বুধবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৫ | ১০ বৈশাখ ১৪৩২
Dhaka Prokash

রাষ্ট্র সংস্কার করতে বিএনপির রূপরেখা!

‘জাতীয় সমঝোতা কমিশন’ গঠন; সংবিধান সংশোধন করে স্থায়ীভাবে ‘নির্বাচনকালীন দল-নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার’ ব্যবস্থা প্রবর্তন; বিচার বিভাগের জন্য আলাদা সচিবালয় গঠন; শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে জিডিপির ৫ শতাংশ অর্থ বরাদ্দ; ভিন্ন দলের জনপ্রতিনিধিদের নির্বাহী আদেশ বলে অপসারণ না করাসহ আরও বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে পরিবর্তন আনার জাতীয় সরকার গঠনের রূপরেখা চূড়ান্ত করছে বিএনপি।

‘রাষ্ট্র রূপান্তরমূলক সংস্কার’ শিরোনামে এই রূপরেখার একটি খসড়া ইতোমধ্যে তৈরি করছে বিএনপি। সরকারবিরোধী আন্দোলনে বিএনপির সঙ্গে যেসব রাজনৈতিক দল অংশ নেবে তাদের নিয়ে নির্বাচনে জয়ী হতে পারলে ‘জাতীয় সরকার’ গঠনের মাধ্যমে রূপরেখায় তুলে আনা বিষয়গুলো সংস্কার করবে বিএনপি।

তবে এই মুহূর্তেই তড়িগড়ি করে রূপরেখা ঘোষণা করা হবে না বলে ঢাকাপ্রকাশ-কে নিশ্চিত করেছেন রূপরেখা তৈরিতে সম্পৃক্ত থাকা দায়িত্বশীল দুই নেতা।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা চলছে। খসড়া থেকে কার্যকর একটি চূড়ান্ত রূপরেখা তৈরিতে চেষ্টা অব্যাহত রাখা হয়েছে। একটি যৌক্তিক সময়ে রূপরেখা প্রকাশ করা হবে। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে চূড়ান্ত রূপরেখায় অনেক কিছু সংযোজন-বিয়োজন করা হবে।

জানা গেছে, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে এখন থেকেই প্রস্তুতি শুরু করেছে রাজপথের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। বিশেষ করে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবি আদায়ে এবং সরকারবিরোধী গণআন্দোলন গড়ে তুলতে বিরোধী দলগুলোকে পাশে চায় দলটি। ন্যূনতম ইস্যুতেও যাদের সঙ্গে চিন্তার মিল আছে তাদেরকে নিয়ে জোট কিংবা পৃথকভাবে যুগপৎ আন্দোলনের পরিকল্পনা করছেন বিএনপি নেতারা। এজন্য সরকারের বাইরে থাকা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ধারাবাহিকভাবে বৈঠক করছেন নেতারা। অনানুষ্ঠানিক এসব বৈঠকে দলগুলোর শীর্ষ নেতাদের কথা শুনছেন বিএনপি নেতারা। জোট কিংবা যুগপৎ আন্দোলন কীভাবে হবে, আন্দোলনের প্রাথমিক রূপরেখাও তুলে ধরছেন তারা। পাশাপাশি এসব বৈঠকে দলগুলোও বিভিন্ন প্রস্তাবনা তুলে ধরছেন। প্রত্যেক দলের সঙ্গে বৈঠক শেষে বিএনপির হাইকমান্ড এসব প্রস্তাবনা পর্যালোচনা করে চূড়ান্ত রূপরেখা তৈরি করবেন।

রূপরেখায় যা থাকতে পারে

বর্তমান কর্তৃত্ববাদী সরকার বাংলাদেশ রাষ্ট্র কাঠামোকে ভেঙে চুরমার করেছে। এই রাষ্ট্রকে মেরামত ও পুনর্গঠন করতে হবে। দেশের জনগণের হাতেই দেশের মালিকানা ফিরিয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনে জয় লাভের পর বর্তমান ফ্যাসিস্ট সরকার হটানোর আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দলগুলোর সমন্বয়ে একটি ‘জনকল্যাণমূলক জাতীয় ঐক্যমত্যের সরকার’ প্রতিষ্ঠা করা হবে। উক্ত ‘জাতীয় সরকার’ অন্তত ২৫টিরও বেশি সংস্কারমূলক ব্যবস্থা নেবে। এসব সংস্কারের মধ্যে রয়েছে-

প্রথমত, একটি ‘সংবিধান সংস্কার কমিশন’ গঠন করে সব বিতর্কিত ও অগণতান্ত্রিক সাংবিধানিক সংশোধনী ও পরিবর্তনগুলো পর্যালোচনা করে সেগুলো রহিত/সংশোধন করে এবং অন্যান্য অত্যাবশ্যকীয় সাংবিধানিক সংস্কার করবে। সংবিধানে গণভোট ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তন করে জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার পুনঃস্থাপন করা হবে।

দ্বিতীয়ত, প্রতিহিংসা ও প্রতিশোধের রাজনীতির বিপরীতে সব মত ও পথের সমন্বয়ে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক, বৈষম্যহীন ও সম্প্রীতিমূলক রেইনবো জাতি (Rainbow-Nation) প্রতিষ্ঠা করা হবে। এজন্য অব্যাহত আলোচনা, মতবিনিময় ও পারস্পারিক বোঝাপড়ার ভিত্তিতে ভবিষ্যৎমুখী এক নতুন ধারার সামাজিক চুক্তিতে পৌঁছাতে হবে। এই জন্য একটি ‘জাতীয় সমঝোতা কমিশন’ গঠন করা হবে।

তৃতীয়ত, বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠায় এবং স্বচ্ছ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে স্থায়ী সাংবিধানিক ও প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার লক্ষ্যে একটি ‘নির্বাচনকালীন দল নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার’ ব্যবস্থা প্রবর্তন করার কথা থাকছে রূপরেখায়।

চতুর্থত, অর্থবিল, আস্থা ভোট, রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার প্রশ্ন এবং সংবিধান সংশোধনী বিল ব্যতীত অন্যসব বিষয়ে সংসদ সদস্যদের মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ সংশোধন করার প্রস্তাবও থাকছে।

পঞ্চমত, প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রপতি ও সরকারের প্রধানমন্ত্রীর নির্বাহী ক্ষমতায় ভারসাম্য আনয়ন করা হবে। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার ভারসাম্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে নির্বাহী বিভাগ, আইন বিভাগ ও বিচার বিভাগের ক্ষমতা, দায়িত্ব ও কর্তব্যের সুসমন্বয় করা হবে।

ষষ্ঠত, বিদ্যমান সংসদীয় ব্যবস্থার পাশাপাশি বিশেষজ্ঞ জ্ঞানের সমন্বয়ে রাষ্ট্র পরিচালনার লক্ষ্যে দেশের প্রথিতযশা শিক্ষাবিদ, পেশাজীবী, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী, সমাজবিজ্ঞানী ও প্রশাসনিক অভিজ্ঞতাসমৃদ্ধ ব্যক্তিদের সমন্বয়ে দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা প্রবর্তন করা হবে।

সপ্তমত, রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত এবং বিশিষ্টজনের অভিমতের ভিত্তিতে স্বাধীন, দক্ষ, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও দৃঢ়চিত্ত ব্যক্তিদের সমন্বয়ে একটি কার্যকর নির্বাচন কমিশন গঠন করার লক্ষ্যে বর্তমান ‘নির্বাচন কমিশন নিয়োগ আইন’ সংশোধন করার কথা থাকছে রূপরেখায়। ইভিএম নয়, সব কেন্দ্রে পেপার-ব্যালটের মাধ্যমে ভোটাধিকার প্রয়োগ নিশ্চিত করা হবে। আরপিও, ডিলিমিটেশন অর্ডার এবং রাজনৈতিক দল নিবন্ধন আইনও সংস্কার করা হবে। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রতীক ব্যবহার বাতিল করা হবে।

অষ্টমত, সংকীর্ণ রাজনৈতিক দলীয়করণের ঊর্ধ্বে উঠে সকল রাষ্ট্রীয়, সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে এসব প্রতিষ্ঠান পুনর্গঠন করা হবে। শুনানির মাধ্যমে সংসদীয় কমিটির ভেটিং সাপেক্ষে এই সব প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ প্রদান করা হবে।

নবমত, বাংলাদেশের সংবিধান ও মাসদার হোসেন মামলার রায়ের আলোকে বিচার বিভাগের কার্যকর স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হবে। বর্তমান বিচার ব্যবস্থার সংস্কারের জন্য একটি ‘জুডিশিয়াল কমিশন’ গঠন করা হবে। বিচার বিভাগের জন্য সুপ্রিম কোর্টের নিয়ন্ত্রণাধীন একটি পৃথক সচিবালয় থাকবে। সুপ্রিমকোর্টের বিচারপতিদের অভিশংসন প্রশ্নে সংবিধানে বর্ণিত ইতিপূর্বেকার ‘সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল’ ব্যবস্থা পুনঃস্থাপন করা হবে। এজন্য সংবিধানে প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনা হবে। সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি নিয়োগের লক্ষ্যে সংবিধানের ৯৫(গ) অনুযায়ী সুনির্দিষ্ট যোগ্যতা ও মানদণ্ড সম্বলিত ‘বিচারপতি নিয়োগ আইন’ প্রণয়ন করা হবে।

দশমত, যোগ্য ও প্রাজ্ঞ ব্যক্তিদের সমন্বয়ে একটি ‘প্রশাসনিক সংস্কার কমিশন’ গঠন করে প্রশাসন পুনর্গঠন করা হবে। মেধা, সততা, সৃজনশীলতা, দক্ষতা, অভিজ্ঞতা ও প্রশিক্ষণ বেসামরিক ও সামরিক প্রশাসনে নিয়োগ, বদলি ও পদোন্নতিতে যোগ্যতার একমাত্র মাপকাঠি হিসাবে বিবেচনা করা হবে।

একাদশ প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, সুপ্রিম কোর্টের একজন সাবেক বিচারপতির নেতৃত্বে সার্বিক সংস্কারের লক্ষ্যে একটি ‘মিডিয়া কমিশন’ গঠন করা হবে। সৎ সাংবাদিকতার পরিবেশ পুনরুদ্ধার করা হবে এবং চাঞ্চল্যকর সাগর-রুনি হত্যাসহ সাংবাদিক নির্যাতন ও হত্যার বিচার নিশ্চিত করা হবে।

রূপরেখার দ্বাদশ প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, দুর্নীতির ক্ষেত্রে কোনো আপস করা হবে না। বিগত দেড় দশকে সংগঠিত অর্থ-পাচার ও দুর্নীতির অনুসন্ধান করে একটি শ্বেতপত্র প্রকাশ করা এবং শ্বেতপত্রে চিহ্নিত দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সংবিধান অনুযায়ী ‘ন্যায়পাল’ নিয়োগ করা হবে।

ত্রয়োদশ প্রস্তাবনায় সর্বস্তরে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে মানবিক মূল্যবোধ ও মানুষের মর্যাদা পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং গুম, খুন, বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড এবং অমানবিক নিষ্ঠুর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের অবসান ঘটানো হবে। গত দেড় দশক সংগঠিত সব বিচারবহির্ভূত হত্যা, ক্রসফায়ারের নামে নির্বিচারে হত্যা, গুম, অপহরণ, ধর্ষণ, নির্মম শারীরিক নির্যাতন, নিষ্ঠুর ও অমানবিক অপরাধের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িতদের নিশ্চিত করা হবে।

এ ছাড়া বিএনপির প্রস্তাবিত রূপরেখায় অর্থনৈতিক ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিশেষজ্ঞ অর্থনীতিবিদ, অভিজ্ঞ ব্যাংকার, কর্পোরেট নেতা, প্রশাসনিক অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ব্যক্তি সমন্বয়ে একটি ‘অর্থনৈতিক সংস্কার কমিশন’ গঠন করা হবে।

সব কালাকানুন বাতিল এবং অপ্রয়োজনীয় কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো থেকে বিদ্যুৎ ক্রয় বন্ধ করা হবে। স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোকে অধিকতর স্বাধীন, শক্তিশালী ও ক্ষমতাবান করা হবে। এসব প্রতিষ্ঠানকে এমনভাবে জবাবদিহিতার আওতায় আনা হবে যেন তারা শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন পরিষেবা প্রদান ও উন্নয়ন কার্যক্রমে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানে সরকারি প্রশাসক নিয়োগ বন্ধ করা হবে। আদালত কর্তৃক দণ্ডপ্রাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত স্থানীয় সরকারের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নির্বাহী আদেশে বরখাস্ত করা হবে না।

বর্তমানে শিক্ষাক্ষেত্রে বিরাজমান নৈরাজ্য দূর করে নিম্ন ও মধ্য পর্যায়ে চাহিদাভিত্তিক শিক্ষা এবং উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে জ্ঞানভিত্তিক শিক্ষা-কারিকুলামকে প্রাধান্য দেওয়া হবে। গবেষণায় বিশেষ গুরুত্ব প্রদান ও জাতীয় বাজেটে শিক্ষা খাতে জিডিপির ৫ শতাংশ অর্থ বরাদ্দ করা হবে।

একইভাবে জাতীয় বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে জিডিপির ৫ শতাংশ অর্থ বরাদ্দ করার প্রস্তাব রাখা হয়েছে। এ ছাড়াও কৃষিপণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করার পাশাপাশি প্রয়োজনে ভর্তুকি দিয়ে হলেও শস্য বীমা, পশু বীমা, মৎস্য বীমা এবং পোল্ট্রি বীমা চালু করার প্রস্তাব রাখা হয়েছে চূড়ান্ত রূপরেখার খসড়ায়।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান পরিষ্কার করে বলেছেন, একটি নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে তারপর তাদের অধীন নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আন্দোলন যারা করেছে, তাদের সবাইকে নিয়ে সবার মতামতের ভিত্তিতেই ভবিষ্যতে দেশ পরিচালনা করা হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রূপরেখা সময়মতো জানবেন। যুগপৎ আন্দোলন শুরু করলে আপনারা জানতে পারবেন। আমাদের রূপরেখায় থাকবে সংবিধানের ৫৮(খ), (গ), যেটা সংবিধানের (দ্বাদশ সংশোধনী) ছিল। তারই আলোকে এই রূপরেখা হবে। ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি নিরঙ্কুশ আসনে বিজয়ী হয়ে ১৯৯৬ সালের ২৭ মার্চ নির্বাচনকালীন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তনে ত্রয়োদশ সংশোধনী পাস করে। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ২০১১ সালে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান বাতিল করা হয়।’

এনএইচবি/এসজি

Header Ad
Header Ad

বিরামপুরে ছিনতাইকালে পুলিশের হাতে 'ভুয়া সেনাসদস্য' আটক

আটক আব্দুল কাদের রোমান। ছবি: ঢাকাপ্রকাশ

দিনাজপুরের বিরামপুরে ভুয়া সেনাবাহিনীর পরিচয় দিয়ে রাস্তায় ছিনতাই করার সময় আব্দুল কাদের রোমান (২২) নামে এক যুবককে আটক করেছে বিরামপুর থানা পুলিশ। এসময় তার কাছ থেকে সেনাবাহিনীর ভুয়া পরিচয় পত্র ওয়াকি-টকি, তিনটি মোবাইল, একটি ম্যানিব্যাগ ও একটি চশমা উদ্ধার করা হয়।

ঘটনাটি ঘটেছে মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) দিবাগত রাত সাড়ে ১১টায় উপজেলার কাটলা-বিরামপুর আঞ্চলিক সড়কের মাহমুদপুর শান্তিমোড় এলাকায়।

আটক আব্দুল কাদের রোমান উপজেলার কাটলা ইউনিয়নের খিয়ারমামুদপুর এলাকার রফিতুল্লাহ মন্ডলের ছেলে।

বিরামপুর থানার ওসি মমতাজুল হক বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, আটককৃত যুবক এক সময় আনসার বাহিনীতে কর্মরত ছিলেন।

থানা সূত্রে জানা যায়,গতকাল মঙ্গলবার রাতে উপজেলার কাটলা-বিরামপুর আঞ্চলিক সড়কের শান্তিমোড় এলাকায় থানা পুলিশের মাদকবিরোধী অভিযান কার্যক্রম চলছিল। এসময় শান্তিমোড় এলাকায় শফিকুল ইসলামের বাড়ির সামনে কয়েকজন যুবক সেনাবাহিনীর সদস্য পরিচয় দিয়ে রাস্তার লোকজনদের তল্লাশি করছিলেন। সেখানে পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে তারা পালানোর চেষ্টা করেন। তাদের মধ্যে দুজন পালিয়ে গেলেও আব্দুল কাদের রোমানকে আটক করে পুলিশ। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি নিজেকে সেনাবাহিনীর ভুয়া পরিচয়পত্র ও ওয়াকি টকি ব্যবহার করে রাস্তায় ছিনতাইয়ের বিষয়টি পুলিশের কাছে স্বীকার করে।

বিরামপুর থানার ওসি মমতাজুল হক জানান,ভুয়া সেনাবাহিনীর পরিচয়পত্র ও ওয়াকি-টকি ব্যবহার করে ছিনতাইয়ের অভিযোগে আব্দুল কাদের রোমান নামের এক যুবককে আটক করা হলেও অন্য দুই সদস্য পালিয়ে গেছে। আটক যুবকের বিরুদ্ধে মামলাপূর্বক অন্য আসামিদের আটকের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

Header Ad
Header Ad

হাসিনাকে যারা খুনি হতে সাহায্য করেছে, তাদেরও বিচার করতে হবে: সারজিস আলম

জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-এর উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম। ছবি: সংগৃহীত

ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে কড়া বক্তব্য দিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-এর উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম। তিনি বলেন, শুধু শেখ হাসিনার বিচার নয়, তাকে 'খুনি হাসিনা'তে পরিণত করতে যারা ভূমিকা রেখেছে, তাদের বিচারও নিশ্চিত করতে হবে।

বুধবার (২৩ এপ্রিল) রাজধানীর উত্তরায় এক বিক্ষোভ মিছিল-পূর্ব সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। এই কর্মসূচির মূল দাবি ছিল আওয়ামী লীগের বিচার, রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা, দলটির সংস্কার, এবং একটি নতুন গণপরিষদের নির্বাচন আয়োজন।

সারজিস আলম অভিযোগ করেন, "খুনি হাসিনার দোসররা আবার ক্ষমতায় ফেরার চেষ্টা করছে। তারা ইতিহাস থেকে 'খুনি' শব্দটিই মুছে ফেলার ষড়যন্ত্র করছে।"
তিনি সতর্ক করে বলেন, যারা গণহত্যা চালিয়েছে, তাদের কোনোভাবেই জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণের অধিকার নেই।

জাতীয় নির্বাচনের প্রাক্কালে হাসিনার বিচারের দাবি জানিয়ে সারজিস আলম বলেন, "যদি তারা নির্বাচনে অংশ নিতে চায়, তবে জনগণ গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে তাদের রুখে দেবে।"

তিনি আরও বলেন, "আমরা আগামী নির্বাচনের আগেই খুনি হাসিনার বিচার দেখতে চাই।"

সংগঠক সারজিস আলম বলেন, যারা শহীদ হয়েছেন, তাদের আত্মত্যাগ যেন মূল্যহীন না হয়। "দেড় হাজারের বেশি শহীদের জীবনের বিনিময়ে আমরা এই জায়গায় এসেছি। অথচ এখনো কেউ কেউ কেবল নির্বাচনের কথা বলছে—তাদের লক্ষ্য শহীদের রক্ত নয়, কেবল ক্ষমতা।"

তিনি দেশের রাজনৈতিক সংস্কারের জন্য সকলে একসাথে কাজ করার আহ্বান জানান।

Header Ad
Header Ad

কুয়েটের ৩৭ শিক্ষার্থীর বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার, খুললো আবাসিক হল

কুয়েটের ৩৭ শিক্ষার্থীর বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার। ছবি: সংগৃহীত

কয়েক সপ্তাহের টানা আন্দোলন, আমরণ অনশন ও প্রশাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের মুখে অবশেষে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট) কর্তৃপক্ষ ৩৭ শিক্ষার্থীর সাময়িক বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করেছে। একই সঙ্গে খুলে দেওয়া হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাতটি আবাসিক হল।

বুধবার (২৩ এপ্রিল) বিকেলে অনুষ্ঠিত কুয়েটের ১০২তম জরুরি সিন্ডিকেট সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মোহাম্মদ মাছুদ সভায় সভাপতিত্ব করেন। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বিকেল থেকেই শিক্ষার্থীদের জন্য হলগুলো খুলে দেওয়া হয়েছে।

এর আগে ১৪ এপ্রিলের সিন্ডিকেট সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছিল, একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হবে ৪ মে এবং হল খোলা হবে ২ মে। তবে আজকের সভায় তা পরিবর্তন করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, দ্রুত স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনতেই হলগুলো আগেভাগেই খুলে দেওয়া হচ্ছে।

১৮ ফেব্রুয়ারি ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় অনেকেই আহত হন। এরপর ২৫ ফেব্রুয়ারি কুয়েট কর্তৃপক্ষ অনির্দিষ্টকালের জন্য একাডেমিক কার্যক্রম ও হল বন্ধ ঘোষণা করে।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ ছিল, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দোষীদের তথ্য থাকা সত্ত্বেও পক্ষপাতমূলক সিদ্ধান্ত নেয় এবং নির্দোষ অনেকে শাস্তির সম্মুখীন হন। সেই প্রেক্ষিতে ১৪ এপ্রিল রাতে জরুরি সিন্ডিকেট সভায় ৩৭ শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়, যা নতুন করে আন্দোলনের জন্ম দেয়।

বহিষ্কারাদেশের প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন। এরপর ১৩ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয় খোলার আগেই ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে আন্দোলনে গতি আনেন তারা। ২১ এপ্রিল থেকে শিক্ষার্থীরা আমরণ অনশন শুরু করেন এবং উপাচার্যের অপসারণসহ বিভিন্ন দাবিতে সোচ্চার হন।

শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. চৌধুরী রফিকুল আবরার জানান, “শিক্ষার্থীদের ন্যায্য দাবির বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে। যাঁরা প্রকৃত দোষী, তাঁদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

তিনি আরও জানান, একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে, যার প্রতিবেদন অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

এ সময় তার সঙ্গে খুলনার বিভাগীয় কমিশনার মো. ফিরোজ সরকার এবং জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

বিরামপুরে ছিনতাইকালে পুলিশের হাতে 'ভুয়া সেনাসদস্য' আটক
হাসিনাকে যারা খুনি হতে সাহায্য করেছে, তাদেরও বিচার করতে হবে: সারজিস আলম
কুয়েটের ৩৭ শিক্ষার্থীর বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার, খুললো আবাসিক হল
কাশ্মীরে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’, মসজিদে ঘোষণার পর বিক্ষোভ শুরু
ইতিহাস গড়ল জিম্বাবুয়ে, ঘরের মাঠে লজ্জার হার বাংলাদেশের
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের 'এ' ইউনিটে প্রথম আব্দুল্লাহ
বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র পারভেজ হত্যা: প্রধান আসামি মেহরাজ গ্রেপ্তার
তুরস্কের ইস্তানবুলে একের পর এক ভূমিকম্প
এবার সেই গৃহকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা করলেন পরীমণি
দ্রুত রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন না হলে পুরো অঞ্চল অস্থিতিশীল হয়ে উঠবে: প্রধান উপদেষ্টা
আমরা সংস্কারও চাই, নির্বাচনও চাই: মির্জা আব্বাস
কাশ্মীরের হামলা ‘সাজানো’ দাবি পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যমের
ভাইরাল ভিডিও সমন্বয়ক রুবাইয়ার নয়, দাবি এনসিপি নেতার
স্বৈরাচারের দোসররাই ভাস্কর মানবেন্দ্রর বাড়িতে আগুন দিয়েছে: রিজভী
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মামলায় আসামি গ্রেপ্তারে লাগবে না অনুমতি
সিলেট টেস্ট চলাকালে হার্ট অ্যাটাক, বিসিবি কর্মকর্তার মৃত্যু
আমাকে দেখলেই মানুষ বলে ‘শাকিব খানের বউ’: টিকটকার রিমু
ভয়েস অফ আমেরিকা বন্ধে ট্রাম্পের প্রচেষ্টা আটকে দিলেন মার্কিন বিচারক
এসএসসি পাসেই বিমানে চাকরি, নেবে ৬৬২ জন
সৌদি সফর কাটছাঁট করে দেশে ফিরেই কঠোর হুঁশিয়ারি মোদির (ভিডিও)