দেশের স্থলভাগে গ্যাস অনুসন্ধান ও কূপ খনন কার্যক্রমে গতি আনতে রিগ (গ্যাস অনুসন্ধান যন্ত্র) কিনছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। ইতোমধ্যে এ লক্ষ্যে একটি উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। একনেকে অনুমোদনের পরপরই বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানি লিমিটেড (বাপেক্স) টেন্ডার প্রক্রিয়ায় যাবে। জানা গেছে, সেই টেন্ডার প্রস্তাব আগেই প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
পেট্রোবাংলার এক দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, প্রথম ধাপে একটি রিগ কেনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি আরও দুটি রিগ কেনার জন্য ফিজিবিলিটি স্টাডি চলছে। তবে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, কেবল রিগ কেনা যথেষ্ট নয়—এর সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে দক্ষ জনবল গড়ে তোলা অত্যন্ত জরুরি। তা না হলে রিগগুলো এক সময় অকার্যকর হয়ে ‘সাদা হাতি’তে পরিণত হতে পারে।
বাপেক্সের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশে মোট পাঁচটি রিগ রয়েছে। এর মধ্যে একটি রিগ ১৯৮৭ সালে কেনা হয়, যা এখন অনেকটাই পুরোনো। বিদ্যমান রিগগুলোর ক্ষমতা সর্বোচ্চ ২ হাজার হর্স পাওয়ার পর্যন্ত।
পেট্রোবাংলার পরিচালক (প্রোডাকশন শেয়ারিং কন্ট্রাক্ট) এবং বাপেক্সের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শোয়েব বলেন, “আমরা যেসব রিগ কিনতে চাইছি, তার মধ্যে একটি হচ্ছে ওয়ার্কওভার রিগ, বাকিগুলো ড্রিলিং রিগ। এগুলো কেবলমাত্র স্থলভাগের গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য কেনা হচ্ছে।” তিনি জানান, সরকার ৫০টি কূপ খননের যে পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে তা বাস্তবায়নের পথে এগিয়ে চলছে। সিলেট গ্যাস ফিল্ড, বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ড কোম্পানি লিমিটেড (বিজিএফসিএল) এবং বাপেক্স ইতোমধ্যে কয়েকটি স্থানে কূপ খননের কার্যক্রম শুরু করেছে।
জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান জানান, “আমরা গ্যাস অনুসন্ধানে গুরুত্ব দিচ্ছি। যদি পরিকল্পিত ৫০টি কূপ সফলভাবে খনন করা যায়, তবে সেখান থেকে প্রতিদিন অতিরিক্ত ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট (এমএমসিএফডি) গ্যাস আহরণ সম্ভব হবে। এজন্য নতুন রিগ কেনা ছাড়াও ভোলায় নতুন করে সিসমিক সার্ভে ও ড্রিলিং কার্যক্রম চালানো হচ্ছে।”
তিনি আরও জানান, বর্তমানে দেশে যে রিগগুলো রয়েছে সেগুলো পর্যাপ্ত গভীরতায় পৌঁছাতে সক্ষম নয়। এজন্য একটি গভীর গ্যাস কূপ খননের উপযোগী ডিপ রিগ কেনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ড. ইজাজ হোসেন বলেন, “নতুন রিগ কেনা নিঃসন্দেহে ইতিবাচক উদ্যোগ। তবে রিগ পরিচালনার জন্য যেসব বিশেষজ্ঞ জনবল দরকার তা আমাদের দেশে বর্তমানে খুবই সীমিত। সেক্ষেত্রে দক্ষ জনবল তৈরি করা অথবা বিদেশি ক্রুদের নিয়ে একটি আলাদা কোম্পানি গঠন করে রিগ ভাড়া দিয়ে গ্যাস উত্তোলনের কাজ করা যেতে পারে।”
দেশের জ্বালানি নিরাপত্তা ও গ্যাস নির্ভরতার প্রেক্ষাপটে এই উদ্যোগকে সময়োপযোগী হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে দক্ষতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা গেলে গ্যাস উৎপাদনে বাংলাদেশ নতুন মাত্রা যোগ করতে পারবে।