’পিবিআই প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল মামলার সঠিক ও নির্ভুল তদন্ত করার উদ্দেশ্যে। সংস্থাটি সারাদেশে চাপমুক্ত থেকে সঠিকভাবে তদন্ত করে আসছে। ফলে স্বল্প সময়েই মামলা তদন্তের ক্ষেত্রে জনগণের আস্থা অর্জন করতে সমর্থ হয়েছে সংস্থাটি। জনগণের এ আস্থা ধরে রাখার জন্য আমি পিবিআইয়ের সবাইকে আহ্বান জানাচ্ছি।’
শনিবার (১৮ নভেম্বর) পিবিআইয়ের চট্টগ্রামের কার্যালয় পরিদর্শন ও ফোর্সদের নিয়ে মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) প্রধান বনজ কুমার মজুমদার।
ফোর্সদের উদ্দেশ্যে বনজ কুমার বলেন, নিরপরাধ কেউ যেন হয়রানির শিকার না হন এবং ন্যায়বিচার হতে বঞ্চিত না হন সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। নারী ও শিশু ভুক্তভোগীদের প্রতি আন্তরিক ও সহানুভূতিশীল হতে হবে। মামলা তদন্তে সততা, নিষ্ঠা, গুণগতমান ধরে রাখা এবং সঠিক ও নির্ভুল তদন্ত-রিপোর্ট প্রদান করতে হবে। ক্লুলেস মামলার রহস্য উদঘাটনে বিশেষ গুরুত্বারোপ করতে হবে।
মতবিনিময় সভা শেষে পিবিআই প্রধান সংস্থাটির চট্টগ্রাম কার্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ রেজিস্টারগুলো পর্যালোচনা করেন। একইসঙ্গে ফাইল, রেজিস্ট্রার ও বিভিন্ন রেকর্ড রক্ষণাবেক্ষণে আন্তরিক থাকার নির্দেশ দেন।
এসময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, পিবিআই চট্টগ্রাম বিভাগের অতিরিক্ত উপ-মহাপরিদর্শক মো. মজিদ আলী, চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার নাজমুল হাসান, পিপিএম-সেবা চট্টগ্রাম মেট্রোর সহকারী পুলিশ সুপার এ কে এম মহিউদ্দিন।
গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর বলেছেন, গত ১৬ বছরে আওয়ামী লীগ অবৈধভাবে জনগণের যে সম্পদ লুটপাট করেছে, তা বাজেয়াপ্ত করে জনগণের কল্যাণে ব্যয় করা উচিত। তিনি দাবি করেন, দলটি এখন আর শুধু একটি রাজনৈতিক দল নয়, বরং এটি ‘সীমান্তপারের ষড়যন্ত্রকারী শক্তি’ হিসেবে কাজ করছে।
রবিবার (১১ মে) দুপুরে পুরানা পল্টনে গণঅধিকার পরিষদের কার্যালয়ে আয়োজিত এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।
নুর আওয়ামী লীগকে ‘ফ্যাসিবাদী’ দল আখ্যা দিয়ে বলেন, “এ দলটিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা না করলে দেশের স্বাধীনতা হুমকির মুখে পড়বে।” তিনি অভিযোগ করেন, “বিরোধী দলসমূহ একটি সমাবেশ করার পর প্রায় ৩০ হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে, অথচ আওয়ামী লীগের মাত্র ৩২ জন নেতাকর্মীও গ্রেফতার হয়নি।”
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না নিলে সেটি দেশের জন্য ভবিষ্যতে বড় সংকট হয়ে দাঁড়াবে। তিনি অভিযোগ করেন, দলটি গত নয় মাস ধরে দেশবিরোধী প্রোপাগান্ডা চালিয়ে অস্থিতিশীলতা তৈরির চেষ্টা করেছে।
নুর আরও বলেন, “আমরাও যমুনা ঘেরাও কর্মসূচি দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয় যে প্রধান উপদেষ্টা তরুণদের বক্তব্য শুনে দেশের ভবিষ্যতের গতি নির্ধারণ করতে চান। সে বিশ্বাস থেকেই আমরা কর্মসূচি স্থগিত করেছি।”
সরকারের অভ্যন্তরে ‘আপসকামী উপদেষ্টা’ থাকার অভিযোগ এনে তিনি বলেন, “সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের কিছু সদস্য বিদেশি দূতাবাসে গিয়ে গোপন বৈঠক করছেন। এরপরই করিডর দেওয়ার ঘোষণা আসে এবং আওয়ামী লীগের পুনর্বাসনের ইঙ্গিত পাওয়া যায়।”
সাবেক রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদের দেশত্যাগ নিয়েও প্রশ্ন তোলেন নুর। তিনি বলেন, “রাষ্ট্রপতির পালিয়ে যাওয়ার দায় শুধু একজন জেলা পুলিশ কর্মকর্তার নয়, এর সঙ্গে ইমিগ্রেশন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদেরও জড়িত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।”
নুর সরকারকে হুঁশিয়ার করে বলেন, “এই সরকার আমাদের রক্ত-ঘাম ও জেল-জুলুমের বিনিময়ে গঠিত হয়েছে। আবারও যদি আমাদের এই সরকারের বিরুদ্ধেই আন্দোলনে নামতে হয়, সেটি হবে অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক।”
সংবাদ সম্মেলনে গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ রাশেদ খান, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাসান আল মামুনসহ কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
এক অভূতপূর্ব নাটকীয়তায় দেশ ছেড়েছেন সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা ছাড়াই, লুঙ্গি, গেঞ্জি ও মাস্ক পরে গভীর রাতে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ভিআইপি টার্মিনালে পৌঁছান তিনি। একে ‘নিরাপদ দেশত্যাগের গোপন অভিযান’ বললেও অত্যুক্তি হবে না। রাষ্ট্রপতির মতো একজন প্রভাবশালী ব্যক্তির এমন ছদ্মবেশে দেশত্যাগের ঘটনা জনমনে ব্যাপক চাঞ্চল্য ও সন্দেহের জন্ম দিয়েছে।
বুধবার রাত প্রায় ১২টা ৪৫ মিনিট। আবদুল হামিদের ব্যক্তিগত গাড়ি পৌঁছায় শাহজালালের ভিআইপি টার্মিনালে। সেখানে দায়িত্বে থাকা নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা গাড়ি থামিয়ে আরোহীদের পরিচয় জানতে চান। চালক জানান, গাড়িতে রয়েছে সাবেক রাষ্ট্রপতির পরিবার। তখনও স্পষ্ট করা হয়নি, তিনি নিজেই গাড়িতে রয়েছেন। কিছুক্ষণ পর এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা এসে তার পরিচয় নিশ্চিত করেন এবং জানান, তার বহির্গমনের অনুমতি রয়েছে।
আবদুল হামিদ প্রথমে লুঙ্গি, গেঞ্জি এবং মাস্ক পরে ছিলেন, যাতে কেউ তাকে চিনতে না পারে। বিমানবন্দরের নিরাপত্তা কক্ষের ভেতর নিয়ে যাওয়ার আগেই গাড়ির মধ্যেই তিনি ছদ্মবেশ থেকে বেরিয়ে সাধারণ প্যান্ট-শার্ট পরে নেন। এমন গোপনীয়তা সাধারণত কোনো গুরুত্বপূর্ণ গোয়েন্দা মিশন বা নিরাপত্তা-হুমকির সময় দেখা যায়, অথচ এবার তা ঘটল সাবেক একজন রাষ্ট্রপতির ক্ষেত্রে।
সব ধরনের নিরাপত্তা ও ইমিগ্রেশন প্রটোকল এড়িয়ে, কোনও রকম আনুষ্ঠানিক ঘোষণা ছাড়াই আবদুল হামিদকে বিমানে তুলে দেওয়া হয় থাই এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে (TG340)। বিমানটির অবস্থান পরিবর্তন করে ভিআইপি টার্মিনালের কাছে এনে রাখা হয় যাতে তাকে সরাসরি বিমানে নেওয়া যায়। তিনি বিমানে ওঠার পর কিছু সময় পর তার ছেলে রিয়াদ আহমেদ এবং শ্যালক ডা. এনএম নওশাদ খানও বিমানে ওঠেন।
সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। ছবি: সংগৃহীত
তিনি দেশ ত্যাগ করেন কূটনৈতিক মর্যাদার ‘লাল পাসপোর্ট’ (নম্বর D00010015) ব্যবহার করে, যেটি তার রাষ্ট্রপতি থাকার সময় ২০২০ সালে ইস্যু করা হয়েছিল। এই পাসপোর্টটির মেয়াদ ২০৩০ সাল পর্যন্ত। উল্লেখযোগ্যভাবে, গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ অনেক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের কূটনৈতিক পাসপোর্ট বাতিল হলেও আবদুল হামিদের পাসপোর্ট বাতিল হয়নি, যা এখন বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বিমানবন্দরের একাধিক নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা উপস্থিত থাকলেও কেউ কোনো বাধা দেননি। পুলিশ, এভসেক, সিভিল এভিয়েশন কিংবা ইমিগ্রেশন—সব পক্ষই ছিল নীরব দর্শকের ভূমিকায়। এমনকি ইমিগ্রেশনের নিয়ম অনুযায়ী ব্যক্তিকে সরাসরি উপস্থিত থেকে প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হয়, কিন্তু আবদুল হামিদের ক্ষেত্রে সেটাও অনুসরণ করা হয়নি। ধারণা করা হচ্ছে, ইচ্ছাকৃতভাবে তাকে ইমিগ্রেশন অফিসারদের সামনে হাজির করা হয়নি—কারণ অনেকেই ছিলেন ফ্যাসিবাদবিরোধী অবস্থানে।
তথ্য অনুযায়ী, আবদুল হামিদের টিকিট ছিল দিল্লি পর্যন্ত, যদিও ফ্লাইটের রুট ব্যাংকক হয়ে। ১৬ জুন তার ফিরে আসার একটি টিকিট কনফার্ম করা রয়েছে। তবে আদৌ তিনি ফিরবেন কি না—তা নিয়ে জোর জল্পনা চলছে।
এখনো পরিষ্কার নয়, কেন সাবেক রাষ্ট্রপতির এমন গোপন ও নাটকীয় প্রস্থান ঘটল। অনেকেই বলছেন, এটি ছিল একটি পরিকল্পিত নিরাপদ বহির্গমন—সম্ভবত নতুন রাজনৈতিক বাস্তবতায় তার ভূমিকার কারণে। আবার কেউ কেউ সন্দেহ করছেন, তিনি হয়তো কোনো বিশেষ মিশনে বা চিকিৎসার উদ্দেশ্যেই দেশ ছাড়লেন। তবে সরকারিভাবে এ বিষয়ে কোনো বক্তব্য এখনো আসেনি।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি। ছবি: সংগৃহীত
আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার বিষয়ে সরকারের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্ত বিএনপির কথার সঙ্গে মিলে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি।
রোববার (১১ মে) দুপুরে লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার হাজিরপাড়া ইউনিয়নের বড়বল্লভপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং মান্দারী ইউনিয়নের মিয়াপুর ভূঁইয়া বাড়ি নূরানী মাদরাসায় বিএনপির ওয়ার্ডভিত্তিক নেতা নির্বাচনের ভোট পর্যবেক্ষণকালে তিনি এ কথা বলেন।
শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি বলেন, “বিএনপি যা চেয়েছে, তাই হয়েছে। বহু আগেই যদি সব রাজনৈতিক দলকে একত্র করে সরকার আলোচনায় বসত, তাহলে এই নিষ্পত্তি আরও আগেই সম্ভব হতো।”
তিনি বলেন, জনগণ সংঘাত নয়, শান্তিপূর্ণভাবে সমস্যার সমাধান চায়। কিন্তু সরকারের গড়িমসি, আলোচনা এড়িয়ে চলা এবং বিচার প্রক্রিয়ার ধীরগতির কারণে মানুষ বারবার কষ্ট পাচ্ছে।
হাসিনার দ্রুত বিচার দাবি করে এ্যানি বলেন, “গণহত্যা, গুম, খুনের বিচার হলে একটি ফলাফল আসবে। যারা এই অপরাধের সঙ্গে জড়িত, তাদের রাজনীতি করার অধিকার নেই। জনগণ চায় এই বিচার দ্রুত সম্পন্ন হোক। অন্তর্বর্তী সরকারের এখন দায়িত্ব—সব রাজনৈতিক দলকে নিয়ে দ্রুত বিচার কাজ সম্পন্ন করা।”
এসময় তিনি আরও বলেন, “আমরা ১৭ বছর ধরে এই বিচার চেয়ে আসছি। আন্দোলনের মাধ্যমে আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার পেয়েছি, কিন্তু এখনো কোনো দৃশ্যমান বিচার হয়নি। মানুষ জানতে চায়, এই বিচার প্রক্রিয়া এত ধীর কেন? হাসিনার বিচার দৃশ্যমান ও দ্রুত হলে মানুষ আশ্বস্ত হবে।”
একই সঙ্গে আন্দোলনে একসঙ্গে থাকা রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতভেদের আশঙ্কা নিয়ে তিনি বলেন, “যদি ঐক্য ভেঙে যায়, মানুষ কষ্ট পাবে। আমরা সেই কষ্ট দিতে চাই না। মানুষ এখন দেশ গড়তে চায়।”
এ সময় জেলা বিএনপির সদস্য হাফিজুর রহমান, জেলা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি আহমেদ ফেরদৌস মানিক, চন্দ্রগঞ্জ থানা বিএনপির আহ্বায়ক বেলাল হোসেন ও সদস্য সচিব আনোয়ার হোসেন বাচ্চু উপস্থিত ছিলেন।