শুক্রবার, ৩ মে ২০২৪ | ২০ বৈশাখ ১৪৩১
Dhaka Prokash

শ্রদ্ধা ভালোবাসায় সিক্ত হাসান আরিফ

কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে দাঁড়িয়ে বজ্রকণ্ঠে আবৃত্তি করে মুগ্ধ করতেন সবাইকে। অপশাসন, অনিয়ম, অশুভ তৎপরতার বিরুদ্ধে সাংস্কৃতিক জাগরণের ডাক দিতেন। সংগঠিত করে নিয়ে আসতেন তরুণ প্রজন্মকে। দেশবরেণ্য মানুষদের শ্রদ্ধা জানানোর আয়োজন করতেন সুচারুভাবে। আজও চিরচেনা সেই কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে এলেন তিনি। তবে একদম প্রাণহীন, নিথর দেহে। মাইকে বাজছে তার বজ্রকণ্ঠের আবৃত্তি। এভাবে নিথর দেহে তাকে দেখে অশ্রুসিক্ত পরিবার, স্বজনসহ তার দীর্ঘদিনের সহকর্মী ও সাংস্কৃতিক যোদ্ধারা।

খ্যাতিমান আবৃত্তিশিল্পী ও সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক হাসান আরিফের মরদেহ সর্বসাধারণের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আনা হয় শনিবার (২ এপ্রিল) সকাল ১১টা ১০ মিনিটে। বেলা ১টা পর্যন্ত সংস্কৃতিসেবী, রাজনীতিবিদ ও বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের শ্রদ্ধা ভালোবাসায় সিক্ত হলেন দেশের সাংস্কৃতিক আন্দোলনের অগ্রসেনানী হাসান আরিফ।

শহিদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট। প্রথমেই শ্রদ্ধা জানান জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদের সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার এমপি। এরপর একে একে শ্রদ্ধা জানান, বিভিন্ন রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি এবং বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বরা। সবার প্রিয় সাংস্কৃতিক সংগঠক হাসান আরিফের শেষ যাত্রায় শ্রদ্ধা জানাতে কেবল ঢাকা নয়, ঢাকার বাইরের বিভিন্ন জেলার সাংস্কৃতিক জোটের কর্মীরাও জড়ো হন শহিদ মিনারে। শ্রদ্ধা জানাতে আসা অনেককেই নীরবে অশ্রুপাত করতে দেখা গেছে।

মাহবুবুল হক হা‌নিফ, ডা. দীপু মনি, ড. হাছান মাহমুদ, শ‌ফিউল আলম না‌দেল, আফজাল হো‌সে‌নের নেতৃ‌ত্বে আওয়ামী লীগ শ্রদ্ধা নিবেদন করে। এ ছাড়াও আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, দপ্তর সম্পাদক ও প্রধানমন্ত্রী’র বিশেষ সহকারী ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া শ্রদ্ধা জানান। শ্রদ্ধা জানায় কেন্দ্রীয় যুবলীগ, আওয়ামী স্বেচ্ছা‌সেবক লীগ, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা।

শ্রদ্ধা জানায় বাংলা‌দেশ ক‌মিউ‌নিস্ট পার্টি, সংগীত সংগঠন সমন্বয় প‌রিষদ, জাতীয় ক‌বিতা প‌রিষদ, গণসংগীত সমন্বয় পরিষদ, বাংলাদেশ পথনাটক পরিষদ, নৃত‌্যশিল্পী সংস্থা, উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী, সেক্টর কমান্ডরস ফোরাম, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল ক‌মি‌টি, জয়বাংলা সাংস্কৃ‌তিক ঐক্যজোট, ম‌হিলা প‌রিষদ, সংস্কৃ‌তি মন্ত্রণালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, কণ্ঠশীলন, ব‌হ্নি‌শিখা‌, ঋষিজ, ক্রা‌ন্তি; দ‌নিয়া সাংস্কৃ‌তিক জোট, ক‌চিকাঁচার মেলা, মহাকাল, বাংলা‌দেশ পু‌লিশ থি‌য়েটার, পদা‌তিক নাট‌্য সংসদ, সংস্কৃ‌তি সংসদ, বঙ্গবন্ধু শেখ মু‌জিব বিশ্ব‌বিদ‌্যালয় কি‌শোরগঞ্জ, শ্রু‌তিঘর, সংস্কৃ‌তি বিকাশ কেন্দ্র, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃ‌তিক জোট, দেশ নাটক, স‌ত্যেন‌ সেন শিল্পী গোষ্ঠী, সুরতান, বঙ্গবন্ধু শিল্পী‌গোষ্ঠী, সুরসাগর ল‌লিতকলা একা‌ডে‌মি, ঢাকা পদা‌তিক, রোভার স্কাউট, ঢাকা থি‌য়েটার, বাংলাদেশ গ্রাম থি‌য়েটার, বাক শিল্পাঙ্গন, ডি‌রেক্টরস গিল্ড, কথা আবৃ‌ত্তি চক্র, ইউনিভার্সেল থিয়েটার, ঝিনাইদহ স‌ম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট. কক্সবাজার সাংস্কৃতিক জোট, গা‌জিপুর সাংস্কৃ‌তিক জোট, সাভার সাংস্কৃতিক জোট, গাজীপুর সাংস্কৃতিক জোট, আরণ‌্যক নাট‌্যদল, দ‌নিয়া পাঠাগার, কথক থি‌য়েটার, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক ফোরাম, মুক্তবাক, ঢাকা বিশ্ব‌বিদ্যালয়, ঢাকা রি‌পোর্টার্স ইউনিটি, থি‌য়েটার, সম্প্রী‌তি বাংলা‌দেশ, বেঙ্গল ফাউ‌ন্ডেশন, নাগ‌রিক নাট‌্য সম্প্রদায়, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট, স্বরকল্পন, প্রজন্ম একাত্তর, শর্ট ফিল্ম ফোরাম, ছায়ানট, জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত স‌ম্মিলন প‌রিষদ, বোধন চট্টগ্রাম, বাংলাদেশ শিল্পকলা একা‌ডে‌মি, সাত‌ক্ষিরা সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, ছাত্রমৈত্রী, সহজপাঠ, স্বরশ্রতি প্রভৃতি সংগঠন।

বিশিষ্টজনদের মধ্যে ম‌ফিদুল হক, আবৃ‌ত্তিশিল্পী ভাস্বর ব‌ন্দোপাধ্যায়, ডা‌লিয়া আহ‌মেদ, শিমুল মোস্তাফা, কণ্ঠশিল্পী র‌ফিকুল আলম, তি‌মির নন্দী, সা‌বেক ছাত্রনেতা শ‌ফি আহমদ, চিত্রশিল্পী কামাল পাশা চৌধুরী, লেখক শাকুর ম‌জিদ, অধ‌্যাপক কামরুল আহসান খান, চিত্রশিল্পী অধ্যাপক নিসার হো‌সেন, সাংবাদিক হারুন হাবীব, লেখক সাংবা‌দিক শাহরিয়ার ক‌বির, কাজল দেবনাথ, ড. মুহাম্মদ সামাদ, লিয়াকত আলী লাকি, ক‌বি তা‌রিখ সুজাত, সুভাস সিংহ রায়, এনামুল হক ওমর, অভিনেতা কেরামত মওলা, শংকর সাওজাল, ঝুনা চৌধুরী, ত্রপা মজুমদার, কামাল বায়জিদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আখতারুজ্জামান প্রমুখ।

শেষ পর্যায়ে হাসান আরিফের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে বক্তব্য রাখেন সাংস্কৃতিক জোটের সাবেক সভাপতি রা‌মেন্দু মজুমদার, না‌সিরউদ্দীন ইউসুফ ও বর্তমান সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ। পরিবরের পক্ষ থেকে কৃজ্ঞতা প্রকাশ করেন হাসান আরিফের ছোট বোন তুলি।

শহীদ মিনারে সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা জানানো শেষে জাতীয় পতাকা সামনে রেখে লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্স যাত্রা করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মসজিদের উদ্দেশে। সেখানে বাদ জোহর হাসান আরিফের দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।

এরপর মরদেহ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে হস্তান্তর করা হয়। উপাচার্য অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ অনাটমি বিভাগের শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের নিয়ে হাসান আরিফের মরদেহে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এ সময় তিনি বলেন, হাসান আরিফের মতো মানুষদের মরণোত্তর দেহদান স্মরণীয় হয়ে থাকবে এবং চিকিৎসা বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

এর আগে শনিবার সকাল ৯টায় ধানমন্ডির বাসার পাশের মসজিদে তার প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।

উল্লেখ্য, গত বছরের ২ ডিসেম্বর করোনায় আক্রান্ত হয়ে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হন হাসান আরিফ। তিনি দীর্ঘদিন হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে ছিলেন। এরপর থেকে নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছিলেন এই আবৃত্তিশিল্পী।

বিগত শতাব্দীর আশির দশক থেকে এ দেশের সাংগঠনিক আবৃত্তিচর্চা ও প্রশিক্ষণে অসামান্য ভূমিকা পালন করে আসছেন বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের সাবেক সাধারণ সম্পাদক হাসান আরিফ। নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে দেশের সব গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক, সাংস্কৃতিক আন্দোলনে সামনে থেকে তিনি সক্রিয় ভূমিকা পালন করে আসছিলেন।

এএম/এপি/

এ সম্পর্কে আরও পড়ুন :

শহীদ মিনারে হাসান আরিফের মরদেহ, শ্রদ্ধাঞ্জলি শুরু

হাসান আ‌রিফ স্মরণীয় থাক‌বেন

হাসান আরিফের মৃত্যুতে ১৯৯০ এর ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের শোক

হাসান আরিফের মৃত্যুতে নির্মূল কমিটির শোক প্রকাশ

শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা শনিবার : মরণোত্তর দেহদান করে গেছেন হাসান আরিফ

হাসান আরিফের মৃত্যুতে প্রধানমন্ত্রীর শোক

হাসান আরিফ চলে গেলেন অনন্তের পথে

Header Ad

ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার প্রমাণ পেয়েছে বিবিসি!

ছবি: সংগৃহীত

গত বছরের ২৯ নভেম্বর বিকেলের দিকে অধিকৃত পশ্চিম তীরের কয়েকটি ফিলিস্তিনি বাচ্চা ছেলে তাদের সামনের রাস্তায় খেলতে নেমে এসেছিল। ওখানে তারা প্রায়ই একসঙ্গে খেলত। কয়েক মিনিট পরেই ওই বাচ্চাদের মধ্যে দুজন ইসরায়েলি সেনাদের ছোঁড়া গুলিতে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। নিহত ওই দুজন ছিল ১৫ বছর বয়সী বাসিল ও ৮ বছরের অ্যাডাম।

জর্ডান নদীর পশ্চিম তীর বা ‘ওয়েস্ট ব্যাংক’ সামরিক দখলদারির অধীনে আছে বিগত অর্ধশতাব্দীরও বেশি সময় ধরে। সেখানে ইসরায়েলের নিরাপত্তা বাহিনী কী ধরনের আচরণ করে থাকে, তা নিয়ে বিবিসির করা একটি তদন্তের অংশ হিসেবে যে দিন ওই বাচ্চাদুটি মারা যায়, সে দিন ঠিক কী কী ঘটেছিল তার ঘটনাক্রমগুলো জোড়া দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে।

ওই ঘটনাটি সংক্রান্ত যাবতীয় মোবাইল ফোন ও সিসিটিভি ফুটেজ, ইসরায়েলের সেনাবাহিনীর গতিবিধি নিয়ে তথ্য, প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষ্য ও ঘটনাস্থলের মাপজোখ-সহ বিস্তারিত পর্যবেক্ষণ – এগুলো সব একত্রিত করে যে সাক্ষ্যপ্রমাণ পাওয়া গেছে তাতে ওই ঘটনায় গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়েছিল বলেই প্রতীয়মান হয়।

বিবিসি যে সব সাক্ষ্যপ্রমাণ পেয়েছে, তা দেখে জাতিসংঘের মানবাধিকার ও কাউন্টার-টেররিজম বিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধি বেন সল পর্যন্ত বলেছেন, অ্যাডাম নামে বাচ্চাটির মৃত্যু ‘যুদ্ধাপরাধ’ বলেই মনে হচ্ছে।

আরেকজন আইন বিশেষজ্ঞ ড. লরেন্স হিল-কওথর্ন বলেছেন, যেভাবে প্রাণঘাতী শক্তির প্রয়োগ করা হয়েছে তা ছিল ‘নির্বিচার’।

ইসরায়েল ডিফেন্স ফোর্স বা আইডিএফ জানিয়েছে কোন পরিস্থিতিতে এই মৃত্যুগুলো ঘটেছে তা ‘পর্যালোচনা করা হচ্ছে’। তবে সেই সঙ্গেই তারা বলেছে, ‘লাইভ ফায়ার (আগ্নেয়াস্ত্র) তখনই ব্যবহার করা হয় যখন কোনও আশু বিপদের মোকাবিলা করতে হয়। এছাড়া কাউকে গ্রেপ্তার করার সময় অ্যারেস্ট প্রোটোকল অনুযায়ী বাকি সব উপায় বন্ধ হয়ে গেলে তখনও করা হয়।’

গত ৭ অক্টোবর গাজা থেকে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে হামাসের চালানো হামলার পর থেকে পশ্চিম তীরেও সহিংসতা তীব্র আকার নিয়েছে। সেখানে ফিলিস্তিনিদের বাড়িতে গ্রাফিতি এঁকে ভাঙচুর চালানো হচ্ছে, বেসামরিক ফিলিস্তিনিদের অস্ত্র দিয়ে ভয় দেখানো হচ্ছে আর ওই এলাকা ছেড়ে প্রতিবেশী জর্ডানে চলে যেতে বলা হচ্ছে এবং ফিলিস্তিনি একজন বন্দুকধারীর দেহ খুঁচিয়ে ক্ষতবিক্ষত করে দেওয়া হয়েছে – বিবিসি এগুলোরও প্রমাণ পেয়েছে।

২৯ নভেম্বরের ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, বাসিল দাঁড়িয়ে ছিল একটি হার্ডওয়ার দোকানের সামনে, যেটির শাটার নামানো ও তালা বন্ধ করা ছিল। পশ্চিম তীরের জেনিন শহরে যখনই ইসরায়েলি সেনা আসে, আশেপাশের দোকানগুলো হুড়মুড় করে বন্ধ হয়ে যায়। পশ্চিম তীর কিন্তু গাজার মতো হামাস নিয়ন্ত্রিত এলাকা নয়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, কাছেই জেনিন শরণার্থী শিবিরে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর চালানো অভিযান থেকে আসা গোলাগুলির শব্দ শোনা যাচ্ছিল।

লিওনেল মেসির বিরাট ভক্ত আর ফুটবল-পাগল অ্যাডাম দাঁড়িয়ে ছিল তার বড় ভাই বাহার সঙ্গে, যার বয়স ১৪। সে দিন রাস্তায় মোট ৯ জনের মতো ছেলে ছিল, যাদের সবাইকে সিসিটিভি ক্যামরার ফুটেজে দেখা গেছে। এরপর যা ঘটেছিল, ওই ক্যামেরাতে তার প্রায় ৩৬০-ডিগ্রি ভিউও ধরা পড়েছে।

কয়েকশো মিটার দূরে তখন গোটাছয়েক সশস্ত্র ইসরায়েলি সামরিক যানের একটি বহর ছিল। হঠাৎই অভিমুখ পাল্টে ওই সেনা বহরটি বাচ্চাগুলোর দিকে এগিয়ে আসতে থাকে। ওই বাচ্চারা স্পষ্টতই অস্বস্তিতে ভুগতে শুরু করে, কয়েকজন দূরেও সরে যেতে থাকে।

ঠিক এই মুহূর্তে তোলা মোবাইল ফোনের ফুটেজে পরে দেখা গেছে, একটি সশস্ত্র সেনা যানের সামনের দরজাটি খুলে যায়। ভেতরে যে সেনা সদস্য ছিল তার একেবারে চোখের সামনে চলে আসে বাচ্চাগুলো। বাসিল তখন রাস্তার একেবারে মাঝখানে, আর অ্যাডাম ওই সৈন্যদের থেকে মাত্র ১২ মিটার দূরে – দৌড়ে পালাচ্ছে। এরপর কম করে হলেও পর পর ১১টা গুলির শব্দ পাওয়া যায়।

পরে ঘটনাস্থল পরীক্ষা করে বিবিসি দেখতে পেয়েছে ওই বুলেটগুলো অনেকটা এলাকা জুড়ে আঘাত করে। চারটি বুলেট আঘাত করে একটি ধাতব পোলে, দুটি বুলেট হার্ডওয়ার স্টোরের শাটারে লাগে, পার্ক করা একটি গাড়ির বাম্পার ফুঁড়ে চলে যায় একটি বুলেট – এবং আরও একটি ছেদ করে দেয় একটি হ্যান্ডরেইল।

বিবিসির হাতে পরে যে মেডিক্যাল রিপোর্ট এসেছে তাতে দেখা গেছে দুটি গুলি সোজা একদম বাসিলের বুক ভেদ করে দেয়।

আর একটি গুলি আট বছর বয়সী অ্যাডামের মাথার পেছন দিকে এসে লাগে, কারণ সে দৌড়ে পালাচ্ছিল। তার বড় ভাই বাহা মরিয়া হয়ে তাকে টেনে আড়াল করার চেষ্টা করেছিল ... রাস্তায় রক্তের ধারা বয়ে যায়, বাহা চিৎকার করে একটা অ্যাম্বুলেন্স ডাকার চেষ্টা করে যায়।

কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে। বাহা পরে বলেছে, অ্যাডাম আর তার বন্ধু বাসিল তার চোখের সামনে মারা যায়।

আমি একদম হতবিহ্বল হয়ে পড়েছিলাম। নিজের কথা তখন আমার মনেই নেই, আমি শুধু ওর সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করে যাচ্ছি। ‘অ্যাডাম, অ্যাডাম’ বলে কত ডাকলাম – কিন্তু ওর প্রাণ ততক্ষণে শরীর ছেড়ে চলে গেছে, ও আর সাড়াই দিল না!, চোখের জলে ভাসতে ভাসতে বাহা পরে বিবিসিকে বলেছে।

গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঠিক আগে বাসিলের ছবিতে দেখা গেছে সে কিছু একটা হাতে ধরে ছিল। জিনিসটা ঠিক কী তা অবশ্য স্পষ্ট নয়। আইডিএফ পরে ঘটনাস্থলে নেওয়া একটি ছবি শেয়ার করেছে, এবং তারা বলেছে ওই জিনিসটি ছিল বিস্ফোরক-ভরা বা এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস।

ঘটনাস্থল পরীক্ষা করে আমরা যে সব সাক্ষ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করেছি তা বেশ কয়েকজন স্বাধীন বিশেষজ্ঞকে দেখানো হয়েছে, যাদের মধ্যে মানবাধিকার আইনজীবীরা, যুদ্ধাপরাধের তদন্তকারী ও একজন কাউন্টার-টেররিজম বিশেষজ্ঞও ছিলেন।

এছাড়া জাতিসংঘ-সহ বিভিন্ন নিরপেক্ষ সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গেও তা শেয়ার করা হয়েছে। অনেকে তাদের মতামত দিয়েছেন নিজের নাম প্রকাশ না-করার শর্তে। এই বিশেষজ্ঞরা একমত হয়েছেন যে এই ঘটনার তদন্ত হওয়া উচিত। কয়েকজন আবার আরও এক ধাপ এগিয়ে বলেছেন, দেখে মনে হচ্ছে এখানে আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন ঘটেছে।

জাতিসংঘের মানবাধিকার ও কাউন্টার-টেররিজম বিষয়ক স্পেশাল র‍্যাপোর্টিয়র বেন সল বলেছেন, বাসিল যদি কোনও এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস হাতে ধরে থাকে, তাহলে তার ক্ষেত্রে আইনসম্মতভাবে প্রাণঘাতী শক্তির প্রয়োগ করা হয়েছে কি না সেটা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে।

‘অ্যাডামের ক্ষেত্রে এটাকে আন্তর্জাতিক মানবিকতা আইনের লঙ্ঘন বলেই মনে হচ্ছে, কারণ ইচ্ছাকৃতভাবে, নির্বিচারে ও অসঙ্গতিপূর্ণভাবে বেসামরিক মানুষের ওপর আক্রমণ চালানো হয়েছে – যেটা একটা যুদ্ধপরাধ এবং মানুষের বেঁচে থাকার অধিকারের লঙ্ঘন’, বলেছেন সল।

ইউনিভার্সিটি অব ব্রিস্টলে সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল ল-র কো-ডিরেক্টর ড: লরেন্স হিল-কওথর্ন বলছেন, ‘ওই সৈন্যরা ছিল সশস্ত্র সামরিক যানে। যদি তাদের সামনে কোনও হুমকি থেকেও থাকে, তাদের উচিত ছিল সে দিকে ধাওয়া করে গিয়ে তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা করা। তার বদলে আপাতদৃষ্টিতে নির্বিচারে যদি প্রাণঘাতী শক্তি প্রয়োগ হয় সেটা আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন।’

আইডিএফ বলেছে, ওই সন্দেহভাজনরা তাদের সৈন্যদের লক্ষ্য করে বিস্ফোরক ছুঁড়তে যাচ্ছিল – যাতে তারা তক্ষুণি প্রবল বিপদের মুখে পড়ত। ‘আমাদের সৈন্যরা গুলিবর্ষণ করে তার জবাব দেয় এবং তাদের সেই ‘হিট’গুলো চিহ্নিত করা হয়েছে’, বলেছে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী।

কিন্তু আমরা বিবিসির পক্ষ থেকে পরে যে ভিডিও প্রমাণ খুঁটিয়ে দেখেছি এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষ্য পেয়েছি, তা থেকে দেখা যাচ্ছে অ্যাডাম মোটেও সশস্ত্র ছিল না এবং সে যখন দৌড়ে পালাচ্ছিল, তখন তার মাথার পেছন দিকে গুলি করা হয়।

আইডিএফ বলেছে, কী পরিস্থিতিতে অ্যাডাম ও বাসিলের মৃত্যু হয়েছে তা ‘পর্যালোচনা করা হচ্ছে’। আইডিএফের কর্মকান্ডের ফলে পশ্চিম তীরে যদি কোনও শিশুর মৃত্যু হয় তাহলে সেরকম প্রতিটি ক্ষেত্রেই তারা রুটিনের মতো এই কাজটি করে থাকে।

তবে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর অনেক সাবেক সদস্য – যারা বিবিসির সংগ্রহ করা ওইসব সাক্ষ্যপ্রমাণ দেখেছেন – তারা জানাচ্ছেন ইসরায়েলের আইনি ব্যবস্থা ওই সৈন্যদেরই রক্ষা করবে বলে তাদের বিশ্বাস, সে তাদের প্রাণঘাতী শক্তির প্রয়োগ সমীচিন হোক বা না হোক!

একজন সাবেক সার্জেন্ট, যিনি ২০১৮-২০২০ সালের মধ্যে পশ্চিম তীরে মোতায়েন ছিলেন, তিনি বলেন, ‘একজন ইসরায়েলি সেনা যদি একজন ফিলিস্তিনিকে জিরো রেঞ্জে গুলি করে মারেন, তবেই কেবল ইসরায়েলে সেটা ‘হত্যা’ বলে গণ্য হবে। যে ধরনের ঘটনায় অ্যাডামের মৃত্যু হয়েছে সেরকম ঘটনায় একজন সৈন্যের বিরুদ্ধে ফৌজদারি তদন্তের সম্ভাবনা কার্যত শূন্য শতাংশ!’

ইসরায়েলি মানবাধিকার সংগঠন 'ইয়েশ দিনে'র তথ্য থেকেও দেখা যায়, ইসরায়েলের সৈন্যদের বিরুদ্ধে যে সব অভিযোগ ওঠে সেগুলোর ১ শতাংশেরও কম ক্ষেত্রে বিচার হয়!

গত ৭ অক্টোবর হামাসের যে হামলায় প্রায় ১২০০ মানুষ নিহত হয়েছিলেন ও ২৫৩জনকে জিম্মি করা হয়েছিল, সেই ঘটনার ফুটেজ ইসরায়েলের মানুষকে ক্রুদ্ধ করে তুলেছিল, স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিল সারা বিশ্বও। সেই তখন থেকেই বিশ্বের মনোযোগ গাজার যুদ্ধ ও সেখানকার মানবিক সঙ্কটের দিকেই কেন্দ্রীভূত। গাজা ভূখন্ডে হামাস-নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়া হিসেব অনুযায়ী সেখানে এ পর্যন্ত ৩৪,০০০ লোক নিহত হয়েছেন।

এর পাশাপাশি ওই একই সময়ে অধিকৃত পশ্চিম তীরেও ইসরায়েলের সামরিক অভিযান বৃদ্ধি পেয়েছে। যার ফলে সেখানকার শিশুদের জন্য গত বছরটি সবচেয়ে প্রাণঘাতী বছর হিসেবে প্রতিপন্ন হয়েছে।

ইউনিসেফের তথ্য অনুসারে, ২০২৩ সালে সেখানে মোট ১২৪জন শিশু নিহত হয়েছে – যার মধ্যে ৮৫জনই মারা গেছে ৭ অক্টোবরের পর। আর ২০২৪ সালে ওই অঞ্চলে ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারী বা সেনাবাহিনীর হাতে মোট ৩৬জন ফিলিস্তিনি শিশু নিহত হয়েছে।

পশ্চিম তীরকে যেহেতু ‘ওয়ার জোন’ বা যুদ্ধক্ষেত্র হিসেবে গণ্য করা হয় না, তাই আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী সেখানে বলপ্রয়োগের ক্ষেত্রে আরও বেশি সংযম দেখানোর কথা।

আইডিএফের ‘রুলস অব এনগেজমেন্ট’টা আসলে ঠিক কী, সেটা তারা কখনও প্রকাশ করে না। তবে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর সাবেক ও কর্মরত সদস্যরা বিবিসিকে জানিয়েছেন, প্রাণঘাতী শক্তির ব্যবহারকে একটা ‘শেষ রাস্তা’ হিসেবেই দেখার কথা – যখন সৈন্যদের জীবনের ওপর সত্যিকারের ও আশু বিপদ থাকে। এক্ষেত্রে ‘অ্যাপ্রোচ’টা হওয়া উচিত পর্যায়ক্রমিক, বা ধাপে ধাপে।

তারা বলছেন, এটা শুরু হয় প্রথমে আরবি ও হিব্রু ভাষায় মৌখিকভাবে সতর্ক করার মধ্যে দিয়ে। তাতে না-হলে কাঁদানে গ্যাসের মতো প্রাণঘাতী নয়, এমন হাতিয়ার ব্যবহার করা হয়। তারপর পায়ে গুলি করা হয়, আর হত্যার জন্য গুলি চালানোটা একেবারে শেষ ধাপ।

পশ্চিম তীরে ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের জানুয়ারির মধ্যে ইসরায়েলের গুলিতে মারা গেছে, ২ থেকে ১৭ বছর বয়সী এমন মোট ১১২টি বাচ্চার মেডিক্যাল রিপোর্ট প্যালেস্টিয়ান অথরিটি পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সুবাদে বিবিসি দেখতে পেয়েছে। এই সব গুলিচালনার ঘটনাগুলো ঠিক কী পরিস্থিতিতে ঘটেছে, তার সব আমরা জানতে না-পারলেও এটা খুবই সম্ভব যে কয়েকটি ক্ষেত্রে ইসরায়েলি সৈন্যদের জীবনের ওপর সত্যিকারের হুমকি ছিল।

তবে আমাদের বিশ্লেষণে দেখা গেছে, এগুলোর মধ্যে ৯৮ শতাংশ ক্ষেত্রেই আঘাত ছিল তাদের শরীরের ওপরের অংশে, যেখানে গুলি লাগলে না বাঁচার সম্ভাবনাই বেশি। এর অর্থ হল, এই ধরনের বেশির ভাগ ঘটনায় গুলিতে আহত করার বদলে প্রাণ কেড়ে নেওয়াই ছিল সৈন্যদের উদ্দেশ্য।

ফলে পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি সৈন্যরা তাদের ‘রুলস অব এনগেজমেন্ট’ আদৌ অনুসরণ করছেন কি না এবং প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের ক্ষেত্রে কী ধরনের সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে, তা নিয়ে যথারীতি প্রশ্ন উঠছে।

পশ্চিম তীরে এই সামরিক অভিযানগুলোর কী প্রভাব পড়ছে, তা নিয়ে পাঁচ সপ্তাহ সময়কাল ধরে খতিয়ে দেখার পর আমরা এমন বহু ঘটনার প্রমাণ পেয়েছি, যা সেনাবাহিনীর আচরণ নিয়ে খুব গুরুতর প্রশ্ন তুলে দেয়।

২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসে তুলকার্ম শরণার্থী শিবিরে ইসরায়েলের একটি ৪৫-ঘণ্টা ব্যাপী সামরিক অভিযানও বিবিসি প্রত্যক্ষ করেছে, যেখানে তারা একটি সশস্ত্র গোষ্ঠীকে আক্রমণের নিশানা করেছিল। স্থানীয়ভাবে ওই গোষ্ঠীটি ‘দ্য রেজিস্ট্যান্স’ নামে পরিচিত।

ওই অভিযানের পর বহু ফিলিস্তিনি আমাদের বলেছেন, সৈন্যরা বন্দুকের নলের সামনে ধরে তাদের হুঁশিয়ারি দিয়েছে এবং পার্শ্ববর্তী জর্ডানে চলে যেতে বলেছে। আইডিএফ জানিয়েছে যে বেসামরিক লোকজনকে হুমকি দেওয়া হয়েছে, এরকম কোনও অভিযোগ এলে তারা খতিয়ে দেখবে।

হেথাম নামে ১২ বছর বয়সী একটি কানাডিয়ান-ফিলিস্তিনি বাচ্চা ছেলে জানিয়েছে যে তাকে একজন ইসরায়েলি সৈন্য গলায় ছুরি ধরে হুঁশিয়ারি দিয়েছে। হেথামের বাবা ও ভাইও তার এই বক্তব্যকে সমর্থন করেছেন।

ওই ক্যাম্পে একটি পরিবারের বাসায় আমরা দেখেছি আল-আকসা মসজিদের একটি ম্যুরালকে ছিন্নভিন্ন করা হয়েছে – যেটি ইসরায়েলি সৈন্যদেরই কাজ বলে তারা বলছেন। আল-আকসা মসজিদকে ইসলামের তৃতীয় পবিত্রতম তীর্থস্থান বলে গণ্য করা হয়।

পাশের একটি দেওয়ালে স্প্রে-পেইন্ট করে আঁকা ছিল ‘স্টার অব ডেভিডে’র চিহ্ন। আরেকটিতে হিব্রু ভাষায় লেখা ছিল ‘৭ অক্টোবর’ – স্পষ্টতই হামাসের হামলার প্রসঙ্গ টেনে আনতে।

ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী বলেছে, যে এই ধরনের ভ্যান্ডালিজম ‘আইডিএফ মূল্যবোধের পরিপন্থী’ এবং তারা তাদের সৈন্যদের কাছ থেকে এরকম আচরণ প্রত্যাশা করে না।

১২ বছর বয়সী হেথাম বলছিল, সৈন্যরা তাদের বাড়িতে ‘সব কিছু’ ভেঙে খানখান করে দিয়েছে এবং ওই সৈন্যদেরই একজন তার গলায় ছুরি ধরে হুমকি দিয়েছে। তাদের বাড়ির দোতলায় সব ছত্রখান করা হয়েছে, কিচেন ক্যাবিনেটগুলো ভেঙে চুরমার করা হয়েছে, বাচ্চাদের খেলনাগুলো ছুঁড়ে নষ্ট করে ফেলা হয়েছে, টেলিভিশন সেটটাও আস্ত নেই। গোটা ক্যাম্প জুড়ে একটার পর একটা বাড়িতে হুবুহু এই একই দৃশ্য।

জেরুজালেমে ডায়াকোনিয়া ইন্টারন্যাশনাল হিউম্যানিটারিয়ান ল সেন্টারের সিনিয়র আইন বিশেষজ্ঞ ড. এইটান ডায়মন্ড বলছেন, ‘এই ধরনের ভ্যান্ডালিজম, যেমন দেওয়ালে স্প্রে করে স্টার অব ডেভিড বা ‘৭ অক্টোবর’ আঁকা – এগুলো পরিষ্কার বেআইনি।’

তুলকার্ম ক্যাম্পে একটি শিশুর সামনে ছুরি ধরে, কিংবা আরও অনেককে বন্দুকের নলের সামনে যেভাবে হুমকি দেওয়া হয়েছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে – সেটাও আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন হতে পারে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

আইডিএফের ওই একই অভিযানে সৈন্যরা একজন সন্দেহভাজন ফিলিস্তিানি যোদ্ধাকেও গুলি করে মারে, যে হয়তো নিজের শরীরে বিস্ফোরক বহন করছিল। প্রত্যক্ষদর্শীরা আমাদের বলেছেন, এরপর তার শরীরে মূত্রত্যাগ করা হয়, বারবার আঘাত করা হয় এবং শেষে বেঁধে ফেলে রাস্তা দিয়ে দেহটা টানতে টানতে নিয়ে যাওয়া হয়।

বিবিসিকে একটি বেঁধে ফেলা লাশের ছবিও দেখানো হয়েছিল। রক্তের দাগ লেগে থাকা ছবির ওই জায়গাটি ভাল করে খুঁটিয়ে দেখে আমরা দেখতে পাই কাপড়ের টুকরো আর তার তখনও সেখানেই পড়ে আছে। ছবিতে যে ধরনের জিনিস দিয়ে লাশটিকে বাঁধা হয়েছে, পড়ে থাকা জিনিসগুলোও তার সঙ্গে মিলে যায়।

আমাদের এই সব সাক্ষ্যপ্রমাণও স্বাধীন বিশেষজ্ঞদের কাছে পেশ করা হয়। ইউনিভার্সিটি অব জেনেভা-তে আন্তর্জাতিক আইনের একজন বিশেষজ্ঞ প্রফেসর মার্কো সাসোলি বলেন, যদি ধরেও নিই একজনকে আইনসম্মতভাবেই হত্যা করা হয়েছে, তার পরেও নিহতের মরদেহকে অবশ্যই মর্যাদা দিতে হবে। আপনারা যা বলছেন সেটা আন্তর্জাতিক মানবিকতা আইনের লঙ্ঘন, এমন কী তা যুদ্ধাপরাধের পর্যায়েও পড়তে পারে।

আইডিএফ বলেছে, ওই নিহত যোদ্ধার দেহ পরীক্ষা করে তাতে বিস্ফোরক পাওয়া যায় এবং রেড ক্রেসেন্টের কর্মীরাও ওই দেহটি ছুঁতে অস্বীকার করে। ‘এই কারণেই আইডিএফ সেনারা নিজেদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে এবং তার শরীরের নিচে আরও কোনও অস্ত্রশস্ত্র রাখা আছে কি না তা দেখতে তার হাত ও পা-দুটো বেঁধে ফেলতে বাধ্য হয়’, জানিয়েছে তারা।

যে সাবেক ইসরায়েলি সেনারা বিবিসির এই সব সাক্ষ্যপ্রমাণ পর্যালোচনা করেছেন তাদের মধ্যে কয়েকজন বলেছেন, তারা এটা ভেবে আতঙ্কিত যে পশ্চিম তীরে আইডিএফ অভিযানের এই ধরনের সংস্কৃতি ফিলিস্তিনিদের সশস্ত্র প্রতিরোধকে আরও উসকে দেবে।

এদেরই একজনের কথায়, ‘ফিলিস্তিনিদের রোজ যেভাবে সেনাবাহিনীর সঙ্গে মোকাবিলা করতে হয়, তারপরও তারা স্বাভাবিক জীবনযাপন করে যাবে যেন কিছুই হয়নি – এবং এই বাস্তবতার মধ্যে বাস করা লোকগুলো হাতে অস্ত্র তুলে নেবে না – এটা ধরে নেওয়াটা আসলে খুবই বোকার মতো চিন্তাভাবনা, আর সেটা মানবিকতার ভাবনা বিবর্জিতও বটে! অবস্থা আসলে ক্রমশই আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে!’ বিবিসি বাংলা

নওগাঁয় আ.লীগ নেতার প্রচারে যাওয়া ছাত্রদলের ২ নেতাকে শোকজ

আবু হোরাইরা বিল্লা (বাঁয়ে) ও আরিফ হোসেন সৌরভ। ছবি: ঢাকাপ্রকাশ

নওগাঁর পত্নীতলায় প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে ঘোড়া মার্কা প্রার্থী আব্দুল খালেক চৌধুরীর নির্বাচনী প্রচারণায় অংশগ্রহণ করায় ছাত্রদলের দুই নেতাকে শোকজ করা হয়েছে। আব্দুল খালেক চৌধুরী উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি।

বৃহস্পতিবার (২ মে) নওগাঁ জেলা ছাত্রদলের দপ্তর সম্পাদক ফরহাদ হোসেনের স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে তাদের কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়।

শোকজ দুই ছাত্রদলের নেতা হলেন- নজিপুর পৌর ছাত্রদলের যুগ্ম আহবায়ক আরিফ হোসেন সৌরভ ও নজিপুর সরকারি কলেজ ছাত্রদলের যুগ্ন আহবায়ক আবু হোরাইরা বিল্লা।

নোটিশে উল্লেখ করা হয়, পত্নীতলা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আপনি একটি প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণায় অংশগ্রহণ করেছেন। দল যেখানে নির্বাচন থেকে দূরে আছে যা দলীয় শৃঙ্খলা। এমন অবস্থায় আপনার বিরুদ্ধে দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকায় কেন সাংগঠনিক চূড়ান্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না চিঠি পাওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সরাসরি উপস্থিত হয়ে নওগাঁ জেলা ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নিকট লিখিত জবাব প্রদানের জন্য নির্দেশ প্রদান করা হইল ৷ অন্যথায় আপনার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক চূড়ান্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

শোকজের বিষয়ে জানতে চাইলে ছাত্রদল নেতা বিল্লা বলেন, সবাই জানে যে মন্টু চৌধুরীর সাথে বেশি চলাফেরা। ওনার সাথে থাকি, একটু ঘোরাঘুরি করছি, সেজন্য জেলা থেকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে।

এ প্রসঙ্গে শুক্রবার (৩ মে) দুপুরে নওগাঁ জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক মামুন বিন ইসলাম দোহা মুঠোফেনে ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, ‘নজিপুর পৌর ছাত্রদলের যুগ্ম আহবায়ক আরিফ হোসেন সৌরভকে আমরা ভিডিওতে প্রচারণায় অংশ নিতে দেখতে পাই। এই জন্য আমরা তাকে বহিষ্কার করবো এবং নজিপুর সরকারি কলেজ ছাত্রদলের যুগ্ন আহবায়ক আবু হোরাইরা বিল্লা ফোন করে পরবর্তীতে এমন ভুল হবেনা জানিয়ে আমাদের কাছে ক্ষমা চেয়েছে।’

বলিউডের ছবিতে গাইলেন আসিফ আকবর

গায়ক আসিফ আকবর। ছবি: সংগৃহীত

দেশের জনপ্রিয় গায়ক আসিফ আকবরের ক্যারিয়ারে যোগ হলো নতুন পালক। এবার তার মুম্বাই ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে অভিষেক হতে যাচ্ছে। বৃহস্পতিবার (২ মে) রাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে তিনি নিজেই এ কথা জানিয়েছেন।

গায়ক আসিফ আকবর। ছবি: সংগৃহীত

ফেসবুক পোস্টে আসিফ লিখেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ। মুম্বাই ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে আমার অভিষেক ঘটেছে। প্রিয় বাংলাদেশের পতাকা উড়িয়েছি। আল্লাহ মহান। ভালোবাসা অবিরাম।’

এমন সুখবর পেয়ে বাংলা গানের এ যুবরাজের ভক্ত ও শুভাকাঙ্খিরা তাকে শুভ কামনা জানিয়েছেন।

প্রসঙ্গত, কয়েকদিন আগে মুম্বাই গেছেন আসিফ আকবর। সেখানে অস্কারজয়ী ভারতীয় সুরকার এ আর রহমানের স্টুডিওতে তার গান রেকর্ড হয়। আর সে কথা তিনি এক ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে ভক্ত-অনুরাগীদের সঙ্গে শেয়ারও করেন।

সর্বশেষ সংবাদ

ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার প্রমাণ পেয়েছে বিবিসি!
নওগাঁয় আ.লীগ নেতার প্রচারে যাওয়া ছাত্রদলের ২ নেতাকে শোকজ
বলিউডের ছবিতে গাইলেন আসিফ আকবর
যাত্রীবাহী বাস উল্টে ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনা, নিহত ২০
১০ টাকায় টিকিট কেটে চোখ পরীক্ষা করালেন প্রধানমন্ত্রী
এসএসসির ফল প্রকাশ ১২ মে
গাজীপুরে দুই ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষ
কারামুক্ত হলেন মামুনুল হক
রোমাকে হারিয়ে ইউরোপার ফাইনালে এক পা লেভারকুসেনের
অপহৃত ১২ জেলেকে ছেড়ে দিল আরাকান আর্মি
জাতিসংঘে বাংলাদেশের উত্থাপিত ‘শান্তির সংস্কৃতি’ রেজ্যুলেশন গৃহীত
আজ তিনশ ফিট এলাকায় বগুড়ার ঐতিহ্যবাহী আলু ঘাটি উৎসব
দুপুরের মধ্যে ঝড়ের আশঙ্কা, ৬ জেলায় সতর্কসংকেত
আজ বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস
যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিল ইরান
বজ্রপাতে পাঁচ জেলায় প্রাণ গেল ১১ জনের
যুগ্ম সচিব মর্যাদার ৩ জনকে বদলি
টিকেট নিয়ে সেনা সদস্য-টিটিই'র বাকবিতন্ডায় পঞ্চগড় এক্সপ্রেস ট্রেনে ভাংচুর, আহত ৫
সারা দেশে আরও ২ দিন হিট অ্যালার্ট জারি
জমি নিয়ে বিরোধ: স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতাকে কুপিয়ে হত্যার অভিযোগ