শনিবার, ১৮ মে ২০২৪ | ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
Dhaka Prokash

ধারাবাহিক উপন্যাস: পর্ব ১

দ্য ফার্স্ট ম্যান

প্রথম ভাগ: পিতার সন্ধানে

পাথুরে পথে গড়িয়ে চলা ওয়াগনের মাথার উপর দিয়ে বড় বড় ঘন মেঘের পাহাড় গোধূলির গা বিদীর্ণ করে ছুটে চলেছে পূর্বদিকে। আটলান্টিকের উপর মেঘেদের শরীর ভরে উঠেছে প্রায় তিন দিন আগেই। পশ্চিম দিক থেকে বয়ে আসা বাতাসের অপেক্ষায় ছিল অনড়। তারপর আস্তে আস্তে চলা শুরু করে ক্রমেই দ্রুত থেকে দ্রুততর গতি পেয়েছে। শরতের মৃদু আলোকিত পানির উপর দিয়ে উড়ে চলে এসেছে গোটা মহাদেশের ওপর। মরক্কোর পাহাড়চূড়ায় এসে টুকরো টুকরো হয়ে আবার দলবদ্ধভাবে একত্রিত হয়েছে আলজেরিয়ার উঁচু মালভূমিতে। আর এখন তিউনিসিয়া সীমান্তে এসে চেষ্টা করছে তাইরেনীয় সমুদ্রের জলে গলে একাকার হতে।

বিশাল দ্বীপের মতো হাজার হাজার কিলোমিটার দূরত্বের ভ্রমণ শেষে উত্তর দিকে বহমান সমুদ্র জল আর দক্ষিণ দিকে বহমান জমাট বালির উর্মিমালার কোলে আশ্রয় পেয়ে মেঘেদের গতিবেগ হাজার বছরের সাম্রাজ্য আর মানব অধ্যুষিত নামহীন এই দেশটার উপর ক্লান্ত হয়ে পড়ছে। কোনো কোনো টুকরো সবিরাম বৃষ্টির ফোঁটা হয়ে টুপ টুপ ঝরে পড়ছে এই চারজন ভ্রমণকারীর মাথার উপরের মোটা কাপড়ের ছাউনির উপর।

রাস্তাটার সুপরিসর অবয়ব থাকলেও উপরিভাগটা মজবুত নয়। ঘোড়ায় টানা গাড়িটা চলার সময় ক্যাচ ক্যাচ শব্দ হচ্ছে। যখন তখন ছোট ছোট পাথরের টুকরোর সঙ্গে ধাতব চাকার বেষ্টনীতে ঘষা লেগে কিংবা ঘোড়ার খুরের আঘাতে ফুলকি জ্বলে উঠছে; ছিটকে উঠে বাড়ি খাচ্ছে গাড়ির কাঠ-শরীরের সঙ্গে। কখনোবা বোবা শব্দ তুলে ডুবে যাচ্ছে রাস্তার খানাখন্দের নরম মাটিতে। ইতিমধ্যে ছোট ঘোড়া দুটো মাঝে মধ্যে অপারগতায় শ্লথ হলেও সামনের দিকে এগিয়ে চলেছে ভারী গাড়িটাকে টেনে নিয়ে; দুলকি চালে মিশ্র পদক্ষেপে পথটাকে তারা পিছে ফেলে চলেছে। কোনোটা হয়তো কখনো নাসারন্ধ্র থেকে ফোঁস ফোঁস আওয়াজ তুলে ভারী নিশ্বাস ছাড়তে ছাড়তে পিছিয়ে পড়ছে; ঠিক তখনই আরব গাড়োয়ান তার পিঠের ওপরের লাগামে টান মারছে আর পশুটা চলার ছন্দ ফিরিয়ে আনায় সচেষ্ট হচ্ছে।

চালকের পাশে প্রথম আসনে বসা ত্রিশ বছর বয়সী ফরাসি লোকটা তার সামনের পশু দুটোর ছন্দময় চলমান পেছনের অংশকে ভাসমান নিরিখে দু-এক পলক দেখে নিয়েছে। মাঝারি উচ্চতার এবং গাট্টাগোট্টা চেহারার লোকটার মুখটা লম্বাটে, ললাট চওড়া এবং গোলাকার, চোয়াল শক্ত আর চোখ নীল। মৌসুম আগে আগে শুরু হলেও লোকটার পরনে নিখুঁত করে বোনা তিন বোতামঅলা জ্যাকেট, ওই সময়ের কেতা অনুযায়ী গলা পর্যন্ত তুলে এনে আঁটো করে বাঁধা; তার ছোট করে ছাঁটা চুলের মাথার ওপরে পরেছে উদ্ভিদের শাঁস থেকে তৈরি হেলমেট। মাথার উপরে আচ্ছাদিত মোটা কাপড়ের উপর দিয়ে ঘন বৃষ্টি শুরু হলে গাড়ির পেছনের দিকে তাকিয়ে লোকটা জোর গলায় জিজ্ঞেস করে, ঠিক আছো তো?

পুরনো বাক্স-পেটরা আর আসবাবপত্রের স্তূপের মাঝে সাঁটানো দ্বিতীয় আসনটাতে বসে আছে একজন নারী, অন্য পোশাকাদি মলিন হলেও গায়ে জড়িয়ে আছে একটা পশমী মোটা শাল। ক্ষীণ একটা হাসি ছড়িয়ে দিয়ে সে বলল, হ্যাঁ, ঠিক আছি। বলার সময় তার অঙ্গভঙ্গিতে একটা ক্ষমাপ্রার্থী ভাব প্রকাশ পেল। চার বছর বয়সী একটা ছেলে তার গায়ে হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে আছে। মহিলার স্বাভাবিক সুন্দর অবয়বের চেহারায় ছড়িয়ে আছে কোমলতা, বাদামী চোখে তার উষ্ণ চাহনি, নাকটা তার ছোট তবে খাড়া, স্পেনীয় নারীদের মতো মাথাভর্তি ঢেউ খেলানো কালো চুল; কিন্তু ওই মুখাবয়বে কী একটা অস্বাভাবিক ইঙ্গিত রয়েছে। ক্লান্তির মতো ক্ষণিকের কোনো কালো ছায়া তার মুখের উপর পড়েছে এমন নয়। তার চাহনির উৎস যেন দূরে কোথাও, এ চাহনি যেন মিষ্টি কোনো অমনোযোগের।

এ রকমটি দেখা যায় কোনো নির্বোধের মুখে। তবে এ চাহনি যেন থেকে থেকে তার মুখের সৌন্দর্যের উপর ছড়িয়ে পড়ছে। মাঝে-মাঝেই অকারণ ভয়ের মিশ্রণ ঘটছে তার চিত্তহারী চাহনির ভেতর দিয়ে প্রকাশিত কোমলতার সঙ্গে। তবে সেই ভয়টা নিমিষেই কেটেও যাচ্ছে। তার কাজ করে ক্ষয়ে যাওয়া গ্রন্থিল হাতের মসৃণ অংশ দিয়ে স্বামীর পিঠ স্পর্শ করে মহিলা বলে, ঠিক আছে, ঠিক আছে। অবশ্য সঙ্গে সঙ্গে হাসি থামিয়ে মাথার উপরের মোটা কাপড়ের ছাউনির তলা দিয়ে সামনের দিকে তাকিয়ে দেখতে পায় রাস্তার উপর ইতিমধ্যে জমে উঠা কাদা চিকচিক করে ওঠা শুরু করেছে।

গাড়োয়ানের মাথায় পাগড়ির হলুদ রঙের মোটা রশির কারণে তার চেহারায় প্রসন্ন একটা ভাব ফুটে উঠেছে। পায়ের গুলের ওপরে সাজানো প্রশস্ত আসনে বসা ঢিলা পাজামায় তাকে আরও বেশি গাট্টাগোট্টা দেখাচ্ছে। স্বামী লোকটা আরব গাড়োয়ানের দিকে ফিরে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, আমাদের কি আরও অনেক দূর যেতে হবে?

বিরাট সাদা গোঁফের আড়ালে হাসি ছড়িয়ে দিয়ে গাড়োয়ান বলে, আর আট কিলোমিটার গেলেই পৌঁছে যাবেন।

মুখে হাসি না থাকলেও মনোযোগী দৃষ্টিতে স্বামী লোকটা তার স্ত্রীর দিকে তাকায়। তার দৃষ্টি এখনো সামনের রাস্তায় নিবদ্ধ। লোকটা গাড়োয়ানকে বলে, লাগাম আমার হাতে দিন।

–আপনার যা ইচ্ছে, বলে বৃদ্ধ গাড়োয়ান তার হাতে লাগাম দিয়ে পাশে ফাঁকা হওয়া জায়গায় একটু সরে বসে। লাগাম হাতে দুটো ঝাঁকি মেরে লোকটা ঘোড়া দুটোর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। ঘোড়া দুটো ধীর গতি থেকে আরেকটু দ্রুততায় দুলকি চালে চলা শুরু করে এবং দ্রুতই সোজা চলতে থাকে।

আরব গাড়োয়ান মন্তব্য করে, আপনি ঘোড়া চালানোর কায়দা কানুন বেশ ভালোই জানেন, দেখছি।

লোকটা শুকনো সংক্ষিপ্ততায় উত্তর দেয়, হ্যাঁ।

চারপাশের আলো কমে আসে। হঠাৎই যেন ঝুপ করে রাত নেমে আসে। বাম পাশ থেকে একটা লণ্ঠন তুলে এনে পেছনের দিকে ফিরে গাড়োয়ান কয়েকবার চেষ্টা করে ভেতরের সলতেয় আগুন জ্বালাতে পারে। আবার জায়গামতো রেখে দেয় লণ্ঠনটা। এখন বৃষ্টি পড়ছে মৃদু লয়ে, একটানা। লণ্ঠনের মৃদু আলোয় বৃষ্টি চক চক করে। বাইরে বৃষ্টির মৃদু শব্দে অন্ধকার ভীড় করে। মাঝে মাঝেই গাড়িটা কাঁটাঅলা ঝোপঝাড়ের পাশ ঘেঁষে চলতে থাকে। ছোট ছোট গাছপালা লণ্ঠনের মৃদু আলোয় সেকেন্ডের জন্য ঝিঁকিয়ে উঠে মিলিয়ে যায়। তবে বেশিরভাগ সময় গাড়িটা ফাঁকা জায়গার ভেতর দিয়ে এগিয়ে যায়। চার পশের অন্ধকারের কারণে ফাঁকা জায়গা আরও প্রশস্ত মনে হয়। রোদে পোড়া ঘাসের গন্ধ আর থেকে থেকে ভেসে আসা প্রাকৃতিক সারের গন্ধ মনে করিয়ে দেয় তারা এখন আবাদী জমির ভেতর দিয়ে এগিয়ে চলেছে।

পেছনের দিকে ঝুঁকে বসে লাগাম ধরে আছে স্বামী লোকটা। পেছন থেকে তার স্ত্রী কথা বলে ওঠে, এদিকে মনে হয় জনমানুষ নেই।

–তোমার কি ভয় করছে?

–কী বললে?

স্বামী পুনরায় জিজ্ঞেস করে। তবে এবার তার কথা বলা চিৎকারের মতো শোনায়।

–না, না। ভয় করছে না। তুমি সাথে থাকলে ভয় কিসের? তবে চিন্তিত মনে হয় তাকে।

–তোমার মনে হয় ব্যথা হচ্ছে?

–একটু একটু।

লোকটা ঘোড়া দুটোকে তাড়া দিলে রাস্তার মাঝে উঁচু হয়ে থাকা মাটির ওপরে চাকার আওয়াজ আর রাস্তার ওপরে ঘোড়ার নাল পরা খুরের আওয়াজ চারপাশের অন্ধকারকে ভরিয়ে তোলে।

১৯১৩ সালের এক রাত। ভ্রমণকারীরা দুঘণ্টা আগে বনের রেল স্টেশন থেকে যাত্রা শুরু করেছে। তৃতীয় শ্রেণির ট্রেনের কাঠের বেঞ্চে এক দিন এক রাতের দীর্ঘ ভ্রমণের পর তারা পৌঁছেছিল রেল স্টেশনে। এই আরব গাড়োয়ান তাদেরকে প্রায় বিশ কিলোমিটার ভেতরের দিকে একটা ছোট গ্রামের কাছে অবস্থিত এক খামারে নিয়ে আসার জন্য স্টেশনে অপেক্ষায় ছিল। ওই খামারের ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব নেওয়ার কথা স্বামী লোকটার। বাক্সপেটরা এবং অন্যান্য কয়েকটা জিনিসপত্র গাড়িতে তুলতে অনেক সময় নষ্ট হয়েছে। তাছাড়া খারাপ রাস্তার কারণে আরও দেরি হয়ে গেছে। সঙ্গীর নীরবতা ভাঙার জন্য গাড়োয়ান বলে ওঠে, ভয় পাাবেন না। এদিকে কোনো চোর ডাকাত নেই।

সবখানেই আছে। তবে আমার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাও আছে, বলে স্বামী লোকটা তার আঁটো পকেটের উপর চাপড় মারে।

গাড়োয়ান বলে, ঠিকই বলেছেন, পাগল ছাগল সবখানেই আছে।

ঠিক তখনই পেছন থেকে মহিলা তার স্বামীকে ডাক দেয়, হেনরি, ব্যথা করছে।

লোকটা ঘোড়াগুলোকে আরেকবার তাড়া দিয়ে স্ত্রীর উদ্দেশে বলে, এই তো আমরা পৌঁছে গেলাম বলে। আরেক মুহূর্ত পরে লোকটা পিছু ফিরে স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, এখনও কি ব্যথা আছে?

স্বামীর দিকে অন্যমনস্কতার দৃষ্টিতে তাকিয়ে একটুখানি হাসে মহিলা। দেখে মনে হয় না তার কষ্ট হচ্ছে। তবু বলে, হ্যাঁ, অনেক।

লোকটা গম্ভীর দৃষ্টিতে স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে থাকে।

মহিলার কণ্ঠে ক্ষমা প্রর্থনার সুর বাজে, তেমন কিছু না। মনে হয়, ট্রেনের কারণে এরকম হচ্ছে।

গাড়োয়ান বলে ওঠে, ওই যে দেখুন গ্রামটা। আসলেই রাস্তা থেকে বেশ খানিক দূরে বাম দিকে সলফেরিনো গ্রামের কয়েকটা আলো দেখা যায়। বৃষ্টির ভেতর দিয়ে আলোগুলো আবছা আবছা দেখায়। গাড়োয়ান আরও বলে, তবে আপনাদের ডান দিক দিয়ে যেতে হবে।

স্বামী লোকটা কিছুটা দ্বিধায় থেকে স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, আমরা কি গ্রামের ভেতরে যাব, না কি বাড়িটাতে আগে যাব?

–না, না বাড়িটার দিকেই চলো। সেটাই ভালো হবে।

গাড়িটা ডান দিকে মোড় নেয়। সামনে অচেনা বাড়িটা তাদের জন্য অপেক্ষা বরছে। গাড়োয়ান বলে, আর এক কিলোমিটার।

স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে লোকটা বলে, আমরা পৌঁছে গেলাম বলে। হাতের মাঝখানে মুখ ডুবিয়ে মহিলা মাথা গুঁজে পড়ে আছে। লোকটা ডাক দেয়, লুসি।

তবে তার কোনো সাড়া নেই। হাত বড়িয়ে স্ত্রীকে ছুঁয়ে দেয় হেনরি। তার স্ত্রী নীরবে কাঁদছে। কণ্ঠ আরও জোরে চিৎকারের মতো করে প্রত্যেকটা শব্দ আলাদা আলাদা করে উচ্চারণ করে লোকটা বলে, তুমি ওখানে গিয়েই শুয়ে পড়বে। আমি ডাক্তার নিয়ে আসব।

–হ্যাঁ, ডাক্তার নিয়ে এসো। ব্যথাটা আমার কাছে ওই রকম মনে হচ্ছে।

আরব গাড়োয়ান তাদের দিকে বিস্ময়ের দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে বলে হেনরি বলে, তার বাচ্চা হবে।
–গ্রামে কি ডাক্তার আছে?

–হ্যাঁ, আছে। আপনি চাইলে আমিই ডাক্তার ডেকে আনতে পারি।

–না, না যেতে হবে না। বাড়িটাতে খেয়াল রাখলেই হবে। আমিই দ্রুত যেতে পারব। কোনো ছোট গাড়ি কিংবা ঘোড়া পাওয়া যাবে?

–হ্যাঁ, গাড়ি একটা আছে। তারপর সে লুসির দিকে তাকিয়ে বলে, আপনার ছেলে হবে। দোয়া করি ছেলেটা খুব সুন্দর হোক।

লুসি তার কথা কিছু বুঝেছে বলে মনে হয় না। তবে মৃদু হাসতে থাকে।

হেনরি বলেন, ও শুনতে পায় না। বাড়িতে গিয়ে ওর সাথে কথা বলার সময় জোরে বলতে হবে আর ইশারায় বুঝাতে হবে। গাড়িটা হঠাৎ ঘাসের চাপড়ার উপর দিয়ে চলতে থাকলে চাকার নিচে কোনো শব্দ শোনা যায় না। রাস্তাটা এখানে আরও সরু। পাশে কয়েকটা টালি ছাওয়া ঘর দেখতে পাওয়া যায়। ঘরগুলোর পেছনে আঙুরের ক্ষেতের প্রথম সারি। গাঁজানো আঙুরের কড়া গন্ধ এসে নাকে লাগে। উঁচু ছাদঅলা কয়েকটা ভবন পার হয়ে যায় গাড়ি। তারপর গাড়ির চাকা আকর বিছানো একটা উঠোনের উপর চলে আসে। মুখে কিছু না বলেই গাড়োয়ান লাগাম হাতে নিয়ে টেনে ধরে। ঘোড়াগুলো থেমে যায়; একটা বেশ জোরে নিশ্বাস ছাড়ে।

গাড়োয়ান হাতের ইশারায় একটা সাদা রং করা বাড়ি দেখায়। নিচু একটা দরজার পাশ বেয়ে উঠে গেছে একটা লতাগাছ। কপার সালফেট দিয়ে নীল রং করা হয়েছে দরজাটা। গাড়ি থেকে লাফ দিয়ে নেমে হেনরি বৃষ্টির ভেতরেই দৌড়ে যায় ঘরটার দিকে। দরজা খুলে সামনে দেখতে পায় একটা অন্ধকার কামরা। ফাঁকা অগ্নিকুণ্ড থেকে একটা চাপা গন্ধ নাকে আসে। তার পেছন পেছন আগত গাড়োয়ান অন্ধকার পার হয়ে সরাসরি উনানের কাছে চলে আসে; জ্বলন্ত কয়লা ঘেঁটে কামরার মাঝখানে রাখা টেবিলের ওপরে ঝুলন্ত কোরোসিনের একটা লণ্ঠন জ্বালায়।

তখনই কেবল হেনরির চোখে পড়ে সে সাদা রং করা রান্নাঘরের মাঝে দাঁড়িয়ে আছে। লাল সিরামিক টালির তৈরি বাসনপত্র ধোয়ার জায়গা, একটা পুরনো দেরাজ এবং তাকঅলা টেবিল, আর দেয়ালে একটা ভেজা স্যাঁতসেতে ক্যালেন্ডার। লাল টালির সিঁড়ি শেষ হয়েছে দ্বিতীয় তলার মাথায়। আগুনটা জ্বালিয়ে দাও, বলে সে গাড়ির কাছে ফিরে এলো। তার স্ত্রী গাড়িতেই নীরবে অপেক্ষা করছে। হেনরি স্ত্রীকে দুহাতে জড়িয়ে ধরে নামিয়ে আনার চেষ্টা করে যাতে নিরাপদে মাটিতে তার পা রাখতে পারে। তাকে বুকের সাথে এক মুহূর্ত ধরে রেখে হেনরি জিজ্ঞেস করে, হাঁটতে পারবে?

–হ্যাঁ, পারব, বলে সে স্বামীর বাহুতে আলতো ছোঁয়া রাখে।

ঘর পর্যন্ত ধরে নিয়ে গিয়ে হেনরি বলে, একটু অপেক্ষা করো।

(চলবে)

এসএ/

Header Ad

সদস্যপদ ফিরে পেলেন জায়েদ খান, বাতিল হতে পারে নিপুণের

জায়েদ খান-নিপুণ। ছবি: সংগৃহীত

চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সদস্যপদ ফিরে পেয়েছেন সাবেক সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খান। কার্যকরী সভা শেষে এমনটাই জানিয়েছেন সমিতির সহ-সভাপতি ডি এ তায়েব।

সম্প্রতি এক সাংবাদিক সম্মেলনে কমিটির সহ-সভাপতি ডিএ তায়েব এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, “জায়েদ খান সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যে বক্তব্য দিয়েছিলেন, তার যথাযথ কারণ তিনি ব্যাখ্যা দিয়েছেন। বিষয়টি খতিয়ে দেখার পর সদস্যপদ ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে।”

সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছেন চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সহ-সভাপতি ডি এ তায়েব। ছবি: সংগৃহীত

এদিকে কমিটি বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে রিট করেছেন পরাজিত সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী নাসরিন আক্তার নিপুণ। রিটে তাদের নেতৃত্বাধীন কমিটির দায়িত্ব পালনে নিষেধাজ্ঞাও চাওয়া হয়েছে। শুধু তাই নয়, লন্ডন থেকে এক সাক্ষাৎকারে ডিপজলকে ‘অশিক্ষিত’ বলে মন্তব্য করেছেন সাধারণ সম্পাদক পদে হেরে যাওয়া নিপুণ আক্তার।

অভিনেত্রী বলেন, স্যরি টু সে, আমাকে বলতে হচ্ছে- শিল্পী সমিতিতে এমন একজন সেক্রেটারি পদে এসেছেন যার কোনো শিক্ষা নেই। এটা ২০২৪ সাল। আমরা ২০২৪ সালে দাঁড়িয়ে আছি। এটা অশিক্ষিত লোকদের জায়গা না, এটা আনকালচারদের জায়গা না। এটা কাজ করে দেখিয়ে দেওয়া লোকদের জায়গা।

এরপর নিপুণ বলেন, শুধু কাজ করলেই হবে না। জ্ঞান থাকতে হবে, শিক্ষিত হতে হবে। আমি একজন গ্রাজুয়েট। আমার তিন প্রজন্ম গ্রাজুয়েট।

সাংবাদিক সম্মেলনে নিপুণের এমন মন্তব্যের ব্যাপারে কমিটির সহসভাপতি ডি এ তায়েব বলেন, নিপুণের এমন মন্তব্য সত্যিই হতাশাজনক। তিনি শুধু ডিপজলকেই ছোট করেননি বরং সমগ্র চলচ্চিত্র শিল্পীদের হেয় করেছেন। আমরা তার এমন মন্তব্যের জন্য একটি নোটিশ দেবো। যথাযথ উত্তর না পেলে তার সদস্যপদ বাতিল করা হবে।

অস্থির ডিমের বাজার, প্রতি ডজনে বেড়েছে ৩০ টাকা

ছবি: সংগৃহীত

গত কয়েক মাস পর্যন্ত ডিমের বাজারে কিছুটা স্বস্তি থাকলেও দুই সপ্তাহ থেকে আবারও ঊর্ধ্বমুখী ডিমের দাম। দুই সপ্তাহের ব্যবধানে ডজনে বেড়েছে ৩০ টাকা। মুরগীর দামও বাড়তি।

মাত্র দুই সপ্তাহ আগের ১২০ টাকা ডজনের ডিম এখন কিনতে হচ্ছে ১৫০ টাকায়। এতে বিপাকে পড়েছেন ভোক্তারা। কারণ, ডিমই হলো তুলনামূলক কম দামে প্রোটিন পাওয়ার সবচেয়ে ভালো উৎস।

শুক্রবার (১৭ মে) রাজধানীর বেশ কয়েকটি বাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, প্রতি হালি ডিম বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়। যা মাসখানেক আগেও ৩৮ থেকে ৪০ টাকা হালিতে বিক্রি হয়েছে। সরকারের বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশও (টিসিবি) তাদের বাজারদরের প্রতিবেদনে ডিমের দাম বাড়ার বিষয়টি তুলে ধরেছে।

ডিম ব্যবসায়ীরা বলেছেন, গত কিছু দিনে সারাদেশে তীব্র দাবদাহের কারণে খামারে অনেক মুরগি মরে গেছে। এতে ডিমের উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে।

তারা আরও জানান, এক মাস আগে রমজানের সময় ডিমের চাহিদা কমে গিয়েছিল। ফলে তখন দাম কমেছিল। কিন্তু এখন ডিমের চাহিদা বাড়ার পাশাপাশি ডিমের উত্পাদন কমেছে। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে ডিমের দামের উপর। তবে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর ডিমের উত্পাদন খরচ হিসেব করে বলছে, একটি ডিমের দাম সর্বোচ্চ ১০ টাকা ৪৯ পয়সা হতে পারে। গত ১৫ মার্চ কৃষি বিপণন অধিদপ্তর যে ২৯টি পণ্যের দাম বেঁধে দিয়েছিল, তাতে একটি ডিমের খুচরা দাম নির্ধারণ করা হয় ১০ টাকা ৪৯ পয়সা।

এদিকে স্বস্তি নেই মুরগির বাজারেও। ব্রয়লারের কেজি ২২০ টাকা আর সোনালী বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৩৮০ টাকা।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব খন্দকার মো. মোহসিন বলেন, গরমের কারণে ডিমের উত্পাদন ব্যাহত হচ্ছে। যার প্রভাব পড়েছে ডিমের দামের ওপর। রমজানের সময় ডিমের চাহিদা কম থাকায় দাম কমে আসে। কিন্তু এখন বাজারে সবজি ও মাছের দাম বাড়ায় ভোক্তারা ডিমের প্রতি বেশি ঝুঁকেছে। ডিমের দাম বাড়ার এটিও একটি কারণ বলে তিনি মনে করেন।

প্রান্তিক খামারিদের সংগঠন বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিএ) সভাপতি সুমন হাওলাদার বলেন, কিছুদিন আগে ডিমের দাম কম ছিল। তখন এক শ্রেণীর ব্যবসায়ী কোল্ড স্টোরেজে ডিম সংরক্ষণ করেছে। এখন সেই ডিম তারা বেশি দামে বিক্রি করছে। এ কারণে ডিমের দাম বেড়েছে। তবে ডিমের বাড়তি এই দর এখন খামারিরা পাচ্ছেন বলে তিনি জানান।

মোটরসাইকেলে বাড়ি ফেরার পথে ট্রাকের ধাক্কায় প্রাণ গেল কলেজছাত্রের

নিহত কলেজছাত্র মেহেদী হাসান মিশু। ছবি: ঢাকাপ্রকাশ

টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে মোটরসাইকেলযোগে বাড়ি ফেরার পথে ট্রাকের ধাক্কায় মেহেদী হাসান মিশু (১৮) নামে এক কলেজছাত্র নিহত হয়েছেন। শনিবার (১৮ মে) ভোরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।

শুক্রবার (১৮ মে) রাত সাড়ে ১০ টার দিকে উপজেলার গোবিন্দাসী ইউনিয়নের কষ্টাপাড়া নামক এলাকায় দুর্ঘটনার শিকার হন মিশু।

নিহত মেহেদী হাসান মিশু উপজেলার গোবিন্দাসী ইউনিয়নের কয়েড়া গ্রামের স্কুলশিক্ষক রফিকুল ইসলাম মোল্লার ছেলে। গোবিন্দাসী ইউনিয়নের কয়েড়া ৯নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. রুবেল সরকার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

জানা গেছে, মেহেদী হাসান শুক্রবার রাতে মোটরসাইকেলযোগে গোবিন্দাসী এলাকা থেকে বাড়ি ফিরছিলেন। পথিমধ্যে কষ্টাপাড়া এলাকায় পৌঁছালে পেছন দিক থেকে একটি ট্রাক মোটরসাইকেলটিকে ধাক্কা দেয়। এতে রাস্তার পাশে ছিটকে পড়ে যায় মেহেদী।

এরপর আহত অবস্থায় স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে প্রথমে ভূঞাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে অবস্থা গুরুতর হওয়ায় কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে স্থানান্তর করেন। পরে তার অবস্থার আরও অবনতি হলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। সেখানে তিনি চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়। সে ঘাটাইল ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজের একাদশ শ্রেণির মানবিক বিভাগের ছাত্র।

ইউপি সদস্য মো. রুবেল সরকার বলেন, গত শুক্রবার রাতে দুর্ঘটনার শিকার হয়ে আজ শনিবার ভোরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে। বাদ আসর নামাজের পর জানাজা শেষে দাফন সম্পন্ন করা হবে।

এ ঘটনায় ভূঞাপুর থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আহসান উল্লাহ্ বলেন, মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় কোনো ব্যক্তির মৃত্যুর খবর জানা নেই। কেউ অভিযোগও করেনি।

সর্বশেষ সংবাদ

সদস্যপদ ফিরে পেলেন জায়েদ খান, বাতিল হতে পারে নিপুণের
অস্থির ডিমের বাজার, প্রতি ডজনে বেড়েছে ৩০ টাকা
মোটরসাইকেলে বাড়ি ফেরার পথে ট্রাকের ধাক্কায় প্রাণ গেল কলেজছাত্রের
যুক্তরাষ্ট্রে প্রবল ঝড়ের আঘাতে ৭ জনের মৃত্যু
জিয়াউর রহমান বাকশালের সদস্য হয়েছিলেন: ওবায়দুল কাদের
মা হারালেন সংগীতশিল্পী মোনালি ঠাকুর
মালয়েশিয়ায় ২ লাখ টাকায় বিক্রি হওয়ার অভিজ্ঞতা জানালেন বাংলাদেশি শ্রমিক
মসজিদে ভোজের আয়োজন করলেন ডিআইজি বাতেন, ইসিতে অভিযোগ
ধোলাইখালে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের আগুন নিয়ন্ত্রণে
টাঙ্গাইলে ধান কাটতে এসে বজ্রপাতে প্রাণ হারালেন দুই ভাই
মেসি-বার্সা চুক্তির সেই ন্যাপকিন বিক্রি হলো ১১ কোটি টাকায়
এবার রাজধানীর ধোলাইখালে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকে আগুন
কারওয়ান বাজারের আগুন নিয়ন্ত্রণে
গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি-বাতাসে রাজধানীতে স্বস্তি
সাতক্ষীরায় ট্রাক উল্টে প্রাণ গেল দুই শ্রমিকের, আহত ১১
রাজধানীর কারওয়ান বাজারে আগুন, নিয়ন্ত্রণে ৫ ইউনিট
ভাঙা হাত নিয়েই ‘কান চলচ্চিত্র উৎসব’ মাতালেন ঐশ্বরিয়া
ঢাকাসহ ৬ বিভাগে ঝড়-শিলাবৃষ্টির আভাস, কমবে তাপপ্রবাহ
আচরণবিধি লঙ্ঘন: আ.লীগ নেতাকে জরিমানা, ৭ ডেগ খিচুড়ি জব্দ
সৌদিতে চলতি বছরে প্রথম বাংলাদেশি হজযাত্রীর মৃত্যু