বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ | ১০ বৈশাখ ১৪৩১
Dhaka Prokash

সরকারি কর্মকর্তাদের ‘স্যার’ সম্বোধন ও আমলাতন্ত্র

রংপুরের ডিসি মহোদয় যদি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষককে ‘স্যার’ সম্বোধন করতেন তাহলে তার মান সম্মান কোনোভাবে কমে যেত না বরং বেড়ে যেত। একইভাবে, উক্ত শিক্ষক যদি ডিসি মহোদয়কে ‘স্যার’ বলে সম্বোধন করতেন তাতে তারও মান সম্মানের একটুও হানি হতো না বরং বেড়ে যেত। দুজনই কিন্তু দুজনের সুপিরিয়রিটি দেখাতে চেয়েছেন। তবে, ডিসি একটু বেশি দেখাতে চেয়েছেন এবং স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন যে, তাদের স্যারই বলতে হয়, কারণ তিনি প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা— যারা নিজেদের সবার চেয়ে আলাদা ভাবেন।

কেন ভাবেন তার সে রকম কোনো উত্তর নেই। তবে, শিক্ষক সঙ্গে সঙ্গে বিরল এক ধরনের প্রতিবাদ করে বিষয়টিকে অনেকের মাঝে পৌঁছে দিতে পেরেছেন— সেটির জন্য তাকে ধন্যবাদ। আমাদের দেশের শিক্ষকরা কিন্তু সেই জায়গাতে নেই যে, সমাজের সবাই তাদের সম্মান জানাবে। ব্যক্তিগতভাবে কেউ কেউ সেই জায়গাটি দখল করেছেন কিন্তু সাধারণ অর্থে সবার ক্ষেত্রে সেটি সম্ভব হয়নি, আর তাই সমাজ সব শিক্ষককে মোটামুটি একই মানদণ্ডে মাপতে চায়। এটিও একেবারেই ঠিক নয়।

সেনাবাহিনীর জেনারেলদের ভেতরেও কেউ কেউ আছেন শিক্ষকদের ‘স্যার’ বলেন, তাতে তাদের সম্মানের কোনো হানি হয় না। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে সেনাবাহিনী সম্পর্কে আমরা সোচ্চার ছিলাম যে, এত গরিব দেশে সোনবাহিনীর পেছনে এত খরচ, বসে বসে তাদের দেশ পালছে কেন। সেই সেনাবাহিনী কিন্তু এখন বড় ইন্ডাস্ট্রিতে পরিণত হয়েছে। জাতিসংঘ বাহিনীতে পেশাগত দক্ষতা প্রদর্শন করে লাখ লাখ ডলার দেশে নিয়ে আসছে। শুধু তাই নয়, দেশেও রয়েছে তাদের বিভিন্ন সেক্টরে ব্যবসা। কাজেই সেনাবাহিনী নিয়ে এখন তেমন কথা নেই। কিন্তু আমাদের এ সব প্রশাসকদের নিয়ে কী হবে? সমাজের কী হবে? এখনো সবাই, উচ্চশিক্ষা নেওয়ার পরেও একজন প্রশাসক হওয়ার জন্য অর্জিত সববিদ্যা জলাঞ্জলি দিয়ে কেরানী হওয়ার জন্য পাগলপ্রায়।

দেশের সত্যিকার উন্নয়নের জন্য আমাদের দেশে প্রয়োজন প্রচুর প্রকৃত গবেষক (শুধু ডক্টরেট নামধারী নয়), প্রকৃত বিজ্ঞানী, কৃষিবিদ, শিক্ষাবিদ, আবিষ্কারক, উদ্ভাবক, দরকার ব্যবসায়ী, উদ্যোক্তা যারা অন্যের কর্মসংস্থানে ব্যবস্থা করতে পারেন, ব্যবসায়ী যারা দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে পারেন, প্রয়োজন দক্ষ জনবল তৈরি যারা দেশে ও বিদেশে দক্ষতার ছাপ রেখে দেশের উন্নয়নে প্রকৃতঅর্থে অবদান রাখতে পারেন।

আমাদের দরকার প্রচুর ‘ভালো ডাক্তার’। আমরা প্রতিবছর হাজার হাজার ডাক্তার বানাচ্ছি কিন্তু লাখ লাখ রোগী চিকিৎসার জন্য যাচ্ছেন ভারত, সিঙ্গাপুর আর থাইল্যান্ডে। ডাক্তারদের তো যন্ত্র বানালে হবে না, তাদের মানবিকতাও শিক্ষা দিতে হবে। মানুষের সঙ্গে কীভাবে, রোগীর সঙ্গে অভয়বানী দিয়ে কথা বলতে হয়— তা আমাদের দেশের অধিকাংশ ডাক্তারই জানেন না। ফলে অসচ্ছল রোগীও জামিজমা বিক্রি করে ভারতে যায় চিকিৎসার জন্য। সেখানকার ডাক্তাররা জানেন রোগীদের সঙ্গে, তাদের আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে কীভাবে কথা বলতে হয়। চিকিৎসা মানেই শুধু গন্ডায় গন্ডায় টেস্ট করানো নয়, সেটি তারা বুঝেন। কিন্তু এ সব বিশেষজ্ঞ তৈরির কোনো উদ্যোগ নেই বরং পড়াশুনা করে এসে সবাই প্রশাসক হওয়ার জন্য ব্যস্ত, মহাব্যস্ত। তাই, ডাক্তার হচ্ছেন ম্যাজিস্ট্রেট, ইঞ্জিনিয়ার হচ্ছেন এসিল্যান্ড, কৃষিবিদ হচ্ছেন ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ।

জাতীয় জীবনে এটির প্রভাব মারাত্মক নেগেটিভ কিন্তু কে এগুলো নিয়ে চিন্তা করবে? প্রশাসক হয়ে সবাই জনগণের কাছ থেকে ‘স্যার’ শোনার জন্য ব্যস্ত, মহাব্যস্ত। তারা যেন সেই ব্রিটিশ রাজ্যে বাস করছেন। চারদিকে শুধু প্রশাসক। আর আমরা চিকিৎসা করাচ্ছি দেশের বাইরে। প্রকৌশলী নিয়ে আসছি বিদেশ থেকে, আমাদের রাস্তা, ব্রিজ তৈরি করে দিচ্ছেন বিদেশি প্রকৌশলীরা। আর আমাদের প্রকৌশলীরা হচ্ছেন প্রশাসক। কেন? সবাই তাদের ‘স্যার’ বলবেন, শক্ত করেই বলবেন। আত্মীয়-স্বজন বলতে পারবে আমার ভাগ্নে অমুক জেলার ডিসি, ওমুক উপজেলার ইউএনও। সমাজও তাতে বেজায় খুশী। আমার চাচা সচিব।

দেশের অর্থনীতির চাকা সচল থাকা দরকার, কর্মসংস্থান বাড়ানো দরকার আর এগুলোর জন্য প্রয়োজন উদ্যেক্তা, ব্যবসায়ী। উদ্যোগী মানুষ যারা প্রকৃতঅর্থে দেশের উপকার করছেন। কিন্তু দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য আপনি ব্যবসা করবেন, উদ্যোক্তা হবেন, এনজিও কর্মী হবেন আপনাকে যেতে হবে ওইসব প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের কাছে, যারা আপনার ফাইল আটকে দিয়ে মজা লুটছেন, ক্ষমতা দেখাচ্ছেন। দেশ কেমনে আগাবে? দেশের সাধারণ মানুষ কীভাবে তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন করবে। পৃথিবীর ধনী গরিব সব দেশেই সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি সংস্থা কাজ করে।

আমাদের দেশের উন্নয়নে বেসরকারি সংস্থাগুলোর প্রভূত অবদান রয়েছে। অনেক সংস্থা বিদেশ থেকে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতে সাহায্য নিয়ে আসে কিন্তু ‘এনজিওব্যুরো’ নামে যে প্রতিষ্ঠানটি রয়েছে সেখানে গিয়ে আপনাকে ধরনা দিতে হবে দ্বারে দ্বারে— আপনার সেই অর্থ ছাড়ের জন্য। এখানেও সেই ‘আমলাতন্ত্র’ যার কাছে সবাই জিম্মি। আপনাকে অনেক কৌশলে উৎকোচ দিতে হবে (কাগজের মধ্যে, ফাইলের মধ্যে, যাতে কোনো প্রমাণ না থাকে)। এগুলো দেখার কেউ নেই।

ব্যাকের প্রতিষ্ঠাতা ফজলে হাসান আবেদ যে প্রতিষ্ঠান দেশে সৃষ্টি করেছেন তাতে লাখ লাখ মানুষ কাজ করছেন। ফজলে হাসান ছাড়াও অনেক ছোট ছোট এনজিও গড়ে তুলেছেন এক একজন সফল ব্যক্তি, যারা দেশকে প্রকৃতঅর্থেই সেবা দিয়ে যাচ্ছেন, মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি করছেন। কিন্তু তাদের পদে পদে বাঁধা দেওয়ার জন্য রয়েছেন এ সব প্রশাসনিক কর্মকর্তা। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই শিক্ষকও কিন্তু তার একটি বিদ্যালয় নিয়ে কথা বলতে গিয়েছিলেন রংপুরের ডিসি মহোদয়ের কাছে।

আমাদের প্রশাসনে যে ব্যবস্থা কায়েম করার জন্য কর্মকর্তারা ‘স্যার’ শুনতে চান তার পেছনে রয়েছে ঔপনিবেসিক মানসিকতা।

ব্রিটিশ শাসনামলে ব্রিটিশ সিভিল সার্ভিসের মতো ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিস গঠন করে সেখানে ভারতীয়দের নিয়োগ দেওয়ার জন্য ১৮৩৩ সালে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে আইন পাশ করা হয়। কিন্তু ১৮৫৩ সাল পর্যন্ত ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিসে ভারতীয়দের অংশ নেওয়া বন্ধ করে রাখা হয়েছিল আইসিএসে থাকা ব্রিটিশ অফিসারদের কারসাজিতে। এ সময় ব্রিটিশ পার্লামেন্ট ভারতীয়দের আইসিএসে নিয়োগদান প্রশ্নে আইনি বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে। ব্রিটিশ আইন প্রণেতারা ব্রিটিশ সিভিল সার্ভিসের মতো একটি বিশুদ্ধ সার্ভিসে ভারতীয়দের অন্তর্ভুক্তর বিষয়ে আপত্তি তোলেন। তাদের বক্তব্য অনেকটাই এমন ছিল যে, ভারতীয়রা নোংরা ও দুর্নীতিগ্রস্ত, ফলে পুরো ব্যবস্থাটা হুমকির মুখে পড়বে। তখন ভারতীয়দের ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিসে অন্তর্ভুক্তির পক্ষে অবস্থান নিয়ে তৎকালীন ভারত সচিব বলেছিলেন, আমরা ব্রিটিশ সিভিল সার্ভিসের আদলে ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিসে এমন সব ভারতীয়কে নিয়োগ দেব, যারা দেখতে হবে ভারতীয় কিন্তু চিন্তায় হবে ব্রিটিশ। ১৯৫৩ সালেই আইসিএসে ভারতীয়দের অংশগ্রহণের সুযোগ উন্মুক্ত হয়। কিন্তু ১৯৬৩ সালের আগ পর্যন্ত কোনো ভারতীয় আইসিএস অফিসার হতে পারেনি। কারণ আইসিএস পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হতো লন্ডনে। সে সময় বেশিরভাগ মানুষের পক্ষে পয়সা খরচ করে লন্ডনে যাওয়া ছিল কষ্টসাধ্য ব্যাপার। ১৯৬৩ সালে প্রথম ভারতীয় হিসেবে আইসিএস অফিসার হন সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর। এভাবেই স্থানীয়রা ব্রিটিশ কাঠামোর প্রশাসন ব্যবস্থায় ঢুকে পড়ে, যারা এদেশের মানুষ কিন্তু ব্রিটিশ রাজকর্মচারী হয়ে তাদের উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করবে। ধীরে ধীরে সেই আমলাতন্ত্র সমগ্র ভারতবর্ষের শাসনকাঠামোতে শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করে।

শরীরের রং ভারতীয় কিন্তু চিন্তা চেতনায় ইংরেজ শাসক! পাকিস্তান সৃষ্টি হওয়ার পর ভারত থেকে বেশ কিছু আইসিএস অফিসার পাকিস্তানে চলে আসেন এবং পাকিস্তানের শাসনব্যবস্থায় জেঁকে বসেন। স্বাধীন দেশে কাজ করতে তারা উপযুক্ত নন। কিন্তু শুরুতে পাকিস্তানের রাজনীতিতে যোগ্য রাজনীতিবিদ না থাকায় তারাই হয়ে পড়েন পাকিস্তানের ভবিষ্যৎ নির্মাতা। কিছু দক্ষ রাজনীতিবিদ ছিলেন তাদের অধিকাংশই ছিলেন বাঙালি। পাকিস্তানের ২৩ বছরের শাসনকালে বাঙালিরা ছিল অনেকটা দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক। শুরু থেকেই পাকিস্তানের ভবিষ্যৎ চলে গিয়েছিল ভারত থেকে আসা আমলাতন্ত্রের হাতে। পাকিস্তানে সামরিক ও বেসামরিক আমলাদের দৌরাত্মে আজ পর্যন্ত কোনো সরকার তার পূর্ণ মেয়াদ শেষ করতে পারেনি। ১৯৫৪ সালের ২৪ অক্টোবর পাকিস্তান গণপরিষদ যখন দেশটির সংবিধান রচনায় ব্যস্ত তখনই সামরিক-বেসামরিক আমলাদের প্ররোচনায় দেশটির গভর্নর জেনারেল গোলাম মোহাম্মদ সেই গণপরিষদ ভেঙে দেন। কারণ আমলাদের শঙ্কা ছিল পাকিস্তানের সংবিধান প্রণীত হলে দেশের শাসনভার রাজনীতিবিদ তথা জনপ্রতিনিধিদের হাতে চলে যাবে। আর তখন তাদের রাজনীতিবিদদের অধীনে কাজ করতে হবে। উল্লেখ্য গোলাম মোহাম্মদও একজন আমলা ছিলেন।

আমাদের নারী কর্মকর্তাদের ‘স্যার’ সম্বোধন আসলে লিঙ্গসমতার একটি ভালো উপায় বলে কেউ কেউ বলছেন, আবার অন্য একদল বলছেন এটি অত্যন্ত আপত্তিকর। নারী কর্মকর্তাদের ‘স্যার’ সম্বোধন করা এত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠল কেন? তাদের স্যার বললে তারা খুব খুশী হন। আমরা দুবার স্বাধীন হয়েছি কিন্তু মন মানসিকতায় আমরা ব্রিটিশ ও পাকিস্তানিই রয়ে গেছি। ব্রিটিশদের কথা না হয় বাদই দিলাম, কারণ তারা তো সারাবিশ্ব দাপিয়ে বেড়িয়েছে।

পাকিস্তানের দিকে যদি তাকাই তাহলে আমরা কি দেখতে পাই? পাকিস্তান দুটি দলে বিভক্ত। সেনাবাহিনী আর তার বিরোধী। স্বাধীনতার পর থেকে পাকিস্তানে সরাসরি কিংবা ছদ্মবেশি মার্শাল ল-ই চলছে। সেখানকার সেনাবাহিনী মনে করে তারাই দেশের সবকিছু। সিভিলিয়নরা কিছু বোঝে না, তাদের হাতে দেশ ছেড়ে দেওয়া যাবে না। তাই তারা সেখানে শক্তিশালী কোনো রাজনৈতিক দল বা রাজনীতিবিদ তৈরি হতে দেয়নি। আমাদের দেশের সেনাবাহিনী নিয়েও কেউ কেউ বলতে চান যে, ইন্টারমিডিয়েট পাস, তাদের বুদ্ধি থাকে হাঁটুর তলে। এটিও ঠিক নয়, কারণ শুধু পাস দিয়ে সবকিছু যাচাই করা যায় না। বেশ সুচতুর এবং মোটামুটি অলরাউন্ডার হয় সেনা অফিসাররা। কিন্তু তাই বলে তারা সবকিছু বুঝেন আর সিভিলিয়নরা কিছুই বোঝে না— এই ধরনের মানসিকতা কিছু কিছু কর্মকর্তা পোষণ করেন। কারণ তাদের সুযোগ সুবিধা বেশি, থাকেন আরামে, অর্থের চিন্তা নেই, স্মার্টনেস তো এমনিতেই চলে আসে।

স্রষ্টা পৃথিবীকে সৃষ্টিই করেছেন যেখানে সব ধরনের পেশাজীবীদের দরকার আছে। এখানে কারুর গুরুত্ব কোনোভাবেই কম নয়। স্রষ্টার সৃষ্টির রহস্যকে ধারণ করে সবাই সবাইকে সম্মান প্রদর্শন করতে হবে— আমরা যে যে পেশাতেই থাকি না কেন। এ দেশ তো আমাদের। বিশ্বের দরবারে যদি কোনো সম্মান আমরা অর্জন করতে পারি, তার ভাগিদার তো সবাই। সবাই আমাদের বাঙালি বলেই চিনবে। আইন করে কর্মকর্তাদের ‘স্যার’ বলানো বা না বলানো যায় না। এটি ভেতর থেকে আসে। আমরা সবাই সবাইকে সম্মান করি। তাতে কারুরই কোনো ক্ষতি নেই। আমরা যে অবস্থানেই থাকি না কেন, আমাদের প্রাথমিক শিক্ষকদের তো আমরা এখনো ‘স্যার’ বলি। একটি নাটকে প্রয়াত হুমায়ুন ফরিদীর সচিব চরিত্রে দেখেছিলাম তার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক তার সঙ্গে দেখা করতে এসেছেন। তিনি তার ছাত্রের মতো আচরণ করেননি কিন্তু শিক্ষকের মতোই আচরণ করে যাচ্ছেন। সচিব মহোদয় কোনো কথা বলছেন না। এক পর্যায়ে মুখ খুলে বললেন, ‘আপনার তো দেখছি এত বছরে কিছুই বদলায়নি, যা ছিলেন তাই আছেন।’ একটিবারও ‘স্যার’ বলছেন না। আমরা আমাদের কর্মকর্তাদের কাছে এ ধরনের আচরণ চাই না। শিক্ষণীয় আচরণ দেখতে চাই।

মাছুম বিল্লাহ: সাবেক শিক্ষক, ক্যাডেট কলেজ ও রাজউক কলেজ

আরএ/

কাতার ও বাংলাদেশের মধ্যে সামুদ্রিক পরিবহন সংক্রান্ত চুক্তি স্বাক্ষর

চুক্তিতে স্বাক্ষর করছেন কাতারের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সুলতান বিন সাদ আল মুরাইখি এবং নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। ছবি: পিআইডি

কাতার ও বাংলাদেশের মধ্যে সামুদ্রিক পরিবহন সংক্রান্ত চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন কাতারের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সুলতান বিন সাদ আল মুরাইখি এবং নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।

মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত চুক্তি সই অনুষ্ঠানে কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপস্থিত ছিলেন। এসময় দুই দেশের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা জোরদার করতে আজ মোট পাঁচটি চুক্তি ও পাঁচটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে।

চুক্তিগুলো হলো- কাতার এবং বাংলাদেশের মধ্যে সমুদ্র পরিবহন, বাংলাদেশ ও কাতারের মধ্যে আয়ের ক্ষেত্রে দ্বৈত কর পরিহার এবং রাজস্ব ফাঁকি প্রতিরোধ, বাংলাদেশ সরকার এবং কাতার রাষ্ট্রের মধ্যে আইনি ক্ষেত্রে সহযোগিতা, বাংলাদেশ ও কাতারের মধ্যে পারস্পরিক বিনিয়োগ উন্নয়ন ও সুরক্ষা এবং বাংলাদেশ-কাতার যৌথ ব্যবসায়িক পরিষদ প্রতিষ্ঠা।

চুক্তি ছাড়াও পাঁচটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষরিত হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে জনশক্তি কর্মসংস্থান (শ্রম), বন্দর (এমব্লিউএএনআই কাতার এবং চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ), বাংলাদেশ ও কাতারের মধ্যে শিক্ষা, উচ্চশিক্ষা ও বৈজ্ঞানিক গবেষণা, যুব ও ক্রীড়া ক্ষেত্রে এবং বাংলাদেশ ও কাতারের মধ্যে কূটনৈতিক প্রশিক্ষণে সহযোগিতার স্মারকও স্বাক্ষরিত হয়।

কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠান প্রত্যক্ষ করেন।

এর আগে কাতারের আমির প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পৌঁছালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমিরকে টাইগার গেটে ফুলের তোড়া দিয়ে স্বাগত জানান। তারা সেখানে একান্ত বৈঠকেও মিলিত হন। পরে দুই নেতা পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় নিয়ে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন।

পুলিশ সদস্যদের পদমর্যাদাভিত্তিক প্রশিক্ষণ কোর্সের উদ্বোধন

পুলিশ সদস্যদের পদমর্যাদাভিত্তিক প্রশিক্ষণ কোর্সের উদ্বোধন। ছবি: ঢাকাপ্রকাশ

বাংলাদেশ পুলিশের সকল সদস্যের পদমর্যাদাভিত্তিক প্রশিক্ষণের আওতাভুক্ত চুয়াডাঙ্গা জেলায় নায়েক ও কনস্টেবলদের 'দক্ষতা উন্নয়ন কোর্স'-এর  উদ্বোধন করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) সকালে ১৫তম ব্যাচে ৪২ জন পুলিশ সদস্যের অংশগ্রহণে সপ্তাহব্যাপী পদমর্যাদা ভিত্তিক প্রশিক্ষণ শুরু হয়েছে। প্রশিক্ষণ কোর্সের উদ্বোধন করেন পুলিশ সুপার চুয়াডাঙ্গা  আর এম ফয়জুর রহমান, পিপিএম-সেবা।

পুলিশ সদস্যদের পদমর্যাদাভিত্তিক প্রশিক্ষণ কোর্সের উদ্বোধন। ছবি: ঢাকাপ্রকাশ

বাংলাদেশ পুলিশের ইন্সপেক্টর জেনারেল চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, বিপিএম (বার), পিপিএম'র সার্বিক নির্দেশনায় ইন-সার্ভিস ট্রেনিং সেন্টার, কুষ্টিয়ার পরিচালনায় বাংলাদেশ পুলিশের সকল পদমর্যাদার সদস্যরা এ প্রশিক্ষণ কোর্সে অংশ নিচ্ছেন।

পুলিশ সুপার আর এম ফয়জুর রহমান উদ্‌বোধনী ক্লাসে প্রশিক্ষণার্থীদের উদ্দেশ্যে পোশাকের মর্যাদা, সৌজন্যতা ও মার্জিত আচরণ, সহকর্মী ও সেবা প্রত্যাশীদের সাথে পেশাগত আচরণ ও করণীয়-বর্জনীয় সম্পর্কে আলোকপাত করেন।

পুলিশ সদস্যদের পদমর্যাদাভিত্তিক প্রশিক্ষণ কোর্সের উদ্বোধন। ছবি: ঢাকাপ্রকাশ

উদ্‌বোধনী অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন মো. রিয়াজুল ইসলাম, (পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতি প্রাপ্ত) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ); চুয়াডাঙ্গা; মো. নাজিম উদ্দিন আল আজাদ, পিপিএম-সেবা, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস্); চুয়াডাঙ্গা; আনিসুজ্জামান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল); চুয়াডাঙ্গা; আবদুল আলীম, আরওআই, রিজার্ভ অফিস, চুয়াডাঙ্গা; আমিনুল ইসলাম, আরআই, পুলিশ লাইন্স, কুষ্টিয়া ইনসার্ভিস ট্রেনিং সেন্টারের প্রতিনিধিসহ চুয়াডাঙ্গা জেলা পুলিশের বিভিন্ন পদমর্যাদার প্রশিক্ষণার্থী পুলিশ সদস্যবৃন্দ।

গোবিন্দগঞ্জে ১৪ জনের মনোনয়ন বৈধ ঘোষণা

আব্দুল লতিফ প্রধান ও শাকিল আকন্দ বুলবুল। ছবি: ঢাকাপ্রকাশ

গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ২ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৫জন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৭ জনের মনোনয়ন পত্র বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) বেলা ১১ টায় জেলা প্রশাসকের কনফারেন্স রুমে যাচাই-বাছাই শেষে রিটানিং অফিসার মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করেন। গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা নির্বাচন অফিসার মো. সাখাওয়াত হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

যাচাই-বাছাই শেষে যাদের মনোনয়ন বৈধ ঘোষণা করা হয় তারা হলেন- চেয়ারম্যান পদে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ প্রধান, সাপমারা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শাকিল আকন্দ বুলবুল। ভাইস চেয়ারম্যান পদে মো. মেসবাহ নাহিফুদ দৌলা, উপজেলা ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি গোবিন্দগঞ্জ নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক মো: আব্দুল মতিন মোল্লা, পাপন মিয়া, মাহাবুর রহমান ও বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান শরিফুল ইসলাম তাজু। আর মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন দাখিল করেছেন পাপিয়া রানী দাস, মমতা বেগম, আফরুজা খাতুন, সাকিলা বেগম, ফাতেমা বেগম, উম্মেজাহান, সাথী আক্তার।

উল্লেখ্য, ৬ষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপে এই উপজেলার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ লক্ষ্যে আগামী ৩০ এপ্রিল প্রার্থীতা প্রত্যাহারের শেষ দিন ও ২ মে সকল প্রার্থীকে প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হবে। আর ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে আগামী ২১ মে।

সর্বশেষ সংবাদ

কাতার ও বাংলাদেশের মধ্যে সামুদ্রিক পরিবহন সংক্রান্ত চুক্তি স্বাক্ষর
পুলিশ সদস্যদের পদমর্যাদাভিত্তিক প্রশিক্ষণ কোর্সের উদ্বোধন
গোবিন্দগঞ্জে ১৪ জনের মনোনয়ন বৈধ ঘোষণা
রাজধানীতে ছাদ থেকে লাফিয়ে ট্রান্সজেন্ডার নারীর আত্মহত্যা
ভাড়া বাড়াইনি, শুধু ভর্তুকি প্রত্যাহার করেছি: রেলমন্ত্রী
নবাবগঞ্জে জাল দলিলে জমি দখলের চেষ্টা, সাবেক ও বতর্মান চেয়ারম্যান জেলহাজতে
ঢাকা ছাড়লেন কাতারের আমির, গেলেন নেপাল
নওগাঁর মান্দায় বিদ্যুতের আগুনে পুড়ল ৮ বসতবাড়ি
ইন্টারনেটের ধীরগতি নিয়ে দুঃসংবাদ, এক মাস চলতে পারে ভোগান্তি
উপজেলা নির্বাচন: প্রথম ধাপে বিনা ভোটে ২৬ প্রার্থী নির্বাচিত
'রূপান্তর' বিতর্ক: জোভান-মাহিসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা
সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত দুই চুয়েট শিক্ষার্থীর পরিবার পাবে ১০ লাখ টাকা
সাঘাটায় নির্বাচনের আগেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলেন টিটু
এফডিসিতে সাংবাদিকদের ওপর হামলা, চরম উত্তেজনা
দিনাজপুরে বাঁশফুল থেকে পাওয়া যাচ্ছে চাল, রান্না হচ্ছে ভাত-পোলাও-পায়েস
পদ্মায় নিখোঁজ তিন কিশোরের লাশ উদ্ধার
বাড়তে পারে তাপমাত্রা
আজ রাতেই দেখা মিলবে ‘গোলাপী’ চাঁদের
চতুর্থ ধাপের তফসিল ঘোষণা করলো ইসি
দুই মাসের মধ্যে বেনজীরের দুর্নীতি অনুসন্ধানের প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ