রেলকর্তাদের ভুলের মাশুলে রেলের ক্ষতি চার হাজার কোটি টাকা

১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০১:০৪ পিএম | আপডেট: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৬:১৪ পিএম


রেলকর্তাদের ভুলের মাশুলে রেলের ক্ষতি চার হাজার কোটি টাকা

কুমিল্লার লাকসাম-চিনকি আস্তানা সেকশনে ব্রিটিশ আমলের রেললাইনের সমান্তরালে নির্মাণ করা ৬১ কিলোমিটার মিটারগেজ পথটি ২০১৫ সালের ১৮ এপ্রিল চালু হয়। ১ হাজার ৮১৯ কোটি টাকায় নির্মিত এ রেলপথের মাধ্যমে সেকশনটি উন্নীত হয় ডাবল লাইনে। আয়ুষ্কাল না ফুরালেও রেললাইনটি তুলে ফেলতে হবে। কারণ আট বছর না যেতেই ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার করিডোরের উন্নয়নে এই সেকশনসহ লাকসাম-পাহাড়তলী রেলপথকে ডুয়েলগেজ ডাবল লাইনে রূপান্তরে ১৫ হাজার ৯৫৪ কোটি টাকার প্রকল্প নিতে যাচ্ছে রেলওয়ে।

শুধু লাকসাম-চিনকি আস্তানা নয়, অদূরদর্শী পরিকল্পনার কারণে ২ হাজার ২১৬ কোটি টাকায় নির্মিত ৬৪ কিলোমিটার দীর্ঘ গাজীপুরের টঙ্গী-কিশোরগঞ্জের ভৈরব বাজার মিটারগেজ লাইনটিও তুলে ফেলতে হবে। শতবর্ষী রেলপথের সমান্তরালে রেলপথটি চালু হয় ২০১৬ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি। এই সেকশনসহ টঙ্গী-আখাউড়া রেলপথকে ডুয়েলগেজে রূপান্তরে ১৪ হাজার ৫৮৭ কোটি টাকা খরচ ধরে আরেকটি প্রকল্পের প্রস্তাব রয়েছে।

ডুয়েলগেজে রূপান্তরের দুই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে মাত্র কয়েক বছর আগে চালু হওয়া ৪ হাজার ৩৬ কোটি টাকায় নির্মিত ১২৫ কিলোমিটার মিটারগেজ বাতিল হবে। অথচ রেললাইনের আয়ুষ্কাল ৩০ বছর। জমি অধিগ্রহণের মতো জটিল ধাপ না থাকায় এবং সম্ভাব্যতা যাচাই সমীক্ষা হয়ে যাওয়ায়, সরকারের অনুমোদন, অর্থায়ন এবং ঠিকাদার নিয়োগের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে, কাজ শুরু হতে অন্তত তিন বছর লাগবে। তখনও মিটারগেজ রেললাইন দুটির আয়ুষ্কালের বড় অংশ অবশিষ্ট থাকবে। অথচ দেশে আয়ুষ্কাল ফুরানো বহু রেললাইনে ট্রেন চলছে ঝুঁকি নিয়ে।

এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) ঋণে ২০০৬ সালে অনুমোদিত টঙ্গী-ভৈরববাজার সেকশনে মিটারগেজ রেললাইন নির্মাণের কাজ ২০১১ সালে শুরু হয়ে ২০১৮ সালের জুনে শেষ হয়। এতে এডিবি ২০ বছর মেয়াদে ঋণ দিয়েছে ১ হাজার ৮১৬ কোটি টাকা। ঋণ শোধের আগেই লাইনটি তুলে ডুয়েলগেজ নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়েছে রেলওয়ে। জাপানের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থার (জাইকা) ঋণে লাকসাম-চিনকি আস্তানা সেকশনে নতুন মিটারগেজ রেলপথ নির্মাণ প্রকল্প শুরু হয় ২০০৮ সালের জুলাইয়ে। ২০১৮ সালের অক্টোবরে প্রকল্পটি আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হয়। এতে জাইকার ঋণ ৫২৭ কোটি টাকা। এ প্রকল্পে এখনও ঋণ শোধ হয়নি।

ডুয়েলগেজ লাগবে জেনেও মিটারগেজ বানিয়ে গচ্চা

২০১৪ সালের অক্টোবরে রেলওয়ে সিদ্ধান্ত নেয়, সব রেললাইন পর্যায়ক্রমে ডুয়েলগেজে রূপান্তর হবে। ২০১৬ সাল থেকে ৩০ বছরে বাস্তবায়নের জন্য যে মহাপরিকল্পনা করেছে সংস্থাটি, তাতেও বলা হয়েছে দেশের প্রধান রেলপথগুলো ডাবল লাইনে উন্নীত করা হবে। এ যুক্তিতেই ৪ হাজার কোটি টাকার ১২৫ কিলোমিটার রেললাইন তুলে ফেলে সেখানে ডুয়েলগেজ নির্মাণের প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে। আরেকটি যুক্তি হচ্ছে, বহুজাতিক ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ে নেটওয়ার্কে যুক্ত হতে দেশীয় রেলপথ ডুয়েলগেজে রূপান্তর করতে হবে। ২০১৫ সালে প্রকাশিত রেলওয়ে ইনফরমেশন বুক অনুযায়ী, ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ে নেটওয়ার্কে যুক্ত হতে ২০তম দেশ হিসেবে ২০০৭ সালের ৯ নভেম্বর চুক্তিতে সই করে বাংলাদেশ।

গণপরিবহন বিশেষজ্ঞ বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক হাদীউজ্জামান বলেন, চুক্তির তারিখ বলছে, রেলওয়ে ২০০৭ থেকে জানত ভবিষ্যতে ব্রডগেজ ও ডুয়েলগেজ লাগবে; মিটারগেজে চলবে না। লাকসাম-চিনকি আস্তনা এবং টঙ্গী-ভৈরববাজার সেকশনে নতুন মিটারগেজ নির্মাণ শুরু হয়েছে চুক্তি সইয়ের পর। দূরদর্শিতা দেখিয়ে ডুয়েলগেজ নির্মাণ করলে ৪ হাজার কোটি টাকা গচ্চা যেত না। সমস্যা হলো, সরকারি সংস্থাগুলো প্রকল্প বাস্তবায়নে যতটা আগ্রহী থাকে, ভবিষ্যৎ ভাবনা নিয়ে ততটা থাকে না।

মিটারগেজ, ব্রডগেজ ও ডুয়েলগেজ লাইনের তফাৎ কী

বাংলাদেশের রেলপথ দুই ধরনের– মিটারগেজ আর ব্রডগেজ। মিটারগেজ এক মিটার তথা ৩৯ দশমিক ৩৭ ইঞ্চি প্রশস্ত। ব্রডগেজ ৬৫ দশমিক ৯৮ ইঞ্চি প্রশস্ত। ডুয়েলগেজে তিনটি রেল (রেলের পাত বা ট্র্যাক) থাকে, যাতে মিটারগেজ ও ব্রডগেজ– উভয় ট্রেন চলতে পারে। রেলের পূর্বাঞ্চলে তথা ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট ও ময়মনসিংহ এলাকায় মিটারগেজ ট্রেন চলে। পশ্চিমাঞ্চল তথা রংপুর, রাজশাহী, খুলনায় চলে ব্রডগেজ। ১৮৮৫ সালে রেল যোগাযোগ শুরুর পর এই নিয়মেই চলছিল। যমুনায় বঙ্গবন্ধু সেতুতে ব্রডগেজ লাইন নির্মাণের পর ২০০৩ সালের ১৪ আগস্ট পশ্চিমাঞ্চল থেকে ঢাকায় ব্রডগেজ ট্রেন আসে। গত এক দশকে রেলওয়ে যত প্রকল্প নিয়েছে, সবই ডুয়েল আর ব্রডগেজ। ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার পথের আখাউড়া-লাকসাম সেকশনে ৭২ কিলোমিটার ডুয়েলগেজ ডাবল লাইন গত জুলাইয়ে চালু হয়। উদ্বোধনের অপেক্ষায় থাকা চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০০ দশমিক ৮৩ কিলোমিটার ডুয়েলগেজ সিঙ্গেল লাইন প্রায় সাড়ে ১৫ হাজার কোটি টাকায় নির্মাণ করা হয়েছে।

৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি টাকায় নির্মাণাধীন ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে যশোর পর্যন্ত ১৭২ কিলোমিটার রেলপথ ব্রডগেজের। উদ্বোধনের অপেক্ষায় থাকা খুলনা-মোংলা রেলপথ ব্রডগেজ। এসব লাইনে শুধু ব্রডগেজ ট্রেন চলবে।

ঢাকা-কক্সবাজার পথের উন্নয়নে ৯৫ হাজার কোটি টাকা

রেলের উন্নয়নে গত ১৪ বছরে সরকারের খরচ ১ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে প্রায় ৮৭ হাজার কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে নতুন রেলপথ নির্মাণ, বগি ও ইঞ্জিন কেনায়। প্রায় ৩৫ হাজার কোটি টাকা পরিচালন খরচের বিপরীতে রেল আয় করেছে প্রায় ১৬ হাজার কোটি টাকা। উন্নয়নে করা বিনিয়োগ উঠে আসা দূরে থাক, রেল চালিয়ে লোকসান হয়েছে প্রায় ১৯ হাজার কোটি টাকা।

সক্ষমতা বাড়িয়ে আয় বাড়াতে ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটের উন্নয়নে ২০১৫ সালের জুলাই থেকে পাঁচ বছরে এডিবির ঋণে ২১২ কোটি কারিগরি সহায়তা প্রকল্পের আওতায় সম্ভাব্যতা যাচাই সমীক্ষা করা হয়। ২১০ কোটি টাকা খরচ হয় পরামর্শকদের বেতন-ভাতা, আয়কর ও ভ্যাট বাবদ। ৮৬৫ কোটি ডলার তথা ৯৫ হাজার কোটি টাকায় (প্রতি ডলার ১১০ টাকা দরে) সাতটি প্রকল্পের সুপারিশ করা হয়। এতে প্রায় ৬৩০ কোটি ডলার বৈদেশিক ঋণ পাওয়া যাবে বলে প্রাক্কলন করা হয়েছে। বাকি ২৬ হাজার কোটি সরকারকে বিনিয়োগ করতে হবে।

৪ হাজার কোটি গচ্চা দিয়ে সাড়ে ৩০ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প

সুপারিশ করা সাত প্রকল্পের দুটি হলো– লাকসাম-চিনকি আস্তানা-পাহাড়তলী এবং টঙ্গী-ভৈরববাজার-আখাউড়া রেলপথকে ডুয়েলগেজ ডাবল লাইনে রূপান্তর। ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের ৩২০ কিলোমিটারই এখন ডাবল লাইনের। ১৯৭ কিলোমিটার রেলপথ গত আট বছরে ডাবল লাইনে উন্নীত হয়েছে। বাকি ১২৩ কিলোমিটার আগে থেকেই ডাবল লাইনের ছিল।

লাকসাম-চিনকি আস্তানা-পাহাড়তলী সেকশনের ৬১ কিলোমিটারে আট বছর আগে নতুন মিটারগেজ লাইন নির্মাণ করে ডাবল লাইনে উন্নীত করা হয়। বাকি ৬৭ দশমিক ৮৪ কিলোমিটারসহ মোট ১২৮ দশমিক ৮৪ কিলোমিটার রেললাইন ডুয়েলগেজ ডাবল লাইনে রূপান্তর, চট্টগ্রাম স্টেশন ইয়ার্ড এবং এসআরভি ইয়ার্ড নির্মাণ প্রকল্পের ডিপিপির ওপর ৪ সেপ্টেম্বর রেলওয়ে মহাপরিচালকের সভাপতিত্বে বিশেষজ্ঞ কমিটির সভা হয়।

সভার নথি অনুযায়ী, আগামী অর্থবছরের এডিপিতে প্রকল্পটির অন্তর্ভুক্তি চায় রেলওয়ে। এক বছর ডিফেক্ট লায়াবিলিটি পিরিয়ডসহ আগামী বছরের জানুয়ারি থেকে ২০২৯ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়নে পরিকল্পনা রয়েছে ডিপিপিতে। প্রাক্কলিত ব্যয় ১৫ হাজার ৯৫৪ কোটি টাকার মধ্যে এডিবির কাছ থেকে ১৩ হাজার ৪৪৯ কোটি টাকা ঋণ পাওয়া যাবে বলে ধরা হয়েছে। আগেরবার ঋণ দিয়েছিল জাইকা।

পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো তালিকায় রয়েছে ৯৭ দশমিক শূন্য ১ কিলোমিটার দীর্ঘ টঙ্গী-ভৈরববাজার-আখাউড়া সেকশনকে ডুয়েলগেজ ডাবল লাইনে রূপান্তরের প্রকল্প। ১৪ হাজার ৫৮৭ কোটি টাকা ব্যয় প্রাক্কলন করা এই প্রকল্পে ভারত ১২ হাজার ৩৪১ কোটি টাকা ঋণ দেবে বলে ধরা হয়েছে। ২০২৭ সালের জুনে কাজ সম্পন্নের লক্ষ্যে প্রকল্পটির পিডিপিপি নীতিগত অনুমোদন দিয়েছেন পরিকল্পনামন্ত্রী। ডিপিপি প্রণয়ন চলছে। আগামী বছরের এডিপিতে প্রকল্পটির অন্তর্ভুক্তি চায় রেলওয়ে।

আয়ুষ্কাল না ফুরালেও তুলে ফেলতে হবে রেললাইন

ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার পথের উন্নয়নের কারিগরি সহায়তা প্রকল্পের পরিচালক ছিলেন রেলওয়ের চট্টগ্রাম বিভাগীয় ব্যবস্থাপক (ডিআরএম) আবিদুর রহমান। তিনি জানান, নতুন মিটারগেজ রেলপথের আয়ুষ্কাল কমবেশি ৩০ বছর। রেলের প্রকৌশলীরা জানিয়েছেন, মিটারগেজ ও ডুয়েলগেজের স্লিপার এবং রেল ভিন্ন। মিটারগেজে স্লিপারের দৈর্ঘ্য ৬৫ ইঞ্চি। ডুয়েলগেজে তা ৮৪ ইঞ্চি। পুরুত্ব এবং প্রশস্ততায় ভিন্নতা রয়েছে। মিটারগেজে ৭৫ থেকে ৯০ পাউন্ডের (প্রতি মিটার ৩১ থেকে ৪১ কেজি) রেল ব্যবহার করা হয়। ডুয়েলগেজে ব্যবহৃত হয় ৬০ কেজির রেল। মিটারগেজের স্লিপার এবং রেলে ভারী ব্রডগেজ ট্রেন চলতে পারবে না। টঙ্গী-ভৈরববাজার এবং লাকসাম-চিনকি আস্তানা সেকশন ডুয়েলগেজে রূপান্তরে ফেলে দিতে হবে বিদ্যমান রেলপথের স্লিপার ও রেল। মিটারগেজ নির্মাণ থেকে সরে আসায় তা অন্য লাইনে কাজে লাগানোর সুযোগও সীমিত।

বুয়েট অধ্যাপক হাদীউজ্জামান বলেন, মিটারগেজ ও ডুয়েলগেজের এমব্যাংকমেন্ট (যে বাঁধে রেললাইন তৈরি করা হয়) ভিন্ন। ডুয়েলগেজে রূপান্তরে নতুন এমব্যাংকমেন্ট তৈরি করতে হবে। নতুন মিটারগেজ লাইন নির্মাণের সময় ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা মাথায় রেখে এমব্যাংকমেন্ট তৈরি এবং স্লিপার বসানো হলে একটি রেল স্থাপনের মাধ্যমে ডুয়েলগেজে রূপান্তর করা যেত।

চট্টগ্রাম বিভাগীয় ব্যবস্থাপক (ডিআরএম) আবিদুর রহমান বলেন, এমব্যাংকমেন্ট তৈরি করতে হবে না। ডাউন লাইনের জন্য এক দশক আগে তৈরি এমব্যাংকমেন্ট সংস্কার করে তাতে ডুয়েলগেজ করা যাবে। তবে ব্রিটিশ আমলে তৈরি আপলাইনের এমব্যাংকমেন্ট কাজে আসবে না। ডুয়েলগেজ নির্মাণে তা নতুন তৈরি করতে হবে। রেলওয়ের মহাপরিচালক কামরুল আহসান সমকালকে বলেন, প্রকল্প প্রস্তুতি পর্যায়ে রয়েছে। ২০১৫ ও ২০১৬ সালে চালু করা মিটারগেজ লাইনগুলোর কী হবে– এ প্রশ্নে তিনি বলেন, ডুয়েলগেজে রূপান্তরের সময় তা তুলে ফেলতে হবে। টঙ্গী-আখাউড়া ও লাকসাম-পাহাড়তলী ডুয়েলগেজ প্রকল্প যুগপৎভাবে চলবে। ফলে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত ব্রডগেজ ট্রেন নিতে বাধা হবে না। তথ্যসূত্র: সমকাল


বিভাগ : জাতীয়

বিষয় : রেলওয়ে



এবার কন্যাসন্তানের বাবা হতে চান লিওনেল মেসি

২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৬:৩৭ পিএম | আপডেট: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৯:২৪ পিএম


এবার কন্যাসন্তানের বাবা হতে চান লিওনেল মেসি

ফুটবল ক্যারিয়ারের সম্ভাব্য সব শিরোপাই জিতেছেন লিওনেল মেসি। যে শিরোপা নিয়ে তার সবচেয়ে বেশি আক্ষেপ ছিল সেটাও গত বছর কাতারে বিশ্বকাপ জয়ের মাধ্যমে পূর্ণ করেছেন। তাই ফুটবল থেকে আর চাওয়ার কিছু নেই রেকর্ড সাতবারের ব্যালন ডি’অরজয়ী আর্জেন্টাইন মহাতারকার। বিশ্বকাপ জয়ের পর এমন কথা বেশ কয়েকবার বলেছেন তিনি। এবার নিজের এক সুপ্ত বাসনার কথা প্রকাশ করেছেন এলএমটেন।


সম্প্রতি আর্জেন্টাইনভিত্তিক ‘ওলগা’ নামক এক ইউটিউব চ্যানেলকে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন মেসি। সেখানে কন্যাসন্তানের বাবা হওয়ার মনোবাসনার কথা জানিয়েছেন ইন্টার মায়ামি তারকা। আর এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছে দেশটির খেলাধুলাবিষয়ক গণমাধ্যম টিওয়াইসি স্পোর্টস।


স্ত্রী আন্তোনেল্লা রোকুজ্জোর সঙ্গে মেসির সম্পর্কের শুরু বাল্যকালেই। দীর্ঘদিন ধরেই সংসার করলেও ২০১৭ সালে বিয়ের পিড়িতে বসেন তারা। লিওনেল মেসি ও স্ত্রী আন্তোনেল্লা রোকুজ্জোর   তিন পুত্র- থিয়াগো, মাতেও এবং চিরো। এবার চতুর্থ সন্তান নেয়ার পরিকল্পনা করছেন মেসি ও আন্তোনেল্লা রোকুজ্জো দম্পতি। আর্জেন্টাইন সুপারস্টার মেসি এবার কন্যা সন্তানের প্রত্যাশা করছে। 


ইএসপিএনের সংবাদকর্মী ও বিখ্যাত স্ট্রিমার মিগু গ্রানাদোসকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘আমরা আরেকটি বাচ্চা নিতে চাই। আমরা সে চেষ্টাটা এখনো শুরু করিনি। তবে আশায় আছি, সেটি কন্যা সন্তান হবে।’


১৯৮৭ সালের ২৪শে জুন হোর্হে মেসি এবং সেলিয়া মারিয়া দম্পতির ঘর আলোকিত করে জন্ম নেন লিওনেল মেসি। আর্জেন্টাইন সুপারস্টার জানালেন, শৈশবে মা-বাবার থেকে প্রাপ্ত মূল্যবোধ নিজের সন্তানদের ওপরও প্রয়োগ করেন তিনি।
মেসি বলেন, ‘ছোটবেলায় আমাকে যা যা শেখানো হয়েছে, সেসব মূল্যবোধ আমি নিজের সন্তানদের মধ্যে প্রয়োগ করার চেষ্টা করি। আমি একজন ভালো বাবা। কারণ আমার মা-বাবা ভালো ছিলেন। আর আামি কোথায় বেড়ে উঠেছি, সেখানকার মূল্যবোধগুলোও গুরুত্বপূর্ণ।’

স্ত্রী আন্তোনেল্লা রোকুজ্জোর প্রশংসা করে মেসি বলেন, ‘সে দুর্দান্ত। মোটামুটি ২৪ ঘণ্টাই সন্তানদের সঙ্গে কাটায়। মাঝেমধ্যেই দীর্ঘ সময়ের জন্য বাইরে থাকতে হয়- সফর, ম্যাচ, প্রাক্-মৌসুম, জাতীয় দল। কখনো কখনো মাসের পর মাস বাইরে থাকতে হয়। তখন সে সারাদিনই সন্তানদের সামলায়।’


নিজের তিন ছেলেদের নিয়ে মেসি বলেন, ‘থিয়াগো কথা বলতে পছন্দ করে। আন্তোনেল্লাকেই (রোকুজ্জো) সে সব বলে। মাতেও সবকিছু বলে দেবে। বকবক করতেই থাকে। কিন্তু চিরো সে তুলনায় একটু চুপচাপ। ওরা টোস্ট ও চকলেটমিশ্রিত দুধই বেশি খায়।’

গত জুলাইয়ে প্যারিস সেইন্ট জার্মেই (পিএসজি) ছেড়ে যুক্তরাষ্ট্রের ক্লাব ইন্টার মায়ামিতে যোগ দেন লিওনেল মেসি। পরিবার নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রেই বসবাস শুরু করেছেন আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক। মার্কিন মুলুকে নিজের ‘ডেইলি রুটিন’ জানিয়ে মেসি বলেন, ‘আমরা সকাল ৭টার দিকে ঘুম থেকে উঠে নাশতা করি। তখন ছেলেরাও উঠে পড়ে। কখনো কখনো আমি তাদের স্কুলে নিয়ে যাই। কখনো আবার নিয়ে যেতে পারি না।অনুশীলন থেকে বেলা ১টা নাগাদ ফিরে কিছু খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ি। এরপর ঘুম থেকে উঠে বাচ্চাদের (স্কুল থেকে) নিয়ে এসে আবারও অনুশীলনে যাই।’


দুবাইয়ে বিশ্বের প্রথম সাগরতলে মসজিদ নির্মাণ করা হচ্ছে

২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৫:৪৫ পিএম | আপডেট: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৯:২৬ পিএম


দুবাইয়ে বিশ্বের প্রথম সাগরতলে মসজিদ  নির্মাণ করা হচ্ছে
ছবি সংগৃহিত

পর্যটনশিল্পে সংযুক্ত আরব আমিরাতকে অনন্য এক উচ্চতায় নিয়ে যাচ্ছেন দেশটির শাসকেরা। এবার ধর্মীয় পর্যটনকে আকর্ষণীয় করে তুলতে সাগরতলে মসজিদ নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছে দেশটি। ৫ কোটি ৫০ লাখ আমিরাতি দিরহাম ব্যয়ে দুবাইয়ের সমুদ্র উপকূলে এ মসজিদ নির্মিত হবে, যা বাংলাদেশি টাকায় ১৬৪ কোটির বেশি।

পানির তলদেশে বিশ্বের প্রথম ভাসমান মসজিদ নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছে দুবাই। তিনতলা বিশিষ্ট মসজিদটির পানির ওপরে দুই তলায় থাকবে বসার জায়গা ও একটি কফিশপ আর পানির নিচে থাকবে নামাজের ব্যবস্থা।

ধর্মীয় পর্যটন প্রকল্প সম্পর্কে এক ব্রিফিংয়ে এ মসজিদ নির্মাণ পরিকল্পনার ঘোষণা দেয় দুবাইয়ের ইসলামিক অ্যাফেয়ার্স অ্যান্ড চ্যারিটেবল অ্যাক্টিভিটিস বিভাগ। সংস্থাটির কর্মকর্তা আহমেদ আল মনসুরি খালিজ টাইমসকে বলেছেন, শিগগিরই এ মসজিদ নির্মাণের কাজ শুরু হবে।

মসজিদটির ঠিক কোথায় নির্মাণ করা হবে, তা এখনো জানানো হয়নি। তবে আহমেদ আল মনসুরি বলেন, এটি সমুদ্র উপকূলীয় এলাকার কাছাকাছি নির্মাণ করা হবে। মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে সংযুক্ত একটি সেতুর মাধ্যমে সেখানে মুসল্লিরা যেতে পারবেন।

তিনি আরও জানান, সব ধর্মের মানুষই এই মসজিদ পরিদর্শন করতে পারবে। তবে তাদের অবশ্যই শালিন ও ইসলামি রীতিনীতি মেনে চলতে হবে।

২০২৪ সালের মধ্যেই মসজিদটির নির্মাণ কাজ শেষ হবে। এটি হবে তিন তলা বিশিষ্ট। প্রথম তলা থাকতে পানির মধ্যে। এটি নামাজের জন্য নির্ধারিত থাকবে। দ্বিতীয় তলা হবে হলের জন্য নির্ধারিত এবং তৃতীয় তলা ইসলামিক বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য নির্মাণ করা হবে। এছাড়া ৫০ থেকে ৭৫ জন ধর্মীয় ব্যক্তি এখানে একসঙ্গে থাকতে পারবেন। এমন সুবিধাও রাখা হচ্ছে।

মসজিদটিতে কুরআনিক এক্সিবিশনের আয়োজন করা হবে। শেখ মাখতুম বিন রশিদ আর মাখতুম থেকে শুরু করে বর্তমান সময়ের বিতরণকৃত কুরআনগুলো এখানে সজ্জিত থাকবে।

সদর দপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই ল্যান্ডমার্ক প্রজেক্টের ঘোষণা দেওয়া হয়। এ সময়ে এখানে উপস্থিত ছিলেন, ইসলামিক অ্যাফেয়ার্স এন্ড চ্যারিটেবল বিভাগের পরিচালক ড. হামাদ আল শেখ আহমেদ আল সাইবানি। এছাড়া অন্যান্য বিভাগের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

 

 

 

 


বিভাগ : সারাবিশ্ব

বিষয় : ইসলাম



এবার যুক্তরাজ্যে নিষিদ্ধ হতে পারে সিগারেট

২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৪:৫৪ পিএম | আপডেট: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৯:২৬ পিএম


এবার যুক্তরাজ্যে নিষিদ্ধ হতে পারে সিগারেট
ছবি সংগৃহিত

দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে ধূমপানমুক্ত রাখতে নিউজিল্যান্ডের মতো পদক্ষেপ নেওয়ার কথা ভাবছেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক। সরকরের এমন পদক্ষেপের ফলে পরবর্তী প্রজন্মের আর কেউ ‍সিগারেট কিনতে পারবে না। শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান।

গত বছরের ডিসেম্বরে ধূমপানমুক্ত দেশ গড়ার মহাপরিকল্পনার অংশ হিসেবে নতুন আইন প্রণয়নের ঘোষণা দেয় নিউজিল্যান্ড সরকার। এ আইন প্রণীত হলে ২০০৯ সালের ১ জানুয়ারির পর জন্মগ্রহণকারী কেউ সিগারেট কিনতে পারবে না। ফলে আগামী কয়েক দশকের মধ্যে সে দেশে আর ধূমপায়ী থাকবে না।

ব্রিটিশ সরকারের এক মুখপাত্র রয়টার্সকে বলেন, আমরা ২০৩০ সালের মধ্যে ধূমপান মুক্ত দেশ হতে চাই। এ জন্য আমরা আরও বেশি লোককে উত্সাহিত করতে চাই।

তিনি আরও বলেন, ধূমপানে নিরুৎসাহিত করতে বিনামূল্যে ভ্যাপ কিট দেওয়া হবে। এ ছাড়া গর্ভবতী নারীদের ধূমপান থেকে বিরত রাখতে ভাউচার স্কিম দেওয়া সহ নানা পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

আগামী বছর যুক্তরাজ্যে সাধারণ নির্বাচন হতে পারে। ওই নির্বাচনকে সামনে রেখে ভোক্তাকেন্দ্রিক নীতিমালার অংশ হিসেবে এসব পদক্ষেপের কথা ভাবছে সুনাক সরকার।

যুক্তরাজ্যে বিভিন্ন আইনের ফাঁকফোকর ব্যবহার করে এতদিন শিশুদের বিনামূল্যে ভ্যাপের নমুনা দিয়ে আসছিল খুচরা বিক্রেতারা। তবে গত মে মাসে ই-সিগারেটের ব্যবহার বন্ধে এসব ফাঁকফোকর বন্ধের ঘোষণা দেয় সরকার।

এছাড়া গত জুলাই মাসে পরিবেশগত ও স্বাস্থ্য উভয় ঝুঁকি বিবেচনায় নিয়ে ২০২৪ সালের মধ্যে একক-ব্যবহারযোগ্য ভ্যাপ বিক্রি নিষিদ্ধ করার জন্য সরকারেরর প্রতি আহ্বান জানায় ইংল্যান্ড এবং ওয়েলসের কাউন্সিলগুলো।

অনুসরণ করুন