যমুনার চরাঞ্চলে কমছে পানি, বিপাকে বানভাসি পরিবার
উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও টানা বৃষ্টিপাতে টাঙ্গাইলের যমুনা নদীসহ জেলার সবগুলোর নদ-নদীর পানি অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পেলেও দুই দিন ধরে কমতে শুরু করছে। এতে করে আরও দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন পানিবন্দি লাখো মানুষ। এদিকে, পানিবন্দি পরিবারগুলো বিপাকে পড়েছে শিশু খাদ্য নিয়ে। বিশুদ্ধ পানির অভাবে পানিবাহিত নানা রোগেও আক্রান্ত হচ্ছে অনেকে।
অপরদিকে, গো-খাদ্যের সংকটে দিশেহারা চরাঞ্চলের মানুষগুলো। সব মিলিয়ে টাঙ্গাইল সদর, ভূঞাপুর, নাগরপু্র, গোপালপুর, দেলদুয়ার, বাসাইল ও কালিহাতী উপজেলার শতাধিক গ্রামের বানভাসি মানবেতর জীবন যাপন করছেন। এছাড়াও জেলায় মোট ৬ হাজার হেক্টর জমির ফসও তলিয়ে যাওয়ায় নানা দুশ্চিন্তা পড়েছেন।
জেলা পানি উন্নয়ন জানিয়েছেন, গত বৃহস্পতিবার সকাল ৬ টা থেকে শুক্রবার সকাল ৬ টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনা নদীর পানি পোড়াবাড়ী পয়েন্টে ১৫ সেন্টিমিটার কমে বিপৎসীমার ৩৭, ঝিনাই নদীর পানি জোকারচর পয়েন্টে ১২ সেন্টিমিটার কমে বিপৎসীমার ৪৭ ও ধলেশ্বরী নদীর পানি এলাসিন পয়েন্টে ২ সেন্টিমিটার কমে বিপদসীমার ৩১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
শুক্রবার (২৪ জুন) সরেজমিনে ভূঞাপুর উপজেলার যমুনা চরাঞ্চলের গাবসারা, গোবিন্দাসী, অর্জুনা ও নিকরাইল ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে যায়, যমুনার পানি গত সপ্তাহ ধরে পানি বৃদ্ধি পেয়ে ঘর-বাড়ীতে প্রবেশ করেছে। তীব্র পানির স্রোতে কষ্টাপাড়া, ভালকুটিয়া ও চিতুলিয়াপাড়া এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। এছাড়া তলিয়ে গেছে- রান্না করার মাটির চুলা, গবাদিপশুর রাখার স্থান, টয়লেট, টিওবয়েলসহ চরাঞ্চলের নানা ধরণের ফসল ও সবজি। পরিবারগুলো উঁচু স্থানে আশ্রয়ের জন্য চলে গেছে অন্যত্র। আবার অনেকেই ঘরেই মাঁচায় রান্না করাসহ কষ্টে দিনপার করছেন।
গাবসারার বেলটিয়া গ্রামের আলম মণ্ডলের স্ত্রী বিমলা বেগম বলেন, সপ্তাহখানেক ধরে তার বাড়িতে পানি ওঠায় অধিকাংশ সময় পানিতেই থাকতে হচ্ছো। এতে হাত ও পায়ে দেখা দিয়েছে পানিবাহিত রোগ। এ ছাড়া বাড়ি-ঘরে পানি ওঠায় নৌকায় দিনে একবেলা রান্না করে তিন বেলা খেতে হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, পানি উঠায় স্বামীরও আয়-রোজগার বন্ধ হয়ে গেছে। অন্য কোথাও যাওয়ার জায়গা না থাকায় কষ্ট হলেও পানির মধ্যেই বসবাস করছি। তবে বাড়ির গবাদি পশুগুলো অন্যের বাড়িতে রেখেছি চোর-ডাকাতের ভয়ে।
কালিপুর গ্রামের আব্দুল আলীম বলেন, সপ্তাহখানেক ধরে ঘরের চারপাশে থৈ-থৈ পানি। চরাঞ্চলে শিশু খাদ্যের চরম সংকট দেখা দিয়েছে। দোকানগুলোতে পাওয়া গেলেও অতিরিক্ত দামে কিনতে হচ্ছে। কেউ এখন পর্যন্ত খোঁজ খবর নেননি। দেয়নি খাদ্য সহায়তা। অনেকেই পরিদর্শন করে, সহযোগিতা করে না।
রুলীপাড়ার হ্যাপি আকন্দ বলেন, চরাঞ্চলের ঘর-বাড়িতে পানি উঠেছে। আবার অনেকের ঘরের চারপাশে পানি। কোথাও যাওয়ার সুযোগ নেই। সে জন্য অনেকে ঘরে মাঁচায় ও নৌকার ভেতরে গাদাগাদি করে থাকছেন। পানিবন্দিগুলো পরিবাররা অনেক কষ্টে দিন-রাত কাটাচ্ছেন। তাদের জন্য প্রশাসনের কাছে দ্রুত সময়ে সরকারি খাদ্য সামগ্রী (ত্রাণ সহায়তা) প্রদানের জোর দাবি জানাচ্ছি।
গাবসারা ইউপি চেয়ারম্যান শাহ আলম শাপলা বলেন, সাত দিন ধরে চরাঞ্চলের বেশ কিছু গ্রাম পানিতে তলিয়ে গেছে। গত দুই দিন আগে স্থানীয় প্রশাসন পরিদর্শন করেছে। এখন পর্যন্ত বন্যার্তদের জন্য কোনো বরাদ্দ পাওয়া যায়নি। এ ব্যাপারে ভূঞাপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোছা: ইশরাত জাহান জানান, উপজেলায় চার হাজার পরিবার বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে। বন্যার্তদের ত্রাণ সহায়তার জন্য বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। বরাদ্দ পেলেই ত্রাণ কার্যক্রম শুরু করা হবে।
এএজেড