বুধবার, ২২ মে ২০২৪ | ৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
Dhaka Prokash

গল্প

বৃষ্টির পর

খানিক আগেও আকাশ ছায়া-ছায়া হয়ে ছিল। এখন চারপাশ অন্ধকার হয়ে গেছে। যেন ঝুপ করে সন্ধ্যা নেমে এসেছে। সন্ধ্যা নামতে এখনো অনেক সময় বাকি। সামনে দেয়ালের সঙ্গে লাগোয়া সুপুরিগাছের পাতা বাতাসে উড়ছে, চলন্ত মোটরবাইকে বসে থাকা একজন মেয়ের ওড়না যেমন বাতাসে ওড়ে সেরকম।

ইভান বসে আছে বাসার বারান্দায়। সরকারি কোয়ার্টারস। দেয়ালঘেরা ক্যাম্পাসের ভেতর পাশাপাশি আর সামনে-পেছনে হলুদ রঙের কয়েকটা বিল্ডিং। মাঝখানে খেলার মাঠ আছে। জায়গাটা সুন্দর। ইভান ইঞ্জিনিয়ারিং ইউনিভার্সিটিতে পড়ে। গ্লাস অ্যান্ড সিরামিক ইঞ্জিনিয়ারিং, ফাইনাল ইয়ার। সরকারি দলের ছাত্র সংগঠনের ছেলেরা তার হলের সিট দখল করে নিয়েছে। তাই সে মামার বাসায় এসে থাকে। মামা সরকারের হিসাব মহানিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ে চাকরি করেন। বাসায় মামা-মামি দুজন থাকেন। তাঁদের দুই ছেলে। একজন থাকে ইংল্যান্ডে, আরেকজন কানাডায়। সেখানে পড়তে গেছে।

ইভানের সামনে মগভরতি গরম কফি। সে নিজে বানিয়েছে। মামি বাসায় থাকলে বানিয়ে দিতেন। মামি বাসায় নেই। এই বিল্ডিঙের সকলেই হিসাব মহানিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ে চাকরি করেন। শুধু চারতলার পূর্ব পাশের রকিবুল ইসলাম সাহেব টেলিযোগাযোগ বিভাগে আছেন।

হিসাব মহানিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ের সকলে সপরিবারে পিকনিকে শ্রীমঙ্গলে গেছেন। বাসার কাজের বুয়ারাও গেছে। অতিথিকে সঙ্গে নিয়ে যাওয়ার অনুমতি নেই। ইভান ভাগ্নে হিসেবে অতিথির কাতারে পড়ে। তাছাড়া তার বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস চলছে। সে যায়নি।

জুন মাসে কেউ পিকনিকে যায় না। পিকনিকে যাওয়ার সময় ডিসেম্বর মাস। বাজেটে পিকনিক লেখা নেই। লেখা আছে বার্ষিক কর্মশালা। যাওয়া-আসা দিয়ে পাঁচ দিন। পুরো খরচ সরকারের। এ ছাড়া কর্মশালায় অংশগ্রহণ বাবদ প্রত্যেকে নির্দিষ্ট হারে দৈনিক কর্মশালা-ভাতা পাবেন।

জুন মাস শেষ হয়ে যাচ্ছে। তার আগে বাজেটের নির্ধারিত টাকা খরচ করা দরকার। তাছাড়া ছেলেমেয়েদের নিয়েও চিন্তা নেই। তারা সবাই ইংলিশ মিডিয়াম ইশকুলে পড়ে। ইংলিশ মিডিয়াম ইশকুলের একাডেমিক ইয়ার জুলাই মাস থেকে শুরু হয়। জুন মাসে তাদের ছুটি থাকে।

ব্ল্যাক কফি বানানোতে তেমন বাহাদুরি নেই। গরম পানিতে কফি মিশিয়ে দিলেই হলো। তবে ইভান কফিতে চুমুক দিয়ে চুপচাপ বসে আছে। কফি খেতে হয়েছে তীব্র তিতা। তাতে খানিকটা দুধ আর চিনি মেশাবে কিনা ভাবছে।

বাসার সামনে দিয়ে বাঁধানো রাস্তা চলে গেছে। তার ওপাশে সীমানা প্রাচীর। ইভানরা থাকে নিচতলায়। বারান্দা লোহার গ্রীল দিয়ে ঘেরা। গ্রীলের ফাঁক দিয়ে ইভান রাস্তার দিকে তাকিয়ে আছে। বৃষ্টি শুরু হলে সে বৃষ্টি দেখবে।

নাবিলা হেঁটে যাচ্ছে সামনে দিয়ে। ইভান পুরোপুরি স্থির হয়ে গেল। তুমুল বৃষ্টির সম্ভাবনার আগ দিয়ে নাবিলা কোথায় যাচ্ছে! পায়ে স্লিপার। পরনে হালকা নীল রঙের জিন্স-প্যান্ট। ফতুয়ার মতো সাদা টপস্ গায়ে। ঘাড়ের ওপর দিয়ে সবুজ ছাপা ওড়না পেঁচিয়ে এনে বুকের কাছে গিঁট দিয়ে রেখেছে। নিকষ কালো মেঘের বিপরীতে নাবিলাকে অপূর্ব দেখাচ্ছে।

ইভান আর নাবিলা মুখোমুখি বাসায় থাকে। ইভান কতদিন ভেবেছে সে যখন বাইরের দরজা খুলবে ঠিক তখন নাবিলাও দরজা খুলবে। তাদের চোখাচোখি হবে। নাবিলা নরম ঠোঁটে মিষ্টি হাসি মাখিয়ে চোখ নামিয়ে ফেলবে। সেই চোখে থাকবে খুশি আর লজ্জা। ইভানকে দেখে নাবিলার চোখে কেন খুশি আর লজ্জা থাকবে তা ভেবে ইভান দিনের পর দিন পার করেছে। কিন্তু কোনোদিন তাদের চোখাচোখি হয়নি। নাবিলা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেকেন্ড ইয়ারে পড়ে। ইভান তার সামনে দিয়ে হেঁটে এলেও নাবিলা কখনো তাকে খেয়াল করে বলে মনে হয় না।

সে কেন বাবা-মায়ের সঙ্গে শ্রীমঙ্গল যায়নি ইভান বুঝতে পারছে না। তার মনে হচ্ছে এখুনি ঝুম বৃষ্টি শুরু হবে। শুধু বৃষ্টি না, ঝড়। প্রচণ্ড ঝড়ো বাতাসে ওলোটপালট করে দেবে সব। লণ্ডভণ্ড হয়ে যাবে প্রকৃতি। নাবিলা কোথাও যেতে পারবে না। সে ফিরে আসবে। বাসায় যাবে না। এসে বসবে ইভানের মুখোমুখি। কেন সে বাসায় যাবে না তা ইভান ভাবে না। সামনে বসে নাবিলা চকচকে চোখে বলবে, অ্যাই ইভান ভাইয়া, আপনি কফি বানাতে পারেন!

পারি তো। বসো, কফি বানিয়ে আনছি। বø্যাক কফি নাকি দুধ-চিনি মেশাব?

স্ট্রং ব্ল্যাক কফি। ঝাল কিছু থাকলে আনবেন। মুখ দিয়ে আগুন বের হওয়া চানাচুর হলে ভালো হয়। আকাশভাঙা বৃষ্টি শুরু হয়েছে। ঝাল চানাচুর আর কফি খেতে খেতে আমরা একসাথে মাতাল বৃষ্টি দেখব।

এজন্য নাবিলাকে এত ভালো লাগে ইভানের। লুকোছাপা কিছু নেই। মনের কথা আড়াল না করে সরাসরি বলে দেয়, অ্যাই ইভান ভাইয়া, আপনার পরীক্ষা কবে শেষ হবে বলুন তো?
আমার পরীক্ষা শেষ হওয়া দিয়ে তুমি কী করবে?
আপনার সাথে ঘুরতে বের হবো। কোথায় যাব জানেন? রংপুরে। তাজহাট রাজবাড়ি।
সেখানে কেন?

তাজহাট রাজবাড়িতে বিশাল মাঠ আছে। মাঠভরতি চোরকাঁটা। সেদিন আমি শাড়ি পরব। শাড়ির রং হবে ময়ূরকণ্ঠী। মাঠের ভেতর দিয়ে হেঁটে যাব খালি পায়ে। চোরকাঁটায় ভরে যাবে শাড়ি। রাজবাড়ির সামনে ফোয়ারার মাঝখানে শ্বেতপাথরের জলকন্যা আছে। সে নাচছে। তাকে সামনে রেখে রাজবাড়ির সিঁড়িতে পা মেলে বসব। আপনি আমার শাড়ি থেকে পরম যত্মে একটা একটা করে চোরকাঁটা তুলে দেবেন। দেবেন না, ইভান ভাইয়া?
হ্যাঁ দেব।

নাবিলাকে তখন তাজহাট রাজবাড়ির জলকন্যার মতো লাগে। সে আদুরে গলায় কথা বলে। স্বচ্ছ পানির ভেতর ঘাসফড়িঙের মতো নেচে যায়।
যদিও আজ পর্যন্ত নাবিলার সঙ্গে ইভানের কথা হয়নি। যা হয়েছে সব তার নিজ কল্পনায়। অবশ্য বাস্তবের নাবিলা অতটা নরমসরম বলে মনে হয় না। বেশ ডেঞ্জারাস টাইপের। ঘটনা গতকাল বিকেলের। খুব সকালে বিল্ডিঙের সবাই শ্রীমঙ্গল যাওয়ার জন্য রওনা হয়ে গেছে। চারতলার রকিবুল ইসলাম সাহেব টেলিযোগাযোগ বিভাগে চাকরি করেন বলে তিনি হিসাব মহানিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ের কর্তকর্তা-কর্মচারীদের প্রোগ্রামে যাননি।

রকিবুল ইসলাম সাহেবের একমাত্র পুত্রের নাম বাবু। বয়সে তরুণ। তার পড়াশোনার হিসেব পাওয়া যায় না। শোনা গেছে কোনো এক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে। তবে কী পড়ে সে বিষয়ে কেউ স্পষ্ট কিছু বলতে পারে না। তাকে সবাই রংবাবু নামে ডাকে।

একসময় এই কোয়ার্টারস ক্যাম্পাসে তিনজন বাবু ছিল। তাদের চেনার সুবিধার্থে আলাদা আলাদা নাম দেওয়া হয়েছিল। একজন ছিল খুব ফরসা। তার নাম ময়দা বাবু। একজন হালকাপাতলা। তার নাম চিকনা বাবু। ক্যাম্পাসের সকলে রকিবুল ইসলাম সাহেবের পুত্রের নাম দিয়েছিল রংবাজ বাবু। সে মাঝেমধ্যেই ঝামেলা বাঁধিয়ে মারপিট করে। তবে কেউ তাকে রংবাজ বাবু নামে ডাকতে সাহস পায়নি। বলে রংবাবু।

সে হঠাৎ হঠাৎ যাকে তাকে ডেকে জিগ্যেস করে, এই শোন, আমার নাম কী রে?
বাবু ভাই।
কী বাবু?
রংবাবু।

হ্যাঁ, কালারফুল বাবু। মহল্লায় একজনই রঙিন বাবু আছে। সে হচ্ছি আমি।
যদিও সকলে রংবাবু বলতে ভুল বাবু বা নেগেটিভ বাবু বলেই মনে করে।
রংবাবু বিল্ডিঙের সামনের রাস্তায় আড়াআড়ি মোটরবাইক রেখে দিয়েছে।

ইভান বারান্দায় এসেছে। সে কিছুক্ষণ আগে ভার্সিটি থেকে ফিরেছে। মামি কয়েক পদের নাস্তা বানিয়ে রেখে গেছেন। গরম করে খেতে বলেছেন। মুখহাত ধুয়ে বারান্দায় এসে দেখে নাবিলা বের হয়েছে বাসা থেকে। ইভান থমকে দাঁড়াল।

মোটরবাইকের ওপাশে নাবিলা দাঁড়িয়ে পড়েছে। তার পরনে সালোয়ার কামিজ। এক কাঁধ থেকে লম্বা স্ট্রিপের ছোটো লেদার ব্যাগ ঝুলছে। আরেক কাঁধে গিটার। পায়ে উঁচু হিলের স্যান্ডেল। এমনিতে নাবিলা বেশ লম্বা। উঁচু হিলের স্যান্ডেল পরে তাকে আরও লম্বা দেখাচ্ছে।

নাবিলা বলল, বাবু ভাই, রাস্তার ওপর এভাবে বাইক রাখবেন না। বাইক সরান।
রংবাবু বলল, কোথায় যাচ্ছ, নাবিলা? চলো তোমাকে পৌঁছে দিই।
থ্যাংক ইউ। রিকশা নিয়ে চলে যাব। আপনি উদ্বিগ্ন হবেন না।
তুমি আমাকে অ্যাভোয়েড করে একজন অপরিচিত রিকশাওয়ালার সাথে একা যেতে চাইছ!

বলে রংবাবু পকেট থেকে সিগারেটের প্যাকেট বের করল। প্যাকেট থেকে সিগারেট নিয়ে ঠোঁটে গুঁজে নাবিলার দিকে তাকিয়েছে। নাবিলা দাঁড়িয়ে আছে স্থির ভঙ্গিতে। তাকে শান্ত দেখাচ্ছে।
ইভান ভাবতে পারছে না এরপর কী হতে পারে? এখন তার কী করা উচিৎ! নিশ্চয় দরজা খুলে বাইরে গিয়ে লাত্থি দিয়ে নাবিলার সামনে থেকে রংবাবুর মোটরবাইক ফেলে দেওয়া উচিৎ। সেই সাহস ইভানের নেই। সে কল্পনায় এমনকিছু ভাবতে পারে কিন্তু বাস্তবে তারপক্ষে কিছু করা সম্ভব নয়।

রংবাবু নিজ শার্ট-প্যান্টের এ-পকেট ও-পকেট হাতড়াচ্ছে। সিগারেট জ্বালানোর জন্য তার কাছে লাইটার বা দেয়াশলাই থাকার কথা। সে খুঁজে পাচ্ছে না।

ইভানের চোখ হয়ে গেছে বড়ো বড়ো। নাবিলা পা থেকে স্যান্ডেল খুলে হাতে নিয়েছে। টুকুস করে স্যান্ডেলের হিল খুলে ফেলল। স্যান্ডেলের হিল খোলার ‘টুকুস’ আওয়াজ যেন ইভান এখান থেকে শুনতে পেয়েছে। হিলের ভেতর থেকে নাবিলা লাইটার বের করে সামনে হাত বাড়িয়ে ধরেছে। লাইটারের মাথায় আগুনের ছোট্ট শিখা তখন স্থিরভাবে জ¦লছে।

রংবাবুর অবস্থা হয়ে গেছে টর্নেডোতে দুমড়ানো-মুচড়ানো ঘরের টিনের চালের মতো। সে হতভম্ব চোখে নাবিলার দিকে তাকাল। সিগারেট এগিয়ে দিয়ে তাতে আগুন জ্বালিয়েছে। নাবিলা লাইটার নিভিয়ে আবার তার স্যান্ডেলের হিলের ভেতর রেখে দিয়ে টুকুস করে সেটা বন্ধ করে দিলো।

ভ্যাবাচেকা খাওয়া গলায় রংবাবু বলল, তুমি সাথে লাইটার রাখো, তাও আবার স্যান্ডেলের হিলের ভেতর!
স্যান্ডেল পায়ে ঢুকিয়ে স্বাভাবিক গলায় নাবিলা বলল, সাথে আরও কিছু রাখি। বাইক সরান। আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে।
রংবাবু তার মোটরবাইক ঘুরিয়ে রাস্তার একপাশে খাড়া করে রাখল। রাস্তায় স্যান্ডেলের হিলের শব্দ তুলে হেঁটে হেঁটে নাবিলা গেটের দিকে চলে গেল।

প্রবল জোরে ঝোড়ো বাতাস হচ্ছে। দেয়ালের পাশের সুপুরিগাছগুলো বাতাসের তোড়ে বেঁকে যাচ্ছে। মাতাল বৃষ্টি আশপাশ ঘিরে ফেলেছে। পরিষ্কারভাবে কিছু দেখা যাচ্ছে না। কোনোকিছুর অবয়বও বোঝা যাচ্ছে না।

মগভর্তি গরম কফি আর চানাচুর নিয়ে এসে ইভান বলল, বৃষ্টির ছাট আসছে। চলো ভেতরে গিয়ে বসি।

নাবিলা বারান্দা থেকে উঠে ঘরে এলো। ওপাশের ঘরে মামা-মামি থাকেন। এপাশের ঘরে ইভান। ঘরের সাথে ভেতরের দিকে আরেকটা বারান্দা আছে। বারান্দার সামনে গাছ। ইভান একা থাকলে গাছের সাথে কথা বলে। নাবিলা সরাসরি ইভানের ঘরে এসে তার বিছানায় বসেছে।

সন্ধ্যা পার হয়েছে কখন কেউ খেয়াল করেনি। ঝড় থেমেছে। বৃষ্টি থামেনি। মুষলধারে বৃষ্টি পড়ে যাচ্ছে। ঘর আলো করে নাবিলা বসে আছে। সে এমন অপূর্ব সুন্দর দেখতে ইভান আগে খেয়াল করেনি। মনে হচ্ছে মাখন দিয়ে তৈরি করা হয়েছে নাবিলাকে। আগুনের আলতো তাপে গলে যাবে।

বিদ্যুৎ চলে গেল। ঝড়বৃষ্টি হলে এই লাইনের ইলেকট্রিসিটি চলে যাবে এটা সাধারণ ঘটনা। ইলেকট্রিসিটি গেলে ঘণ্টাখানেকের ভেতর আসে না। ঝড়বৃষ্টির সময় আরও দেরি হয়। কোথাও ট্রান্সফরমার ব্লাস্ট করে কিংবা ঝড়ে বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে পড়ে- বিরাট হাঙ্গামা।

ঘুটঘুটে অন্ধকার হয়ে আছে। ঘরের ভেতরের বারান্দার দিকের দরজা খোলা। ঠাণ্ডা বাতাস আসছে। ঘরের ভেতর শীতল ভাব। ঘরে যখন আলো ছিল তখন এতটা শীতলতা বোঝা যায়নি। এখন বোঝা যাচ্ছে। রীতিমতো শীত লাগছে।
ইভান মোমবাতি জ্বালিয়ে এনেছে। বিল্ডিঙে জেনারেটর নেই। সরকারি কোয়ার্টারসে এসব থাকে না। বাসায় মামা আইপিএস, ইউপিএস কিচ্ছু রাখেননি। বলেন, অন্ধকারের আলাদা চেহারা আছে। সেই চেহারা মুগ্ধ হওয়ার মতো সুন্দর। গ্রামে দেখেছি। শহুরে জীবনে অন্ধকারের সেই চেহারা দেখা যায় না। যতটুকু সময় অন্ধকারে থাকা যায়, ভালো।

বেডসাইড টেবিলে মোমবাতি রাখা হয়েছে। দরজার দিকে পিঠ দিয়ে বসে আছে নাবিলা। বাতাস তাই মোমবাতির আলোকে এতটুকু নাড়াতে পারেনি। স্থির মোমবাতির আলো নাবিলার মুখে পড়েছে। তাকে দেখতে গ্রিক মিথলজির দেবীর মতো লাগছে। আফ্রোদিতি। প্রেম, আনন্দ, আবেগ আর সৌন্দর্যের দেবী।

নাবিলার দিকে তাকিয়ে বিছানার পাশে মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে আছে ইভান। মুখ তুলে তাকিয়েছে নাবিলা। স্নিগ্ধ মোমের আলোর মতো নরম গলায় বলল, ইভান ভাইয়া, একটা কথা জিগ্যেস করি?
করো।
আপনি প্রতিদিন বারান্দায় গিয়ে বসেন কেন?
তোমাকে দেখব বলে।
আমাকে কেন দেখেন?
এই প্রশ্নের উত্তর আমার জানা নেই, নাবিলা। তোমাকে দেখা ছাড়া আমার আর কিছু করার নেই।
শুধু দেখা!
ছুঁতে ইচ্ছে করে। তোমাকে ছুঁয়ে থাকতে ইচ্ছে করে সারাক্ষণ।

ইভানের কণ্ঠে আকুলতা ঝরে পড়ছে। নাবিলা চোখ নামিয়ে নিয়েছে। তার গালের দুপাশ রক্তের আভায় লাল হয়ে উঠেছে। ইভান এগিয়েছে। নাবিলা মাথা নিচু করে বসে আসে। জলে ডোবা দিঘল কালো চোখ নাবিলার। তার চুল থেকে মায়া ছড়ানো মাতাল সুবাস আসছে। যে গন্ধ কেবল টানে, আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ফেলে।

দুহাত বাড়িয়ে নাবিলার মুখ নিজের দুই করতলে নিয়ে এলো ইভান। পদ্ম পাপড়ির মতো নাবিলার নরম দুই ঠোঁটে টইটম্বুর জলে ভেজা ফোলা তুলতুলে ভাব। তাতে গোলাপী আভা। ঠোঁট দুটো হেমন্তের নারকেলের পাতার মতো তিরতির করে কাঁপছে। ইভান বুকের গভীরে শুদ্ধ বাতাস টেনে নিয়ে নাবিলার ঠোঁটে ঠোঁট ছোঁয়াল।

বৃষ্টির ছাট এসে মুখে লাগছে। চোখ বন্ধ করে বারান্দায় বসে আছে ইভান। কখন বৃষ্টি শুরু হয়েছে সে খেয়াল করেনি। বৃষ্টি খুব জোরে পড়ছে না। তবে বাতাস হচ্ছে জোরে। বাতাসের ঝাপটায় বৃষ্টির ছাট ছিটে এসে মুখে লাগছে। সামনের রাস্তা ফাঁকা। নাবিলা চলে গেছে। যতটা ঘন কালো মেঘ জমেছিল এখন ততটা অন্ধকার নেই। দিনের আলো যেন ফিরে এসেছে। বাতাসের সাথে ঝুরঝুর করে বৃষ্টি পড়ছে।

কফির মগ তুলে তাতে চুমুক দিলো ইভান। কফি ঠাণ্ডা হয়ে গেছে। ঠাণ্ডা কফি আরও বেশি তিতা লাগছে। কফিমগ হাতে ইভান উঠে পড়ল। সে বারান্দা থেকে রান্নাঘরে গিয়ে সিঙ্কে পুরো কফি ঢেলে দিয়ে পানির কল খুলে দিলো।

রাত কয়টা বাজে ইভান ঠাহর করতে পারছে না। ঘর অন্ধকার। তার হাতের কাছে ঘড়ি নেই। মোবাইলে সময় দেখা যায়। কাঁচাঘুম ভেঙে সেটা তার ভাবনায় আসেনি। ইভান বেডসাইডের টেবিল ল্যাম্প জ্বালাল।

বাইরের দরজায় বেল বাজছে। এত রাতে কে ডোর বেল বাজাবে ইভান বুঝতে পারছে না। রাতের খাবার খেয়ে অনেকক্ষণ হলো শুয়ে পড়েছে। সে যে ঘুমাচ্ছিল তা নিশ্চিত। কারণ ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখেছে। ছেঁড়াছেঁড়া স্বপ্ন। স্পষ্ট মনে পড়ছে না। জাহাজের ডেকে গাদাগাদি করে অনেক মানুষ। তারা কোথাও যাচ্ছে। একবার মনে হলো তারা শরণার্থী। তাদের চোখে আতঙ্ক। আবার মনে হলো তারা ঈদ করতে বাড়ি যাচ্ছে। সকলের মুখে আনন্দ।

দারোয়ান আসতে পারে। মাঝেমধ্যে আসে। তার কাছে আসে না। মামার কাছে আসে। মামা এখন বাড়ি নেই দারোয়ান জানে। সে আসবে না। একথা মনে হতেই ভয়ে ইভানের চোখমুখ শুকিয়ে গেল। নিশ্চিত রংবাবু এসেছে। বিভিন্নজনের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার অভ্যাস আছে তার। কোয়ার্টারসের মানুষজন জানে রংবাবু নেশা করে। হাতে টাকা না থাকলে সে টাকা চায়। না দিলে অপমান করে।

মামা বাসায় থাকে বলে রংবাবু এতদিন আসেনি। আজ মামা বাসায় নেই। সে এসেছে। জোরে জোরে বেল বাজছে। রংবাবু বেল বাজাচ্ছে অস্থিরভাবে। দরজা খুলতে দেরি হলে তাকে হয়তো মোটরবাইকের পেছনে বেঁধে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যাবে।

বাইরের বারান্দার আলো জ্বালিয়ে ইভান দরজা খুলে দিলো। দরজার পাশে দেয়ালে হাত ঠেকিয়ে মাথা ঝুঁকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে নাবিলা। তাকে ভীষণ ক্লান্ত দেখাচ্ছে।

নাবিলার বন্ধু সাইফের বার্থডে পার্টি ছিল। সন্ধ্যার পর কয়েকজন একসাথে হয়েছিল। ইরফান নিয়ে এসেছে জ্যাক ড্যানিয়েলসের বোতল। অ্যামেরিকান হুইস্কি।
এদিকওদিক তাকিয়ে নাবিলা বলল, ওয়াইন আনিসনি?
শান বলল, একটাই দিন, চিল কর, বেবি। বরফ আর পানি দিয়ে ঢক করে মেরে দিবি।
সাথে কী আছে?
ফ্রাইড চিকেন, ফিস ফ্রাই। আরও আসতেছে। সায়ন্তন গেছে আনতে। ফুল ডিনার।
তুই শুধু খাই-খাই করিস কেন বল তো?
এই কথা তুই আসক করতেছিস! খাওয়া ছাড়া আমাদের আর আছে কী বল? আমরা বকা খাই, মারা খাই, ধরা খাই, এমনকি চুমুও খাই- সবই খাই। মদও খাই, মাংসও খাই।
সাইফ বলল, আয়, আমরা শুরু করি। সায়ন্তন এসে যাবে।

শান গ্লাসে হুইস্কি ঢালল। তাতে পরিমাণ মতো হিমশীতল পানি মেশাল। বরফের টুকরো দিলো। ওরা হাতে মদের গ্লাস নিয়ে সাইফের মঙ্গল কামনা করে টোস্ট করল।
নাবিলা বেশি খাব না, খাব না করেও কয়েক পেগ খেয়েছে। সায়ন্তন খাবার আনার পর নতুন উদ্যোমে মদ খাওয়া শুরু হয়েছে। খাওয়ার পর নাবিলার মাথা ঝিমঝিম করছে, শরীর মুচড়াচ্ছে।

নাবিলা বাসায় ফিরল বেশ রাত করে। শান বলল, গেট বন্ধ। দারোয়ানকে ডেকে তুলব?
নাবিলা বলল, আরে ডাকিস না। দারোয়ান বুইঝা ফেলব। আব্বা ফিরলে আবার কী লাগায় কে জানে!
তাইলে বাসায় যাবি ক্যামনে?
সাইফ বলল, আমার সাথে যাবি? মাকে বলব, তোর বাবা-মা বাইরে গেছেন। বাড়িতে একা ভয় পাইতেছিলি।
নাবিলা বলল, আজাইরা কথা বলতেছিস ক্যান? আমি বাসায় যাব।
বাসায় যাবি কীভাবে?
দেয়াল টপকে।
বৃষ্টি থামেনি। ঝিরঝির করে বৃষ্টি পড়তেছে। দেয়াল ভেজা।

নাবিলা দেয়ালের কাছে এগিয়ে গিয়ে ভেজা সুপুরিগাছ চেপে ধরল। শান্ত গলায় বলল, নিচ থেকে আমারে ঠেলা দিয়ে ধরিস।

স্ট্রিট লাইট জ্বলে না। তাই এপাশে আলো নেই। আবছা অন্ধকারে ওড়না আটকে বিশেষ কায়দায় ভেজা সুপুরিগাছ জাপটে ধরে নাবিলা প্রাচীরে উঠে পড়ল। সাইফ বলল, বাসায় পৌঁছে ফোন করিস।

প্রাচীরের এপাশে কোয়ার্টারসের ভেতরেও সুপুরিগাছ। নাবিলা সেই সুপুরিগাছ বেয়ে সড়সড় করে নেমে পড়ল। রাস্তা আর প্রাচীরে মাঝের ঘাসে জমে থাকা বৃষ্টির পানিতে ঝপাৎ শব্দ তুলে নাবিলা নামল। তার কাছে বাসার চাবি আছে। এখন সে চাবি দিয়ে দরজা খুলে বাসায় ঢুকে পড়বে।

নাবিলা নেশার ঘোরে বাসার দরজা ভুল করল। চাবি দিয়ে দরজা খোলার কথা ভুলে গেল। অভ্যাসমতো ডোর বেল বাজাল। ঘুমে তার শরীর ভেঙে আসছে। দরজা খুলতে দেরি হচ্ছে দেখে জোরে জোরে বেল বাজাতে থাকল।

বারান্দার আলো জ্বলছে। ইভান দরজা খুলেছে নাবিলা খেয়াল করেনি। ছোটো ভাই অনন্য যেমন দরজা খুলে দেয় তার কাছে তাই মনে হয়েছে। ইভানকে পাশ কাটিয়ে নাবিলা ঘরে চলে গেল। সে গিয়ে ইভানের বিছানায় সটান শুয়ে পড়েছে।

এখানকার বিল্ডিঙের সব বাসার ডিজাইন একই রকম। নাবিলা নিশ্চয় তাদের বাসায় এই রুমে থাকে, যে রুমে এখানে ইভান থাকে।
ইভান কী করবে বুঝতে পারছে না। নাবিলাকে ডেকে বলা দরকার, আপনি ভুল করেছেন। এটা আপনাদের বাসা নয়। আপনাদের বাসা সামনেরটা।

তার আগে দেখা দরকার, এত রাতে নাবিলাকে এই বাসায় ঢুকতে কে কে দেখেছে। দারোয়ান ছাড়া অন্য কারও দেখার আশংকা নেই। বিল্ডিঙে কোনো বাড়িতে কেউ নেই। রংবাবু আছে। সে দেখলে ভয়ংকর ব্যাপার হবে। নাবিলা যদি গেট দিয়ে ঢুকে থাকে তাহলে দারোয়ানের দেখা কথা। গেটের ওপাশটা সুনসান। রংবাবু দেখলে এতক্ষণ চলে আসত। সে এখনো আসেনি। ইভানের সবকিছু তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে। বাইরের দরজা আটকাবে নাকি আটকাবে না, সেই সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না। বন্ধ বাসায় দুজন ছেলে-মেয়ে একসাথে থাকা আর খোলা বাসায় থাকার ভেতর পার্থক্য আছে ইভান জানে।

বাইরের দরজা খোলা রেখে ইভান নিজের ঘরে ঢুকল। ঘরে টেবিল ল্যাম্প জ্বলছে। নাবিলা ঘুমুচ্ছে। তাকে প্রশান্ত দেখাচ্ছে। মুখে কোনো ক্লান্তি নেই। যেন অনেক দিন ভালোমতো ঘুমুতে পারেনি। আজ আরাম করে ঘুমুচ্ছে। ঘুমন্ত মানুষকে অতি সুন্দর দেখায় এই সত্য ইভানের জানা ছিল না। নাবিলাকে নিষ্পাপ সরল দেখাচ্ছে।

ঘরের ভেতরের বারান্দার দিকের দরজা বন্ধ। জানালার একপাশ খোলা আছে। ওদিক দিয়ে ঠান্ডা বাতাস আসছে। নাবিলার শীত লাগছে মনে হয়। সে বাঁপাশে কাত হয়ে হাঁটু মুড়ে শুয়েছে। তার দুই হাত হাঁটুর ভাঁজের মাঝখানে।

ইভান জানালার পাল্লা টেনে বন্ধ করে দিলো। পর্দা টেনে দিয়েছে। মাঠের ল্যাম্পপোস্টে জ্বলে থাকা বাতি থেকে ত্যারচা আলো এসে ঘরে ঢুকছে। আলোতে নাবিলার ঘুমের ব্যাঘাত হতে পারে।
পায়ের কাছ থেকে চাদর টেনে নাবিলার গা ঢেকে দিলো। চাদর টেনে দিতে গিয়ে উবু হলো ইভান। গাঢ় নিশ্বাসের শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। অদ্ভুত বন্য গন্ধ আসছে নাবিলার শরীর থেকে। বৃষ্টির পর ঝোপজঙ্গলের ভেতর ঢুকলে এমন গন্ধ পাওয়া যায়। সেই গন্ধ হয় তীব্র। নাবিলার শরীর থেকে বুনো গন্ধ আসছে হালকা।

তুলতুলে শিশুর মতো মুখ। ছুঁয়ে দিলে যেন আগুনের আঁচে মোমের মতো গলে যাবে।

ঘর থেকে বেরিয়ে বারান্দার বাতি নিভিয়ে দিলো ইভান। পুরো বাড়ি এখন বিচ্ছিন্ন দ্বীপ। সেখানে শুধু ইভান আর নাবিলা আছে। ছিটকানি তুলে বাইরের দরজা বন্ধ করে দিয়ে ইভান নিজের ঘরে ফিরে এলো।

দু’পা টান করে বিছানায় চিত হয়ে শুয়ে আছে নাবিলা। তার মাথার অগোছালো চুল কপাল বেয়ে চোখের ওপর থেকে গালে এসে এলিয়ে আছে। ঘরে হালকা স্পিডে সিলিং ফ্যান চলছে। ফ্যানের বাতাসে নাবিলার গায়ের ওপরের চাদরে ঢেউ খেলে যাচ্ছে।

নাবিলার ঠোঁট জোড়া শুকিয়ে কাগজের মতো সাদা হয়ে আছে। আলতোভাবে আঙুল ছোঁয়ালে নিশ্চয় নিষ্প্রাণ ঠোঁটে প্রাণ ফিরে আসবে। নাবিলা বুঝি এখুনি চোখ মেখে তাকাবে। চোখ দেখে মনে হবে গভীর পানির ভেতর থেকে ভেসে উঠেছে একজোড়া আনন্দিত ডলফিন।

ইভান টেবিল ল্যাম্প নিভিয়ে দিলো। ঘর পুরোপুরি অন্ধকার হয়ে গেছে। গহিন কুয়ার তলদেশের মতো নিকষ জমাট অন্ধকার।

ঘর থেকে বের হয়ে এলো ইভান। শব্দ না করে ঘরের দরজার পাল্লা দুটো ভিড়িয়ে দিলো। ড্রয়িংরুমে গিয়ে মাথার নিচে কুশন নিয়ে সোফায় শুয়ে ঘুমিয়ে পড়ল।

ঘুমের ভেতর ইভান স্বপ্ন দেখল, সে জাহাজে চড়ে সমুদ্রের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে। সমুদ্রের পানি শান্ত এবং নীল। জাহাজে ইভান ছাড়া আর কেউ নেই। সে যাচ্ছে একা। কোথায় যাচ্ছে জানে না। নীল আকাশে সাদা মেঘ ভেসে যাচ্ছে। থেকে থেকে গাঙচিল উড়ে আসছে। তারা ডানা মেলে উড়ে যাচ্ছে গভীর সমুদ্রের দিকে।

চোখ খুলে ইভান দেখল নাবিলা দাঁড়িয়ে আছে। নাবিলার ডাকে ঘুম ভেঙেছে কিনা বুঝতে পারছে না। হয়তো নাবিলা তাকে ডাকেনি। কিংবা ডেকেছিল। সকাল হয়ে গেছে। ভোর-ভোর সকাল। নাবিলা তার দিকে নরম দৃষ্টি মেলে তাকিয়ে আছে। বেশ ভালো ঘুমের পর মানুষকে যেমন সতেজ তরতাজা দেখায় নাবিলাকে তেমন দেখাচ্ছে।

ইভান উঠে বসল। তার চোখে ঘুম জড়িয়ে আছে। নাবিলা বলল, আপনার বিছানা বেশ আরামদায়ক। ঘুমিয়ে শান্তি পেয়েছি।

এখনো ইভান বুঝে উঠতে পারেনি সে নতুন কোনো স্বপ্ন দেখছে কিনা। দুহাত আঁড়াআঁড়ি বুকে মুড়ে একপাশে মাথা কাত করে নাবিলা বলল, ইচ্ছে কোরে যে আসিনি, তা বুঝেছেন নিশ্চয়?
ইভান উঠে দাঁড়িয়েছে। সে চোখ ডলে বোকা-বোকা চেহারা নিয়ে বলল, চা খাবেন? পানি চুলায় দিই?

হেসে ফেলেছে নাবিলা। তাকে আরও সুন্দর দেখাচ্ছে। হাসতে হাসতে বলল, বাসায় গিয়ে শাওয়ার নেব। নাস্তা বানিয়ে আপনাকে ডাকছি। আপনি কিন্তু আগেই নাস্তা করে ফেলবেন না। একসাথে নাস্তা করব।

ড্রয়িংরুম থেকে বের হয়ে বারান্দা দিয়ে হেঁটে নাবিলা চলে যাচ্ছে। সারারাত থেমে থেমে বৃষ্টি হয়েছে। এখন বৃষ্টি নেই। পুুরোপুরি থেমে গেছে। সুপুরিগাছের পাতাগুলো বৃষ্টিতে ভিজে ভোরের আলোয় ঝকঝক করছে।

নাবিলা দরজা খুলে বের হয়ে গেল। ইভান গিয়ে দরজার দুপাশের খোলা কপাটে হাত দিয়ে দাঁড়িয়েছে। চাবি ঘুরিয়ে দরজা খুলছে নাবিলা। দরজা খুলে সে বাসার ভেতরে ঢুকে পড়ল। বাসায় ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিয়েছে। ইভান কপাট দুটো টেনে দরজা বন্ধ করে দিলো।

কিছু না ভেবেই ইভান দরজার দুই কপাট খুলে দুপাশে মেলে ধরল। একই সময়ে নাবিলা দরজা খুলেছে। তার চোখ ইভানের চোখে। তখুনি নাবিলা নরম ঠোঁটে মিষ্টি হাসি মাখিয়ে চোখ নামিয়ে নিল। সেই চোখে জড়ানো খুশি আর লজ্জা।

Header Ad

যুক্তরাষ্ট্রকে ১৫৪ রানের টার্গেট দিল বাংলাদেশ

ছবি: সংগৃহীত

আবারও ব্যর্থ বাংলাদেশের টপ অর্ডার। এক হৃদয় ছাড়া ভালো করতে পারেননি আর কোনো টপ অর্ডার ব্যাটার। হৃদয়ের ফিফটিতে যুক্তরাষ্ট্রে বিপক্ষে মাঝারি পুঁজি পেয়েছে বাংলাদেশ। তিন ম্যাচ টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম ম্যাচে স্বাগতিকদের ১৫৪ রানের টার্গেট দিয়েছে টাইগাররা।

মঙ্গলবার (২১ মে) হিউস্টনের প্রেইরি ভিউ ক্রিকেট কমপ্লেক্সে সিরিজের প্রথম ম্যাচে টস জিতে বাংলাদেশকে ব্যাটিংয়ে পাঠায় যুক্তরাষ্ট্র। টস হেরে ব্যাট করতে নেমে ভালো শুরুর আভাস দেন দুই ওপেনার সৌম্য সরকার ও লিটন দাস।

তবে এরপরই খেই হারায় সৌম্য-লিটন। দলীয় ৩৪ রানে সাজঘরে ফিরে যান তারা। এখানেও ব্যর্থ লিটন। ১৫ বলে ১৪ রান করে আউট হন তিনি। লিটনের বিদায়ের পর পরই ১৩ বলে ২০ রান করে সাজঘরে ফিরে যান সৌম্য।

এই দুই ওপেনারের বিদায়ের পর ক্রিজে আসেন অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত ও তাওহিদ হৃদয়। তবে সুবিধা করতে পারেননি শান্ত। দলীয় ৫১ রানে ১১ বলে ৩ রান করে আউট হন এই টাইগার অধিনায়ক।

শান্তর বিদায়ের পর ক্রিজে আসা সাকিব আল হাসানকে সঙ্গে নিয়ে শুরুর ধাক্কা সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেন হৃদয়। তবে দলীয় ৬৮ রানে ভুল বোঝাবুঝিতে রান আউটের শিকার হন সাকিব।

১২ বলে ৬ রান করে আউট হন সাকিব। তার বিদায়ের পর ক্রিজে আসা মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে সঙ্গে আগ্রাসী ব্যাটিং করতে থাকেন হৃদয়। তাকে যোগ্য সঙ্গ দেন মাহমুদউল্লাহ।

৪০ বলে ফিফটি করেন হৃদয়। মাহমুদউল্লাহকে নিয়ে ৬৭ রানের জুটি গড়েন হৃদয়। তবে দলীয় ১৩৫ রানে ২২ বলে ৩১ রানে করে আউট হন মাহমুদউল্লাহ। ইনিংসের শেষ বলে আউট হন হৃদয়। ৪৭ বলে ৫৮ রান করেন তিনি। শেষ পর্যন্ত ২০ ওভার শেষে ৬ উইকেট হারিয়ে ১৫৩ রান সংগ্রহ করে বাংলাদেশ। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে স্টিভেন টেইলর নেন ২টি উইকেট।

ইতালিতে যেতে ইচ্ছুকদের জন্য সুখবর!

ছবি: সংগৃহীত

প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী জানিয়েছেন, ইতালি আগামীতে ৭ লাখ কর্মী নিতে পারে এবং বৈধভাবে দেশটিতে দক্ষ জনবল প্রেরণ করা হবে। এ বিষয়ে দুই দেশ যৌথ উদ্যোগে কাজ করবে।

মঙ্গলবার (২১ মে) মন্ত্রণালয়ে ঢাকায় নিযুক্ত ইতালির রাষ্ট্রদূত অ্যান্তোনিও আলেসান্দ্রোর সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে তিনি সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।

কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী জানান, দুই দেশের মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক আরো জোরদার হবে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে বাংলাদেশ তার জনবলকে চাহিদা অনুযায়ী উপযুক্ত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ মানবসম্পদে রূপান্তরের লক্ষ্যে কাজ করছে।

তিনি বলেন, প্রবাসী কর্মীরা যাতে হয়রানির শিকার না হয় সে বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। ইতালি দক্ষ জনবলের চাহিদাপত্র দেবে, সেই পত্রের বিপরীতে কম খরচে কর্মী প্রেরণ করা হবে। ইতালি সরকার চাইলে আমাদের টিটিসিগুলোতে তাদের চাহিদা মতো জনবল প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে পারে।

তবে ইতালি কত বছরে কোন কোন খাতে কর্মী নেবে সে বিষয়ে সুস্পষ্ট কিছু জানাননি মন্ত্রী।

ঢাকায় নিযুক্ত ইতালি রাষ্ট্রদূত অ্যান্তোনিও আলেসান্দ্রো জানান, ‌‘ইতালি ও বাংলাদেশের রয়েছে ঐতিহাসিক সম্পর্ক। সেজন্য ইতালিতে বাংলাদেশের দক্ষ জনবলের কাজের সুযোগ তৈরি করতে আগ্রহী। ইউরোপে বৈধভাবে অনেক বাংলাদেশি যাচ্ছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে অবৈধভাবে যাওয়ার প্রবণতা বাড়ছে। বৈধ পথে কীভাবে মাইগ্রেশন করা যায় সে বিষয়ে আলাপ-আলোচনা হয়েছে। দক্ষ জনশক্তিকে ভিসা দিতে আমরাও আগ্রহী কিন্তু কখনো কখনো ভুয়া কাগজপত্র দিয়ে আবেদন করা হয়। ফলে ভিসা দেওয়া সম্ভব হয় না।’

ইতালি যেতে দালালদের অর্থ না দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন অ্যান্তোনিও আলেসান্দ্রো।

তিনি বলেন, ‘দালালেরা আবেদনকারীদের কাছ থেকে বেশি অর্থ নেয়, যা কখনো কাম্য নয়। দ্রুত ভিসা দিতে আমরা বেশ কিছু বাস্তবভিত্তিক পদক্ষেপ নিচ্ছি। তাই সবাইকে আহ্বান জানাই দালালদের অর্থ দেবেন না।’

২৫০ জনের টিম নিয়ে হজে যাচ্ছেন অনন্ত জলিল

ছবি: সংগৃহীত

হাতে একাধিক বিগ বাজেটের সিনেমার কাজ অনন্ত জলিলের। ‘অপারেশন জ্যাকপট’ সিনেমার কিছু অংশের শুট করলেও বাকি অংশের শুটিং ঈদের পর ইউরোপে হবার কথা। এরপর শুরু করবেন ‘চিতা’ সিনেমার কাজ। এরমধ্যেই খবর, পবিত্র হজ পালনে যাচ্ছেন ঢাকাই সিনেমার আলোচিত এ তারকা। বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন অনন্ত জলিল নিজেই।

সব ঠিক থাকলে আগামী সপ্তাহের মধ্যেই ২৫০ জনের টিম নিয়ে মক্কার উদ্দেশে রওনা হবেন এ তারকা। অনন্ত জলিল বলেন, ‘আমরা বড় একটা টিম যাচ্ছি হজে। ২৫০ জনের একটা টিম। সঙ্গে অনেক হাজি যাচ্ছেন। জানি না কার দোয়া কবুল হবে! তাই হাজিদের সঙ্গে যাওয়াই ভালো।’

 

ছবি: সংগৃহীত

গত বছর শেষদিকে সপরিবারে ওমরাহ পালন করেন অনন্ত জলিল। সেসময় এক ফেসবুক পোস্টে বর্ষা লিখেছিলেন, ‘আলহামদুল্লিলাহ, অবশেষে আসতে পারলাম। ঘুরে দেখলাম মদিনা। মুগ্ধ হয়ে গেলাম সবকিছু দেখে, সুবহানল্লাহ। সবাই দোয়া করবেন, আমার সন্তানদের জন্য।’

এদিকে, বর্তমানে অনন্ত-বর্ষা দু’জনেই ব্যস্ত আছেন ব্যবসায়িক কাজে। গত ৩০ মার্চ রাজধানীর নিউমার্কেটে ‘এজে ভাই’ নামে একটি শোরুম উদ্বোধন করেছেন অনন্ত। আর বর্ষাও চলতি মাসে নতুন ব্যবসা করার ঘোষণা দিয়েছেন।

সর্বশেষ সংবাদ

যুক্তরাষ্ট্রকে ১৫৪ রানের টার্গেট দিল বাংলাদেশ
ইতালিতে যেতে ইচ্ছুকদের জন্য সুখবর!
২৫০ জনের টিম নিয়ে হজে যাচ্ছেন অনন্ত জলিল
রোনালদোকে নিয়েই পর্তুগালের শক্তিশালী দল ঘোষণা
মা হারালেন ভিডিও নির্মাতা নাদির নিবরাস
সাগরে লঘুচাপের আভাস, রূপ নিতে পারে ঘূর্ণিঝড়ে
ঢাবিতে গোলাম মাওলা রনির গাড়িতে হামলা
যুদ্ধবিমানের বহর নিয়ে ইরান যাচ্ছেন পুতিন
আজিজ আহমেদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা নিয়ে নতুন তথ্য দিলেন ওবায়দুল কাদের
বিরামপুরে ধান-চাল-সংগ্রহ কার্যক্রমের উদ্বোধন করলেন সংসদ সদস্য শিবলী সাদিক
আখাউড়ায় ব্যালট বাক্স ছিনতাই, পুকুর থেকে উদ্ধার
১ কোটি ১০ লাখ লিটার সয়াবিন তেল কিনবে সরকার
জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে রাইসির স্মরণে এক মিনিট নীরবতা, ক্ষুব্ধ ইসরায়েল
উপজেলা নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপের ভোটগ্রহণ শেষ, চলছে গণনা
নিষেধাজ্ঞায় তাদের অপকর্ম থামেনি: ফখরুল
দেশে মাথাপিছু আয় বেড়ে ২ হাজার ৭৮৪ মার্কিন ডলার
আজ চা প্রেমীদের দিন
সাবেক সেনাপ্রধানের ওপর নিষেধাজ্ঞা নিয়ে যা বললেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
কেন্দ্র দখল ও ভোটে কারচুপি ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে: নৌপ্রতিমন্ত্রী
তাবরিজে রাইসির শেষ বিদায়ে হাজারও মানুষের ঢল