মেঘনার পানি বিপৎসীমার উপরে, পানিবন্দি ২৫ হাজার মানুষ

পূর্ণিমার জোতে সৃষ্ট জোয়ারের প্রভাবে ভোলায় মেঘনার পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় গত ৪ দিন ধরে ১০ গ্রামের ২৫ হাজারেরও বেশি মানুষ পানিবন্দি রয়েছেন। এতে রান্না করতে না পারায় দুর্গত এলাকার মানুষ অনাহারে-অর্ধাহারে দিনাতিপাত করছে।
এমন পরিস্থিতিতে এসব এলাকায় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের কোনো পর্যায়ের কর্মকর্তা খোঁজ খবর না নেওয়ায় ক্ষোভ বাড়ছে উপকূল জুড়ে। এ ছাড়া জোয়ারের পানিতে ৫ হেক্টর আমনের বীজতলা ক্ষতি হয়েছে বলে জানান উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন। তবে জোয়ারের পানি বেশিদিন স্থায়ী হলে ক্ষতির পরিমাণ বাড়তে পারে বলে জানান তিনি।
এদিকে শনিবার (১৩ আগস্ট) বিকাল ৪টার দিকে উপজেলার হাজিরহাট ইউনিয়নের চরফৈজুদ্দিন গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধ উপচে মেঘনার পানি লোকালয়ে প্রবেশ করছে। এতে নতুন করে ওইসব এলাকা জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
শনিবার বিকাল ৪টার দিকে মেঘনার পানি বিপৎসীমার ৬৯ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে জানান পানি উন্নয়ন বোর্ড ডিভিশন-২ এর উপ-সহকারী প্রকৌশলী আবদুর রহমান। তিনি জানান, বাতাসের প্রভাবে মেঘনার পানি বিপৎসীমার ওপর প্রবাহিত হচ্ছে।
দুর্গত এলাকার বাসিন্দারা জানান, ৪ দিন ধরে জোয়ারের পানিতে বন্দি অবস্থায় আছেন তারা। রান্না করতে না পারায় পরিবারের সদস্যরা অনাহারে দিন যাপন করছে। তবে আজ (শনিবার) পর্যন্ত কোনো জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের লোক খোঁজ খবর নিতে আসেনি।
পানিবন্দি মাজেদা, কলেমন, কফিল উদ্দীন জানান, ৪ দিন ধরে রান্না করতে না পারায় শুকনো মুড়ি খেয়ে রয়েছেন তারা। পরিবারের অন্য সদস্যদের উপজেলা সদরে আত্মীয়ের বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়ে বাড়িতে অবস্থান করছেন তারা। তবে জনপ্রতিনিধিরা খোঁজ নিতে না আসায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তারা।
গত বুধবার থেকে শনিবার পর্যন্ত মেঘনার পানি বিপৎসীমার উপর প্রবাহিত হওয়ায় প্লাবিত হয়েছে ১০ গ্রামের বাসিন্দারা। এতে উপজেলার ১নং মনপুরা ইউনিয়নের পূর্ব আন্দিরপাড়, পশ্চিম আন্দিরপাড়, কাউয়ারটেক, ঈশ্বরগঞ্জ, কূলাগাজী তালুক গ্রাম ও হাজিরহাট ইউনিয়নের দাসেরহাট, সোনারচর, চরযতিন, চরজ্ঞান গ্রাম ও উত্তর সাকুচিয়া ইউনিয়নের আলমনগর ও মাস্টারহাট এলাকার বেড়িবাঁধের বাইরে ও ভেতরে মিলিয়ে জোয়ারের পানিতে প্লাবিত অবস্থায় রয়েছে ২৫ হাজারের বেশি মানুষ।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের ডিভিশন-২ এর উপ-সহকারী প্রকৌশলী আবদুর রহমান জানান, পূর্ণিমার প্রভাবে মেঘনার পানি বিপৎসীমার ৬৯ সেন্টিমিটার উপর প্রবাহিত হয়ে ৩-৪ ফুট জোয়ারে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। তবে কত কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ক্ষতি হয়েছে তিনি তা জানাতে পারেননি।
মনপুরা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন জানান, অতি জোয়ারের কারণে ৫ হেক্টর আমনের বীজতলা ক্ষতি হয়েছে। তবে জোয়ারের পানি বেশিদিন থাকলে ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে।
মনপুরা উপজেলার দায়িত্বে থাকা চরফ্যাশন উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আল-নোমান জানান, ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করে ক্ষতি নিরসনে ব্যবস্থা করা হবে।
এসজি/
