আরব আমিরাতের কাছে সিরিজ হার ‘জীবনের অংশ’: লিটন

ছবি: সংগৃহীত
সিরিজটা ছিল দুই ম্যাচের। আলোচনা করে এক ম্যাচ বাড়িয়ে নেওয়ার উদ্দেশ্য ছিল, পাকিস্তান সফরের আগে অপেক্ষাকৃত দুর্বল প্রতিপক্ষের বিপক্ষে নিজেদের আরও একটু ভালোভাবে প্রস্তুত করে নেওয়া, আত্মবিশ্বাস বাড়ানো।
সেটা তো হলোই না। উল্টো বড় ধাক্কা খেলো বাংলাদেশ। সংযুক্ত আরব আমিরাতের কাছে নাকানি চুবানি খেয়ে সিরিজ হারের লজ্জায় ডুবলো টাইগাররা।
শারজায় শেষ টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশকে ৭ উইকেট আর ৫ বল হাতে রেখে অনায়াসেই হারিয়েছে আরব আমিরাত। সিরিজ জিতেছে ২-১ ব্যবধানে।
টেস্ট খেলুড়ে কোনো দলের বিপক্ষে এটিই আরব আমিরাতের প্রথম টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয়। অন্যদিকে পূর্ণকালীন অধিনায়ক হয়ে নিজের প্রথম সিরিজেই বিব্রতকর হার দেখলেন লিটন দাস।
লক্ষ্য ছিল ১৬৩ রানের। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই আঘাত হানেন শরিফুল ইসলাম। মারকুটে আরব আমিরাত অধিনায়ক মোহাম্মদ ওয়াসিম বাঁহাতি পেসারের সুইংয়ে ক্যাচ দেন প্রথম স্লিপে। তানজিদ তামিমের ক্যাচ হয়ে ফেরার আগে ৬ বলে ওয়াসিম করেন ৯।
তবে ১৪ রানে প্রথম উইকেট হারালেও পাওয়ার প্লেতে দারুণ ব্যাটিং করে আরব আমিরাত। ৬ ওভারে তোলে ১ উইকেটে ৫০ রান। অবশেষে অষ্টম ওভারে বল হাতে নিয়েই ব্রেক থ্রু দেন রিশাদ হোসেন। ২৩ বলে ২৯ করে বোল্ড হন মোহাম্মদ জুহাইব।
এরপর জুটি গড়ে তোলার চেষ্টা করেন আলিশান শারাফু আর রাহুল চোপড়া। তাদের ২০ বলে ২১ রানের জুটি ভাঙেন তানজিম সাকিব। স্লোয়ার বাউন্সারে রাহুলকে (১৩ বলে ১৩) শামীম পাটোয়ারীর ক্যাচ বানান তিনি।
তবে এরপর দলকে এগিয়ে নিয়ে যান আলিশান। রিশাদকে ছক্কা মেরে ৩৮ বলে ফিফটি পূরণ করেন তিনি। এরপর আসিফ খানকে সঙ্গে নিয়ে ম্যাচ বের করে নিয়ে আসেন আলিশান। চতুর্থ উইকেটে তারা ৫২ বলে ৯১ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়েন। আলিশান ৪৭ বলে ৬৮ আর আসিফ ২৬ বলে ৪১ রানে অপরাজিত থাকেন।
এর আগে টস জিতে বাংলাদেশকে ব্যাটিংয়ে পাঠায় আরব আমিরাত। ব্যাটিংয়ে নেমেই বিপদে পড়ে টাইগাররা। ৭১ রানে ৭ উইকেট, ৮৪ রানে নেই ৮ উইকেট। শঙ্কা জেগেছিল একশর আগে অলআউট হওয়ার। সেখান থেকে নাটকীয় প্রত্যাবর্তন করে বাংলাদেশ।
হাসান মাহমুদকে সঙ্গে নিয়ে ৪৪ রানের দারুণ এক জুটি গড়ে তোলেন জাকের আলি অনিক। ৩৪ বলে ৪১ রানের মোটামুটি ঝড়ো ইনিংস খেলে আউট হন জাকের। শেষ ওভারে আরব আমিরাত অধিনায়ক মোহাম্মদ ওয়াসিমের বলে ঝড় তোলেন হাসান মাহমুদ ও শরিফুল ইসলাম। দু’জন মিলে ২৬ রান নেন এই ওভার থেকে।
যার ফলে বাংলাদেশের স্কোর শেষ পর্যন্ত ৯ উইকেট হারিয়ে সম্মানজনক ১৬২ রানে গিয়ে শেষ হয়। হাসান মাহমুদ ১৫ বলে ২৬ এবং ৭ বলে ১৬ রানে অপরাজিত থাকেন শরিফুল ইসলাম।
শুরুটা করেছিলেন পারভেজ হোসেন ইমন। দ্বিতীয় ওভারের প্রথম বলটি ছিল তার নিজের মোকাবেলা করা প্রথম বল। ধ্রুব পারাশারের বলে আলিশান শরাফুর হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান পারভেজ। গোল্ডেন ডাক মারেন তিনি।
এরপর তানজিদ তামিম এবং লিটন দাস মিলে চেষ্টা করেন শুরুর বিপর্যয় কাটাতে। কিন্তু ১০ বলে ১৪ রান করে লিটন দাস হায়দার আলির বলে এলবিডব্লিউ হয়ে ফিরে গেলে বিপর্যয়ের শুরু। তানজিদ হাসান তামিম একপাশে থেকে কিছুক্ষণ একা একা লড়াই করার চেষ্টা করলেন। ১৮ বলে সর্বোচ্চ ৪০ রান করেন তিনি।
তাওহিদ হৃদয় পুরো সিরিজেই ব্যর্থ। এই ম্যাচে তো কোনো রানই করতে পারলেন না। ২ বলে শূন্য রানে বিদায় নিলেন। ৯ বল খেলে শেখ মেহেদী হাসান আউট হন ২ রান করে। প্রথম ম্যাচে ব্যর্থ হওয়ার পর দ্বিতীয় ম্যাচে তাকে সুযোগ দেয়া হয়নি। এবার সুযোগ পেলেন এবং ৫ নম্বরে ব্যাট করতে নেমে আবারও ব্যর্থতার পরিচয় দিলেন।
শামীম হোসেন পাটোয়ারী নিজের নামের প্রতি মোটেও সুবিচার করতে পারেননি। ১২ বলে ৯ রান করে আউট হয়ে যান তিনি। রিশাদ হোসেন ব্যাট হাতে যতটা সম্ভাবনাময়ী ছিলেন, তার ছিটেফোঁটাও দেখাতে পারলেন না। ২ বল খেলে কোনো রান না করেই বিদায় নিলেন।
তানজিব সাকিব খেললেন ১২ বল। ৬ রান করে ছক্কা মারতে গিয়ে বাউন্ডারি লাইনে ধরা পড়েন তিনি। জাকের আলি অনিক শেষ দিকে এসে কিছুটা লড়াই চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। শেষ পর্যন্ত তিনি করেন ৩৪ বলে ৪১ রান। তারপর শরিফুল আর হাসান মাহমুদের দুর্দান্ত ব্যাটিং।
আরব আমিরাতের স্পিনার হায়দার আলি মাত্র ৭ রান দিয়ে ৩টি উইকেট নেন। সগির খান ও মাতিউল্লাহ খান পান ২টি করে উইকেট।
টেস্ট খেলুড়ে কোনো দলের বিপক্ষে এটিই আরব আমিরাতের প্রথম টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয়। অন্যদিকে পূর্ণকালীন অধিনায়ক হয়ে নিজের প্রথম সিরিজেই বিব্রতকর হার দেখলেন লিটন দাস।
এমন হার কি মেনে নেওয়ার মতো? লিটন অবশ্য একে স্বাভাবিকভাবেই দেখতে চান। ম্যাচের পর বাংলাদেশ অধিনায়ক বলেন, ‘যখন এখানে এসেছি, সব সময় ম্যাচ জেতার কথাই ভেবেছি। এটা (সিরিজ হেরে যাওয়া) জীবনের অংশ।’
লিটন এই হারে নিজেদের ব্যর্থতার চেয়ে যেন প্রতিপক্ষের কৃতিত্বই বেশি দেখছেন। তার কথা, ‘যখন আপনি ক্রিকেট খেলবেন, প্রতিপক্ষ ভালো খেলবে, তাদের কৃতিত্ব দিতে হবে।’
