বুধবার, ২২ জানুয়ারি ২০২৫ | ৮ মাঘ ১৪৩১
Dhaka Prokash
Header Ad

বিজয় দিবস: মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা কবে বাস্তবায়ন হবে?

পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে দীর্ঘ ৯ মাসের লড়াই সংগ্রাম করে চূড়ান্ত বিজয়ের মুহূর্তে ‘জয় বাংলা’ স্লোগানে সারা দেশের মুক্তিযোদ্ধা শীতের সকালে পূর্ব দিগন্তে লাল বৃত্তের সূর্য উদয়ের পূর্বেই ঝাঁকে ঝাঁকে ফাঁকা গুলি বর্ষণ করে উল্লাসে পূর্ব বাংলার মাটি কেঁপে ওঠেছিল।

সমবেত কণ্ঠে ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি’ গানের মধ্য দিয়ে প্রথম স্বাধীনতার বিজয় কেতন সোনালী বাংলাদেশের মানচিত্র খচিত পতাকা উত্তোলন করা হয়েছিল। আর অপর দিকে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের দাপটে হানাদার পাকিস্তানি সৈন্য বাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসর রাজাকার আলবদররা জীবন বাঁচাতে পালিয়ে গিয়েছিল দেশের নানা প্রান্ত দিয়ে।

তবে দুঃখের বিষয় বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে এসেও বাংলার মানুষকে মর্মাহত হতে হয়েছিল। কারণ, ১৯৭১ সালে ১৪ ডিসেম্বর এদেশের শিক্ষক, লেখক, শিল্পী, সাহিত্যিক, সাংবাদিক ও চিকিৎসকসহ জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের হানাদাররা তাদের এদেশীয় দোসর আলবদর, আলশামস ও রাজাকারদের সহযোগিতায় নির্মমভাবে হত্যা করে জাতিকে মেধাশূন্য করার নীল নকশা তৈরি করেছিল। বাংলাদেশের বিজয় দিবসের ৫১ বছর। তখন স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন আসে বাংলাদেশে প্রকৃত বুদ্ধিজীবী কি আছে? হ্যাঁ আছে তবে হাতেগোনা কয়েকজন। বর্তমান পরিস্থিতিতে বলা যায় ধীরে ধীরে বুদ্ধিজীবীরা মাথা বিকিয়ে দিচ্ছে। তাহলে স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন আসে মুক্তিযুদ্ধের সময়কার বুদ্ধিজীবী আর বর্তমান বুদ্ধিজীবীর মধ্যে পার্থক্য কী? উত্তর সবার জানা আছে।

বাংলাদেশের শিক্ষা, চিকিৎসা, বাসস্থান, কৃষি, পরিবেশ, শ্রমিকের মজুরি, নারীর অধিকার, বাকস্বাধীনতা, গণতন্ত্র ও সাধারণ মানুষের সংকট নিয়ে যে সকল বুদ্ধিজীবী রাষ্ট্রের কাছে নির্ভয়ে প্রশ্ন তুলেন এবং রাজপথে এসে সংকটের মুক্তির পথ দেখান তারাই প্রকৃত বুদ্ধিজীবী। আর শোষণ মুক্তির জন্য যারা লড়াই সংগ্রাম করেছিলেন তারা দেশের প্রকৃত দেশবন্ধু। ফলে তাদের স্মৃতি নতুন প্রজন্মের তুলে ধরতে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে তৈরি করা হয়েছে ভাস্কর্য। এই ভাস্কর্য মানেই সংগ্রামের ইতিহাস থেকে অনুপ্রেরণা পাওয়া। ভাস্কর্য মানে শোষণকারীদের ভীতির জায়গায়। আমার জন্মের ত্রিশ বছর পূর্বে ঘটে যাওয়া ঘটনা উনিশশো একাত্তর।পৃথিবীতে ছিলাম না বলেই দেখা হয়নি একাত্তর। সেই একাত্তরের কথা এখন শুনে শরীরের লোম দাঁড়িয়ে যায়। রাষ্ট্রের শাসক এমনও হতে পারে?

বাঙালির নিজস্ব ভাষাও কেড়ে নিবে ওরা? ওরা বাঙালির নিজস্ব সংস্কৃতির উপর আঘাত করেছিল। সাহস কত! কৃষককের বুক ভরা স্বপ্ন করেছিল খানখান। তবে শুনেছি দাদির কাছে কেমন করে পাক-হানাদাররা মোদের দেশে নির্মম গণহত্যা চালাত, রাজাকারের পরামর্শে কেমন করে মানুষের বাড়ি ঘর জ্বালিয়ে উল্লাস উদযাপন করত।পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ অপারেশন সার্চ লাইট চালিয়ে ঘুমন্ত নিরীহ-নিরস্ত্র বাঙালির উপর নির্বিচারে গুলিবর্ষণ ও গণহত্যার মাধ্যমে মহান মুক্তিযুদ্ধের সূচনা হয়। কেন যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল? এ যুদ্ধ তো একদিনে তৈরি হয়নি! ২৫ বছর ধরে পাকিস্তানিরা বাঙালিদের শোষণ করেছিল। পাকিস্তানি শাসক প্রথম আঘাত করে নিরীহ বাঙালির অস্তিত্ব নিজের মাতৃভাষার উপর।

ওরা আমাদের মুখের ভাষা ‘মাতৃভাষা’ কেড়ে নিতে চেয়েছিল কারণ তারা জানত একটি জাতিকে ধ্বংস করতে হলে সেই জাতির ভাষাকে ধ্বংস করলেই যথেষ্ট। ফলে বাঙালিকে ধ্বংস করতে তাদের প্রথম নজর পড়ে ভাষার উপর। কিন্তু বাঙালি বীরের জাতি রক্ত দিয়ে জীবন দিয়ে প্রমাণ করল। মুখের ভাষা রক্ষা করল। এর পর ৫৪ যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ৬২ শিক্ষা আন্দোলন, ৬ দফা, ৬৯ এর গণ-অভ্যুত্থান, ৭০- এর নির্বাচনসহ দীর্ঘ প্রায় ২৫ বছরের ধারাবাহিক আন্দোলনের মধ্য দিয়ে জাতি ৭১ সালে এসে উপনীত হয়। অত্যাচার নিপীড়নের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক আন্দোলন স্বাধিকার ও স্বাধীনতার আন্দোলনে পরিণত হয়।

১৯৭১ সালের ২৫ থেকে জেনারেল নিয়াজির এক লাখ পাকিস্তানি সেনাসদস্য কিছু বাঙালি দালালদ অর্থাৎ রাজাকার, আলবদর ও আলসামদের নিয়ে বাঙালির উপর তাণ্ডব চালিয়ে ত্রিশ লক্ষ মানুষ জীবন ও দুই লক্ষ মা বোনের সম্ভ্রম কেড়ে নিয়েছিল। চারিদিকে ঘর বাড়ি জ্বালাও, পড়াও আর মানুষের কান্নার আওয়াজ এ দেশ যেন এক মৃত্যুপুরীতে পরিণত করেছিল। দেশের প্রতিটি মানুষ জীবন-মৃত্যুর শঙ্কা নিয়ে খেয়ে না খেয়ে পথে ঘাটে ঘুরে বেড়িয়েছিল। পাকিস্তানি শাসক ধর্মের নামে রাজনীতি করে কৃষকের কৃষিপণ্যের ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত করেছিল, শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া থেকে বঞ্চিত, শ্রমিকের ন্যায্য মজুরি থেকে বঞ্চিত, চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত, সরকারি চাকরি থেকে বঞ্চিত, ধর্মের নামে বিভাজন, বাঙালি জাতির নেতা নির্বাচনে জয়লাভ করে ক্ষমতা হস্তান্তর করেনি ইত্যাদি ঘোরতর অন্যায়-অবিচার ও চূড়ান্ত বর্বরতার মধ্যে দিয়ে পাকিস্তানিরা জাঁতাকলে পিষ্ট করেছিল।

মানবমুক্তির স্বপ্ন নিয়ে দীর্ঘ নয় মাস পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই সংগ্রাম করে পাকিস্তানকে পরাজিত করেছিল বাংলার বীর মুক্তিযোদ্ধারা। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর সেই দিনটিতে সারা দেশের আবালবৃদ্ধবনিতা আনন্দে-উল্লাসে ফেটে পড়ে, অভ্যুদয় ঘটে বিশ্বের বুকে বাঙালির একটি স্বাধীন রাষ্ট্র যার নাম হয় বাংলাদেশ। স্বাধীন বাংলাদেশে তখন ভৌত-অবকাঠামো, রাস্তাঘাট-ব্রিজ-যানবাহন, বিদ্যুৎ ও টেলিফোন ইত্যাদি প্রায় সবকিছুই বিনষ্ট-বিধ্বস্ত। সেই সঙ্গে বিশ্বমন্দা ও নানা আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র। বন্যা, খাদ্যাভাব, সামাজিক অস্থিরতা ও আইনশৃঙ্খলার চরম অবনতি। নিঃস্ব, সহায়-সম্বলহীন কোটি শরণার্থীর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন ও পুনর্বাসন ছিল বড় চ্যালেঞ্জ বিষয়।

সেই চ্যালেঞ্জের বিষয় গুলো নিয়ে আমাদের দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সরকার গঠন করে এবং বিভিন্ন সরকারের পালাবদল করে আজকে স্বাধীন বাংলাদেশের ৫২তম বিজয় দিবস চলছে। স্বাধীনতার এত বছরে এসে স্বাভাবিক ভাবে একটা প্রশ্ন চলে আসে কেমন আছে বাংলাদেশ? মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় কী দেশে শাসন ব্যবস্থা চলে? রক্তের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের পবিত্র সংবিধানের চার মূলনীতি মধ্যে গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও জাতীয়তাবাদ কী যথাযথ ভাবে কার্যকর আছে? আমরা পাকিস্তান শাসকদের শাসন আমল ও বর্তমান স্বাধীন বাংলাদেশের শাসন আমল মূল্যায়ন করে দেখতে চাই। সত্যিকারে মানুষ শোষণযন্ত্র থেকে তি মুক্তি পেয়েছে?

বর্তমানে দেশে চরম রাজনৈতিক অস্থিরতা, নির্বাচন নিয়ে মানুষ উদ্বিগ্ন, রক্তারক্তি, গুম ও খুন যেন নিত্যদিনের ঘটনা। ঘরে বাইরে নারী নির্যাতন, কলকারখানায় লুটপাট ও আগুনে শ্রমিকের কান্নায় বলে দিচ্ছে শ্রমিকরা শোষিত। মুনাফাখোর, মজুতদার ও চোরাকারবারিদের দৌরাত্ম্যতে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির অবিশ্বাস্য অগ্নিমূল্য। সড়ক দুর্ঘটনায় শিক্ষার্থীদের মৃত্যুর মিছিল থেমে নেই। ফলে সড়কে ছাত্রদের চিৎকার ও কান্নায় সংবাদমাধ্যমে হৈচৈ। সুন্দরবনসহ প্রাণ প্রকৃতি ধ্বংস করে উন্নয়নের বাজিমাত। বারশত নদীর দেশে নদীগুলো বিলীন হয়ে খালে পরিণত, শিক্ষা ব্যবস্থা বাণিজ্যিকীকরণ, ধনী গরিবের বৈষম্য যেন পিরামিড আকৃতি, যৌন সহিংসতা থেকে আত্মহত্যা বেড়েই চলছে, দেশে গণপিটুনিতে হাজার হাজার মারা গেছে, শহরে বস্তির সংখ্যা বেড়েই চলছে, ধান চাষিরা ধানের ন্যায্য মূল্য না পেয়ে ধানে আগুন ও আত্মহত্যার খবর কানে আসে।

ফলে কৃষককের কৃষিপণ্যের ন্যায্য মূল্য নেই, করোনাভাইরাস এসে চিকিৎসা খাতের নাজুক অবস্থা প্রকাশিত হয়েছে, গরিবের ত্রাণ চুরি, পাথর-কয়লাসহ জাতীয় সম্পদ চুরি, দুর্নীতি আর লুটপাট মহোৎসব ইত্যাদি সহিংসতা ব্যক্তি ও সমাজকে ক্ষত-বিক্ষত করেই চলছে। তাহলে এই সহিংসতা উপহার পাওয়ার জন্য কী আমাদের দেশের বীর মুক্তিযোদ্ধারা যুদ্ধ করেছিল? রক্ত দিয়ে যুদ্ধ করেছিল মানব মুক্তির জন্য। গর্বের বিষয় এখনো বাংলার বীর সৈনিক মুক্তিযোদ্ধারা বেঁচে আছেন। এই স্বাধীন দেশ নিয়ে মুক্তিযোদ্ধারাই খুবেই উদ্বিগ্ন কারণ তারা এখনো বলছে দেশের এই সহিংসতা দেখার জন্য তো যুদ্ধ করেনি। তাহলে মেনে নিতেই হচ্ছে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আজ বিপন্নতার পথে। কে রক্ষা করবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা?

মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিপন্নের পথে কারণ এ দেশে ব্যবসায়ীদের একাংশ রাজনীতির মধ্যে প্রবেশ করে নিজেদের মত মুনফা লুটে নিচ্ছে। তাদের দেশপ্রেম কোনো লক্ষ্য নয় তারা তো বাণিজ্য করতে কৌশলে রাজনীতিতে প্রবেশ করে সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলতেছে। একটু বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে স্বাধীন বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী প্রার্থীদের হলফনামায় কেমন করে রাজনীতিতে ব্যবসায়ীদের উত্থান হয়েছে। স্বাধীনতার দুই বছর পর প্রথম নির্বাচনে ১৯৭৩ সালে সংসদে ব্যবসায়ী ছিলেন ১৫ শতাংশ। ১৯৯০ সালের পর থেকেই রাজনীতিতে' পরিবর্তন আসতে শুরু করে। ১৯৯৬ সালে ব্যবসায়ী এমপির হার হয় ৪৮ শতাংশ, ২০০১ সালের সংসদে এ হার দাঁড়ায় ৫১ শতাংশ। ২০০৮ সালে মোট এমপির ৬৩ শতাংশ ছিলেন ব্যবসায়ী। ২০১৪ সালের নির্বাচনে মোট এমপির ৫৯ শতাংশ ব্যবসায়ী। সর্বশেষ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংসদে এমপিদের মধ্যে ৬১ দশমিক ৪০ শতাংশ। ব্যবসায়ীদের পরিসংখ্যান বলে দিচ্ছে কোন পথে যাচ্ছে বাংলাদেশ!

রাজনীতি যদি রাজনীতিবিদদের নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত না হয়ে ব্যবসায়ীদের দ্বারায় নিয়ন্ত্রণ হয় তাহলে সেখানে মানুষের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত হবে না বরং মানুষ শোষিত হবে। কৃষিতে উৎপাদন বাড়লেও ভূমিহীনের সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে এর কারণ কী? বর্তমানে আমাদের দেশে ভূমিহীন পরিবারের সংখ্যা ৪০ লাখ ২৪ হাজার ১৮৯টি, যা শতকরা হিসাবে দাঁড়ায় ১১.৩৩ শতাংশ। কেন দিনের পর দিন ভূমিহীনের সংখ্যা বাড়ছে? আর অপর দিকে ক্ষমতাসীনদলের পৃষ্ঠপোষকতায় ছাত্রসংগঠন গুলো সন্ত্রাসী রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। গুটিকয়েক ছাত্রদের জন্য ছাত্র আন্দোলনের ঐতিহ্য কেন হারিয়ে যাবে? শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্ররাজনীতি থাকলে ছাত্রদের অধিকার নিয়ে কথা সুযোগ থাকবে। সেই সঙ্গে সকল মত ও পথের গণতান্ত্রিক চর্চা থাকবে তাহলে ছাত্র নামধারী সন্ত্রাসীরা অপকর্ম করতে পারবে না।

বিজয় দিবসে ভাবতে হচ্ছে আমাদের দেশের নারীদের নিরাপত্তা নিয়ে। ধর্মের অবমাননা গুজব ছড়িয়ে সংখ্যালঘুদের উপর হামলা করা, সারা দেশে নারী-শিশু ধর্ষণ-নির্যাতন-হত্যা এক ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। দুই বছরের শিশুকন্যা থেকে শুরু করে বৃদ্ধাসহ যেকোনো বয়সের নারী সে হিন্দু হোক বৌদ্ধ হোক, খ্রীষ্টান হোক অথবা মুসলমান হোক যেকোনো ধর্মের নারী পাহাড় বা সমতল, ঘরে-বাইরে, স্কুল-মাদ্রাসা, কলকারখানা যেকোনো স্থানে, দিনে কিংবা রাতে যেকোনো সময়ে বাংলাদেশের একজন নারী নির্যাতনের শিকার হন। এমনকি সমমজুরি আইনে থাকলেও বাস্তবে প্রায় সমস্ত অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে নারী পুরুষের তুলনায় কম মজুরি পেয়ে থাকেন।
সম্পত্তি বণ্টনবৈষম্যের আচারণে শিকার নারী সমাজ। নারী তো পণ্যের বস্তু নয় তাহলে তাদের অধিকার থেকে কেন বঞ্চিত করা হচ্ছে?

মানুষ সহিংসতা বলতে কেবল শারীরিক খুন, জখমই বুঝে কিন্তু বাস্তবে সহিংসতা মানসিক ও আবেগগত ভাবে ঘটে। দেশের মানুষ রাষ্ট্রযন্ত্রের কাঠামোগত সহিংসতার শিকার হচ্ছে। কখনো কখনো সেই সহিংসতার বিরুদ্ধে রাজপথে প্রতিবাদ, প্রতিরোধ করার চেষ্টাও করে। কাঠামোগত সহিংসতা থেকে মানুষকে মুক্ত করার জন্য প্রয়োজন একটি আদর্শ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা। যে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় শিক্ষাকে পণ্যে নয় সকলের মৌলিক অধিকার হিসাবে নিশ্চিত করা হবে, নারীকে পণ্য হিসেবে নয় মানুষ হিসাবে মানবিক মর্যাদা দিবে, চিকিৎসা সেবাকে বানিজ্যিক নয় মৌলিক অধিকার হিসাবে প্রাধান্য পাবে, কৃষককের কৃষিপণ্যের ন্যায্যমূল্য পাবে, শ্রমিকের ন্যায্য মজুরি দেওয়া হবে, বেকারদের চাকরির ব্যবস্থা হবে, ছিন্নমূল মানুষের পুনর্বাসন ব্যবস্থা হবে, মানুষের মত প্রকাশের স্বাধীনতা থাকবে, সর্বক্ষেত্রে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা চালু থাকবে, একটি অসাম্প্রদায়িক দেশ এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় রাষ্ট্র পরিচালনা হবে তাহলে মহান মুক্তিযুদ্ধের বিজয় দিবসে আবালবৃদ্ধবনিতা আনন্দে-উল্লাসে আবারও ফেটে পড়বে।

ফলে বিজয়ের উল্লাস ম্লান হয়ে যাক আমরা তা চাই না। আমরা বাঙালি জাতি যে বীরের জাতি তা বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারব। মহান মুক্তিযুদ্ধ নতুন প্রজন্মের কাছে অনুপ্রেরণার উৎস। সেই প্রেরণাকে কাজে লাগিয়ে রাষ্ট্রের অতীত ভুল-ভ্রান্তি থেকে শিক্ষা নিয়ে একটি সুখি সমৃদ্ধশালী সাম্যের সমাজ ও দেশ গড়াতে জনগণের পাশাপাশি রাষ্ট্রকে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে।

রাশেদুজ্জামান রাশেদ: প্রাবন্ধিক ও কলামিস্ট

Header Ad
Header Ad

আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না আওয়ামী লীগ

প্রেস সচিব শফিকুল আলম। ছবি: সংগৃহীত

আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ অংশগ্রহণ করার গুঞ্জন থাকলেও দলটি ফিরতে পারবে না বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। বুধবার (২২ জানুয়ারি) তার নিজস্ব ফেসবুক প্রোফাইলে এক পোস্টে এই কথা জানান তিনি।

ফেসবুক পোস্টে উল্লেখ করে তিনি জানান, গণহত্যা সমর্থনকারী আওয়ামী লীগের সমর্থকরা ভ্রান্তিতে আছেন যে, দেশ নির্বাচনের দিকে ফিরে গেলে তারা রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় ফিরতে পারবেন। কিন্তু মানবতাবিরোধী অপরাধের দায় স্বীকার না করলে এবং খুন ও গুমের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের নির্মূল না করা পর্যন্ত এটি সম্ভব না। পাশাপাশি ২০০৯ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে সংঘটিত হত্যাকাণ্ড এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে জড়িত আওয়ামী লীগের সদস্য এবং এর সহযোগীদেরও বিচার হবে।

সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বিভিন্ন বিদেশি কূটনীতিক এবং কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়েছে জানিয়ে তিনি আরও লিখেছেন, তারা খুব কমই সমঝোতার বিষয়ে আহ্বান জানিয়েছেন। তারাও বুঝতে পেরেছেন যে, অপরাধীরা যদি তাদের অপরাধ স্বীকার না করে, তাহলে কীভাবে সমঝোতার আহ্বান জানানো যায়? বরং তারা সংস্কার এবং দেশের প্রতিষ্ঠানগুলোকে ঠিক করার বিষয়ে বেশি সমর্থন জানিয়েছেন।

বছর বছর আওয়ামী লীগের সমর্থকরা ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষ, রক্ষীবাহিনীর হত্যাকাণ্ড এবং শেখ মুজিবের একদলীয় শাসনের স্মৃতি মুছে ফেলতে চেষ্টা চালিয়ে গেছে বলেও স্ট্যাটাসে অভিযোগ করেন শফিকুল আলম।

আরও জানান, বর্তমান প্রজন্ম এবার জেগে উঠেছে এবং তারা স্বৈরশাসনের প্রতিটি মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে সজাগ রয়েছে। তাদের প্রচেষ্টা প্রতিদিন পুরোনো স্মৃতিকে সতেজ করছে।

Header Ad
Header Ad

শুনানীকালে আইনজীবীর কাছে চকলেট চেয়ে বসেন সাবেক শিল্প প্রতিমন্ত্রী  

ছবিঃ সংগৃহীত

আদালত কক্ষে শুনানির ফাঁকে কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে কামাল মজুমদার তার আইনজীবীর কাছে চকলেট চেয়ে বসেন মিরপুর থানার দুটি পৃথক হত্যা মামলায় সাবেক শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার।

আজ বুধবার (২২ জানুয়ারি) ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তাকে হাজির করা হয়।

আদালত কক্ষে শুনানির ফাঁকে কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে কামাল মজুমদার তার আইনজীবীর কাছে চকলেট চেয়ে বসেন। পরে একজন আইনজীবী সাদা কাগজের ব্যাগে চকলেট আনলেও নিরাপত্তারক্ষীদের বাধার মুখে সেটি তখন দেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে শুনানি শেষে হাজতখানায় ফেরার সময় তাকে চকলেট সরবরাহ করা হয় বলে জানা গেছে।

কামাল মজুমদারের আইনজীবী আল ইমরান (মুকুল) জানান, তার মক্কেলের চকলেট খুব প্রিয়, এবং মাঝে মাঝে তার সুগার লেভেল কমে যায়। এ কারণেই তিনি চকলেট চেয়েছিলেন।

রাষ্ট্রপক্ষের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ওমর ফারুক ফারুকী জানান, আদালতের অনুমতি ছাড়া আসামিকে কোনো খাবার সরবরাহ বেআইনি। এমন ঘটনা ঘটলে এটি আইনগতভাবে পর্যালোচনা করা উচিত।

শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জিএম ফারহান ইসতিয়াক মিরপুর থানার দুটি হত্যা মামলায় কামাল মজুমদারকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন মঞ্জুর করেন।

উল্লেখ্য, আদালতে হাজিরার সময় কামাল মজুমদার ও অন্যান্য আসামিদের বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট ও হেলমেট পরিয়ে আনা হয়। বিচারিক কার্যক্রম শেষে তাদের আবার কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

Header Ad
Header Ad

চলতি বছরই নির্বাচন চায় বিএনপি ও খেলাফত মজলিস

ছবিঃ সংগৃহীত

চলতি বছরেই নির্বাচন করাসহ ৭ বিষয়ে ঐকমত পোষন করেছে বিএনপি ও একসময়ের ‘জোটচ্যুত’ দল খেলাফত মজলিস। চলমান রাজনৈতিক অবস্থা আর আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে বৈঠক করে এ সিদ্ধান্তে উপনীত হয় এই শীর্ষ দুই দল।

বুধবার (২২ জানুয়ারি) গুলশানের বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়েছে।

প্রায় দুই ঘণ্টা বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনার পর দুই দলই দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় সংস্কার সম্পন্ন করে ২০২৫ সালের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান করাসহ সাতটি বিষয়ে একমত হয়েছে।

গত কয়েকদিন ধরে রাজনীতির মাঠে চর্চা ইসলামিক দলগুলো নির্বাচনী মোর্চা। তারই প্রেক্ষাপটে গতকাল মঙ্গলবার বরিশালে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের দুই শীর্ষ নেতার বৈঠকের পর বৃহত্তর ইসলামী জোট গঠনের আলোচনা আরও জোরদার হয়।

এমন পরিস্থিতিতে ২০ দলীয় জোটের সাবেক জোটসঙ্গী খেলাফত মজলিসের সঙ্গে দীর্ঘ বছর পর গুলশান চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠক করে বিএনপি। বৈঠক শেষে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, গনতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার কাজ এখনো অবশিষ্ট আছে। কোনো ইসলামী জোট নিয়ে দুশ্চিন্তা দেখছে না তাদের দল।

এসময় খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ডক্টর আহমদ আব্দুল কাদের বলেন, জাতীয় ঐক্যে সুসংহত করতে আন্তঃদলীয় সংলাপ অব্যাহত থাকবে। সংস্কার শেষে দ্রুত সময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠানে বিএনপির সঙ্গে ঐকমত্য আছে তাদের।

 

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না আওয়ামী লীগ
শুনানীকালে আইনজীবীর কাছে চকলেট চেয়ে বসেন সাবেক শিল্প প্রতিমন্ত্রী  
চলতি বছরই নির্বাচন চায় বিএনপি ও খেলাফত মজলিস
৮টি খাতে ভ্যাট হ্রাস, ৪টি খাতে বর্ধিত ভ্যাট প্রত্যাহার
সালমান এফ রহমানের ঘনিষ্ঠ তারেক আলম আটক
২৮ জানুয়ারি থেকে সারাদেশে চলবে না ট্রেন!
বাবার জানাজার মাঠ থেকে কণ্ঠশিল্পী মনির খানের আইফোন চুরি
মোবাইল ও ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের ওপর আরোপিত কর প্রত্যাহার
বিএনপি ৩১ দফা বাস্তবায়নে জাতির কাছে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ: আমীর খসরু
বাবা-মা চাচ্ছিলেন না আমি পৃথিবীতে আসি : অপু বিশ্বাস
৪ দফা দাবিতে ম্যাটস শিক্ষার্থীদের শাহবাগ মোড় অবরোধ করে বিক্ষোভ
নিজের সিনেমায় নিজের লেখা গান গাইলেন মোশাররফ করিম
আদালতে চকলেট খেতে চাইলেন সাবেক শিল্প প্রতিমন্ত্রী
আগামী ৩ দিনের আবহাওয়ার পূর্বাভাস নিয়ে যা জানা গেল
৯ বছরেও শেষ হয়নি রিজার্ভ চুরির মামলার তদন্ত, দায়িত্ব নিতে চায় দুদক
গাজায় ধ্বংসস্তূপ সরাতেই বেরিয়ে আসছে কঙ্কাল, পচাগলা ১২০ মরদেহ উদ্ধার
বোমা পাওয়া যায়নি বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইটে, নিরাপদে নামলো যাত্রীরা
কারওয়ান বাজারে পুলিশের সাথে আন্দোলনকারীদের ধস্তাধস্তি
প্রথমবার ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে বিশ্বকাপের আশা বাঁচিয়ে রাখল বাংলাদেশ
৭ টেলিকম প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স বাতিল