শুক্রবার, ২১ মার্চ ২০২৫ | ৭ চৈত্র ১৪৩১
Dhaka Prokash

স্মৃতি

বিকেল বেলা চেয়ার নিয়ে বসে আছি বাড়ির বাইরের আঙ্গিনায়। হঠাৎ দেখি স্কুল পড়ুয়া ছেলে মেয়ে বাড়ির সামনের রাস্তা দিয়ে হাতে হাত রেখে প্রেমালাপ করে যাচ্ছে। এই দৃশ্য দেখে মনে পড়ে গেলো আমার কলেজ জীবনের সেই ১৯৮৮ সালের স্মৃতির কথা। সেই সময় প্রেম করতে হৃদয় গহিনে নাড়া দিলেও লাগতো বড় ভয়, লোক সমাজে কি জানি কি কয়

মনের অজান্তে বলে ফেললাম ওগো প্রেয়সী আজও মনে পড়ে তোমার কথা,তোমার কথা মনে করে পাচ্ছি সারা জীবন ব্যথা। পাশেই বসা ছিল আমার বড় এক চাচাতো ভাইয়ের নাতি নাম আসাদ।সেও কলেজে পড়ে, বলছে ও কবি দাদু তোমার কথা শুনেছি আমি চমকে উঠলাম কি বলতে কি বলে ফেললাম বললাম- না ও কিছু না। কবি দাদু আমি কিন্তু শুনেছি তুমিও নিশ্চয় বয়সকালে প্রেম করেছিলে। দাদা সত্যি বলতো তুমি কি কখনও প্রেম করনি। আমার সেই স্মৃতির কথা মনে করে চোখ যেনো ছলছল করে চোখের কোণায় পানি ভাসছে।

বললাম হ্যাঁ দাদুভাই।

বললো কোথায় আর ওই মেয়েটির নাম কি ছিল।

রূপালী - যেমন নাম তেমন ছিল রূপে গুণে ভরপুর আর সে পড়তো দশম শ্রেণিতে।আমি কলেজের হোস্টেলে থাকতাম।আমার রুমমেট ছিল তিনজন।

হঠাৎ একদিন কাজের বুয়া আসেনি আর ঐ দিন ছিল শুক্রবার কলেজ বন্ধ থাকায় রুমমেট সবাই বাড়ি গিয়েছিল। তাই আমি নিজেই রান্নার কাজে ব্যস্ত এমন সময় মেয়েটি পাশে দিয়ে যাচ্ছে আমার চোখে চোখ পড়তেই ও নিজে থেকেই বলে ফেললো আপনাদের কাজের বুয়া আসেনি।ইতস্ততঃ হয়ে বললাম না আসে নি। আপনি কি রান্না করতে পারেন? বললাম একটু একটু।মেয়েটি ছিল সরলমনা বলল দেন আমি রান্না করে দিচ্ছি। আমি বললাম না না ও জোর করে রান্না করে দিচ্ছে এমন সময় ওর ছোট বোন শিউলি এসে বলল আপু তোমাকে আম্মু খুঁজছে। রূপালী বলল আমি যে এখানে আসছি তা মাকে বলোনা প্লীজ লক্ষী বোনটি একথা বলে মুচকি হাসি দিয়ে রূপালী তার বোনকে নিয়ে চলে গেলো। দুই বোন মিলে পরের দিন আবার আসলো শিউলি পড়ে পঞ্চম শ্রেণীতে একটি অংক করার উছিলায়। দুই বোন মিলে রান্না করে দিয়ে চলে যাওয়ার সময় বাই বাই বলে বিদায় জানালো, ওর চাহনি, মুচকি হাসে ও রূপের ঝলকানি যেন আমার মনে ভাসতে লাগলো কিছুই ভালো লাগছে না। দেখলাম নাতি আসাদ মনোযোগে শুনতেছে এমন সময় আমার মেয়ে জুঁই ডাকছে আব্বু আম্মু তোমাকে বাসায় আসতে বললো নাতিকে বললাম বাকি কথা আরেক দিন।

আমার গৃহিণী বলল এতক্ষণ আসাদের সাথে কি কথা হলো,বললাম খোশগল্প গিন্নি বললো ও আচ্ছা।

ঠিক পরেরদিন আসাদ ওই জায়গায় আসলো আমার স্মৃতিময় কথা শুনতে, কবি দাদু বাকি কথা কর না শুরু। শোনো দুই দিন পর রুপালী স্কুলে যাচ্ছে সাথে ওর ছোট বোন শিউলিও। জানালার পাশে দিয়ে যাওয়ার সময় একটি গোলাপ ফুল ছুঁড়ে দিয়ে হাত ও চোখের ভাষায় বলে গেলো ভালোবাসি।একদিন বিকেল বেলা ওর এক উপজাতি বান্ধবী নাম রেবা ও ছোট বোন শিউলিকে নিয়ে বেড়াতে এসে পানি খাওয়ার উছিলায় সবাই ঘরে ঢুকলো। বন্ধুরা ইতিমধ্যে বুঝে গেছে তাই সুযোগ দিয়ে ওরা বেড়াতে বাইরে চলে গেলো। রূপালী শিউলীকে বলল তুমি বাড়ি যাও মা আবার খোঁজবে তাই শিউলী মুচকি হেসে বাই বাই বলে চলে গেলো। চানাচুর বাদাম খেতে খেতে গল্প রেবা বললো আপনাদের দু'জনকে বেশ মানিয়েছে তাই আপনাদের ভালোবাসা চিরস্থায়ী হোক।আমি বললাম আমরাতো গরীব মানুষ। রূপালী বলল কে গরীব আর কে ধনী গায়ে তো লেখা নাই আমি তোমাকে ভালোবাসি তোমাকে ছাড়া বাঁচবো না আমি তখন বললাম আই লাভ ইউ টু।

এভাবে চললো মাস তিনেক শীতের শেষে বসন্তের আগমন মনটা করছে উড়ো উড়ো বিকেলে চেয়ার নিয়ে বসে রূপালীদের বাসার দিকে তাকিয়ে আছি। পিছন থেকে শিউলী এসে দুচোখ ধরে দুলাভাই বলে সম্বোধন করে বলল মা আপনাকে এখন আমার সাথে যেতে বলছে।

আমি যেনো বিস্মিত মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি আমতা আমতা করে না না বললাম শিউলী নাছোড়বান্দা কিছুতেই ছাড়লো না। গিয়ে দেখলাম ডাইনিং টেবিলে নাস্তা ও ফলের সমারোহ তার মা আসলো সালাম দিয়ে আন্টি বলে ডাকলাম নাস্তা খাওয়ার ফাঁকে ফ্যামিলিতে কে কে আছে বিভিন্ন জিঙ্গাসাবাদ করলো এক পর্যায়ে আন্টি বললো দেখ বাবা আমাদের বড় ছেলে নেই তুমি আজ থেকে আমার ছেলে হয়ে থাকবে আর রূপালীকে আমি তোমার হাতে তুলে দিতে চাই। বললাম আন্টি আমি তো বর্তমানে বেকার তাই কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে তাছাড়া রুপালি এস,এস,সি পাস করুক আর দেখি আমি কিছু করতে পারি কিনা। আন্টি বলল আর নয় আন্টি বলো মা, লজ্জায় যেনো লাল হয়ে গেলাম সামনে ছিল শিউলী ব্যাচকি দিল। ঠিক আছে মা আজ আসি। এখন বন্ধু মহল সবাই জানে আমি হলাম এই বাড়ীর জামাই। ভালো কিছু রান্না হলে প্রায়ই বাসা থেকে শিউলী দিয়ে যায় আর মাঝে মধ্যে রূপালীও নিয়ে আসতো। ফাইনাল পরীক্ষা আরেক দিকে বিয়ের জন্য চলছে পিরাপিরি কি করবো ভেবে উঠতে পারছিনা সম্পর্কে যেনো চলছে টানাপোড়নের খেলা না পারছি সইতে না পারছি কইতে। ফাইনাল পরীক্ষা দিয়ে বাড়ি আসলাম আর ওদিকে জানতে পারলাম রূপালীর বিয়ের পাকা কথা ছেলে নাকি কাপড়ের ব্যাবসা করে।

রূপালীর একটি চিঠি আদৌ বুকের ভিতর কান্নার ঝড় বয়ে বেড়ায়। চিঠি পাঠিয়েছিল রক্তের ছাপ দিয়ে বলে ছিল আমাকে বাঁচাও তোমাকে ছাড়া আমি বাঁচবো না, তুমি রাজি থাকলে আমি তোমার সাথে পালিয়ে যাবো তার ওই আকুতি আমার চোখের পানি ছলছল করে বের হয়েছিল কিন্তু কি করব বেকার। বাপের আর্থিক অবস্থাও ভালো ছিল না।সবে ইন্টার মিডিয়েট পরীক্ষা দিয়েছি কিছুদিন পর রিজাল্ট হলো পাশও করলাম।জানতে পারলাম রূপালীর বিয়ে হয়ে গেছে তাই হৃদয়টা যেনো পাথর হয়ে গেলো - মনমরা কিছুই ভালো লাগেনা শেরপুর সরকারি কলেজে বি,এ ভর্তি হলাম পাস করলাম সরকারি চাকরি হলো সেই চট্টগ্রামে পোস্টিং প্রায় তিন চার মাস পরপর বাড়ি আসতাম বুঝলে নাতি। তখন ছিল রেডিওর যুগ বিরহের গান শুনতাম আর মাঝে মধ্যে কবিতা লিখে সময় পার করতাম আর এখনকার মতন মোবাইল ছিলনা বাবা চিঠি লিখতো সাত/ আট দিন পরে পেতাম আমি লিখলেও সেভাবেই পেত আর তীর্থের কাকের মতন চেয়ে থাকতাম কবে আসবে চিঠি এই অপেক্ষাটাও যেনো অনেক আনন্দের ছিল।

যাই হোক বাড়ি আসলাম পঁচানব্বই সালের মে মাসে বাবা আর মামা মিলে পঁচিশে মে বৃহস্পতিবার নয়আনী বাজার শেরপুর টাউনে তোমার দাদীর সাথে বিয়ে ঠিক করে এসে আমাকে বললেন মেয়ে দেখতে যাব। যাওয়ার সময় বন্ধু সম্রাটকে পেলাম নিউমার্কেট মোড়ে ওরে বললাম চল বন্ধু মেয়ে দেখতে যাব ও এমনিতেই রাজি হয়ে গেলো।

গিয়ে দেখলাম বিয়ের সমস্ত ব্যবস্থা করেই তারা আমাকে মেয়ে দেখার কথা বলে নিয়ে আসছে কারণ আমি বিয়ের বাপারে উদাসীন ছিলাম।

এখানে মজার ব্যাপার কি জানো বিয়ের পর জানতে পারলাম তোমার দাদীও নাকি কলেজ থেকে ফেরার পথে ওর এক বান্ধবীর নিকট জেনেছিল তোর বিয়ে তুই কোথায় থেকে আসলি ও বলেছিল কি বলিস আমার বিয়ে আর আমি জানতাম না।

তোমার দাদী চিঠি দিত সাত/ আট দিন পরে পেতাম যেনো সেই চিঠির মধ্যে ভালোবাসার নিবেদন, মনে হতো না মাছুমা আমার স্ত্রী মনে হতো এক যুগের প্রেমিকা।

 এখনতো মোবাইলের যুগ চিঠির প্রয়োজন নেই বললেই চলে কপোত কপোতির কথ হয় দিবারাত্রি।

আজকে তোমাদের চিঠির দিন শেষ,

মোবাইল নেমে সুখে আছ বেশ।

 

ডিএসএস/ 

Header Ad
Header Ad

পৃথিবীর সর্বত্র আজ দিন-রাত সমান

ছবি: সংগৃহীত

আজ (২১ মার্চ) পৃথিবীর সর্বত্র দিন ও রাতের দৈর্ঘ্য সমান। বছরের এই দিনটিকে বলা হয় ‘ভারনাল ইকুইনক্স’। এ দিন সূর্য ঠিক বিষুবরেখার ওপর লম্বভাবে কিরণ দেয়, যার ফলে পৃথিবীর উত্তর ও দক্ষিণ গোলার্ধে দিন ও রাতের ব্যাপ্তি সমান হয়ে থাকে।

পৃথিবীর মেরু রেখা ধ্রুবতারামুখী হয়ে সবসময় কক্ষপথের সঙ্গে ৬৬.৫ ডিগ্রি কোণে হেলে থাকে। অপরদিকে, নিরক্ষরেখা বা বিষুবরেখার সমতল কক্ষপথের সঙ্গে ২৩.৫ ডিগ্রি কোণে হেলে থাকে। এর ফলেই প্রতি বছর ২১ মার্চ ও ২৩ সেপ্টেম্বর দিন ও রাতের দৈর্ঘ্য সমান হয়।

২০ মার্চ সূর্য তার দক্ষিণ গোলার্ধের অবস্থান শেষ করে উত্তর গোলার্ধের দিকে যাত্রা শুরু করে এবং রাতের শেষের দিকে বিষুবরেখার ওপর অবস্থান নেয়। তাই পরের দিন অর্থাৎ ২১ মার্চ পৃথিবীর উভয় গোলার্ধে দিন ও রাত সমান থাকে।

আগামীকাল থেকে সূর্য উত্তর গোলার্ধের দিকে সরে যেতে শুরু করবে এবং এ কারণে উত্তর গোলার্ধে গরমের মাত্রা ধীরে ধীরে বাড়বে। দিন দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হবে এবং রাতের দৈর্ঘ্য কমতে থাকবে। এই পরিবর্তন চলবে আগামী ২১ জুন পর্যন্ত, যেদিন উত্তর গোলার্ধে বছরের সবচেয়ে দীর্ঘ দিন এবং সবচেয়ে ক্ষুদ্র রাত ঘটে।

Header Ad
Header Ad

নরসিংদীতে আ. লীগ-বিএনপির সংঘর্ষে নিহত ২, গুলিবিদ্ধসহ আহত ১০

ছবি: সংগৃহীত

নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার চাঁনপুর ইউনিয়নের মোহিনীপুর গ্রামে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে ২ জন নিহত হয়েছেন এবং অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। শুক্রবার (২১ মার্চ) ভোরে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

নিহতরা হলেন রায়পুরা উপজেলার মোহিনীপুর গ্রামের আমিন (২৩) ও বাশার (৩৫), যারা আওয়ামী লীগ সভাপতি সালাম মিয়ার সমর্থক বলে জানা গেছে। নিহত আমিনের পায়ে গুলির চিহ্ন পাওয়া গেছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, চাঁনপুর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ও মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর সালাম মিয়া এবং ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সম্পাদক সোহাগের সঙ্গে বিএনপি নেতা সামসু মেম্বারের দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল। এই বিরোধের জেরে সামসু মেম্বার ও তার সমর্থকদের এলাকা ছাড়া করেছিলেন সালাম ও সোহাগ।

তবে গত ৫ আগস্টের পর সামসু মেম্বার ও তার সমর্থকরা এলাকায় ফিরে এলে উত্তেজনা বেড়ে যায়। শুক্রবার ভোর ৫টার দিকে সালাম মিয়া ও তার সমর্থকরা এলাকায় প্রবেশের চেষ্টা করলে সামসু মেম্বারের সমর্থকরা তাদের বাধা দেয়।

পরে দেশীয় অস্ত্র, টেঁটা-বল্লম, দা, ছুরি, ককটেল ও আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করে উভয়পক্ষ সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। এতে প্রতিপক্ষের ছোড়া গুলিতে আমিন এবং টেঁটা ও ছুরিকাঘাতে বাশার ঘটনাস্থলেই নিহত হন। সংঘর্ষে অন্তত ১০ জন আহত হন।

রায়পুরা থানার অফিসার্স ইনচার্জ (ওসি) আদিল মাহামুদ জানান, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে দুইজন নিহত ও একজন গুলিবিদ্ধসহ আরও ১০ জন আহত হয়েছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ কাজ করছে।

Header Ad
Header Ad

বাতিল হচ্ছে শেখ মুজিবসহ চার শতাধিক নেতার মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি

ছবি: সংগৃহীত

মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদসহ ১৯৭০ সালের নির্বাচনে বিজয়ী চার শতাধিক রাজনীতিবিদের মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি বাতিলের প্রস্তাব করা হয়েছে। জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) আইনের সংশোধিত খসড়ায় এই নেতাদের পরিচয় ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’ হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে।

জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল জামুকার ৯৪তম সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গত ১০ মার্চ এ-সংক্রান্ত কার্যপত্রে (খসড়াসহ অন্যান্য বিষয়) স্বাক্ষর করেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম। সম্প্রতি দেশের একটি গণমাধ্যমে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।

প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে- এমএনএ (জাতীয় পরিষদের সদস্য) ও এমপিএ (প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য) হিসেবে নির্বাচিত এই নেতারা মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ১৯৭২ সালে গণপরিষদ গঠিত হলে তাদের সদস্য হিসেবে মনোনীত করা হয়। তবে নতুন খসড়া আইনে তাদের মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি বাতিল করে ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’ হিসেবে চিহ্নিত করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের (জামুকা) ৯৪তম সভায় এই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ১০ মার্চ মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম সংশ্লিষ্ট খসড়ায় স্বাক্ষর করেন। সংশোধনীতে মুক্তিযুদ্ধের সময় রাজনীতিবিদদের পাশাপাশি আরও চার শ্রেণির মুক্তিযোদ্ধাদের ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’ হিসেবে নতুন পরিচয়ে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

এই চার শ্রেণির মধ্যে রয়েছে—

১. মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে প্রবাসে পেশাজীবী হিসেবে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে প্রচার চালানো ও বিশ্বজনমত গঠনে ভূমিকা রাখা ব্যক্তিরা।
২. মুজিবনগর সরকারের অধীনে কর্মকর্তা, কর্মচারী, দূত ও অন্যান্য সহযোগী।
৩. স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী, কলাকুশলী ও মুক্তিযুদ্ধকালীন সাংবাদিকরা।
৪. স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের সদস্যরা।

এই খসড়া কার্যকর হলে বিদ্যমান মুক্তিযোদ্ধা তালিকার অন্তত ১০ হাজার ব্যক্তির পরিচয় বদলাতে হবে বলে জানিয়েছে মন্ত্রণালয়-সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র। যারা এতদিন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়ে আসছিলেন, তাদের নতুনভাবে ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’ হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হবে।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম গণমাধ্যমকে বলেন, 'বীর মুক্তিযোদ্ধা কেবল তারাই থাকবেন, যারা অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করেছেন। রাজনীতিবিদরা সরাসরি যুদ্ধ করেননি, তাই তাদের মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি বাতিল করে নতুন পরিচয়ে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এতে কোনো মর্যাদা কমানো হয়নি, বরং মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে আরও সুনির্দিষ্ট করা হয়েছে।'

তবে এই সিদ্ধান্ত নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে। বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ ও ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেছেন, 'আইন বদলে মুক্তিযোদ্ধাদের অবদান পরিবর্তন করা যায় না। এটি অপ্রয়োজনীয় এবং অপচয়মূলক উদ্যোগ। মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারীদের স্বীকৃতি নিয়ে প্রশ্ন তোলা উচিত নয়। যদি কেউ ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা হয়ে থাকে, তাহলে সেটি যাচাই করে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।'

মানবাধিকার কর্মী ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা সুলতানা কামাল বলেন, 'মুক্তিযুদ্ধ ছিল একটি জনযুদ্ধ, কেবল সামরিক যুদ্ধ নয়। এ লড়াইয়ে রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। ঢালাওভাবে এমএনএ, এমপিএ ও গণপরিষদ সদস্যদের মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি বাতিল করা পুনর্বিবেচনা করা উচিত।'

খসড়া আইনে মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞায় বড় পরিবর্তন আনা হয়েছে। নতুন সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, 'যারা ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশের অভ্যন্তরে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়েছেন এবং মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণ করেছেন, তারাই বীর মুক্তিযোদ্ধা।'

সংশোধনীতে রাজনীতিবিদদের নাম বাদ দেওয়ার পাশাপাশি মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় থাকা স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী, সাংবাদিক, চিকিৎসক ও নার্সদের মুক্তিযোদ্ধার পরিবর্তে ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। তবে সীমান্তবর্তী মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পে দায়িত্ব পালনকারী চিকিৎসক ও নার্সদের স্বীকৃতি বহাল রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম।

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাবেক সভাপতি ও বীর মুক্তিযোদ্ধা মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, 'মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী ব্যক্তিদের স্বীকৃতি নিয়ে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে, যা ইতিহাসকে বিকৃত করার শামিল। মুক্তিযুদ্ধ একটি পরিকল্পিত সংগ্রাম ছিল, যেখানে রাজনীতিবিদরাই মূল নেতৃত্ব দিয়েছেন।'

মুক্তিযুদ্ধ গবেষক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা হারুন হাবীব বলেন, 'এটি মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য অপমানজনক সিদ্ধান্ত। মুক্তিযুদ্ধ জাতির ইতিহাসের মীমাংসিত অধ্যায়। এটি নিয়ে বিতর্ক তৈরি করা অযৌক্তিক।'

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ বীরবিক্রম বলেন, 'এই সিদ্ধান্ত ভালোভাবে পর্যালোচনা করা দরকার। আমি সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করব।'

মুক্তিযোদ্ধাদের নতুন যাচাই-বাছাই:

অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর গত ১৪ আগস্ট মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা পুনরায় যাচাই-বাছাই করার সিদ্ধান্ত নেয়। তবে এখন শুধু ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা চিহ্নিত করার পরিবর্তে মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞা পরিবর্তনের মাধ্যমে অনেকের স্বীকৃতি বাতিলের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

প্রস্তাবিত আইন চূড়ান্ত অনুমোদনের পর যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে নতুন তালিকা প্রকাশ করা হবে। এটি কার্যকর হলে বেসামরিক গেজেটে অন্তর্ভুক্ত প্রায় দুই লাখ মুক্তিযোদ্ধার মধ্যেও অনেকের স্বীকৃতি হারানোর সম্ভাবনা রয়েছে।

বর্তমান আইনে মুক্তিযুদ্ধের সংজ্ঞায় বলা হয়েছিল, '১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত স্বাধীনতার জন্য যে লড়াই হয়েছে, তা মুক্তিযুদ্ধ। এতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘোষণায় সাড়া দিয়ে যারা অংশ নিয়েছেন, তারা মুক্তিযোদ্ধা।'

কিন্তু নতুন খসড়ায় মুক্তিযুদ্ধের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, '১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের দোসরদের বিরুদ্ধে যারা লড়াই করেছেন, তারাই মুক্তিযোদ্ধা।'

এই পরিবর্তনের ফলে মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী রাজনৈতিক নেতাদের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা পরিষদের সভায় এই খসড়া অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে। এরপর এটি অধ্যাদেশ আকারে প্রকাশের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।

এই নতুন খসড়া আইনের ফলে মুক্তিযোদ্ধাদের স্বীকৃতি ও মর্যাদা সংক্রান্ত ব্যাপক পরিবর্তন আসবে। এটি বাস্তবায়িত হলে মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা এবং মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে বড় ধরনের বিতর্ক সৃষ্টি হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

পৃথিবীর সর্বত্র আজ দিন-রাত সমান
নরসিংদীতে আ. লীগ-বিএনপির সংঘর্ষে নিহত ২, গুলিবিদ্ধসহ আহত ১০
বাতিল হচ্ছে শেখ মুজিবসহ চার শতাধিক নেতার মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি
বাইতুল মোকাররমে ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি হামলার বিচার দাবিতে মিছিল
হিথ্রো বিমানবন্দরে অগ্নিকাণ্ড, হাজার হাজার যাত্রী আটকা
গাজায় ইসরায়েলি হামলায় ট্রাম্পের ‘পূর্ণ সমর্থন’ রয়েছে: হোয়াইট হাউস
ওমরাহ থেকে ফিরে অভিনয় ছাড়ার ঘোষণা বর্ষার
যৌথ বাহিনীর অভিযানে এক সপ্তাহে ২৪৯ অপরাধী গ্রেপ্তার
ভিজিএফের চালের বস্তায় শেখ হাসিনার নামে স্লোগান; স্থানীয়দের ক্ষোভ
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার জাকিরকে সাময়িক বরখাস্ত
ভিনিসিয়ুসের শেষ মুহূর্তের জাদুতে ব্রাজিলের রোমাঞ্চকর জয়
ইউনূস-মোদি বৈঠকের জন্য দিল্লির কাছে ঢাকার চিঠি
কুমিল্লায় শিশু ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগে ভারতীয় নাগরিক গ্রেপ্তার
গাজায় ইসরায়েলের হামলায় আরও ৮৫ জন নিহত, তিনদিনে প্রাণ গেল ৬০০ ফিলিস্তিনির
আত্মপ্রকাশ করলো সাবেক সেনা কর্মকর্তা-আমলাদের ‘জনতার দল’
১৯৪ জন উপসচিবকে যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি
ভোরে মাঠে নামছে ব্রাজিল, যেমন হবে একাদশ
মার্চে রেমিট্যান্সে রেকর্ড গড়তে যাচ্ছে বাংলাদেশ
ঢাকা সফরে আসছেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার
হামাসের রকেট হামলায় কাঁপল ইসরাইল, বিমান চলাচল ব্যাহত