বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১
Dhaka Prokash

মার্টেক: মানবতার জন্য প্রযুক্তি

এবারের (২০২২) পদার্থবিদ্যায় নোবেল বিজয়ীরা প্রোটনকে ভেঙ্গে নতুন এক ধরনের কোয়ান্টাম কম্পিউটারের পথ নির্দেশনা দিয়েছেন। যে গাণিতিক সমস্যা সমাধান করতে বর্তমান সুপার কম্পিউটারের দশ বছর সময় লাগবে তা এই কোয়ান্টাম কম্পিউটার ১০ মিনিটেরও কম সময়ে করতে পারবে। অসম্ভব দ্রুত গতিতে প্রযুক্তির পরিবর্তন হচ্ছে। প্রযুক্তিকে মানুষের কাছে পৌঁছানোর বাহন মার্কেটিংকেও এর সাথে অভিযোজন করেই চলতে হচ্ছে। বাজারজাতকরণ প্রযুক্তি (Martech) বাজারজাতকরণের কৌশলগুলোকে উন্নততর করবে। কিন্তু মূল ভিত্তিকে বদলাতে পারবেনা। বাজারজাতকরণের মৌলিক কাজগুলো অপরিবর্তিতই থেকে যাবে। এগুলো হচ্ছে: চাহিদা ব্যবস্থাপনা, ভ্যালুর পৃথকীকরণ, এবং ক্রেতার সাথে সম্পর্ক অব্যাহত রাখার জন্য 'সম্পর্ক ব্যবস্থাপনা'। কার্যকরী এবং টেকসই বাজারজাতকরণের এই মৌলিক উপাদানগুলো প্রযুক্তির কারণে বদলাবে না। যার কারণে মার্কেটিংয়ের কাজও কমবে না। ব্যবসা-বাণিজ্যের অন্যান্য ক্ষেত্রেও একই অবস্থা, কাজ কিন্তু কমছে না।

(১৮৮৬ সালের পহেলা মে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের হে মার্কেটের শ্রমিকরা দৈনিক ৮ ঘন্টা কাজের দাবিতে আন্দোলন গড়ে তুলেছিল। তখন শ্রমিকদের কোন নির্দিষ্ট কর্মঘন্টা ছিল না, মালিকের ইচ্ছা অনুযায়ী কাজ করতে বাধ্য করা হতো। বহু শ্রমিকের আত্মদানের বিনিময়ে শ্রমিকদের ৮ ঘন্টা কাজের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়। নির্দিষ্ট শ্রমঘন্টা নির্ধারণ, মজুরির বৈষম্য দূরীকরণ এবং চাকরি স্থায়ীকরণের বিষয়গুলো শ্রমিকদের জোর দাবিতে পরিণত হয়। বর্তমানে মার্কেটিংয়ে এত প্রযুক্তি আসার পরেও মার্কেটিং এর সাথে সংশ্লিষ্ট কর্মীদের শ্রমঘন্টা কিন্তু এখনো ৮ ঘন্টার অনেক বেশি। ব্যাংকিং খাতে সবকিছু অনলাইন হয়ে যাওয়ার পরেও ব্যাংকের কর্মীরা কিন্তু এখনো রাত অবধি অফিসেই থাকে।

কর্পোরেট জগতের মানুষগুলো যেন ১৯৩২ সালে প্রকাশিত অ্যালডাস হ্যাক্সলি রচিত উপন্যাস 'ব্রেভ নিউ ওয়ার্ল্ড' এর মানুষগুলোর মতো, ঝলমলে দুনিয়া তাদেরকে দাস বানালেও এক ধরনের কৃত্রিম সুখের প্রলোভন দেখায়, এখানটাই সবচেয়ে বড় ক্ষতি। এক সময় দাস ছিলেন এমন একজন, ফ্রেডরিক ডগলাস বলেছেন, "একজন দাস যদি দাসত্বের সুখ অনুভব করা শুরু করেন, তো বুঝতে হবে তিনি তাঁর মানবিক গুণাবলী হারাচ্ছেন। ...গৃহপালিত গরু তার পূর্বগরুর মধ্যে তুলনা করলে দেখা যাবে গরুর প্রচুর অবনতি হয়েছে।")

বর্তমানে চতুর্থ শিল্প বিপ্লব কাল চলছে। ডিজিটাল বিপ্লবের ফলে প্রযুক্তির সংমিশ্রণে ভৌত বিজ্ঞান , সংখ্যা বিজ্ঞান, ও জীব বিজ্ঞানের পার্থক্য সৃষ্টিকারী রেখা ক্রমশ অস্পষ্ট হচ্ছে; আর এটা এক্সপোনেনশিয়াল, রৌখিক নয়। (প্রথম শিল্প বিপ্লব ছিল বাষ্পীয় ইঞ্জিনের আবিষ্কার ও যান্ত্রিকীকরণ। দ্বিতীয় শিল্প বিপ্লব ছিল বিদ্যুতের ব্যবহার এবং বৃহৎ স্কেলে উৎপাদন। তৃতীয় শিল্প বিপ্লব ছিল আইসিটি ও অটোমেশনের যুগ।)

মার্কেটিং ৫.০ এর সংজ্ঞায় "মানব সাদৃশ্য- প্রযুক্তির (human-mimicking technology) মাধ্যমে ক্রেতার পুরো পথ পরিক্রমায় উন্নততর ভ্যালু তৈরি, যোগাযোগ এবং অর্পণ নিশ্চিত করার উপর জোর দেয়া হয়েছে" ( Kotler and others, "Marketing 5.0: technology for humanity", 2021)। এক্ষেত্রে বলা হচ্ছে পরবর্তী প্রযুক্তির (next technology) কিছু বিষয় বাজারজাতকারীরা ব্যাপকভাবে ব্যবহার করবে, যা তাঁদের সামর্থকে বাড়িয়ে দেবে। এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে- কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI), NLP, সেন্সর, রোবটিক্স, আরোপিত বাস্তবতা (AR), ভার্চুয়াল বাস্তবতা (VR), ইন্টারনেট অফ থিংস (IoT), ব্লক চেইন ইত্যাদি। এই প্রযুক্তিগুলো হচ্ছে মার্কেটিংয়ের বাহন।

বিগত কয়েক বছর থেকেই মানুষের জ্ঞানগত ক্ষমতার জায়গা দখল করার মত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) তৈরি করা হচ্ছে। যার মাধ্যমে কাঠামোবিহীন ক্রেতা উপাত্ত বিশ্লেষণ করে এমন অন্ত্যদৃষ্টিসম্পন্ন ব্যাখ্যা বা উপসংহার পাওয়া যাচ্ছে যা বাজারজাতকরণকারীকে ব্যাপকভাবে সাহায্য করছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে ক্রেতার জন্য সঠিক অর্পণ নির্বাচন করছে। বিগ ডাটা বিশ্লেষণের মাধ্যমে প্রত্যেক ক্রেতার জন্য তাদের উপযোগী বারজাতকরণকৌশল নিচ্ছে। এই প্রক্রিয়াটিকে প্রত্যেকের জন্য পৃথক (segments of one) বাজারজাতকরণ নামে অবহিত করা হয়।

সত্তর বছরের পরিক্রমায় শাস্ত্রীয় মার্কেটিং ১.০, ২.০, ৩.০, ৪.০ পথ অতিক্রম করে ৫.০ তে প্রবেশ করেছে। মার্কেটিংয়ের ছাত্র এবং শিক্ষক হিসেবে নিজে এই পরিক্রমায় প্রায় অর্ধ শতাব্দী জুড়ে সম্পৃক্ত থেকে অনেকের মত আমারও উপলব্ধি হচ্ছে মার্কেটিং ১.০ ছিল পণ্য-তাড়িত (product- driven), ২.০ ছিল ক্রেতা- মুখী (customer- oriented), আর ৩.০ ছিল মানব-কেন্দ্রিক (human-centric)। মার্কেটিং ৩.০ তে মানুষের ব্র্যান্ড পছন্দের ক্ষেত্রে কার্যকরী ও আবেগীয় সন্তুষ্টির বাইরেও আধ্যাত্মিক পূর্ণতার ( spiritual fulfillment) কথা বলা হয়েছে। যার কারণে কোম্পানিগুলো ভ্যালু ভিত্তিক পৃথকীকরণে মনোযোগী হয়েছে। পণ্য বিক্রয় বা কার্যক্রম থেকে কেবল লাভই আসবেনা, এ থেকে বিশ্বের চলমান কঠিনতর সামাজিক ও পরিবেশগত সমস্যাগুলোরও সমাধান আসবে।

দীর্ঘ পরিক্রমায় সনাতনী প্রথাগুলো অতিক্রম করে "STP + 4Ps" মডেল আধুনিক বাজারকারণের বৈশ্বিক রসদ হিসেবে স্থিতি লাভ করেছে। মার্কেটিং ৩.০ পর্যন্ত এখন সনাতন শ্রেণীভুক্ত করা হয়। মার্কেটিং ৪.০ তে এসে সনাতনী প্রথা ভেঙ্গে ডিজিটাল প্রযুক্তি যুক্ত হয়। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সাথে তাল মিলাতেই মার্কেটিং ৪.০ সংস্করণের কথা এসেছে। যদিও এর আগ থেকেই মার্কেটিং এ প্রযুক্তির ব্যবহার চলে আসছিল। মার্কেটিং ৪.০ তে একটি হাইব্রিড ফ্রেমওয়ার্ক এর মাধ্যমে ক্রেতার পথ চলায় (customer- journey) বস্তুগত ও ডিজিটাল 'টাচপয়েন্ট' যুক্ত করা হয়। এ পর্যায়ে এসে মার্কেটিং প্রযুক্তি (Martech) কেবলমাত্র সামাজিক মাধ্যমে উপস্থিতি এবং বহুমাত্রিক পণ্য, সেবা ও তথ্য বন্টনে সীমাবদ্ধ থাকে না। নতুন প্রযুক্তিগুলো মার্কেটিংয়ের পুরো খেলার মাঠটাকেই বদলে দেয়।

কোভিড-১৯ মার্কেটিংয়ে ডিজিটালাইজেশনকে ত্বরান্বিত করে। ঘরে আটকা পড়া মানুষ শারীরিক দূরত্বের বাধ্যবাধকতা মানতে গিয়ে বাজার ও বাজারীর নতুন স্পর্শহীন ডিজিটাল বাস্তবতা মেনে নিতে বাধ্য হয়। এই পথ ধরে চলে এসেছে মার্কেটিং ৫.০ : মানবতা ও প্রযুক্তি । জাপানিরা স্মার্ট প্রযুক্তি ব্যবহার করে টেকসই উন্নততর সমাজ বিনির্মাণের রোড ম্যাপ ধরে কাজ শুরু করেছে। তবে এক্ষেত্রে তাঁরা মার্কেটিং ৩.০ এবং মানব-কেন্দ্রীকতা ও প্রযুক্তি সমৃদ্ধ মার্কেটিং ৪.০ কে বাদ দেয়নি, বরং অন্তর্ভুক্ত করেছে। জেনারেশন গ্যাপ, অগ্রগতির বা উন্নয়নের কেন্দ্রীভুবনের কারণে সৃষ্ট আয় ও সম্পদের বৈষম্য, ডিজিটাল বিভাজন সৃষ্ট সাইবার দরিদ্রতা গ্যাপ (cyber poverty gap) এর বিষয়টাকে কেন্দ্র করেই মার্কেটিং ৫.০ এর দার্শনিক ভিত্তি রচিত হয়েছে।

মানুষের গড় আয়ু বেড়ে যাওয়ায় পৃথিবীর ইতিহাসে এই প্রথম আমরা পাঁচটি প্রজন্ম একসাথে বসবাস করছি। বিপ্রতীপ মনোভাব, অগ্রাধিকার এবং আচরণ নিয়েই আমরা একসাথে আছি। আমাদের যাদের বয়স এখন ষাটোর্ধ্ব তাদের অনেকেরই বাবা-মা বেঁচে আছে। আমাদের সন্তান , নাতি এবং নাতির সন্তানরাও আমাদের সাথেই আছে। আমাদের মা-বাবা যাদের জন্ম হয়েছিল ব্রিটিশ উপনিবেশিক শাসন আমলে তাঁদের অল্পসংখ্যকই বিদ্যুতের আলো দেখেছেন। আমরা যারা পাকিস্তান আমলের শেষ দিকে জন্মেছি তারাও হারিকেনের আলোতেই পড়াশোনা করেছি। হারিকেনের আলোতে পড়াশোনা করা আমরাই আবার ডিজিটাল যুগেও সকল ক্ষেত্রে নেতৃত্বের কসরত করছি। আমাদের ক্রয় ক্ষমতাও বেশি।

আমাদের সন্তানরা জন্মেছে মোবাইল ফোনের যুগে। নাতীরা জন্মের পরেই দেখেছে ইন্টারনেট সহ কম্পিউটার। তাঁদের সন্তানরা গাণিতিক সমস্যার সমাধান করছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে। বাসা থেকে বেরিয়ে আসার আগে বন্ধ না করা AC বন্ধ করছে অনেক দূরে অফিসে গিয়ে IoT এর মাধ্যমে। ফাইভ-জি মোবাইলে ইন্টারনেটের গতি হবে বর্তমান মোবাইল এর চেয়ে ১০০ গুণ, তথ্য প্রক্রিয়াজাতকরণের ক্ষমতা হবে অন্তত দশ গুণ । আমাদের অন্তর্নিহিত আয় ও সম্পদের বৈষম্যের কারণে বাজার দুই সীমান্তের দিকে ধাবিত হচ্ছে। উচ্চ আয়ের কারণে একদিকে যেমন বিলাসী মার্কেট তৈরি হচ্ছে, অন্যদিকে আয় পিরামিডের ভিত্তি অনেক বড় হচ্ছে। এতে গণ মানুষের একটি নিম্ন ভ্যালুসম্পন্ন কম দামি পণ্যের বাজার তৈরি হচ্ছে। মধ্যম বাজারটি ক্রমশ সংকুচিত হচ্ছে এবং কোন কোন ক্ষেত্রে বিলুপ্ত হচ্ছে। যার কারণে শিল্পের খেলোয়াড়দের উপরের দিকে যেতে হচ্ছে অথবা নিচের দিকে নামতে হচ্ছে।

বাজারজাতকরণকারীকেই cyber poverty gap এর বিষয়টিও সমাধান করতে হবে। যারা খুব দ্রুত ডিজিটালাইজেশনের আওতায় আসবেনা বা আসতে পারবেনা তাদের কথাও ভাবতে হবে। প্রযুক্তি যত দ্রুত অগ্রসর হচ্ছে সমাজ ততো দ্রুত অগ্রসর হচ্ছে না। ডিজিটাইজেশন এর কারণে কর্মচ্যুতি যেমন ঘটছে, ব্যক্তিগত গোপনীয়তা বলতেও কিছু থাকছে না। যদিও প্রযুক্তিবিদরা এর মাধ্যমে উচ্চ প্রবৃদ্ধি এবং উচ্চ মানবিকতার প্রতীজ্ঞার কথা বলছেন। ব্যবসায়ীকে এই বিভক্তিকে অতিক্রম করে সকলের জন্য প্রযুক্তি সুবিধা নিশ্চিত করার জন্য কাজ করতে হবে।

ব্যবসায় বাণিজ্যের সকল গবেষণা এবং প্রযুক্তি কোম্পানির স্বার্থকেন্দ্রিক। কীভাবে কোম্পানির ব্র্যান্ডের শ্রীবৃদ্ধি করে বাজারে প্রতিযোগিতায় আরো সুদৃঢ় অবস্থান নেয়া যায়, মুনাফা সর্বোচ্চকরন এবং কোম্পানির প্রবৃদ্ধিই গবেষণা এবং প্রযুক্তি উন্নয়নের মূল বিষয়বস্তু। কোম্পানি বা অর্থনীতির সার্বিক প্রবৃদ্ধির তুলনায় কর্মসংস্থানের প্রবৃদ্ধি কম এবং কোন কোন ক্ষেত্রে নেগেটিভ। সমাজে ব্যাপক বৈষম্য তৈরি হচ্ছে। নতুন করে যুক্ত হয়েছে "cyber poverty gap"। অনেক বিশেষজ্ঞ এবং আন্তর্জাতিক সংস্থার আশঙ্কা হচ্ছে 'ওমিক্রন' এবং 'ইউক্রেনের' প্রভাবে বিশ্বে দারিদ্র বিমোচনের প্রক্রিয়া এক দশক পিছিয়ে যাবে। যেমনটি বলেছিলেন টমাস পিকেটি তাঁর 'Capital in the 21st Century' বইয়ে , "উন্নয়ন অর্জনে সফল হওয়ার পরেও আয় ও সম্পদের বৈষম্য কমে না"।

মার্কেটিংয়ের বদৌলতে সফট ড্রিংস ও বোতলজাত পানির রমরমা ব্যবসা হলেও এখনো পৃথিবীর অনেক জায়গাতেই মানুষ সুপেয় পানি তো দূরের কথা, পানিই পাচ্ছে না। বিদ্যুৎ পৌঁছানো যায়নি এখনো সকলের কাছে। বিজ্ঞানের আবিষ্কার সমূহ প্রযুক্তি হয়ে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়লেও সকলের কাছে কয়টার প্রাপ্যতা নিশ্চিত হয়েছে? একমাত্র মোবাইল ফোনই কিছুটা গণতান্ত্রিক প্রযুক্তি । এর বাইরে খুব কম প্রযুক্তির উদ্ভাবন সাধারণ মানুষ ব্যবহার করতে পেরেছে (Jagdish Sheth, 2018) । ব্যক্তিগত ব্যবহারের প্রযুক্তি যত সহজলভ্য হয়েছে, পাবলিক পণ্য ততটা বাড়েনি, বরং সীমিত হয়েছে । বড় ব্র্যান্ডের পণ্যগুলো ধনীদের কাছে বিক্রির জন্য যত গবেষণা করেছে দরিদ্রদের নিকট তাদের পণ্য পৌঁছে দেয়ার জন্য ততটা সচেষ্ট হয়নি । তাই প্রয়োজন সোশ্যাললি রেস্পন্সিবল মার্কেটিং।

বিগত ৬০ বছর যাবত ফিলিপ কটলার মানুষকে শিখিয়েছেন সমাজের ক্ষতি না করে ক্রেতাকে সর্বোচ্চ সন্তুষ্টির মাধ্যমে সর্বোচ্চ মুনাফা করতে হবে। কটলার তাঁর ৯০ তম জন্মদিনে এসে এক বক্তৃতায় যে বিষয়টার উপর জোর দিয়েছেন সেটা হচ্ছে "better marketing for better world -BMBW "। এর দুটি কনসেপ্ট: প্রথমটি হচ্ছে "gross domestic happiness", যা তিনি ভুটানের প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে ধার করেছেন বলে উল্লেখ করেছেন। অপরটি হচ্ছে "Gross domestic well-being"।

দরিদ্রতা, পরিবেশ দূষণ, পানি ও প্রাকৃতিক পণ্যের স্বল্পতা, জলবায়ু পরিবর্তন, সামাজিক অন্যায্যতা এবং সম্পদের কেন্দ্রীভূবনের মত অস্বস্তিকর বিষয়গুলো থেকে পরিত্রাণের চেষ্টাকে মার্কেটিং সিদ্ধান্তের আওতাভুক্ত করতে হবে। এর কারণ হচ্ছে মার্কেটিং আমাদের সমাজকে সামগ্রিকভাবে প্রভাবিত করে। প্রযুক্তি নির্ভর বাজজাতকরণের প্রভাব সমাজের উপর আরো বেশি। যেমন, পৃথিবীতে প্রায় আড়াইশো কোটি মানুষ ইউটিউব ব্যবহার করে। তাঁদের রুচি, ন্যায়-অন্যায়, নান্দনিকতা, মানবিকতা, মানসিকতা, খাদ্যাভ্যাস, খাদ্য গ্রহণ প্রক্রিয়া (floodways), সামাজিকতা, জ্ঞান, দৃষ্টিভঙ্গি, মূল্যবোধ ইত্যাদি সবকিছু নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে কয়েকশ নেট ইঞ্জিনিয়ার (ইউটিউব মার্কেটার) তাঁদের কেন্দ্রীয় অফিসকক্ষে বসে; কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে। অনেকটা সমাজবিজ্ঞানীদের বর্ণিত "hundredth monkey effect" এর মতো।

মার্কেটারদের কর্মকাণ্ডে ন্যায়-নীতি, পরিবেশ, আইনি ও সামাজিক প্রেক্ষিতকে অবশ্যই বিবেচনায় নিতে হবে। কোম্পানীগুলো তাদের প্রতিযোগীর তুলনায় ক্রেতাকে সর্বোচ্চ সন্তুষ্টি প্রদান করবে, কিন্তু একই সাথে ক্রেতার এবং সমাজের দীর্ঘমেয়াদি কল্যাণও নিশ্চিত করবে। পণ্য যখন দ্রব্যে (commoditized) পরিণত হচ্ছে, ক্রেতা সচেতনতা যখন বাড়ছে, তখন অনেক কোম্পানি সামাজিক দায়িত্বশীলতাকে তাদের পৃথকীকরণের হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করছে এবং সফলতা পাচ্ছে।

লেখক: অধ্যাপক, মার্কেটিং বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

Header Ad

আবারও ঢাকাই সিনেমায় কলকাতার পাওলি দাম

অভিনেত্রী পাওলি দাম। ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশের সিনেমায় আবারও অভিনয় করতে যাচ্ছেন পশ্চিমবঙ্গের জনপ্রিয় অভিনেত্রী পাওলি দাম। প্রখ্যাত নির্মাতা ফাখরুল আরেফীন খানের চতুর্থ সিনেমা ‌‘নীল জোছনা’য় দেখা যাবে জনপ্রিয় এই অভিনেত্রীকে।

সিনেমাটি নির্মিত হচ্ছে মোশতাক আহমেদের প্যারাসাইকোলজি বিষয়ক উপন্যাস ‘নীল জোছনার জীবন’ অবলম্বনে। আর এর প্রধান নারী চরিত্র লায়লার ভূমিকায় পাওয়া যাবে ওপার বাংলার এই অভিনেত্রীকে।

অভিনেত্রী পাওলি দাম। ছবি: সংগৃহীত

বুধবার (২৪ এপ্রিল) কলকাতার ডিকালগ ম্যানেজমেন্ট সেন্টারে পাওলির সঙ্গে আনুষ্ঠানিক চুক্তি করেন নির্মাতা ফাখরুল আরেফীন খান। তবে সিনেমায় তার বিপরীতে কে থাকছেন, তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। নির্মাতা জানিয়েছেন, পাওলির বিপরীতে দেশের একজন অভিনয়শিল্পীকে দেখা যাবে। যা খুব শিগগির চুড়ান্ত করা হবে।

এদিকে, বাংলাদেশের সিনেমায় আবার অভিনয় করার প্রসঙ্গে পাওলি বলেন, ‘গত বছর নির্মাতা ফাখরুল আরেফিন খান আমার সঙ্গে এই সিনেমা নিয়ে যোগাযোগ করেন। প্রথমে তার কাছে থেকে গল্পটি শুনেছি, যেহেতু তখনও মোশতাক আহমেদের সেই বইটি আমার পড়া ছিল না, এরপর যখন বইটি পড়লাম, তখন দারুণ লাগল। বলা যায়, এই সিনেমার সঙ্গে সেদিন থেকেই জড়িয়ে আছি। যার আনুষ্ঠানিকতা গতকাল হয়েছে।’

এই অভিনেত্রী আরও বলেন, ‘সত্যি বলতে কী প্যারালাল ইউনিভার্স নিয়ে বাংলায় কাজ হয়নি বললেই চলে। হলিউডে কিছু কাজ হয়েছে। যেগুলোর মধ্যে রয়েছে ক্রিস্টোফার নোলানের “ইন্টারেস্টলার”, “ইনসেপশন”র উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে।’

নির্মাতা ফাখরুল আরেফীন খান বলেন, ‘এই সিনেমার কাজ শুরু করেছিলাম প্রায় ৬ বছর আগে। সেই ২০১৮ সালের শেষের দিকে। প্যারাসাইকোলজি নিয়ে আমার ধারণা এর আগে বাংলাদেশে কোনো কাজ হয়নি। আর সে কারণেই আমি মোশতাক আহমেদের উপন্যাসটি পড়ি, তখনই চিন্তা করি সিনেমা বানানোর। এরপর ২০১৯ সালে করোনা এবং আমার “জেকে ১৯৭১” সিনেমার কারণে কাজটি বন্ধ ছিল। এরপর আবারও গত বছরের শুরু থেকে কাজটি শুরু করি।’

পাওলি দাম প্রসঙ্গে এই নির্মাতা বলেন, ‘আমাদের গল্পের অন্যতম নারী চরিত্র লায়লা, যা পাওলি দামের সঙ্গে অনেক বেশি যায়, যার কারণে আমরা তাকে এই চরিত্রের জন্য প্রথমে নির্বাচিত করি। এরপর পাওলির সঙ্গে যোগাযোগ হয়, তাকে চিত্রনাট্য পাঠানো হলে তিনিও আমাদের সিনেমায় অভিনয়ের জন্য রাজি হন। আশা করছি, আমরা পাওলিকে নিয়ে কাজটি খুব ভালোভাবে শেষ করতে পারব।’

নির্মাতা ফাখরুল আরেফীন খান এবং অভিনেত্রী পাওলি দাম। ছবি: সংগৃহীত

নির্মাতা জানান, সরকারী অনুদানের সিনেমা ‘নীল জোছনা’র দৃশ্যধারণ শুরু হবে আগামী মাসের শেষদিকে।

উল্লেখ্য, হাসিবুর রহমান কল্লোলের ‘সত্তা’ সিনেমার মধ্যদিয়ে ঢাকাই চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন কলকাতার অভিনেত্রী পাওলি দাম। এতে তার বিপরীতে ছিলেন শাকিব খান। সিনেমাটি মুক্তি পায় ২০১৭ সালে।

ময়মনসিংহে সড়ক দুর্ঘটনায় সাবেক কৃষকলীগ নেতাসহ নিহত ২

নিহত কৃষকলীগ নেতা মো. শামীম পারভেজ। ছবি: সংগৃহীত

ময়মনসিংহের ত্রিশাল ও ফুলপুর উপজেলায় পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় কৃষক লীগ নেতাসহ দুইজন নিহত হয়েছে। এতে আহত হয়েছে নজরুল ইসলাম দীপক নামে আরও একজন।

বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) সকালে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক এবং ময়মনসিংহ-শেরপুর মহাসড়কের পৃথক পৃথক স্থানে এসব দুর্ঘটনা ঘটে।

নিহতরা হলেন- ত্রিশাল পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. আজহারুল ইসলামের বড় ছেলে শামীম পারভেজ (৩০) ও ফুলপুর উপজেলার ইমাদপুর গ্রামের মৃত ইব্রাহীম শেখের ছেলে সুরুজ আলী (৭০)। শামীম পারভেজ উপজেলা কৃষকলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন।

ত্রিশাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কামাল হোসেন বলেন, নিজের ফিসারির মাছ বিক্রি করে প্রাইভেটকারে ময়মনসিংহ থেকে ত্রিশালের নিজ বাড়িতে ফিরছিলেন কৃষকলীগ নেতা শামীম ও নজরুল ইসলাম দীপক। এসময় তাদের বহনকারী প্রাইভেটকার ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ত্রিশাল উপজেলার নুরুর দোকান এলাকায় আসতেই হঠাৎ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পাশের খাদে পড়ে গিয়ে বৈদ্যুতিক খুঁটিতে ধাক্কা লাগে। এতে প্রাইভেটকারটিতে আগুন ধরে গেলে যুবলীগ নেতা শামীম পারভেজ (৩০) ঘটনাস্থলেই মারা যান। এ সময় তার সঙ্গে থাকা মো. নজরুল ইসলাম দীপক আহত হন।

তিনি আরও জানান, এ ঘটনায় নিহতের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। পরিবারের আবেদনের প্রেক্ষিতে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

অপরদিকে ময়মনসিংহের ফুলপুরে ফজরের নামাজ পড়তে ঘর থেকে বের হয়ে ট্রাকচাপায় সুরুজ আলী (৭০) নামে এক বৃদ্ধ নিহত হয়েছেন। নিহত সুরুজ আলী উপজেলার ইমাদপুর গ্রামের মৃত ইব্রাহিম শেখের ছেলে।

ফুলপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাহাবুবুর রহমান বলেন, নিহত সুরুজ আলী ফজরের নামাজ পড়তে বের হয়ে সড়কে এলে ময়মনসিংহ-শেরপুর মহাসড়কের ইমাদপুর এলাকায় ময়মনসিংহ থেকে আসা একটি বেপরোয়া গতির ট্রাক হঠাৎ তাকে চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান।

এ ঘটনায় নিহতের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। সেইসঙ্গে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন বলেও জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।

গোবিন্দগঞ্জে বৃষ্টির জন্য ইস্তিসকার নামাজ আদায়

গোবিন্দগঞ্জে সালাতুল ইস্তিসকার আদায় করছেন মুসল্লিরা। ছবি: ঢাকাপ্রকাশ

বৃষ্টির জন্য প্রার্থনা করে গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জে বিশেষ নামাজ সালাতুল ইস্তিসকার আদায় করেছেন মুসল্লিরা।

বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) সকাল ১১টায় গোবিন্দগঞ্জ সরকারি কলেজ মাঠে এই নামাজ আদায় করা হয়।

বিশেষ এই নামাজে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ সহস্রাধিক মুসল্লি অংশ গ্রহণ করেন। নামাজ শেষে খুতবা পাঠ ও পরে দোয়া অনুষ্ঠিত হয়।
পরে তাপদাহ থেকে মুক্তি ও বৃষ্টির জন্য আল্লাহর দরবারে বিশেষ দোয়া পরিচালনা করন শ্রীমুখ জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা মো. আব্দুস ছালাম নাটোরী।

এছাড়া গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার কাটাবাড়ি মাহমুদবাগ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ ও নাকাইহাট হাইস্কুল মাঠেও এই নামাজ আদায় করেন স্থানীয়রা।

সর্বশেষ সংবাদ

আবারও ঢাকাই সিনেমায় কলকাতার পাওলি দাম
ময়মনসিংহে সড়ক দুর্ঘটনায় সাবেক কৃষকলীগ নেতাসহ নিহত ২
গোবিন্দগঞ্জে বৃষ্টির জন্য ইস্তিসকার নামাজ আদায়
বেনজীর ও তার পরিবারের সদস্যদের নগদ অর্থের তথ্য চেয়ে চিঠি দুদকের
ভূমি মন্ত্রণালয়ে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি, নেবে ২৩৮ জন
জয়কে আজীবন বয়কট, ২ জনকে সাময়িক বহিষ্কার
বৃষ্টির আশায় নওগাঁর বিভিন্ন উপজেলায় ইসতিসকার নামাজ আদায়
নওগাঁয় ঔষধ ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে হয়রানি মূলক মামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন
টাঙ্গাইলে পঁচা মাংস বিক্রি, ব্যবসায়ীকে জরিমানা
‘উপজেলা ভোটে ব্যর্থ হলে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা ক্ষুণ্ণ হতে পারে’
শপথ নিলেন আপিল বিভাগের নতুন ৩ বিচারপতি
তীব্র গরমে দুঃসংবাদ দিলো আবহাওয়া অফিস
মনোনয়ন প্রত্যাহার না করা মন্ত্রী-এমপির স্বজনদের সময়মত ব্যবস্থা
মিয়ানমার সেনাসহ ২৮৮ জনকে ফেরত পাঠাল বিজিবি
বিশ্বজুড়ে চলমান যুদ্ধ বন্ধে বিশ্বনেতাদের প্রতি আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর
আরও ৩ দিন হিট অ্যালার্ট জারি
আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ের গল্প আসছে বাংলাদেশের পর্দায়
শরীয়তপুরে দুপক্ষের সংঘর্ষে শতাধিক ককটেল বিস্ফোরণ, আহত ৫
মুক্তি পেল ইমতু রাতিশ ও অলংকার এর 'বরিশাইল্লা সং'
জরুরি সাংগঠনিক নির্দেশনা দিলো ছাত্রলীগ