অর্থনীতি ঠিক রাখতে সুশাসন প্রতিষ্ঠার আহ্বান সিপিডির
বাজেটে বাস্তবসম্মত লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করার প্রস্তাব করেছেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন।
তিনি বলেন, ‘আগের চেয়ে পরিস্থিতি খারাপ হওয়ায় চলতি অর্থবছরে ৭৫ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আহরণ কম হবে। ঝড় ও ঝুঁকিও রয়েছে একইসঙ্গে। তাই অর্থনীতিকে ঠিক রাখতে হলে সুশাসন ও আইনশৃঙ্খলা নিশ্চিত করা জরুরি।’
সোমবার (২৬ মার্চ) ধানমন্ডিতে সিপিডি অফিসের সম্মেলন কক্ষে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট: সিপিডির সুপারিশ উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
ড. ফাহমিদা বলেন, জীবনযাত্রার ব্যয় ক্রমেই বাড়ছে। তাই আগামী বাজেটে ব্যক্তিপর্যায়ে করমুক্ত আয়ের সীমা সাড়ে ৩ লাখ টাকা করা দরকার। আবার বিভিন্ন ক্ষেত্রে যে সুবিধা দেওয়া হচ্ছে তা যেন আজীবন না থাকে সে ব্যবস্থাও সরকারকে করা দরকার।’
এছাড়া অপ্রদর্শিত যে অর্থ থেকে যাচ্ছে সেটাকেও কাজে লাগাতে হবে। তা ছাড়া, রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে করজালের সীমা বাড়াতে হবে। ই-কমার্স এর ক্ষেত্রেও কর, অনলাইন পেমেন্টেও কর আরোপ করার প্রস্তাব করা হয়। কারণ, এটা শুধু দেশে নয়ম আন্তর্জাতিকভাবে হচ্ছে।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের অজুহাতে বিশ্ব পরিস্থিতির কথা বলে গত মার্চ মাস থেকে অভ্যন্তরীণ বাজারে প্রায় প্রতিটি জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে। কিন্তু বিশ্ব বাজারে দাম কমলেও দেশের বাজার ব্যবস্থা খারাপের দিকে। এর ফলে একদিকে
মানুষের ক্রয় ক্ষমতা কমছে, অন্যদিকে বাজারে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। এদিকে, বিশ্ব বাজারে দাম কমার ফলে দেশে অনেক পণ্যের বাড়ার কথা না, তারপরও বাড়ছে।
আমদানি করা চিনিতে শুল্ক কমিয়েও সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। সয়াবিন তেলের দামও বিশ্ববাজারে কমছে। কিন্তু দেশের বাজারে তার প্রতিফলন নেই।
আবার ভর্তুকির ক্ষেত্রেও যৌক্তিকতা বিবেচনা করার আহ্বান জানান তিনি। কারণ, ভর্তুকি অর্থনীতিকে চাপে ফেলে। মোট জিডিপির ১ দশমিক ৯ শতাংশ বা সরকারের মোট ব্যয়ের ১২ শতাংশ যাচ্ছে ভর্তুকিতে। তবে নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য খাদ্যপণ্যসহ নগদ সহায়তাও দেওয়া দরকার বলে জানান তিনি।
আগামী বাজেটে বাস্তবসম্মত লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করতে হবে। আগামীর বাজেট হবে নির্বাচনীর বাজেট। তাই এখানে যেন কোনোক্রমেই উৎপাদনমুখী ও কর্মসংস্থানবিমুখ না হয়, যোগ করেন তিনি।
এই অর্থনীতিবিদ বলেন, সরকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আমদানি টাইট করলেও ব্যালান্স অব পেমেন্ট ঝুঁকিতে রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক ডলার সংকট মেটাতে এ পর্যন্ত সাড়ে ১০ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছে। এ জন্য রিজার্ভ কমে যাচ্ছে। বিদেশে বহু লোক গেলেও সেভাবে রেমিট্যান্স দেশে আসছে কম।
তিনি বলেন, ‘অর্থনীতিতে স্বচ্ছতা আনতে বা পরিস্থিতি ঠিক করতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) কিছু শর্ত দিয়েছে। সে ব্যাপারগুলো আমরাও আগে থেকে বলে আসছি। মুদ্রাবাজারকে (ডলার) বাজারের মতো ছেড়ে দিতে হবে।’
ড. ফাহমিদা বলেন, ‘অর্থনীতিকে ঠিক রাখতে অভ্যন্তরীণ নীতিমালা দরকার। স্থিতিশীলতা ও শৃঙ্খলা না আসলে অর্থনীতির চাপ কমবে না। কারণ, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বড় আকারের লক্ষ্যমাত্রা ধরলেও রাজস্বতে পিছিয়ে যাচ্ছে। ঠিকমতো আদায় হচ্ছে না। আবার বিভিন্ন ক্ষেত্রে শুল্ক কমানো হচ্ছে। আবার মূসকও কমে যাচ্ছে। তাই এই অর্থবছরে লক্ষ্যের চেয়ে ৭৫ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব কম আদায় হবে। যেটা আগে ৬৪ হাজার কোটি টাকা কম আদায় হবে বলে প্রাক্কলন করেছিলাম।’
তিনি আরও বলেন, সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডতেও ধীরগতি দেখা দিয়েছে। ১০টি মন্ত্রণালয়ে সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ দেওয়া হলেও তা ব্যয় করা যাচ্ছে না। আবার বিদেশি ঋণের প্রকল্পও বাস্তবায়ন হচ্ছে কম।
জেডএ/এমএমএ/
জেডএ/এমএমএ/