মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারি ২০২৫ | ৩০ পৌষ ১৪৩১
Dhaka Prokash
Header Ad

ফুটবল খেলেও যুদ্ধ হয়

মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতিচারণে স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল অনন্য ভূমিকা রেখেছিল। মুক্তিযোদ্ধারা ময়দানে যুদ্ধ করেছেন অস্ত্র হাতে। সশস্ত্র সেই যুদ্ধে প্রাণ গেছে লাখ লাখ অকুতোভয় বাঙালি তরুণ, যুবকের। তার ঠিক বিপরীতে অন্যরকম এক যুদ্ধ করেছেন স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের সদস্যরা। তারা ভারতের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে ছুটে গিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত গড়ে তুলতে এবং অর্থ সংগ্রহের জন্য। অংশ নিয়েছেন অসংখ্য প্রীতি ম্যাচে। ব্যতক্রমী সেই যুদ্ধে তাদেরকে নানান জায়গায় ভিন্ন ভিন্ন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়েছে। পড়েছিলেন বিহারীদের বাধার মুখেও।

একাত্তরে যে স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলটি গঠন করা হয়েছিল সেই দলের অনেকেই আগরতলায় গিয়েছিলেন যুদ্ধের সশস্ত্র প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে, প্রশিক্ষণ শেষে সম্মুখ যুদ্ধে অংশ নিতে। কিন্তু তাদের কেউই শেষ পর্যন্ত ময়দানের সশস্ত্র যুদ্ধে অংশ নিতে পারেননি। অনেকে ক্ষোভ জানিয়ে বলেছিলেন, তারা যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে এসেছেন। ফুটবল খেলতে নয়।

কিন্তু বিচক্ষণ রাজনীতিক তাজউদ্দীন আহমদ এর নেতৃত্বাধীন প্রবাসী সরকারের নির্দেশে তারা শেষ পর্যন্ত ফুটবল দলের সঙ্গেই যুক্ত হতে বাধ্য হয়েছিলেন। তাদের সাফ জানিয়ে দেয়া হয়েছিল, স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল বা জয় বাংলা ফুটবল দলে যোগ না দিলে তারা কোন রকম যুদ্ধে অংশ নিতে পারবেন না। উল্টো তাদেরকে জেলেও যেতে হতে পারে। তাই বাধ্য হয়েই তারা আগরতলা থেকে কলকাতায় গিয়ে যোগ দেন ফুটবল দলে। তারপর সবই ইতিহাস। ফুটবল দিয়েও যে যুদ্ধ হয় সেটা তারা তখন বুঝতে পারেন, যখন ভারতের এক শহর থেকে আরেক শহরে ছুটে গিয়েছেন বাংলাদেশের পক্ষে জনমত গড়ে তুলতে।

যুদ্ধ করতে যেই ফুটবল দলটি গড়ে তোলা হয়েছিল:

(১)
তানভীর মাজহার তান্না। মুক্তিযুদ্ধকালীন স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের ম্যানেজার। তিনি বলছিলেন, ‘যুদ্ধটা তো এমনিভাবে হয়নি। যুদ্ধটাতো কারো ডাকে হয়েছে। আমরা একটা মুভমেন্টে ছিলাম। বঙ্গবন্ধু জেল খাটছেন। আগারতলা মামলা, আরও অনেক মামলা…
আমরা যে মুভমেন্টে গেছি… এটাতে কিন্তু আমরা সবাই ইনভলব। খেলোয়াড়রা যে সবাই গেছি…বাংলাদেশের প্রথম যে ফুটবল টিম হয়েছে, জয় বাংলা বা স্বাধীনবাংলা ফুটবল দল এখানে কিন্তু পাঁচ থেকে সাত জন খেলোয়ার ছিলেন যারা পাকিস্তান দলের খেলোয়াড় ছিলেন। আমার কথা হল এদের যে ডাক দিল, তাজউদ্দীন সাহেবের আন্ডারে বাংলাদেশ ক্রীড়া সমিতি বানিয়ে…শামসুল হক সাহেব, ….অনেকেই ইনভলব।
বাংলাদেশ ক্রীড়া সমিতির থ্রু দিয়ে, বাংলাদেশ বেতারের থ্রু দিয়ে দেন সবাই ইনভাইটেড। যে আপনারা সবাই চলে আসেন, পালিয়ে আসেন। দুইটা কারণ, একটা কারণ ছিল অনেকজন খেলোয়াড়কে মেরে ফেলেছিল। দ্বিতীয় কারণ বাংলাদেশ আর্মি ওয়ান্টেড লিভ টু স্টার্টভ ঢাকাতে যেন এভরিথিং ইজ নরমাল।
তাজউদ্দীন সাহেবরা সিদ্ধান্ত নিলেন… কি যে ঢাকা শহর ইজ নরমাল…
তারা কি করলেন একটা ক্রীড়া সমিতি বানালেন। বাংলাদেশ ক্রীড়া সমিতি, বাংলাদেশ বেতারের থ্রু দিয়ে… অনেকজন খেলোয়াড় পালিয়ে গেছেন। ধরেন আমি অনেক আগে পালিয়ে গিয়েছি। ছিলাম বালুরঘাট। কর্নেল শাফায়েত জামিল সাহেব…

তানভীর মাজহার বলেন, আমাকে পিন্টু ভাই এসে নিয়ে গেল বালুরঘাট। আমি যখন কলকাতা গিয়েছি তখন দেখি ৩০-৪০ জন খেলোয়াড় চলে এসেছে।

সম্প্রতি সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের জার্সি হস্তান্তর অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে এভাবেই মুক্তিযুদ্ধের সেই দিনগুলোর স্মৃতিচারণ তানভীর মাজহার তান্না। এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের খেলোয়াড় শেখ আশরাফ আলী, সুভাষ চন্দ্র সাহা ও এনায়েত।

জার্সির গল্পটা বলতে গিয়ে তানভীর মাজহার বলেন, জার্সিটা ৫০ বছর পর পেলাম…এটা সুভাষের জার্সি। আমরা যে জার্সি বানিয়েছি একটা ছিল লাল রং ও একটা ছিল সবুজ রং এর। একটা স্মৃতি..। পার্ট অব মুক্তিযুদ্ধ।

মুক্তিযুদ্ধের সেই দিনগুলোর স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের ম্যানেজার বলেন, ওই সময় আমরা আমরা ১৭টা বা ১৮টা ম্যাচ খেলেছি। আমরা প্রথম ম্যাচ খেলেছি কৃষ্ণনগরে। সেখানে বিরাট ভীড়। শুধু মাঠ না, মাঠটা ছোট ছিল…মাঠের পাশের বাসাবাড়িতে মানুষ আর মানুষ। সবাই বলছে জয় বাংলা জয় বাংলা…। আমি আর সেক্রেটারি লুৎফুর রহমান সাহেবসহ সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিলাম, চান্স পেয়ে গেছি একটা যে আমাদের জাতীয় পতাকা ও জাতীয় সঙ্গীত বাজানো না হলে আমরা খেলব না। আমার সবাই ত্যাড়া হয়ে গেলাম। তখন তো ওরা টেনশনে পড়ে গেল। কি করবে…৪০ মিনিট…সমঝোতা হল। কৃষ্ণনগরে যিনি ডিসি উনি বললেন, না ঠিক আছে, করেন। ওই ফটো টাও আছে।

আমরা জাতীয় পতাকা নিয়ে দৌড়ালাম, জাতীয় সঙ্গীত হল। ফাস্ট টাইম ইন দি হিস্ট্রি অব বাংলাদেশ, ২৬শে জুলাই। ইন এ ফরেন কান্ট্রি উইদাউট অ্যানি রিকগনাইজেশন। ওরা খেলছিল ওদের অরিজিনাল ডিস্ট্রিকের নাম দিয়ে ‘কৃষ্ণনগর একাদশ’ নামে। এই খেলার জন্য পাকিস্তান ফিফার কাছে অভিযোগ করে। ফিফা বহিস্কার করে কৃষ্ণনগরকে। শুধু তাই নয়, ডিসির চাকরিও চলে গেল।

পরবর্তিতে আমরা যত ম্যাচ খেলেছি সবগুলো কিন্তু ভিন্ন নামে খেলেছি। যেমন মোহনবাগানের সঙ্গে খেলেছি। তারা নাম দিল গোস্টফর একাদশ। গোস্টফর ইজ দ্যা ফাস্ট ক্যাপ্টেন অব ইন্ডিয়া। মহারাষ্ট্রে শেষ ম্যাচ খেলেছি। সেটা ছিল মহারাষ্ট্র একাদশ- যোগ করেন তানভীর মাজহার।

তিনি বলেন, তখনকার দিনে একটাই টেলিভিশন ছিল। ইন্ডিয়ার ৭০ শতাংশ মানুষ যারা ছিল তারা কেউই হ্যাপি না।
যেমনি আমরা বিহারের শ্রীমানে খেলতে গেলাম, খেলার পর আমাদেরকে তো ধরে বসল বিহারিরা, ‘আপ লোক কেয়া কররা হ্যায়। বললাম, কেয়া কররা মানে কি হল? বলল, আপ লোক সব হিন্দুরা আয়া হে, মুলমান কান্ট্রি ভাগ হয়া…’ বললাম, ‘আপ লোক দেখিয়ে কিতায়ে…মুসলমান ক্যাতনায়ে, হিন্দু কাহা হে। এই প্রতাত শংকর হাজরা, সুভাষ আর দুত্যিন হ্যায়। আর সব মুসলমান হ্যায়।’

তারপর বললাম, ‘তোমরা উর্দু ভাষা, বিহারী ভাষা আমাদের উপর চাপিয়ে দিচ্ছ। এগুলো তো আমরা বুঝি না। আমরা সব বাংলাদেশী, আমরা বাঙালী। হোয়াট ইজ ইওর প্রবলেম?’
তখন বলে আমরা তো মনে করছি আপনারা সব হিন্দু। এরকম বহু সমস্যা আমরা মোকাবেলা করেছি, বলেন তানভীর।

স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তিনি আরও যোগ করেন, তখন তো আমরা গরিব দেশ। গরিব ছিলাম। আমরা থার্ড ক্লাসে ট্রাভেল করেছি। ফ্লোরে শুয়ে গেছি। ইভেন ধরেন কলকাতা থেকে বোম্বে ৩৬ ঘণ্টার জার্নি। তখন তো ইলেকট্রিক ট্রেন ছিল না। আমরা গাদাগাদি করে এত দীর্ঘ জার্নি করেছি।

যারা গিয়েছি আমরা প্রথমে যখন অনুশীলন শুরু করলাম, ম্যানেজারকে বললাম চল যাই আমরা পার্কসের কাছে অনুশীলন করি। দুদিন অনুশীলন করেছি। তৃতীয় দিনে বলে যে, আপনারা এখানে অনুশীলন করতে পারবেন না। ওরা বুঝে গেছে আমরা বাঙালি। ওখানে তো মুসলমান এলাকা। আমরা ঠিক করলাম আমরা ময়দানে চলে গেলাম। লটস অব প্রবলেম…।

আমাদের অনেক খেলোয়াড় পালিয়ে গেছে। মধ্যে এসে পাকিস্তান আর্মি আমাদের অনেক খেলোয়াড়কে হাইজ্যাক করে নিয়ে গেছে শাহজান ভাই, লাভলু ভাই…দে আর টেইকেন অ্যারেস্ট। সো, সরকার ভালো প্রটেকশন দিয়েছে আমাদের খেলোয়াড়দেরকে।

(২)
স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের আরেক খেলোয়াড় শেখ আশরাফ আলী তার সোনালী দিনগুলোর স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বলেন, আমাদের খেলার মূল উদ্দেশ্য একটা জনমত সৃষ্টি করা। আমরা যেখানেই গেছি সেখানে পতাকা উত্তোলন ছাড়া খেলিনি। জনমত সৃষ্টির জন্য আমরা ভারতের যেসব জায়গায় গিয়েছি, সমস্ত জায়গায় আমরা পতাকা উত্তোলন করেছি। তখন কিন্তু আমাদেরকে স্বীকৃতি দেয়নি। এটাই ছিল আমাদের মূল উদ্দেশ্য। টাকা কত পাইছি, কত পাই নাই, আমার কাছে এটা কোন ফ্যাক্টর না। আসুক না ২০ লাখ ২৫ লাখ…। আমাদের মূল উদ্দেশ্যেই হচ্ছে স্বাধীনতা।

(৩)
নরসিংদীর সন্তান সুভাষ সাহা বলছিলেন, নারায়ণগঞ্জ মহকুমা ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলাম। বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণের পর আমরা সিদ্ধান্ত নিয়ে নারায়ণগঞ্জ মহকুমা সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠন করি। ওই ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক ছিলাম আমি। ১০ এপ্রিল পর্যন্ত আমি নরসিংদীতে ছিলাম। নরসিংদীর উপর দিয়ে প্রায় ৬০ শতাংশ মানুষ যেতে সক্ষম হয়েছিলেন। আমরা তাদেরকে প্রথমে রিসিভ করি। তারপর রুটি ও গুড় দিয়ে আপ্যায়ন করি। আমরা এক রাত নরসিংদীতে রাখি। পরদিন তারা নৌকায়, রিকশায়, কেউবা পায়ে হেঁটে যার যার গন্তব্যে চলে যান। ১১ তারিখে আগরতলা পৌঁছি।
তিনি বলেন, আগরতলা থেকে আমাদের সাতজনকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল কলকতায় জাতীয় দলে, স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলে। এই দলে ছিলাম আমি, এনায়েত, নওশের, বিমল, নিহার আর কায়কোবাদ ভাই।

সেদিনের স্মৃতিগুলো এখনও ঝকঝকে। বলেন, আমাদের দ্বিতীয় ম্যাচ ছিল মোহনবাগানের সঙ্গে। যেহেতু আমরা স্বাধীন না সে কারণে গোস্টপাল একাদশ নামে তারা আমাদের সঙ্গে খেলেছিল। প্রথম খেলায় আমরা কৃষ্ণনগরে তাদের কাছ থেকে আমাদের স্বাধীনতা নিয়ে নিলাম। কারণ একটা স্বাধীন দেশ না হলে সেই দেশের জাতীয় সঙ্গীত বাজানো হয় না, পতাকা উড়ানো হয় না। কিন্তু আমরা সেটা করতে পেরেছিলাম। এই স্বাধীন বাংলার জন্য। আর দ্বিতীয়টা হচ্ছে, আমাদের উদ্দেশ্য ছিল প্রচার করা, সারা বিশ্বকে জানানো যে আমরা বাঙালিরা কি অবস্থায় আছি? আমাদের দেশের মানুষের উপর কি অত্যাচার করতেছে? কি টর্চার করতেছে পাকিস্তানীরা। এটা প্রচার করাটাই ছিল আমাদের উদ্দেশ্যে।
সেই সুবাদে মোহনবাগানের সঙ্গে আমাদের যে খেলাটা হয়েছিল সেই খেলা আকাশবাণী থেকে রিলে করেছে এই বলে যে, বাংলাদেশ একটা দেশ। সেই দেশের জাতীয় ফুটবল দল আজকে এই মাঠে খেলবে। এই যে প্রচারটা এটা সারা বিশ্ববাসীর কাছে আমরা করতে পেরেছি। সেটা হল স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল।

জার্সির কথা বলতে গিয়ে এই মুক্তিযোদ্ধা বলেন, আমার কাছে একটা জার্সি ছিল। সেই জার্সিটা আমার বাড়ির মানুষ (সহধর্মিণী) খুব যত্ন করে রেখেছে। এটা আমাদের একটা জাতীয় সম্পদ। এটা শুধু ফুটবলের সম্পদ না, এটা মুক্তিযুদ্ধের সম্পদ।

(৪)
মুক্তিযোদ্ধা এনায়েতুর রহমান বলছিলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করার জন্য আগরতলা গিয়েছিলাম। পথিমধ্যে সুভাষ বলেছে, আমরা যেভাবে সীমান্ত পার হয়েছি সেটা বেশ কঠিন ছিল। আমি ব্যক্তিগতভাবে ঢাকা থেকে ৭০ মাইল পায়ে হেঁটে আগরতলা পৌঁছি। আগরতলাতে মুক্তিযুদ্ধের ক্যাম্পে যোগদানের জন্য তখন আমি আবদুল কুদ্দুস মাখন ভাইয়ের কাছে গেলাম আমাদের নাম অন্তর্ভূক্ত করার জন্য। সেখানে মাখন ভাই ছিলেন। প্রথম উদ্দেশ্য ছিল যে আমরা আর্মস ট্রেনিং এ যাব। ওখানে যাবার পর কুদ্দুস ভাই বলল, তোমরা ইচ্ছা করলেই তো আমরা তোমাদের নিতে পারি না। সে জন্য একটা ব্যবস্থা আছে। তার জন্য সবাইকে অপেক্ষা করতে হবে। আমরা যে ব্যবস্থাটা রেখেছি সেটা হচ্ছে- খেলোয়াড়, শিল্পী, শ্রমিক, ছাত্রদের জন্য আমরা বিভিন্ন ক্যাম্প করেছি।

মাখন ভাই বললেন, তুমি খেলোয়াড় ক্যাম্পে যাও। তারপর ট্রেনিং এর সময় আসলে তোমাদের নেওয়া হবে। ওই সময়ে কিছু দিন যাবার পর আগরতলায় আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য যে প্রক্রিয়াটা ছিল… আগরতলার যে ক্রীড়া সংগঠন তারা একটা ফুটবল খেলার আয়োজন করল আগরতলা এবং মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে। সেই ম্যাচ যেদিন খেলা হবে সেদিন ডেকোডা বিমানে আমাদের লুৎফুর রহমান, মুজিবর রহমান, মহসীন আলী, প্রতাপ শংকর হাজরা (আমাদের ভাইস ক্যাপ্টেন) উপস্থিত হলেন। ওই ম্যাচ খেলার পর আমাদের প্রতাপ দা ও লুৎফুর রহমান সাহেব বললেন, তোমাদেরকে কলকাতায় যেতে হবে। এ কথা শুনে আমি প্রথমে বললাম, আমি কলকাতায় যাব না। আমি যাব মুক্তিযুদ্ধে। আমি তো খেলতে আসিনি। তিনি বললে, তুমি যদি কলকাতা না যাও, তাহলে তুমি মুক্তিযুদ্ধেও অংশ নিতে পারবে না। তুমি ইউ উইল বি অ্যারেস্ট অর সামথিং। কারণ এটা হচ্ছে রাষ্ট্রীয় আদেশ। সেই চিঠিটাও আমাকে দেখালেন।

এনায়েত বলেন, আমাদের আটজনকে সিলেক্ট করা হল। এরমধ্যে আইনুল ও বিমল বলল যে, আমাদের একটু সময় দিতে হবে। আমাদের নিজেদের একটা বিষয় আছে। আমরা ট্রেনে যাব। তাদের দুই জনকে রেখে আমরা আগরতলা থেকে কলকাতায় গেলাম।

বাংলাদেশ সরকার ও ভারত সরকারের মধ্যে একটা সমঝোতার মাধ্যমে আমাদেরকে কলকাতা নিয়ে যাওয়া হল। আমরা জয়েন করলাম।
তিনি ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, বিভিন্ন সময় শুনতে পাই, আমরা নাকি মুক্তিযোদ্ধা নয়, আমরা নাকি খেলোয়াড়। আমরা এতে জয়েন করেছিলাম সরকারের নির্দেশে। খেলোয়াড় হিসেবে আমরা যখন জয়েন করি তখন প্রথম দিনের খেলার যে বিষয়টি আমাদের সবচেয়ে বেশি আন্দোলিত করেছিল সেটা হচ্ছে, আমাদের টিম ম্যানেজার ও খেলোয়াড়রা বলেছিল আমরাদের জাতীয় সঙ্গীত যদি না বাজাও ও জাতীয় পাতাকা না উড়াও তাহলে আমরা খেলব না। এ নিয়ে প্রায় ৪০ মিনিট সময় অতিক্রম হয়েছিল। তারা বাধ্য হয়েছিল আমাদের দাবি মেনে নিতে।

সবশেষে তিনি বলেন, আমাকে কেউ মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দেন বা না দেন, সরকার বলুক বা না বলুক, আমি কিন্তু মুক্তিযোদ্ধা।

এনএইচবি/এএস

Header Ad
Header Ad

ময়মনসিংহে হামলার হুমকিতে ৭৫৫ বছরের ওরস বন্ধ রাখার নির্দেশ প্রশাসনের  

ছবিঃ সংগৃহীত

উগ্রবাদীদের হুমকির প্রেক্ষিতে ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার হজরত শাহ সৈয়দ আবদুল আজিজ বোগদাদীর (রহ.) মাজারের ৭৫৫তম বার্ষিক ওরস বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।

ওরসকে কেন্দ্র করে উগ্রবাদীদের সাথে মাজারের ভক্ত-অনুসারীদের দ্বন্দ্বে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি হতে পারে- এমন আশঙ্কায় এই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

রোববার ১২ই জানুয়ারি সন্ধ্যার পর উপজেলা প্রশাসন জরুরি সভা ডেকে সেখানে এমন সিদ্ধান্ত নেয়। পরে মাজার পরিচালনা কমিটিকে তা জানিয়ে দেয়।

এ নিয়ে এলাকায় দেখা দিয়েছে তীব্র অসন্তোষ এবং ক্ষোভ। এই মাজারের ওরস উপলক্ষ্যে হিন্দু-মুসলিমসহ বিভিন্ন ধর্ম-বর্ণের মানুষ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে জড়ো হতেন। তাদের আগমনে এলাকায় একটা সম্প্রীতির পরিবেশ বিরাজ করত। শত শত বছর ধরে চলে আসা এই অনুষ্ঠান ইতিপূর্বে কখনো বন্ধের নির্দেশ আসেনি। এবারই উগ্রবাদীদের হুমকিতে এভাবে ওরস বন্ধের নির্দেশে স্থানীয়রা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান।

মাজার পরিচালনা কমিটির সভাপতি আইনজীবী অ্যাডভোকেট কাজী শাহ জাহান জানান, ১৫-১৭ জানুয়ারি তিন দিনব্যাপী ৭৫৫তম বার্ষিক ওরসের আয়োজন করা হয়েছিল। কিন্তু একটি সংগঠনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ওরস বন্ধ রাখতে নির্দেশ দিয়েছে প্রশাসন।

তবে মাজারে বাউল ও লোকসঙ্গীতের আয়োজন বন্ধ রাখলেও কোরআন খতম, শিরনি বিতরণসহ অন্যান্য কার্যক্রম চালু থাকবে বলে জানান তিনি।

ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার জাটিয়া ইউনিয়নের বর্তমান দরগাপাড়া গ্রামটির নামকরণ করা হয়েছে বটগাছে ঘেরা হজরত শাহ সৈয়দ মাওলানা আবদুল আজিজ বোগদাদীর (রহ.) মাজারকে ঘিরে। প্রায় ৪০ বছর মাজারের খাদেম হিসেবে আছেন নুরুল ইসলাম ফকির (৯০)।

তিনি বলেন, চারটি বটগাছে ঘেরা মাজারে প্রতিদিনই মানুষ আসে। তিন শ শতাংশ জায়গা নিয়ে মাজারটি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ইত্তেফাককুল ওলামা নামের একটি সংগঠন দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করে আসছে। অভিযোগ রয়েছে, ইতিপূর্বে ঈশ্বরগঞ্জ এলাকায় অত্যন্ত নিভৃতে থাকা অল্প কয়েকটি আহমদিয়া পরিবারের সদস্যদের ওপরেও তারা হুমকি-ধমকি দিয়ে নিপীড়ন চালিয়েছিল। এই উগ্রবাদী সংগঠনটি মাজারের ভক্ত-অনুসারীদের বিরুদ্ধে সবসময় কঠোর অবস্থান নিয়ে আসছে। মাজারকে শিরকি আখ্যা দিয়ে বিভিন্ন সময় বক্তব্য-বিবৃতি দিয়ে আসছে।

তবে সকল অভিযোগ এড়িয়ে গিয়ে সংগঠনটির ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মুফতি মাহমুদুল হক আজিজি বলেন, আল্লাহর অলির মাজার অপবিত্র করে ‘কার্যক্রম’ করা অন্যায়। অলির মাজারকে কষ্ট দেওয়ায় আমাদের ইমানি দায়িত্ব থেকে প্রতিবাদ জানিয়েছি।

ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এরশাদুল আহমেদ বলেন, ‘আলেম-ওলামারা’ চাচ্ছেন না মাজারে ওরস হোক। ময়মনসিংহ শহরে একটি মাজারে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এসব মাথায় রেখেই প্রশাসনের আশঙ্কা, এখানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি খারাপ হলে মোকাবিলা করা কঠিন হবে। ৫ই আগস্ট–পরবর্তী পরিস্থিতি যেহেতু স্থিতিশীল নয়, তাই ওরসের আনুষ্ঠানিকতা বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

ভবিষ্যতে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তারা আবারও বার্ষিক ওরস আয়োজন করতে পারবেন বলে জানিয়েছেন ইউএনও।

ঈশ্বরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ওবায়দুর রহমান বলেন, ময়মনসিংহ শহরে মাজারে একটি ঘটনা ঘটেছে। পাশাপাশি উপজেলা এটি। সেটির প্রভাব এখানেও পড়তে পারে, এমন আশঙ্কা ছিল আমাদের। ৭৫৫তম ওরস হলেও এবার আগের মতো পরিবেশ-পরিস্থিতি তো নেই।

Header Ad
Header Ad

নারায়ণগঞ্জে ট্রাকচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ২ বন্ধুর মৃত্যু  

ছবিঃ সংগৃহীত

নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ উপজেলায় ট্রাকচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী দুই বন্ধুর প্রাণ গেছে; এতে আহত হয়েছেন আরও এক বন্ধু। এ ছাড়া আটক করা হয়েছে ট্রাক চালককে।

সোমবার (১৩ জানুয়ারি) দুপুরে আদমজী-শিমরাইল সড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

নিহতরা হলেন- ভোলার চরফ্যাশন থানাধীন উত্তর মনিরাজ গ্রামের মৃত আব্দুস সাত্তারের ছেলে শুভ (২২) ও শেরপুরের ঝিনাইগাতী থানাধীন ফুলহারি বাকাগোড়া গ্রামের মৃত পারভেজের ছেলে ইমন (২১)।

নিহত দুইজন ছাত্রদলের কর্মী ছিলেন বলে জানিয়ে নারায়ণগঞ্জ মহানগর ছাত্রদলের সাবেক প্রচার সম্পাদক আন্দালিব রহমান মিরাজ বলেন, “ইমন আর শুভ ছাত্রদলের কর্মী ছিল। তারা আমার সঙ্গেই রাজনীতি করতো। তাদের এমন মর্মান্তিক মৃত্যু কোনোভাবে মেনে নেওয়া যায় না। আমরা ট্রাকচালকের কঠোর শাস্তির দাবি জানাই “

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, একটি মোটরসাইকেলযোগে শুভ, ইমন ও রবিন নামের তিন যুবক ইপিজেডের সামনে দিয়ে আদমজীর দিকে যাচ্ছিলেন। এ সময় একটি ব্যাটারিচালিত (থ্রি-হুইলার) অটোরিকশাকে ওভারটেক করতে গেলে অপর দিক থেকে আসা একটি ট্রাকের নিচে চাপা পড়ে শুভ ও ইমন ঘটনাস্থলেই নিহত হন। তবে রবিন ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান।

এদিকে এ ঘটনায় ট্রাকসহ (কুষ্টিয়া ট ১১-১২৫৮) চালক আনোয়ার হোসেনকে (৫৩) আটক করেছে পুলিশ। তিনি কুষ্টিয়ার বটতলী দক্ষিণপাড়া গ্রামের মৃত আব্দুল সাত্তারের ছেলে।

সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ মো. শাহীনুর আলম জানান, এ ঘটনায় ট্রাকসহ চালককে আটক করা হয়েছে। পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা করা হলে এ ঘটনায় মামলা নেওয়া হবে।

Header Ad
Header Ad

এলপিজি গ্যাসের সাড়ে ৭ শতাংশ অতিরিক্ত ভ্যাট অব্যাহতি  

ছবিঃ সংগৃহীত

তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) উৎপাদন পর্যায়ে সাড়ে ৭ শতাংশের অতিরিক্ত ভ্যাট অব্যাহতি দিয়ে বিশেষ আদেশ জারি করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সোমবার (১৩ জানুয়ারি) এ সংক্রান্ত আদেশ জারি করেছে এনবিআর।

আদেশে বলা হয়, বর্তমানে এলপি গ্যাস বাসাবাড়িতে রান্নার জ্বালানি, অটোগ্যাস স্টেশনে যানবাহনের জ্বালানি এবং বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। পাশাপাশি বর্তমানে গ্যাস ডিস্ট্রিভিউশন কোম্পানি থেকে সরবরাহ করা প্রাকৃতিক গ্যাস অপ্রতুল হওয়ার কারণে গার্মেন্টসসহ বিভিন্ন প্রকার শিল্প কারখানায় এলপি গ্যাসের চাহিদা প্রতিনিয়ত বাড়ছে।

এ পরিস্থিতিতে এলপি গ্যাসের উৎপাদন ও ব্যবহার সহজলভ্য করার লক্ষ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন, ২০১২ (২০১২ সনের ৪৭ নং আইন) এর ধারা ১২৬ এর উপ-ধারা (৩) এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে এলপি গ্যাসের উৎপাদন পর্যায়ে ৭.৫ শতাংশের অতিরিক্ত মূল্য সংযোজন কর থেকে অব্যাহতি দিয়েছে।

এই আদেশ গত ৯ জানুয়ারি থেকে কার্যকর হয়েছে বলে গণ্য হবে বলেও জানিয়েছে এনবিআর।

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

ময়মনসিংহে হামলার হুমকিতে ৭৫৫ বছরের ওরস বন্ধ রাখার নির্দেশ প্রশাসনের  
নারায়ণগঞ্জে ট্রাকচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ২ বন্ধুর মৃত্যু  
এলপিজি গ্যাসের সাড়ে ৭ শতাংশ অতিরিক্ত ভ্যাট অব্যাহতি  
অবশেষে গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি চূড়ান্তের পথে  
রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে ভুল প্রতিবেদন প্রকাশ, ঢাকার কড়া প্রতিবাদ
এ বছরের মাঝামাঝিতে জাতীয় নির্বাচন চায় বিএনপি  
নাইজেরিয়ায় কৃষকদের জড়ো করে গুলি, নিহত অন্তত ৪০
দুর্দান্ত ডেথ বোলিংয়ে ঘুরলো ম্যাচের মোড়, রংপুরের সাতে সাত
বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচন আয়োজন করতে বললেন প্রধান উপদেষ্টা
এইচএমপিভি নিয়ে শাহজালাল বিমানবন্দরে সতর্কতা জারি
স্বচ্ছ ভোটার তালিকা ১৮ কোটি মানুষের আমানত : নির্বাচন কমিশনার
চাঁদাবাজির অভিযোগে যুবদল নেতা বহিষ্কার
ইবিতে পরীক্ষা দিতে এসে তোপের মুখে ছাত্রলীগ নেতা, থানায় সোপর্দ
এবার মাদক অধিদপ্তরের ডিসপ্লেতে ‘ছাত্রলীগ আবার ভয়ংকর রূপে ফিরবে’
সাবেক ডিবিপ্রধান হারুনের বিরুদ্ধে এক নারীর গুরুতর অভিযোগ
জাপানে ৬.৮ মাত্রার ভূমিকম্প, সুনামি সতর্কতা জারি
বাংলাদেশে কিছুই নেই, ওই দেশে দরিদ্র মানুষ বেশি: বিজেপি নেতা
গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব প্রত্যাহারের আহ্বান জামায়াতের
ভারতে পালানোর সময় ইডেন ছাত্রলীগ নেত্রী সুস্মিতা গ্রেপ্তার
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন ১৭ ফেব্রুয়ারি