ডিসেম্বরেই নির্বাচন চায় বিএনপিসহ ১০ নিবন্ধিত দল, বাকিদের অবস্থান কী?

ছবি: সংগৃহীত
দেশের রাজনীতিতে ক্রমেই গতি পাচ্ছে নির্বাচনকেন্দ্রিক আলোচনা। অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে নির্বাচনের প্রস্তুতি এবং সময়সীমা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থান স্পষ্ট হতে শুরু করেছে। এমন পরিস্থিতিতে বিএনপিসহ ১০টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন সম্পন্ন দেখতে চায়।
সংস্কার ও বিচারের দাবিতে পিছিয়ে রয়েছে জামায়াতে ইসলামীর মতো কিছু দল। আবার কয়েকটি দল নির্দিষ্ট রোডম্যাপ চাইলেও ডিসেম্বরের সময়সীমা মেনে নিতে প্রস্তুত। এদিকে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ কয়েকটি দলও দ্রুত নির্বাচনের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। দেশের একটি গণমাধ্যমে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এমনই তথ্য উঠে এসেছে।
বিএনপির দাবি, ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন-
গত ২৪ মে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে নির্বাচন নিয়ে স্পষ্ট রোডম্যাপ দাবি করে বিএনপি। এরপর থেকেই দলের নেতারা প্রকাশ্যে বলে আসছেন—ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন চাই। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এক বক্তব্যে বলেন, “ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন করতে হবে।”
বিএনপির দাবি সমর্থন করেছে আরও নয়টি নিবন্ধিত দল। এদের মধ্যে রয়েছে- লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি), গণফোরাম, গণঅধিকার পরিষদ, বাংলাদেশ জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (বাংলাদেশ জাসদ), বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, বাসদ, এনডিএম এবং বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি)।
এই দলগুলোর দাবি, অর্থনৈতিক সংকট, আইনশৃঙ্খলার অবনতি এবং প্রশাসনিক স্থবিরতার মধ্যে অস্থিরতা এড়াতে ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন জরুরি।
রোডম্যাপ চায় কয়েকটি দল-
বিএনপির মিত্র গণতন্ত্র মঞ্চের অন্তর্ভুক্ত তিনটি নিবন্ধিত দল—জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি, নাগরিক ঐক্য এবং গণসংহতি আন্দোলন—নির্বাচনের সময়সীমা না বেঁধে একটি সুস্পষ্ট রোডম্যাপ চায়। একই কথা বলেছে এবি পার্টিও।
জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন বলেন, দ্রুত নির্বাচন চান তারা, তবে সময়সীমা নির্দিষ্ট করে বলেননি। গণসংহতির জোনায়েদ সাকির ভাষ্য, “নির্বাচনের আগে রোডম্যাপ চাই—তা যেন সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়।”
জামায়াতসহ ধর্মভিত্তিক দলগুলোর অবস্থান: আগে সংস্কার-
একইসঙ্গে, জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বে ছয়টি নিবন্ধিত ধর্মভিত্তিক দল বলছে, নির্বাচনের আগে সংস্কার ছাড়া ভোটে যাওয়া যাবে না। দলগুলো হলো—
জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, খেলাফত মজলিস, ইসলামী ঐক্যজোট এবং খেলাফত আন্দোলন।
জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান জানিয়েছেন, “সংস্কার ছাড়া অর্থবহ নির্বাচন সম্ভব নয়। আগামী বছরের রমজানের আগেই নির্বাচন হতে পারে, ফেব্রুয়ারি বা এপ্রিলেই ভোট হওয়া উচিত।”
জানা গেছে, শনিবার রাতে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকের পর দলটির নেতারা সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সেখানে নির্বাচনী পরিবেশ এবং উত্তেজনা প্রশমনের বিষয়ে আলোচনা হয়।
এনসিপির অবস্থান: বিচার-সংস্কার-নির্বাচনের সমন্বিত রোডম্যাপ-
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) বিচার, সংস্কার ও নির্বাচনের জন্য পৃথক রোডম্যাপ চায়। দলটি সংসদ নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার ও ছাত্র সংসদ নির্বাচনের পক্ষে। দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব জানান, “নির্বাচনের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে তৃণমূলে কাজ শুরু হয়েছে। আমরা নির্বাচনবিরোধী নই, তবে সংস্কার ও বিচার ছাড়া তা অর্থহীন।”
এনসিপির নেতারা বলেন, ভবিষ্যতে যেন আর কোনো সরকার কর্তৃত্ববাদী হতে না পারে—সেজন্য সাংবিধানিক সংস্কার প্রয়োজন।
জাতীয় পার্টির অবস্থান: দ্রুত ভোট চায়-
সাম্প্রতিক সময়ে সরকারের কড়া সমালোচক হিসেবে আবির্ভূত হওয়া জাতীয় পার্টি (জাপা) দ্রুত নির্বাচনের দাবি জানাচ্ছে। দলটি মনে করে, আওয়ামী লীগ নির্বাচনে না থাকায় রাজনৈতিক শূন্যতা তৈরি হয়েছে, যা গণতন্ত্রের জন্য ক্ষতিকর।
আওয়ামী লীগঘনিষ্ঠ অনেক দল ৫ আগস্টের পর থেকে রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয়। চারটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে নির্বাচনী সমঝোতায় থাকা দলগুলোর অনেকেই মুখ খুলছে না। এদের অনেকে বলছেন, “কেউ তো আমাদের জিজ্ঞেসও করে না নির্বাচন নিয়ে!”
নীরব দলগুলোর মধ্যে রয়েছে-
জাতীয় পার্টি-জেপি, গণতন্ত্রী পার্টি, বিকল্পধারা, জাসদ, জাকের পার্টি, ইসলামিক ফ্রন্ট, কল্যাণ পার্টি, বিএনএফ, তৃণমূল বিএনপি, বাংলাদেশ কংগ্রেস, এনপিপি, মুসলিম লীগ, সাংস্কৃতিক মুক্তি জোট ও গণফ্রন্ট।
সরকারের একাধিক উপদেষ্টা জানিয়েছেন, “শুধু নির্বাচন নয়, বিচার ও সংস্কারও সরকারের দায়িত্ব। শুধু বিএনপির হাতে ক্ষমতা তুলে দিতে আমরা প্রস্তুত নই।” তাদের মতে, প্রশাসন এখনো পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসেনি, এবং সরকার কাজ করতে পারছে না। এমন পরিস্থিতিতে সব দলের অংশগ্রহণে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনই হতে পারে একমাত্র সমাধান।
