের রায় হয়েছে, এটা একটা দৃষ্টান্ত। আবরারের মা বলেছেন শাস্তি দেখতে চাই। আর সাজা প্রাপ্তদের বাবা রা বলছেন, চিন্তা কোরো না বাবা। উচ্চতর আদালত থেকে ছাড়িয়ে আনবোই। দুজনেই তো বাবা ! তাই শাস্তি থেকে শিক্ষা নিতে হবে। আইনের কঠোর প্রয়োগ, দ্রুত বিচার, রায় কার্যকর কি পারবে এই প্রবণতা থামাতে ? যে ব্যবস্থা ও রাজনৈতিক সংস্কৃতি একদল মেধাবী ছাত্রের মনে খুনের সংস্কৃতি গড়ে তোলে তা কি অধরাই থেকে যাবে? না কি পাল্টা রাজনীতি ও সংস্কৃতি গড়ে তোলার পথে এগিয়ে আসবেন এটিই এখন বড় প্রশ্ন। এর উত্তর খুঁজে নেয়ার মধ্যেই আছে আমাদের ভবিষ্যৎ।  আবরার হত্যা মামলার রায়ের ক্ষেত্রে এই কথাটি প্রযোজ্য। এই ঘটনায় আবরার তো নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেনই একই সঙ্গে ধ্বংস হয়ে গেলো আরও ২৫ মেধাবীর জীবন, আজীবন বেদনা বহন করবে তাদের পরিবার। দণ্ডিত ২৫ জনই বুয়েটের শিক্ষার্থী। এমন মেধাবী ২০ জনকে মৃত্যুদণ্ড এবং ৫ জনকে যাবজ্জীবন দিতে গিয়ে বিচারকের হৃদয়ও নিশ্চয়ই ক্ষণিকের জন্য হলেও কেঁদেছে। তারুণ্যের কি বেদনাময় অপচয়!

 

একটা কথাই ঘুরপাক খাচ্ছে অনেকের মনে। এই মৃত্যুর দায় কে নেবে ? কেউ কি নেবে ? ২০ জন তরুণকে ফাঁসির দণ্ড এবং ৫ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পেতে হলো কেন? বাংলাদেশের অন্যতম সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে এসে খুনি মানসিকতা গড়ে উঠেছিল কেন তাদের? যারা এবং যে রাজনীতি তাদেরকে এই পথে এনেছিলো  তাদের পরিচয় উদঘাটন করাটাও জরুরী।  

 
লেখক: সদস্য, কেন্দ্রীয় কমিটি, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ)

  

Header Ad
Header Ad

হাসিনা-কাদেরসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলে ‘রেড নোটিশ’ জারির আবেদন

ছবি: সংগৃহীত

শেখ হাসিনাসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে ‘রেড নোটিশ’ জারির জন্য আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের কাছে আবেদন করা হয়েছে। রেড নোটিশ জারি করতে ইন্টারপোলের কাছে পৃথক তিনটি ধাপে আবেদন করেছে বাংলাদেশ পুলিশের ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরো (এনসিবি)।

শেখ হাসিনা ছাড়া আরও যাদের বিরুদ্ধে রেড নোটিশ জারির আবেদন করা হয়েছে তারা হলেন- আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, সাবেক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, সাবেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) সাবেক মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর প্রতিরক্ষাবিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত ও সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ।

পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র জানায়, আদালত, প্রসিকিউশন (রাষ্ট্রপক্ষ) অথবা তদন্ত সংস্থার অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ সদর দপ্তরের এনসিবি শাখা ইন্টারপোলে রেড নোটিশ জারির আবেদন করে থাকে।

পুলিশের সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, শেখ হাসিনাসহ যে ১২ জনের বিরুদ্ধে রেড নোটিশ জারির আবেদন করা হয়েছে, তাঁদের মধ্যে বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে করা আবেদনে আর্থিক অপরাধের অভিযোগ তুলে ধরা হয়েছে। অন্যদের বিরুদ্ধে করা আবেদনে মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকার তথ্য-উপাত্ত যুক্ত করা হয়েছে।

শেখ হাসিনা ও বেনজীর আহমেদ ছাড়া অন্য ১০ জনের বিরুদ্ধে বিরুদ্ধে এনসিবি থেকে ইন্টারপোলের কাছে আবেদন করা হয় ১০ এপ্রিল। এর আগে তাঁদের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের মাধ্যমে রেড নোটিশ জারি করার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশ সদর দপ্তরে নথিপত্রসহ চিঠি পাঠায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয়।

শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তার করতে রেড অ্যালার্ট জারির জন্য ইন্টারপোলের কাছে আবেদন করতে গত বছরের নভেম্বরে পুলিশ সদর দপ্তরকে অনুরোধ করেছিল আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয়।
অন্যদিকে বেনজীরের বিরুদ্ধে রেড নোটিশ জারি করতে ইন্টারপোলের কাছে আবেদন করা হয় চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে। এর আগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার একটি আদালত বেনজীরের বিরুদ্ধে রেড নোটিশ জারির জন্য ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন।

তবে ইন্টারপোলে রেড নোটিশ জারির আবেদনের বাইরে ভারতসহ যেসব দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের বন্দী প্রত্যর্পণ চুক্তি রয়েছে, সে চুক্তির আওতায় বিদেশে পলাতক ব্যক্তিদের ফেরানোর চেষ্টাও রয়েছে অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে। তবে বন্দী প্রত্যর্পণ চুক্তির আওতায় ফেরানো সহজ হবে না বলেও মনে করছে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো।

ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যান। এখনো সেখানেই অবস্থান করছেন তিনি। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বন্দী প্রত্যর্পণ চুক্তি রয়েছে। এই চুক্তির আওতায় তাঁকে ফেরত আনতে বাংলাদেশ সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতের কাছে আবেদন করেছে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত মোট তিনটি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত হত্যা, গণহত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে একটি মামলা রয়েছে। সেই মামলায় শেখ হাসিনার পাশাপাশি পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনও আসামি। এ ছাড়া ২০১৩ সালে রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের নেতা-কর্মীদের হত্যা-নির্যাতনের ঘটনায় একটি এবং বিগত সাড়ে ১৫ বছরে গুম-খুনের ঘটনায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে আরেকটি মামলা রয়েছে।

মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে করা মামলার তদন্ত এখন শেষ পর্যায়ে রয়েছে বলে ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটরসহ একাধিক প্রসিকিউটর সাংবাদিকদের জানিয়েছেন। আগামীকাল রোববার এ মামলায় ট্রাইব্যুনালে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের দিন ধার্য রয়েছে।

Header Ad
Header Ad

নিখোঁজের ১৪ ঘণ্টা পর সেই শিশু সেহেরিশের লাশ উদ্ধার

ছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রামের চকবাজারের হিজলা খালে পড়ে যাওয়া ছয় মাস বয়সী শিশু সেহরিসকে নিখোঁজের ১৪ ঘণ্টা পর উদ্ধার করা হয়েছে।

শনিবার (১৯ এপ্রিল) সকালে তার লাশ উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল।
এর আগে শুক্রবার (১৮ এপ্রিল) রাত ৮টার দিকে কাপাসগোলার নবাব হোটেলের পাশের নালায় ওই শিশুটি নিখোঁজ হয়।

স্থানীয়রা জানান, চট্টগ্রাম মহানগরের চকবাজার থানার কাপাসগোলা এলাকায় মা ও ছয় মাস বয়সী শিশুসহ একটি ব্যাটারিচালিত রিকশা নালায় পড়ে যায়। এ ঘটনায় মাকে উদ্ধার করা গেলেও শিশুটি পানির স্রোতে তলিয়ে যায়। এরপর শিশুটির লাশ উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল।

জানা গেছে, দুর্ঘটনার পর রিকশাচালক পালিয়ে যায়। দ্রুত গতির কারণে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুর্ঘটনার ঘটনাটি ঘটে। খবর পেয়ে চসিকের পরিচ্ছন্ন কর্মী এবং ফায়ার সার্ভিসের দল ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে উদ্ধার কার্যক্রম শুরু করেন।

শিশুটির মামা মারূফ জানান, আসাদগঞ্জ থেকে চেহরিসকে নিয়ে তার মা ও দাদি তার (মারূফ) বাসায় বেড়াতে আসছিল। বাড়ির কাছে এসে রাস্তায় পানি থাকায় রিকশা নেয় তারা। কিন্তু নালার পাশে থাকা বাঁশের বেষ্টনী খুলে ফেলার কারণে তারা রিকশা নিয়ে নালায় পড়ে যায়। পরে চেহরিসের মা সালমা ও দাদি আয়েশাকে উদ্ধার করা গেলেও চেহরিস হারিয়ে যায়।

Header Ad
Header Ad

আগামী ঈদের আগেই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে কাজ করছে সরকার

ছবি: সংগৃহীত

জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ও প্রধান উপদেষ্টার রোহিঙ্গা বিষয়ক হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ ড. খলিলুর রহমান বলেছেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের লক্ষ্যে আরাকানকে নিরাপদ স্থান হিসেবে গড়ে তুলতে সব পক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে সরকার।

প্রধান উপদেষ্টার প্রত্যাশা মতে, আগামী ঈদের আগেই যাতে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সম্ভব হয় সে লক্ষ্যে কাজ করছে সরকার।

শুক্রবার সন্ধ্যায় কক্সবাজার শহরের টেকপাড়ায় রাখাইন সম্প্রদায়ের বর্ষবরণ উৎসব সাংগ্রেং—১৩৮৭ পরিদর্শন শেষে তিনি এসব কথা বলেন।

ড. খলিলুর রহমান আরো বলেন, ‘আমি আজকেও (শুক্রবার) রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেছি। তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। একসঙ্গে নামাজ আদায় করেছি। তাদেরকে বলছি যে, আন্তর্জাতিক ফোরামে তারা যেন প্রত্যাবাসন বিষয়ে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখেন।’

ড. খলিলুর রহমান রাখাইনদের উৎসব প্রসঙ্গে বলেন, ‘বাংলাদেশ সকল ধর্মের, সকল নৃ—গোষ্ঠীর এবং সকল সংস্কৃতির একটি দেশ। আমাদের দেশের এই সময়টা উৎসবের সময়। তিনি বর্ষবরণের চমৎকার অনুষ্ঠান উপহার দেওয়ার জন্য রাখাইন সম্প্রদায়ের প্রতি অভিনন্দন জানান।’

এসময় উপস্থিত ছিলেন কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহ্উদ্দিন, শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মিজানুর রহমান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক নিজাম উদ্দিন আহমেদ, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিলুফা ইয়াসমিন।

এর আগে, গত রমজান মাসে জাতিসংঘের মহাসচিবকে নিয়ে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে যান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এ সময় তিনি, আগামী ঈদের আগেই রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। এরপর অন্তর্বর্তী সরকারের জোর প্রচেষ্টায় থাইল্যান্ডে বিমসটেক সম্মেলন চলাকালে ১ লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গাকে দেশে ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে সম্মত হয় মিয়ানমার সরকার।

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

হাসিনা-কাদেরসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলে ‘রেড নোটিশ’ জারির আবেদন
নিখোঁজের ১৪ ঘণ্টা পর সেই শিশু সেহেরিশের লাশ উদ্ধার
আগামী ঈদের আগেই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে কাজ করছে সরকার
লাল কাপড়ে ঢাকা হবে দেশের সব পলিটেকনিকের ফটক
৬০ বছর বয়সে বিয়ে করলেন বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষ
চুয়াডাঙ্গা সীমান্তে ১২ কেজি রূপার গয়না জব্দ
ফয়জুল করীমকে বরিশালের মেয়র ঘোষণার দাবি
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে অংশ নেওয়া বাংলাদেশি যুবক নিহত
গোবিন্দগঞ্জে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আটক
বাংলাদেশি যুবককে ধরে নিয়ে বিএসএফের হাতে তুলে দিল ভারতীয়রা
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে এনসিপির বৈঠক শনিবার
বাংলাদেশের সঙ্গে বৈঠক নিয়ে বিজ্ঞপ্তিতে যা জানাল পাকিস্তান
গাজায় ইসরায়েলের বিমান হামলা, শিশুসহ একই পরিবারের ১৩ জন নিহত
ভারতীয় ক্রিকেটাররা আমাকে নগ্ন ছবি পাঠাত, অভিযোগ ট্রান্সজেন্ডার ক্রিকেটারের
১৮৭ জনকে নিয়োগ দেবে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর
গাইবান্ধায় আগুনে পুড়লো ৫ দোকান, ৩০ লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি
রোহিঙ্গা সংকট সমাধানের পথে বড় সমস্যা আরাকান আর্মি: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
টঙ্গীতে ফ্ল্যাট বাসা থেকে দুই শিশুর রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার
মালয়েশিয়ায় ১৬৫ বাংলাদেশিসহ ৫০৬ অবৈধ অভিবাসী আটক
ভেঙে গেল পরীমনি-সাদীর প্রেম? রহস্যময় পোস্টে তোলপাড় নেটদুনিয়া