মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারি ২০২৫ | ৩০ পৌষ ১৪৩১
Dhaka Prokash
Header Ad

তেত্রিশ নম্বর

আমার এক জুনিয়র হলমেট ছিল, নাম খোকন। সে একদিন আমাকে বলছিল, রঞ্জন দা একটা অনুরোধ করব আপনাকে, রাখবেন?

বললাম, কী অনুরোধ? রাখার মতো হলে রাখব। তুমি বলতে পারো।

নাহ্! আমার একটু বলতে ভয়ই লাগছে। আপনি তো এই কাজটি করেন না! তাই বলতে দ্বিধা করছি।
আরে, তুমি বলে ফেলো তো।

ছেলেটি খুব বিনয় করে বলছিল, আমার এক খালাম্মা আমাকে খুব করে ধরেছে, তার মেয়ের জন্য একজন বাংলার শিক্ষক ঠিক করে দেওয়ার জন্য। মেয়েটা ভারতের মানালীতে এক নামকরা ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে ক্লাস এইট পর্যন্ত পড়াশোনা করেছে। পরে আর ওখানে কন্টিনিউ করেনি। ঢাকায় এনে ক্লাস নাইনে ওকে ভর্তি করা হয়। এবার এসএসসি পরীক্ষা দেবে। ও বাংলায় ভীষণ কাঁচা। খালাম্মার আশা, একজন টিচার রেখে দিলে বাংলায় পাস করতে ওর কোনো অসুবিধা হবে না।

আমি খোকনকে বললাম, আমি তো টিচার নই। কোনোদিন কখনো কাউকে পাঠদান করিনি। তাছাড়া, আমাকে টিউশনি করতে হবে, একথা ভাবিনিও আমি।

আমি জানি, তাইতো আপনাকে বলতে খুব ভয় লাগছিল। এই ছোট ভাইটার অনুরোধ একটু রাখেন রঞ্জন দা। মাত্র ছয়মাস আপনাকে পড়াতে হবে। আমি আপনার কথা অলরেডি খালাম্মাকে বলে ফেলেছি। ওনারা খুব আশায় আছেন। আপনি রাজি হোন। আপনাকে ওনারা খুব সম্মান করবেন।

কী আর করব! শেষপর্যন্ত আমার সেই জুনিয়র হলমেটের অনুরোধ আমাকে রক্ষা করতে হলো। আমি ওর কাজিনকে কয়েক মাস বাংলা পড়ানোর জন্য রাজি হয়ে যাই।

আমার এই ছাত্রীটির নাম নায়না। একদিন সন্ধ্যায়
হল থেকে হেঁটে হেঁটে চলে যাই এলিফ্যান্ট রোডের অ্যারোপ্লেন মার্কা মসজিদের পাশে ওদের বাসায়। মেয়েটি একদম বালিকা বয়স। চৌদ্দ পনের বছর হবে। ছিপছিপে গড়ন। গায়ের রং উজ্জ্বল গৌরীয়। চোখ দুটো টানা টানা। মায়াভরা চাহনি। আমি গিয়েছি ছাত্রী পড়াতে। ছাত্রীর রূপ দেখা আমার কাজ নয়। তবুও ওর মায়াবী রূপের কথা বলতে হলো।

আমি নায়নাকে বললাম, তুমি কী বাংলায় ৩৩ নম্বর পেয়ে পাশ করতে চাও, নাকি ৪৫, অথবা ৬০। কারণ, তুমি এই তিনটি থেকে যেটি চাও, সেই অনুযায়ী তোমার উপর শর্ত ও বিধিনিষেধ আরোপ করা হবে।

নায়না বললো, ৩৩ নম্বর।

আমি বললাম, ঠিক আছে তাই হবে।

শর্ত ও বিধিনিষেধগুলো কী?

পরে আস্তে আস্তে জানতে পারবে। যেহেতু তুমি ৩৩ নম্বর চুজ করেছ। সেইক্ষেত্রে বিধিনিষেধ একটু কমই আরোপ হবে।

নায়না বলছিল, আপনাকে কী বলে সম্বোধন করব? রঞ্জন দা, নাকি স্যার বলে।

স্যার বলে সম্বোধন করবে।

আমি নায়নাকে বললাম, কাল থেকে তোমাদের বাসায় ইংরেজি পত্রিকার পাশাপাশি বাংলা পত্রিকাও রাখবে। সাথে সাপ্তাহিক বিচিত্রা ও চিত্রালীও রাখবে এবং এগুলো পড়বে তুমি নিয়মিত।

জ্বি স্যার, পড়ব।

আর একটি কথা। যেহেতু তুমি ৩৩ নম্বর বেছে নিয়েছ, তাই তোমাকে সিলেবাস থেকেও পড়াব এবং সিলেবাসের বাইরে থেকেও পড়াব।

জ্বি, আচ্ছা।

আমি নায়নার বাংলা বইটি ওর হাতে দিয়ে বললাম, মাইকেল মধুসূদন দত্তের ‘কপোতক্ষ নদ’ কবিতাটি পড়। নায়না পড়ল ঠিকই কিন্তু অনেক ভুল উচ্চারণে। আমি ওকে আবৃত্তির মতো করে কবিতাটি পড়ে শোনালাম। এবং বললাম, এরপর এই কবিতার ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ ও কবির জীবনী পড়াব।

তুমি কবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের জীবনী পড়বে। এইটাই তোমার হোমটাস্ক।

আমি সপ্তাহে তিনদিন করে যেয়ে নায়নাকে পাঠদান করতে থাকি। মোটামুটি ভালোই অগ্রগতি পরিলক্ষিত হচ্ছে। কিন্তু ওর মধ্যে কিছু মানসিক সমস্যা দেখছিলাম। নায়নার এই মানসিক সমস্যাটি আমার জুনিয়র বন্ধু খোকন আমাকে বলেছিল না।

মেয়েটি মানালীতে পড়তে যেয়ে একটি দুর্ঘটনার শিকার হয়েছিল। রাজকুমার নামে এক রাজস্থানী তরুণের সাথে ওর গভীর বন্ধুত্ব হয়েছিল। এক তুষারপড়া দিনে ওরা দুজনেই তুষারের উপর স্কিইং করেছিল। ছেলেটা হঠাৎ পা ফসকে আচমকা দ্রুতবেগে গিরিখাতে পড়ে যায়। ওকে আর খাত থেকে উদ্ধার করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। অতল গিরিখাতেই ছেলেটির সমাধি হয়। সেই থেকে নায়না মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে। তারপর ওকে আর মানালীতে রাখা সম্ভব হয়নি। ঢাকায় ফিরিয়ে আনা হয়।

মেয়েটির মা একদিন অবশ্য আমার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলছিল, তুমি ওকে পড়ানোর পর থেকে ওর পাগলামি অনেক কমে গেছে। পড়াশোনায়ও বেশ মনোযোগী হয়েছে। আমাকে তুমি কী যে উপকার করেছ বাবা!

একদিন নায়নাকে বললাম, তুমি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের 'হৈমন্তী' গল্পটি পড়বে কমপক্ষে তিনবার। যদিও তোমার সিলেবাসে এটি নেই। সিলেবাসে আছে 'দেনাপাওনা'। এই হৈমন্তী গল্পটি পড়ে তোমার যে অংশটি বেশি ভালো লাগবে, তা আমাকে জানাবে। ওর হাতে একটি পিনআপ কাগজ দিয়ে বললাম, এখানে গল্পটির আমারও ভালোলাগার কথাগুলো লেখা আছে। এখন খুলে দেখবে না। পরে দেখবে। দেখি তোমার সাথে আমার ভালোলাগা মিলে যায় কি না?

দুইদিন পর যেয়ে দেখলাম, হৈমন্তী গল্পের ওর ভালোলাগার কথাগুলো একটি কাগজে লিখে রেখেছে। আমার পিনআপ করা কাগজটাও খুললাম, দুজনেরই একই কথা লেখা। ‘…যাহা দিলাম তাহা উজাড় করিয়াই দিলাম। এখন ফিরিয়া তাকাইতে গেলে দুঃখ পাইতে হইবে। অধিকার ছাড়িয়া দিয়া অধিকার রাখিতে যাইবার মতো এমন বিড়ম্বনা আর নাই...।’

তখন একুশে ফেব্রুয়ারি সামনে। আমি একদিন নায়নাকে পড়াতে যেয়ে বললাম, ২০ ও ২১ তারিখ আসব না। আর্ট কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে ২০ তারিখে আমি রাজপথে আলপনা আঁকব। আর একুশ তারিখ সকালবেলা যাব, প্রভাতফেরিতে। গাইব নগ্নপায়ে গান, ‘আমার ভাইয়ের রক্ত রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কী ভুলিতে পারি?’

নায়না বায়না ধরেছিল সেও আমার সাথে রাজপথে আলপনা আঁকবে। ওর মাকে বলে গিয়েছিল আলপনা আঁকতে। সারারাত রাজপথে আলপনা এঁকে সকালবেলা প্রভাতফেরি করে সেদিন নায়না বাড়ি ফিরে গিয়েছিল।

একসময় নায়নার পরীক্ষার তারিখ খুব কাছাকাছি চলে আসে। এই কয়মাসে নায়নাকে বাংলা বিষয়ে বেশ প্রস্তুতি করে তুলি। ওর ভেতর আমি একটি আস্থাও দেখলাম। আর এক-দুই দিন পড়িয়েই শেষ করে দেব ভাবছি।

সেদিন ছিল ওকে পড়ানোর শেষ দিন। নায়নাকে বললাম, কাল থেকে আর আসব না। তুমি ভালোভাবে পরীক্ষা দিও। পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করলে তোমাকে অভিনন্দন জানাতে আর একদিন আসব।

নায়না মুখ নিচু করে আছে। আমার কাছে মনে হলো, ওর চোখ ছলছল করছে। হ্যাঁ, মানুষের জন্য মানুষের মায়া হয়, আমার প্রতি ওরও হয়ত মায়া হয়েছিল। যেমন ওর জন্য আমারও খারাপ লাগছে। কটা মাস কী এক দায়িত্ববোধ যেন ছিল আমার। সেই দায়িত্ব পালন শেষ হয়ে গেল।

নায়না বলছিল, স্যার, একটা অনুরোধ করব, রাখবেন?
বললাম, বলো রাখব।

আপনি কোনোদিন কোনো পর্বতমালায় যাবেন না। ওখানে কোনো তুষারপড়া দিনে তুষারের উপর দিয়ে হাঁটবেন না। বলেন— রাজি আপনি!

বললাম, আচ্ছা যাব না। রাজি।

স্যার, আমার এমন লাগছে কেন? কেমন যেন কান্না পাচ্ছে। দেখলাম নায়না কাঁদছে।

আমি নায়নাকে বললাম, সামনে আমাদের ইউনিভার্সিটি সামারের বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। বাড়ি চলে যাব। তিন মাস ওখানে থাকব। ভালোই লাগবে ওখানে। নিঝুম সন্ধ্যায় যমুনার কূল ধরে হাঁটব। আকাশ জুড়ে দেখব ঘন নীল! অপূর্ব শীতল বাতাস জল ছুয়ে এসে লাগবে আমার গায়ে।

আমি নায়নার কাছে থেকে বিদায় নিয়ে চলে আসি। তখন সন্ধ্যা রাত্রি। এলিফ্যান্ট রোডের ফুটপাত ধরে হাঁটতে হাঁটতে চলে আসি নীলক্ষেত মোড়ে। একটি টং চায়ের দোকানে বসে চা খাই। একটা সিগারেট ধরাই। সিগারেট টানতে টানতে চলে আসি ভিসি স্যারের বাসার সামনে।

সেখানে রাস্তার উপর একধরনের অদ্ভুত আলো আঁধার বিরাজ করছিল। রেইনট্রির বড়ো বড়ো ডাল আর পাতার ফাঁক দিয়ে অসম্ভব সুন্দর চাঁদের আলো বিচ্ছুরিত হয়ে পড়ছিল রাস্তার উপর। তার কিছু আলো এসে লাগছিল আমার শরীরে। কী যে ভালো লাগছিল তখন! মনে মনে আওড়াচ্ছিলাম পূর্ণেন্দু পত্রীর কবিতার এই কয়টি পংক্তি—

‘...সবাই মানুষ থাকবে না।
কেউ কেউ ধুলো হবে, কেউ কেউ কাঁকর ও বালি
খোলামকুচির জোড়াতালি।
কেউ ঘাস, অযত্নের অপ্রীতির অমনোযোগের
বংশানুক্রমিক দুর্বাদল।
আঁধারে প্রদীপ কেউ নিরিবিলি একাকী উজ্জল।
সন্ধ্যায় কুসুমগন্ধ,
কেউ বা সন্ধ্যার শঙ্খনাদ।
অনেকেই বর্ণমালা
অল্প কেউ প্রবল সংবাদ...।’

বাড়ি থেকে তিনমাস পর ফিরে আসি। ততদিনে নায়নার পরীক্ষার রেজাল্ট বেরিয়ে গেছে। আমি খোকনকে জিজ্ঞাসা করি, নায়নার রেজাল্ট কী? খোকন বললো, প্রথম বিভাগ পেয়েছে। বাংলায় ওর নম্বর ৬০+।

একবার ভাবলাম একটি ফুলের তোড়া নিয়ে নায়নাকে একদিন অভিনন্দন জানিয়ে আসব। কিন্তু যাওয়া আর হয়নি। মানুষের কিছু আবেগ ও মায়া নিষ্ঠুরতায় আটকে রাখতে হয়। প্রকাশিত করতে হয় না।

মেয়েটা হয়ত অপেক্ষা করেছে অনেক বিকেল। ললাটগামী হয়েছে অশ্রুবিন্দু। মানুষের এমন কত চোখের জল অগোচরে কালের কপোল তলে ঝরে পড়ে যায়, কে তা দেখে!

আরএ/

Header Ad
Header Ad

এবার টিউলিপকে দায়িত্ব ছাড়ার আহ্বান দুর্নীতিবিরোধী জোটের

টিউলিপ সিদ্দিক। ছবি: সংগৃহীত

দুর্নীতির অভিযোগের মুখে ক্রমেই বাড়ছে চাপ, যুক্তরাজ্যের সিটি মিনিস্টার টিউলিপ সিদ্দিকের ওপর। প্রথমে বিরোধী দল এবং এখন দেশটির দুর্নীতিবিরোধী জোটও টিউলিপকে দুর্নীতিবিরোধী দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ানোর অনুরোধ করেছে। এই জোটে বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত দুর্নীতিবিরোধী সংগঠনগুলো, যেমন অক্সফাম এবং ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল, অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) বিবিসির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

জোটটি এক বিবৃতিতে জানায়, যুক্তরাজ্যের মানি লন্ডারিং নিয়ন্ত্রণ কাঠামো ও অর্থনৈতিক অপরাধ মোকাবিলার দায়িত্বে থাকা টিউলিপের বিরুদ্ধেই অর্থ আত্মসাৎের অভিযোগ উঠেছে। যা তার কাজের সঙ্গে সাংঘার্ষিক। ফলে ব্রিটিশ সরকারের মন্ত্রী হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়ার মতো অবস্থানে তিনি আছেন কি না বিষয়টি পরিষ্কার নয়।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ট্রেজারি মন্ত্রী যুক্তরাজ্যের মানি লন্ডারিং নিয়ন্ত্রণ এবং অর্থনৈতিক অপরাধ মোকাবিলার কাঠামোর দায়িত্বে রয়েছেন, অথচ তার এমন একটি ক্ষমতাচ্যুত সরকারের সাথে সরাসরি পারিবারিক সম্পর্ক রয়েছে যা সেই কাঠামোর অধীনে তদন্ত করা যেতে পারে।

সম্প্রতি কয়েকটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে টিউলিপের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের মিত্রদের কাছ থেকে লন্ডনে বিনামূল্যে ফ্ল্যাট নেয়ার অভিযোগ উঠে। এছাড়া, বাংলাদেশের ৯টি মেগা প্রকল্পে ৮০ হাজার কোটি টাকা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে টিউলিপ, শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা ও সজীব ওয়াজেদ জয়ের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করে দুদক।

এই অভিযোগের মধ্যেই টিউলিপের বিরুদ্ধে আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ উঠায় তাকে মন্ত্রিত্ব থেকে বরখাস্ত করার দাবি জানান ব্রিটেনের বিরোধীদলীয় নেতা কেমি ব্যাডেনোচ।

টিউলিপ সিদ্দিক বর্তমানে যুক্তরাজ্যের অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনীতিবিষয়ক মিনিস্টার (ইকোনমিক সেক্রেটারি)। দেশটির আর্থিক খাতে দুর্নীতি বন্ধের দায়িত্বে আছেন তিনি। তিনি বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানার মেয়ে।

Header Ad
Header Ad

সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারালেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক

সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারালেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, ছবি: সংগৃহীত

সড়ক দুর্ঘটনায় আহত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) বাংলা বিভাগের সহযোগী ড. পুরনজিত মহালদার মারা গেছেন। সোমবার দিবাগত রাত ২টা ৩৫ মিনিটের দিকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।

আজ মঙ্গলবার সকালে এ তথ্য নিশ্চিত করে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মোহাম্মদ মাঈন উদ্দিন বলেন,‘ গতকাল দুপুরে রাজশাহী মহানগরীর বার রাস্তার মোড় এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হন ড. পুরনজিত মহালদার। পরে তাকে সেখান থেকে উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউ ইউনিটে চিকিৎসা দেওয়া হয়। সেখানেই তিনি মারা যান।’

সহকর্মীর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে উপ-উপাচার্য বলেন, ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করছি।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তরের প্রশাসক অধ্যাপক মো. আখতার হোসেন মজুমদার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানান, ড. পুরনজিত মহালদারের মরদেহ আজ সকাল ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদুল্লাহ কলাভবনের সামনে রাখা হবে। তার বন্ধু শুভানুধ্যায়ী, সহকর্মী, শিক্ষার্থীদের সকাল ৯টা থেকে ১০টার মধ্যে শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য উপস্থিত থাকতে অনুরোধ করা হলো।

ড. পুরনজিত মহালদারের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন বাংলা বিভাগ অ্যালামনাই, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি জামিল রায়হান ও সাধারণ সম্পাদক শহীদ ইকবাল। নি মারা যান।

Header Ad
Header Ad

ময়মনসিংহে হামলার হুমকিতে ৭৫৫ বছরের ওরস বন্ধ রাখার নির্দেশ প্রশাসনের  

ছবিঃ সংগৃহীত

উগ্রবাদীদের হুমকির প্রেক্ষিতে ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার হজরত শাহ সৈয়দ আবদুল আজিজ বোগদাদীর (রহ.) মাজারের ৭৫৫তম বার্ষিক ওরস বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।

ওরসকে কেন্দ্র করে উগ্রবাদীদের সাথে মাজারের ভক্ত-অনুসারীদের দ্বন্দ্বে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি হতে পারে- এমন আশঙ্কায় এই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

রোববার ১২ই জানুয়ারি সন্ধ্যার পর উপজেলা প্রশাসন জরুরি সভা ডেকে সেখানে এমন সিদ্ধান্ত নেয়। পরে মাজার পরিচালনা কমিটিকে তা জানিয়ে দেয়।

এ নিয়ে এলাকায় দেখা দিয়েছে তীব্র অসন্তোষ এবং ক্ষোভ। এই মাজারের ওরস উপলক্ষ্যে হিন্দু-মুসলিমসহ বিভিন্ন ধর্ম-বর্ণের মানুষ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে জড়ো হতেন। তাদের আগমনে এলাকায় একটা সম্প্রীতির পরিবেশ বিরাজ করত। শত শত বছর ধরে চলে আসা এই অনুষ্ঠান ইতিপূর্বে কখনো বন্ধের নির্দেশ আসেনি। এবারই উগ্রবাদীদের হুমকিতে এভাবে ওরস বন্ধের নির্দেশে স্থানীয়রা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান।

মাজার পরিচালনা কমিটির সভাপতি আইনজীবী অ্যাডভোকেট কাজী শাহ জাহান জানান, ১৫-১৭ জানুয়ারি তিন দিনব্যাপী ৭৫৫তম বার্ষিক ওরসের আয়োজন করা হয়েছিল। কিন্তু একটি সংগঠনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ওরস বন্ধ রাখতে নির্দেশ দিয়েছে প্রশাসন।

তবে মাজারে বাউল ও লোকসঙ্গীতের আয়োজন বন্ধ রাখলেও কোরআন খতম, শিরনি বিতরণসহ অন্যান্য কার্যক্রম চালু থাকবে বলে জানান তিনি।

ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার জাটিয়া ইউনিয়নের বর্তমান দরগাপাড়া গ্রামটির নামকরণ করা হয়েছে বটগাছে ঘেরা হজরত শাহ সৈয়দ মাওলানা আবদুল আজিজ বোগদাদীর (রহ.) মাজারকে ঘিরে। প্রায় ৪০ বছর মাজারের খাদেম হিসেবে আছেন নুরুল ইসলাম ফকির (৯০)।

তিনি বলেন, চারটি বটগাছে ঘেরা মাজারে প্রতিদিনই মানুষ আসে। তিন শ শতাংশ জায়গা নিয়ে মাজারটি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ইত্তেফাককুল ওলামা নামের একটি সংগঠন দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করে আসছে। অভিযোগ রয়েছে, ইতিপূর্বে ঈশ্বরগঞ্জ এলাকায় অত্যন্ত নিভৃতে থাকা অল্প কয়েকটি আহমদিয়া পরিবারের সদস্যদের ওপরেও তারা হুমকি-ধমকি দিয়ে নিপীড়ন চালিয়েছিল। এই উগ্রবাদী সংগঠনটি মাজারের ভক্ত-অনুসারীদের বিরুদ্ধে সবসময় কঠোর অবস্থান নিয়ে আসছে। মাজারকে শিরকি আখ্যা দিয়ে বিভিন্ন সময় বক্তব্য-বিবৃতি দিয়ে আসছে।

তবে সকল অভিযোগ এড়িয়ে গিয়ে সংগঠনটির ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মুফতি মাহমুদুল হক আজিজি বলেন, আল্লাহর অলির মাজার অপবিত্র করে ‘কার্যক্রম’ করা অন্যায়। অলির মাজারকে কষ্ট দেওয়ায় আমাদের ইমানি দায়িত্ব থেকে প্রতিবাদ জানিয়েছি।

ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এরশাদুল আহমেদ বলেন, ‘আলেম-ওলামারা’ চাচ্ছেন না মাজারে ওরস হোক। ময়মনসিংহ শহরে একটি মাজারে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এসব মাথায় রেখেই প্রশাসনের আশঙ্কা, এখানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি খারাপ হলে মোকাবিলা করা কঠিন হবে। ৫ই আগস্ট–পরবর্তী পরিস্থিতি যেহেতু স্থিতিশীল নয়, তাই ওরসের আনুষ্ঠানিকতা বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

ভবিষ্যতে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তারা আবারও বার্ষিক ওরস আয়োজন করতে পারবেন বলে জানিয়েছেন ইউএনও।

ঈশ্বরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ওবায়দুর রহমান বলেন, ময়মনসিংহ শহরে মাজারে একটি ঘটনা ঘটেছে। পাশাপাশি উপজেলা এটি। সেটির প্রভাব এখানেও পড়তে পারে, এমন আশঙ্কা ছিল আমাদের। ৭৫৫তম ওরস হলেও এবার আগের মতো পরিবেশ-পরিস্থিতি তো নেই।

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

এবার টিউলিপকে দায়িত্ব ছাড়ার আহ্বান দুর্নীতিবিরোধী জোটের
সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারালেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক
ময়মনসিংহে হামলার হুমকিতে ৭৫৫ বছরের ওরস বন্ধ রাখার নির্দেশ প্রশাসনের  
নারায়ণগঞ্জে ট্রাকচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ২ বন্ধুর মৃত্যু  
এলপিজি গ্যাসের সাড়ে ৭ শতাংশ অতিরিক্ত ভ্যাট অব্যাহতি  
অবশেষে গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি চূড়ান্তের পথে  
রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে ভুল প্রতিবেদন প্রকাশ, ঢাকার কড়া প্রতিবাদ
এ বছরের মাঝামাঝিতে জাতীয় নির্বাচন চায় বিএনপি  
নাইজেরিয়ায় কৃষকদের জড়ো করে গুলি, নিহত অন্তত ৪০
দুর্দান্ত ডেথ বোলিংয়ে ঘুরলো ম্যাচের মোড়, রংপুরের সাতে সাত
বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচন আয়োজন করতে বললেন প্রধান উপদেষ্টা
এইচএমপিভি নিয়ে শাহজালাল বিমানবন্দরে সতর্কতা জারি
স্বচ্ছ ভোটার তালিকা ১৮ কোটি মানুষের আমানত : নির্বাচন কমিশনার
চাঁদাবাজির অভিযোগে যুবদল নেতা বহিষ্কার
ইবিতে পরীক্ষা দিতে এসে তোপের মুখে ছাত্রলীগ নেতা, থানায় সোপর্দ
এবার মাদক অধিদপ্তরের ডিসপ্লেতে ‘ছাত্রলীগ আবার ভয়ংকর রূপে ফিরবে’
সাবেক ডিবিপ্রধান হারুনের বিরুদ্ধে এক নারীর গুরুতর অভিযোগ
জাপানে ৬.৮ মাত্রার ভূমিকম্প, সুনামি সতর্কতা জারি
বাংলাদেশে কিছুই নেই, ওই দেশে দরিদ্র মানুষ বেশি: বিজেপি নেতা
গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব প্রত্যাহারের আহ্বান জামায়াতের