নগরজুড়ে কোরবানির পশু জবাই, পরিচ্ছন্নতায় প্রস্তুত ২০ হাজারের বেশি কর্মী

ছবি: সংগৃহীত
পবিত্র ঈদুল আজহার সকালে হালকা বৃষ্টি থাকলেও রাজধানীতে কোরবানির আমেজে কোনো ভাটা পড়েনি। জাতীয় ঈদগাহসহ নগরজুড়ে পাড়া-মহল্লার মসজিদগুলোতে সকাল ৭টা থেকে ৮টার মধ্যে ঈদের নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। জাতীয় ঈদগাহে অনুষ্ঠিত প্রধান জামাতে সর্বস্তরের মানুষ অংশ নিয়ে দেশ ও জাতির কল্যাণ কামনায় মোনাজাতে অংশ নেন।
ঈদের নামাজ শেষে শুরু হয় পশু কোরবানির উৎসব। এবার ঢাকা সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে নির্দিষ্ট কোরবানি স্থানের ঘোষণা না থাকায় আগের মতোই অলিগলি ও রাস্তায় পশু জবাইয়ের দৃশ্য দেখা গেছে। আবহাওয়া অফিস আগেই জানিয়েছিল, ঈদের দিন দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। তবে সকালে বৃষ্টির বিড়ম্বনা না থাকায় নির্বিঘ্নে কোরবানি কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে।
ঢাকায় এবার প্রায় ৭ লাখ পশু কোরবানি হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে, যার ফলে উৎপন্ন হতে পারে প্রায় ৫০ হাজার টন বর্জ্য। এই বিপুল পরিমাণ বর্জ্য দ্রুত অপসারণে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন সম্মিলিতভাবে প্রায় ২০ হাজার ২৬৭ জন পরিচ্ছন্নতাকর্মী নিয়োজিত রেখেছে, যাদের ঈদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে।
দক্ষিণ সিটির প্রশাসক শাহজাহান মিয়া জানিয়েছেন, “ঈদের দিন বিকাল থেকেই শুরু হবে বর্জ্য অপসারণ কার্যক্রম। আমরা প্রতিশ্রুতি দিয়েছি, ১২ ঘণ্টার মধ্যে পুরো শহর পরিষ্কার করব।” তিনি আরও বলেন, “যথাযথ ব্যবস্থাপনায় প্রস্তুত রয়েছে প্রায় ১০ হাজার পরিচ্ছন্নতাকর্মী এবং প্রয়োজনীয় সংখ্যক গাড়ি।” দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ইতোমধ্যে নাগরিকদের মাঝে প্রায় ১৩ লাখ ৯০ হাজার পলিব্যাগ বিতরণ করেছে এবং হটলাইন নম্বর ০১৭০৯-৯০০৮৮৮ ও ০২২২৩৩৮৬০১৪ চালু রেখেছে।
উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ বলেন, “ঈদের দিনেই আমরা দিনের মধ্যেই বর্জ্য অপসারণ করে শহর পরিষ্কার রাখব।” তিনি জানান, ডিএনসিসির ১০ হাজার কর্মী এ কাজে নিয়োজিত থাকবেন এবং ২২৪টি ডাম্প ট্রাক, ৩৮১টি পিকআপ, ২৪টি পেলোডারসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম প্রস্তুত রয়েছে। উত্তর সিটি করপোরেশন ধারণা করছে, কোরবানির পর প্রায় ২০ হাজার টন বর্জ্য তৈরি হবে। এই বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য বিতরণ করা হয়েছে সাড়ে ১২ লাখ পলিব্যাগ, আড়াই হাজার বস্তা ব্লিচিং ও চার হাজার ক্যান স্যাভলন। এছাড়া, পরিবেশসম্মত বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অংশ হিসেবে আমিন বাজারে দুটি পরিখা খনন করা হয়েছে। কন্ট্রোল রুমের নম্বর +৮৮০২৫৫০৫২০৮৪ ও ১৬১০৬ চালু রয়েছে নাগরিক সহায়তার জন্য।
এদিকে, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এক বিজ্ঞপ্তিতে নাগরিকদের প্রতি সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। যত্রতত্র পশু জবাই ও বর্জ্য ফেলা পরিবেশ দূষণ, স্বাস্থ্যঝুঁকি ও জনদুর্ভোগ তৈরি করতে পারে বলে জানিয়ে, ব্যক্তিগত সুরক্ষা উপকরণ ব্যবহার, নির্দিষ্ট স্থানে বর্জ্য ফেলা ও মাটিচাপা দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে মন্ত্রণালয়। এছাড়া, মাংস বিতরণ ও বর্জ্য অপসারণে প্লাস্টিকের পরিবর্তে বায়োডিগ্রেডেবল ব্যাগ ব্যবহারে উৎসাহিত করা হয়েছে।
সকলের সম্মিলিত সচেতনতাই পারে এই উৎসবের পরিবেশকে পরিচ্ছন্ন ও সুস্থ রাখতে—এটাই প্রশাসনের প্রত্যাশা।
