রাজধানীর রামপুরার একটি বাসা থেকে দেড় কোটি টাকা, প্রায় ৪০ ভরি স্বর্ণালংকার এবং সাত হাজার মার্কিন ডলার চুরির ঘটনায় উজ্জ্বল (৩১) নামের এক কেয়ারটেকারকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। চুরির টাকায় তিনি ফ্রিজ ও আলমারি কেনেন বলেও জানিয়েছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
বৃহস্পতিবার (১৫ মে) দুপুরে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, হাতিরঝিল থানাধীন পশ্চিম রামপুরার মহানগর প্রজেক্টে কক্সবাজারের হোটেল সি প্যালেসের মালিক এ এস এম আলাউদ্দিন ভূঁইয়ার বাসায় এ চুরির ঘটনা ঘটে। গত ১০ মে তিনি হাতিরঝিল থানায় অভিযোগ করেন, তার বাসার কেয়ারটেকার উজ্জ্বল ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা, ৪০ ভরি স্বর্ণালংকার (যার আনুমানিক বাজারমূল্য প্রায় ৬০ লাখ টাকা) ও সাত হাজার মার্কিন ডলার চুরি করে পালিয়ে গেছেন।
মামলার এজাহারে বলা হয়, ৩ মে সকালে আলাউদ্দিন ভূঁইয়া কক্সবাজারে তার হোটেল তদারকির জন্য যান। এর একদিন আগে, ২ মে কেয়ারটেকার উজ্জ্বল ছুটি নিয়ে গ্রামের বাড়িতে যাওয়ার অনুমতি নেন। আলাউদ্দিন ভূঁইয়া ৬ মে ঢাকায় ফিরে আসেন। পরে ৮ মে রাতে তার মেয়ে ব্যারিস্টার ফারজানা আক্তারকে নিয়ে বাসার লকার খুলে দেখেন, ভেতরের টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার নেই।
সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ২ মে সন্ধ্যায় উজ্জ্বল ক্যামেরাগুলোর মুখ ঘুরিয়ে দেন এবং গোপনে আলাউদ্দিন ভূঁইয়ার কক্ষে প্রবেশ করেন। পরদিন ৩ মে দুপুরে একটি ব্যাগ কাঁধে নিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে যান।
ডিসি তালেবুর রহমান জানান, উজ্জ্বল পূর্বে আলাউদ্দিন ভূঁইয়ার কক্সবাজারের হোটেলে বাবুর্চি হিসেবে কাজ করতেন এবং ২০১৯ সাল থেকে ঢাকায় তার বাসায় কেয়ারটেকার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। মালিকের স্ত্রীর মৃত্যুর পর বাসার সবকিছু পরিচালনার দায়িত্ব ছিল তার ওপর। এমনকি আলমারির লকারের পাসওয়ার্ডও জানতেন তিনি।
তদন্তে নেমে পুলিশ সিসিটিভি ফুটেজ ও গোয়েন্দা তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় গাজীপুর সদর থানাধীন মৌবাগ এলাকায় উজ্জ্বলের অবস্থান শনাক্ত করে। সেখানকার একটি ভাড়া বাসায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তার দেখানো মতে বাসার আলমারি থেকে ৬০ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে উজ্জ্বল স্বীকার করেন, চুরি করা টাকার একটি অংশ দিয়ে তিনি একটি ফ্রিজ ও আলমারি কিনেছেন, যা পরে পুলিশ জব্দ করে। তিনি আরও জানান, গাজীপুর সদর থানার শিমুলতলী বাজারে তার ভগ্নিপতির বাসায় খাটের নিচে আরও ১৪ লাখ টাকা লুকিয়ে রেখেছেন। পুলিশ সেই বাড়িতে অভিযান চালিয়ে সেখান থেকেও টাকা উদ্ধার করে।
পুলিশ জানায়, গ্রেফতারের পর আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন উজ্জ্বল এবং চুরির ঘটনায় গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন। মামলার অপর দুই আসামি এবং অবশিষ্ট চুরি হওয়া অর্থ উদ্ধারে পুলিশি তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে।