ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনিকে 'লজ্জাজনক মৃত্যুর' হাত থেকে রক্ষা করলেও, তিনি ধন্যবাদ জানাননি— এমন বিস্ফোরক দাবি করেছেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ট্রাম্প বলেন, খামেনির অকৃতজ্ঞতা ভবিষ্যতে চড়া মূল্য দিয়ে দিতে হতে পারে। পাশাপাশি তিনি ইরানকে সতর্ক করেছেন যে, তারা যদি পারমাণবিক অস্ত্র নির্মাণের পথে এগোয়, তবে তিনি আরও জোরালো সামরিক হামলার নির্দেশ দেবেন।
শুক্রবার (২৭ জুন) নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম Truth Social-এ এক পোস্টে ট্রাম্প লেখেন, “আমি খামেনিকে অত্যন্ত জঘন্য ও অপমানজনক মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচিয়েছিলাম। কিন্তু তিনি তো ধন্যবাদটুকুও দিলেন না।”
এই মন্তব্য করেন ইসরায়েলের সঙ্গে ১২ দিনের যুদ্ধ শেষে ইরান নিজেদের বিজয় ঘোষণা করার প্রতিক্রিয়ায়। ইরানি সর্বোচ্চ নেতার এমন বক্তব্যকে ট্রাম্প “মিথ্যা ও বোকামিপূর্ণ” বলেও উল্লেখ করেন।
ট্রাম্প দাবি করেন, ইরানে সাম্প্রতিক হামলার সময় খামেনি কোথায় আশ্রয় নিয়েছিলেন, তা তাঁর জানা ছিল। এমনকি ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর একটি অংশ আয়াতুল্লাহ খামেনিকে হত্যার পরিকল্পনা করেছিল বলেও জানান তিনি। সেই পরিকল্পনা নস্যাৎ করে তিনি খামেনিকে জীবনদান করেন— এমন ইঙ্গিত দেন ট্রাম্প।
ট্রাম্পের এসব মন্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে তেহরান। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম X-এ এক পোস্টে লিখেন, “প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যদি সত্যিই শান্তি ও চুক্তি চান, তাহলে আয়াতুল্লাহ খামেনির বিরুদ্ধে এমন অসম্মানজনক ভাষা বন্ধ করতে হবে। এতে শুধু আমাদের নেতাকে নয়, তাঁর কোটি ভক্তের অনুভূতিকেও আঘাত করা হচ্ছে।”
উল্লেখ্য, চলতি মাসের শুরুতে ইসরায়েল অতর্কিতে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে হামলা চালায়। জবাবে ইরানও পাল্টা হামলা শুরু করে। যুক্তরাষ্ট্র পরে মধ্যস্থতায় এগিয়ে এলে ১২ দিনের সংঘাত থামে। কিন্তু এই সময়টায় ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু ও তার নিরাপত্তা পরিষদ ইরানের সর্বোচ্চ নেতাকে হত্যার পরিকল্পনা করে বলেও পশ্চিমা গোয়েন্দা সূত্রগুলো ইঙ্গিত দিয়েছিল।
নেতানিয়াহু বলেছিলেন, “খামেনিকে হত্যা করতে পারলেই পরমাণু যুদ্ধের ঝুঁকি কমবে এবং ইসরায়েল-ইরান শত্রুতা একধরনের ‘সমাপ্তি’র মুখে পড়বে।”
বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের এই মন্তব্য কেবল অতীত ঘটনার পর্যালোচনা নয়, বরং এটি আবারও মধ্যপ্রাচ্যের উত্তেজনাকে উসকে দিতে পারে।
আন্তর্জাতিক মহল পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছে, কারণ যুক্তরাষ্ট্র-ইরান সম্পর্কের টানাপড়েন ইতিমধ্যে পারমাণবিক ইস্যুকে ঘিরে নতুন করে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। খামেনিকে ঘিরে এমন স্পর্শকাতর মন্তব্য ভবিষ্যতের কূটনৈতিক সম্পর্ককেও জটিল করে তুলতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।