জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়
টিএসসি নির্মাণে দরপত্র শিডিউল না মানার অভিযোগ
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি ভবন নির্মাণে নানা অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। দরপত্র শিডিউল মানা হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ছাড়া টেন্ডার শিডিউলে সিমেন্ট, রড ও অন্যান্য নির্মাণসামগ্রী ব্যবহারের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কোম্পানির কথা বলা থাকলেও সেসবের তোয়াক্কা করা হচ্ছে না।
ভবনটি নির্মাণের জন্য এখন পাইলিংয়ের কাজ চলছে। নকশা অনুযায়ী, সম্পূর্ণ ভবনে প্রয়োজন ৩৪১টি পিলার। নির্দিষ্ট একটি কোম্পানির সিমেন্ট ও রড ব্যবহার করার কথা উল্লেখ থাকলেও বলা হচ্ছে ‘একই মানের’ অন্য কোম্পানির রড ও সিমেন্ট ব্যবহার করা হচ্ছে। বালু ও পাথরের মান নিয়েও রয়েছে প্রশ্ন। এ ছাড়াও সিমেন্ট, বালু ও পাথর ১:১.২, ৫:২.৫০ অনুপাতে থাকার কথা থাকলেও এটি বজায় রাখা হচ্ছে না বলে জানা গেছে।
টেন্ডার শিডিউলের তথ্য অনুয়ায়ী, প্রকল্পে অন্তত একজন প্রকৌশলীর বিএসসি ডিগ্রি থাকবে এবং অন্যজন ডিপ্লোমা প্রকৌশলীও হতে পারবে। কিন্তু সরেজমিনে দেখা যায়, মাত্র একজন ডিপ্লোমা প্রকৌশলী দিয়েই চলছে টিএসসি ভবন নির্মাণকাজসহ চারটি প্রকল্প।
এ প্রসঙ্গে একমাত্র প্রকল্প প্রকৌশলী শাহরিয়ার হোসেন শোভন বলেন, ‘আমি ডিপ্লোমা প্রকৌশলী হলেও আমার অভিজ্ঞতা আছে। আমার বিএসসি চলছে। তবে যেহেতু শিডিউলে উল্লেখ আছে, তাই খুব দ্রুত একজন বিএসসি প্রকৌশলী নিয়ে আসা হবে।’
নিরাপত্তা ও অন্যান্য দিক বিবেচনায় নির্মিতব্য ভবনটি বেড়া দিয়ে ঘিরে রাখার কথা বলা আছে টেন্ডার শিডিউলে। তবে এখন পর্যন্ত সেটিও করা হয়নি। আগামী তিন-চার দিনের মধ্যে সেটিও দৃশ্যমান হবে বলে জানান প্রকল্প প্রকৌশলী শোভন।
এ ছাড়া নির্মাণসামগ্রীর প্রয়োজনীয় পরীক্ষা বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) থেকে করানোর কথা থাকলেও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) থেকেই করিয়ে নিয়েছে নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান।
গত বছরের ৭ নভেম্বর থেকে শুরু হয় তিনতলা বিশিষ্ট মাল্টিপারপাস হল, ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র ও জিমনেসিয়ামের নির্মাণকাজ। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের অধীনে ‘জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন (প্রথম সংশোধিত)’ শীর্ষক প্রকল্পের অধীনে এ কাজ শুরু হয়। নির্মাণকাজের সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয় ১৮ মাস। ৭ হাজার ৮১১ বর্গমিটার বিস্তৃত এ ভবন নির্মাণে প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৪ কোটি ৯৭ লাখ ৩০ হাজার টাকা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী (সিভিল) স্বপন কুমার শীল বলেন, যে সমস্ত অভিযোগ উঠেছে সেগুলো খুবই প্রাসঙ্গিক। আমরা বেশ কয়েকবার জানিয়েছি। কিছু নিম্নমানের বালু ও পাথর জব্দ করেছি যেগুলো আর ব্যবহার করা হচ্ছে না। এ ছাড়া অন্যান্য সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চলছে।
নিমার্ণাধীন টিএসসি, মসজিদ, গেস্ট হাউজ ও স্টাফ কোয়ার্টার মিলে চারটি প্রকল্পের দায়িত্বে একজন মাত্র ডিপ্লোমা প্রকৌশলী কেন- জানতে চাইলে প্রশ্নটির উত্তর না দিয়ে এড়িয়ে যান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকল্প পরিচালক জোবায়ের হোসেন।
সহকারী প্রকৌশলী রাহাত হাসান দিদার বলেন, সময়ের অভাবে রড, সিমেন্ট বুয়েট থেকে পরীক্ষা করানো সম্ভব হয়নি। দ্রুত কাজ শুরু করা প্রয়োজন ছিল তাই বাকৃবি থেকেই পরীক্ষা করানো হয়েছে। বাকি সমস্যাগুলোর ব্যাপারে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বলতে পারবে।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এম.কে.টি.-এন.এইচ.ই. (জেবি) এ ভবন নির্মাণের দায়িত্ব পেয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপক নিজামুল ইসলামের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
এসএন