শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪ | ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
Dhaka Prokash

খামারীদের ভাগ্য ও মিল্কভিটার অস্তিত্ব দুটোই জলে!

২০০৫ সাল থেকে রায়পুর মিল্কভিটায় দুধ সরবরার করে আসছিলেন দুগ্ধ উৎপাদনকারী খামারী দিলিপ চন্দ্র ঘোষ। তাঁর পারিবারিক তিনটি খামারে গরু-মহিষ থেকে প্রতি প্রতিদিন গড়ে ১ হাজার লিটার হারে বছরে ৩ লক্ষ ৬০ হাজার লিটার দুধ সরবরাহ করতেন তিনি। এতে নিজের স্বাবলম্ভীতার পাশাপাশি সৃষ্টি হয়েছে চরাঞ্চলের কয়েকজন শ্রমিকেরও কর্মসংস্থান। কিন্তু মিল্কভিটা কর্তৃপক্ষ হঠাৎ দুধ সংগ্রহ বন্ধ করে দেয়ায় বিপাকে পড়েন তিনি।

এতে মিল্কভিটা থেকে নেয়া ঋণ ও গো-খাবার সংকট সহ নানা প্রতিকূলতায় লোকসানে পড়ে বাধ্য হয়ে কম দামে গরু বিক্রি করে দিতে হয় তাকে। তাছাড়া গরু মরে এক একটি খামারে প্রায় ২০ লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি হয় তার। দিলিপ চন্দ্র ঘোষ রায়পুর মিল্কভিটার আওতাধিন দেনায়েতপুর প্রাথমিক দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায় ইউনিয়ন লি. এর সভাপতি। এছাড়াও চর কোরালিয়া ও শাকচর নামে দুটি দুগ্ধ উৎপাদক সমবায় সমিতি রয়েছে।

শুধু দিলিপ চন্দ্র ঘোষ-ই-নয়, লক্ষ্মীপুর জেলার রায়পুর উপজেলায় ৩৮টি প্রাথমিক দুগ্ধ উৎপাদকারী সমবায় ইউনিয়ন রয়েছে। প্রতিটি সমবায় ইউনিয়ন এর আওতায় ৩০/৪০জন হারে ৫শতাধিক খামারী উৎপাধিত দুধ মিল্কভিটা সংগ্রহ কেন্দ্রে সরবরাহের সঙ্গে জড়িত। হঠাৎ করে ২০১৮ সালে ৬ জানুয়ারী রায়পুর মিল্কভিটার দুধ শীতলীকরণ কেন্দ্রের দুধ সংগ্রহ কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া হয়। শীতলীকরণের অত্যাধুনিক মেশিনটিও গত বছর ফেরত নিয়ে যায় উর্ধ্বতণ কর্তৃপক্ষ। এতে খামারীরা সবাই উৎপাদিত দুধ বিক্রি ও ঋণ পরিশোধ নিয়ে বিপাকে পড়েন।

একপর্যায়ে ঋণের ভোজা মাথায় নিয়ে বাধ্য হয়ে দুধ উৎপাদন ও গরু পালন চেড়েছেন চরাঞ্চলের অধিকাংশ খামারী। এদিকে সমবায় খামারীদের বন্টনের জন্য আনা সোয়া ১৮ কোটি টাকা ব্যয়ের উন্নত জাতের মহিষ প্রকল্পেও চরম অনিয়ম-অব্যবস্থাপনায় এখন প্রায় বন্ধের পথে রায়পুর মিল্কভিটার দুগ্ধ কেন্দ্রেটি। এতে ব্যস্তে যেতে বসেছে মিল্কভিটার মাধ্যমে চরাঞ্চলের দারিদ্র বিমোচনে সরকারের বৃহত্তর পরিকল্পনা।

অপরদিকে দুধ সংগ্রহ বন্ধ থাকায় এক দিকে খামারীদের কাছ থেকে ঋণের টাকা পরিশোধ এবং অন্যদিকে খামারীরা মিল্কভিটায় জমাকৃত শেয়ার-সঞ্চয় টাকা ফেরৎ চেয়ে পাল্টা-পাল্টি আইনী নোটিশ চালাচালি করে উভয় পক্ষ। এতে পাওনা নিয়ে সমবায়ী খামারী ও মিল্কভিটার মধ্যে দেখা দিয়েছে দ্বন্দ্ব।

জানা যায়, ১৯৯৮ সালে দুধ উৎপাদনকারী খামারী ও কৃষকদের দারিদ্র বিমোচন ও ন্যায্য প্রাপ্তি নিশ্চিত করণের লক্ষে লক্ষ্মীপুর জেলার রায়পুর উপজেলার মিতালী বাজারে ৫.৪৭ একর এরিয়া নিয়ে দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায় ইউনিয়ন লিমিটেড নামে দুগ্ধ শীতলীকরণ (ঠান্ডা) ও সরবরাহ কেন্দ্র স্থাপন করে মিল্কভিটা কর্তৃপক্ষ।

এ কেন্দ্রের আওতায় প্রাথমিক দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায় সমিতি গঠনের মাধ্যমে স্থানীয় খামারীদের কাছ থেকে নির্ধারীত মূল্যে দুধ ক্রয় করতো মিল্কভিটা। ক্রয়কৃত দুধগুলো ৫হাজার লিটার ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন অত্যাধুনিক শীতলীকরণ মেশিনের মাধ্যমে প্রক্রিয়া শেষে ঢাকার মিরপুরে মিল্কভিটার মূল কেন্দ্রে পাঠানো হতো। খামার পরিচালনার জন্য ২০ হাজার থেকে ৭০ হাজার টাকারও অধিক ঋণের পাশাপাশি গবাদিপশুর চিকিৎসা সেবা নিশ্চিতকরণ ও ঔষধ দেয়া হতো সমবায়দের খামারীদের।

দেনায়েতপুর প্রাথমিক দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায় ইউনিয়ন লি. এর সভাপতি দিলিপ চন্দ্র ঘোষ বলেন, সাপ্তাহে ৪/৫ লক্ষ টাকার দুধ সরবরাহ করা হতো তার খামারগুলো থেকে। শুরুর দিকে ৩২.৮১ টাকা হারে দুধ ক্রয় করেছে মিল্কভিটা। বাজারে যখন ৫০/৬০ টাকা মূল্য তখনও সর্বোচ্চ ৪০ টাকা, ৪২ টাকা হারেও দুধ সংগ্রহ করতো তারা। দুধ বিক্রির অংশ থেকে পরিবহন ব্যয়, সুধের কিস্তির টাকা, শেয়ার খরিদ ৪০ পয়সা, সঞ্চয় ৬৫ পয়সা ও কমিশন ১ টাকা ধরা হতো। তার একটি খামারে ৩০টি গরু ও ৭০টি মহিষ ছিলো। চরে এখন খালি খামারই রয়েছে।

তিনি আরো বলেন, মিল্কভিটা কার্যক্রম বন্ধ করার পর ঋণের কিস্তি নগদ টাকা নেয়া শুরু করে। গত ২০১৯ সালে হঠাৎ সমবায়ী সমিতিগুলোকে ঋণের সম্পন্ন টাকা পরিশোধ করার জন্য আইনী নোটিশ দেয় মিল্কভিটা কর্তৃপক্ষ। কিন্তু মিল্কভিটায় সমবায়ী খামারীদের শেয়ার ও সঞ্চয়ের যে পরিমান আমানত জমা রয়েছে, তা বকেয়া ঋণের থেকেও বেশি টাকা, সেগুলো ফেরত দেয়নি মিল্কভিটা।

কাছিয়ার চর দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায়ী সমিতির সভাপতি আবুল গাজী, মালেক গাজী, মো. সোহাগ, মোজাম্মেলসহ আমরা স্ব-স্ব সমিতির পক্ষ থেকেও হাইকোটের একজন আইনজীবীর মাধ্যমে শেয়ার ও সঞ্চয়ের টাকা ফেরত চেয়ে মিল্কভিটা কর্তৃপক্ষের নিকট আইনী নোটিশ পাঠাই। এর মধ্যে সমবায়ী সমিতির সভাপতি মালেক গাজী ইতোমধ্যে মারা গেছে। তবে এরপরও খামারীদের সঞ্চয়ের টাকা দেয়নি সংশ্লিষ্ট মিল্কভিটার।

রায়পুর মিল্কভিটার এক কর্মকর্তা বলেন, ৩৮টি সমবায় সমিতি মিল্কভিটা থেকে ঋন নিয়ে খামার পরিচালনা করতো। মিল্কভিটায় দুধ দেয়ার মাধ্যমে কিস্তিতে ঋণের টাকা পরিশোধ করতো তারা। দুধ সংগ্রহ বন্ধ হওয়ার পর থেকে লোকসানে পড়ে খামারীরা নিয়মিত কিস্তি পরিশোধ করতে পারেনি। এতে খামারীদের কাছ ৬০ লক্ষ টাকা বকেয়া ঋণ পড়ে রয়েছে মিল্কভিটার। এজন্য মিল্কভিটা আইননী নোটিশও করেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এক একটি সমবায় সমিতি প্রতিদিন গরু-মহিষ থেকে উৎপাদিত কমপক্ষে ৪০০/৫০০ লিটার দুধ শর্ত সাপেক্ষে নির্ধারিত স্বল্প মূল্যে রায়পুর মিল্কভিটায় সরবরাহ করতো। এতে গড়ে প্রায় ৩ হাজার লিটার দুধ সংগ্রহ করতেন সংশ্লিষ্টরা। দুধ সংগ্রহ করে মিল্কভিটা লাভের মুখ দেখলেও, লাভের মুখ দেখেনি খামারীরা। তবে বিশেষ প্রকল্পের মাধ্যমে খামারীদের ভাগ্য উন্নয়নের আশ্বাসও দেন কর্তৃপক্ষ। খামারীদের দেয়া সেই আশ্বাস আশ্বাসই রয়ে গেলো।

স্থানীয় সূত্রে আরও জানা যায়, সে সময় কারখানা পরিচালনার দায়িত্ব ছিলেন, ডাঃ ফরহাদ হোসেন। অভিযোগ রয়েছে সমবায় খামারীদের নিকট থেকে ক্রয়কৃত দুধের গুণগত মান নিয়ে অহেতুক বির্তক সৃষ্টি করা হতো। এতে খামারীরাও মিল্কভিটায় দুধ দেয়া নিয়ে অনাগ্রহী হয়ে উঠে। মিল্কভিটা চরাঞ্চলের খামারীদের জন্য আশিরবাদ হিসেবে এলেও কিছু অসাধু কর্মকর্তার ও চক্রের ছত্রছায়ায় ক্ষতির কারণ হয়ে দাড়িয়েছে।

রায়পুরের চরাঞ্চলের খামারীদের ভাগ্য ফেরাতে শীতলীকরণ মেশিনটি পুনরায় স্থাপন করে বাজার মূল্যের সাথে সামঞ্জস্য রেখে মূল্য নির্ধারন পূর্বক দুধ সংগ্রহ করার দাবী জানান স্থানীয় সচেতন মহল। একই সাথে খামারীদের জমাকৃত সঞ্চয়ের টাকা ফেরতসহ বিনা সুধে ঋণের মাধ্যমে খামারীদের পুনরায় সচল রাখার দাবী করেন তারা।

কাছির চর ও চর কোরালিয়ায় কয়েকজন খামারী জানান, মিল্কভিটা দুধের মূল্য যদিও বাজার থেকেও কম দিতো, সেটি আবার প্রজনন বীজ, চিকিৎসা সেবা, ৫% সুধে ঋণ দিয়ে খামারীরে সহযোগিতা করতো। যা চরাঞ্চলের খামারীদের জন্য আশিরবাদ হিসেবে কাজ করতো। কিন্তু খামারে গরুর অসুস্থ হয়ে পড়লে বার বার অনুরোধ করলে চিকিৎসা সেবা পাওয়া যেতো না। তাছাড়া ওষধসহ নানাবিদ প্রনোদনা প্রদানেও রয়েছে সংশ্লিষ্টদের অনিয়ম।

কাজির চর দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায় সমিতির সভাপতি মফিজ মিয়া বলেন, দুধ সংগ্রহ বন্ধ করে দেয়ার পর খামারীরা দিশেহারা হয়ে কমে সব গুরু বিক্রি করে দেয়। ডাক্তার ফরহাদ থাকা কালে আমার গরুর ভাইরাস রোগ দেখা দিলে অনুরোধ করেও চিকিৎসা সেবা পাইনি। বিনা চিকিৎসায় আমার ৮টি গরু মারা গেছে। বিষয়টি নিয়ে সহযোগীতা চেয়েও মিল্কভিটার কৃর্তপক্ষের পক্ষ থেকে কোন সাড়া পাইনি। ওই সময় আমার ১৫ লক্ষ টাকা লোকসান হয়ে।

মিল্কভিটার দুধ সংগ্রহ পুনরায় চালুর বিষয়ে তিনি বলেন, মিল্কভিটা বড় বড় রাগববোয়ালরা নিয়ন্ত্রণ করে। সেখানে আমরা অনিয়মের প্রতিবাদ করে কিছু করতে পারবো না। বড় অফিসাররা যদি বলে তাহলে কার্যক্রম চালু হবে। অন্যথায় খামারীদের ভাগ্য মাটিতে মিশে থাকবে।

চর কাছিয়া সমাবায় সমিতির সভাপতি বলেন, গরু অসুস্থ হয়ে পড়লে মিল্কভিটা সংশ্লিষ্ট ডাক্তারকে চিকিৎাসার জন্য অনুরোধ করে কোন সেবা না পেয়ে বাধ্য হয়ে আড়াই লক্ষ টাকার গরু মাত্র ৭২ হাজার টাকায় বিক্রি করে দিয়েছি। উল্টো সংশ্লিষ্টরা বলে দুধ সংগ্রহ বন্ধ কিসের চিকিৎসা সেবা।

অপর খামারী বলেন, করোণা কালে ক্ষতিগ্রস্থ খামারীদের প্রনোদনার আওতায় আনা হবে বলে পরিচয়পত্র ও ছবি নিয়ে যায়। কিন্তু করোনার দুই বছর পরও খামারীদের কোন প্রনোদনার আওতায় আনা হয়নি। তবে রাজনীতিক ছত্রছায়ায় এসব প্রনোদনা গায়েব হয়েগেছে বলে জানান ওই খামারী।

উন্নতজাতের মহিষ প্রকল্প:
এদিকে খামারীদের ভাগ্য উন্নেয়নের সোয়া ১৮ কোটি টাকার রায়পুর মহিষ উন্নয়ন প্রকল্পটি অনিয়ম অব্যবস্থাপনায় শূন্য অর্জনেই মেয়াদ উত্তির্ণ হয়ে ভেস্তে যাওয়ায় এমন অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। দুধ ও মাংসের উৎপাদন বৃদ্ধিসহ খামারিদের ভাগ্য উন্নয়নের লক্ষ্যে গৃহিত প্রকল্পে ব্যাপক সম্ভবনা থাকলেও নীতিমালা অনুযায়ী প্রত্যাশা পুরণ হয়নি। এতে স্থানীয় ৫ শতাধিক সমবায়ী খামারীদের দেয়া আশ্বাস আশ্বাসই রয়ে গেছে। এসব খামারীদের মাঝে সৃষ্টি হয় চরম ক্ষোভ। তবুও সংশ্লিষ্টরা বলছে কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দুধ ও মাংসের পাশাপাশি খামারীদের ভাগ্য উন্নয়নের সেই বিশেষ প্রকল্পটি রায়পুর মহিষ উন্নয়ন ও কৃক্রিম প্রজনন প্রকল্প নামে অনুমোদন লাভ করে। সরকারি ৭৫ ভাগ ও মিল্কভিটা সমবায়ীদের ২৫ ভাগ অর্থায়নে ১৮ কোটি ২৩ লক্ষ ৪৭ হাজার টাকা ব্যায়ের এ প্রকল্পটি ২০১৩ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যস্ত বাস্তবায়নের মেয়াদ কাল ধরা হয়। এর মধ্যে ভারতের থেকে উন্নত মুররাহ্ জাতের ২০০টি গাভী, ২০০টি বাছুর ও ১০টি ষাঁড় মহিষ ক্রয় করে কর্তৃপক্ষ।

ক্রয়কৃত এসব মহিষের বেশির ভাগ স্থানীয় ক্ষুদ্র সমবায়ী খামারীদের মাঝে ভুর্তকি মূল্যে বিতরণ করা ও ষাড় মহিষ থেকে সংগৃহিত বীজ (সীমেন) খামারীদের দেশীয় প্রজাতীর মহিষে সরবরাহ করার কথা ছিলো। যা করা হলে দেশীয় প্রজাতির সাধারণ মহিষ থেকে যেখানে পাওয়া যেত আড়াই থেকে ৩ কেজি দুধ আর প্রজনন উন্নয়নের পর ওই জাতের মহিষ থেকে পাওয়া যেত ৮ থেকে ১০ কেজি দুধ। দুধ ও মাংসের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে বাস্তবায়ন, উন্নত খামার প্রতিষ্ঠায় প্রশিক্ষিত খামারীরা বেশ লাভবান হয়ে আগ্রহী হয়ে উঠতো।

রায়পুর কাজির চর দুগ্ধ উৎপাদকারী সমবায় সমিতির কয়েকজন খামারী বলেন, মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী মহিষ গুলো মূলত আনা হয়েছে সমবায়ী খামারীদের বন্টন করার জন্য। কিন্তু এখানকার সংশ্লিষ্টরা কি কারণে মহিষগুলো খামারীদের বন্টন না করে নিজেরাই পালন করা শুরু করেছে।

পরে তারা জানায় সমবায়ীতে দুধ উৎপাদন কম দেখে কর্তৃপক্ষের নিদেশেই তারা নিজেরা রাখাল নিয়োগ করে মহিষ পালন শুরু করে, দুধের ঘাটতি পুরন করার জন্য। কিন্তু উন্নত জাতের মহিষ থেকে উৎপাদিত দুধ দায়িত্বে থাকা ডাঃ ফরহাদ লোভে পড়ে, টাকার বিনিময়ে টেন্ডারের মাধ্যমে মহিষের দুধ বাহিরে বিক্রি করে দেয়। কারখানায় উৎপাদিত মহিষের দুধ যদি সমবায়ের সাথে যোগ করা হতো। তাহলে রায়পুর মিল্কভিটার দুধ সংগ্রহ করণ কার্যক্রম বন্ধ হতো না।

একই কথা জানান খামারী আবুল গাজী, তিনি বলেন, দুধসংগ্রহ বন্ধের পর থেকে জোড়াতালী দিয়ে খামার চালিয়ে যাচ্ছি। গো খাদ্যের দাম বৃদ্ধির কারণে আমার খামারও বন্ধের পথে। মিল্কভিটার শীতলীকরণ মেশিন চালু করতে ৩০০ লিটার দুধ লাগে, রায়পুর কারখানায় ৩০০ লিটারেরও বেশি দুধ খামারীদের নিকট থেকে সংগ্রহ হতো।

অথচ মিল্কভিটায় যে মহিষের প্রকল্প রয়েছে সেখানে ২০০ লিটার দুধ হয়। কিন্তু মহিষের দুধ গুলো সংশ্লিষ্টরা লাভের জন্য বাহিরের বাজারে বেশি দামে বিক্রি করে দেয়। যার জন্য দুধ সংগ্রহ কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি। এর জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারাই দায়ী। আর খেসারতও দিতে হয়েছে আমারা সমবায়ী খামারীদের।

তিনি আরও বলেন, কৃষক ও খামারীরা স্বাভলম্বী হওয়ার জন্য ভালো একটি সংস্থা মিল্কভিটা। কিন্তু সংস্থাটিতে কিছু অসাধু কর্মকর্তা সর্বনাশ করে দিয়েছে।

অভিযোগের বিষয় অস্বীকার করে ডা. ফরহাদুল আলম বলেন, আমার বদলি হয়েছে দুই বছর পূর্বে। বর্তমানে খুনলা বিভাগের একটা পদে আছি। রায়পুর মিল্কভিটা কেন্দ্রে একজন প্রজেক্ট ডিরেক্টর (পিডি) ছিলো, স্বার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করার জন্য। এতে অনিয়ম করার কোন সুযোগ নেই। খামারীদের সর্বাত্তক সহযোগিতা করার চেষ্টা করেছি। যারা স্বার্থ হাসিল করতে পারেনি, তারাই আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করে আমাকে বদলি করেছে। আমি কোন অনিমের সাথে জড়িত ছিলাম না।

এদিকে প্রকল্পের আওতায় খামারীদের সেবা দেওয়ার জন্য মিল্কভিটায় ৫টি শেড, একটি বীজাগার মেশিন, একটি গবেষণাগার, প্রজনন মেশিন, আধুনিক নিক্তিসহ বিভিন্ন যন্ত্রাংশ স্থাপন করা হয়। কিন্তু সরজমিনে দেখা যায় ৫টি শেডেই রাখা হয়েছে মহিষ।

রায়পুর মিল্কভিটার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা ডাঃ আশ্রাফুজ্জামান বলেন, এখনপর্যন্ত প্রকল্পের অগ্রগতি সন্তোষজনক। কর্তৃপক্ষের নিদেশনা অনুযায়ী উন্নত জাতের মহিষগুলো রাখাল নিয়োগের মাধ্যমে দেখ বাল করা হচ্ছে। তাছাড়া কেন্দ্রের ভেতরেই ঘাস উৎপাদক করা হয় মহিষের জন্য। বিগত ৫বছর পূর্বে ১০০টি মহিষ আনা হয় এ কেন্দ্রে। বর্তমানে গাভী ও চাছুরসহ ১৬৩টি মহিষ আছে মিল্কভিটায়। প্রথমবার ৮০ মহিষ বিক্রি করা হয়েছে। এতে দেড় কোটি টাকা মিল্কভিটার আয় হয়েছে।

দুধ সংগ্রহ বন্ধ ও বকেয়া ঋণ আদায়ের বিষয়ে জানতে চাইলে ডাঃ আশ্রাফুজ্জামান বলেন, এসব বিষয়ে মন্তব্য করতে উর্ধ্বতণ কর্তৃপক্ষের নিদেশনা প্রয়োজন। শীতলীকরণ মেশিনের চাহিদা মত দুধ না পাওয়ায় মেশিন নিয়ে যায় কর্তৃপক্ষ। কিন্তু খামারীরা মিল্কভিটায় দুধের দাম কম দেখে বাজারে মিষ্টির দোকানগুলোতে দেয়। খামারীরা দুধ দিতে চাইলে রামগঞ্জ কেন্দ্রের মাধ্যমে সংগ্রহ করা হবে। তবে এখানে উৎপাদিত মহিষের দুধ টেন্ডারের মাধ্যমে বাহিরে বিক্রি করে রাজস্ব আয় হয়।
এএজেড

Header Ad

সাড়ে ১০ হাজার বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠাচ্ছে যুক্তরাজ্য

ছবি: সংগৃহীত

ভিসার অপব্যবহারের দায়ে প্রায় সাড়ে ১০ হাজার বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠাচ্ছে যুক্তরাজ্য। তাঁরা গত এক বছরে সেখানে রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়ে আবেদন করেছিলেন। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য ডেইলি টেলিগ্রাফ জানাচ্ছে, সে আবেদন নাকচ হওয়ায় নতুন এক চুক্তির তাদের দ্রুত ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ব্রিটিশ সরকার।

উন্নত জীবনের আশায় প্রতিবছর বিদেশে পাড়ি জমান বাংলাদেশিরা। মূল গন্তব্য থাকে ইউরোপের নানা দেশ। তবে তাদের একটি বড় অংশই বেছে নেন অসাধু উপায়।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য ডেইলি টেলিগ্রাফ জানিয়েছে, স্টুডেন্ট ভিসা, ওয়ার্ক পারমিট এবং টুরিস্ট ভিসায় যুক্তরাজ্যে গিয়ে গত বছরে রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছেন প্রায় ১১ হাজার বাংলাদেশি। যাচাই-বাছাই শেষে তাদের ৫ শতাংশের আবেদন গ্রহণ করেছে ব্রিটিশ সরকার।

টেলিগ্রাফের দাবি, এবার অবৈধ এসব বসবাসকারীদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নিচ্ছে যুক্তরাজ্য। ফাস্ট-ট্র্যাক রিটার্নস চুক্তির আওতায় শুধু ব্যর্থ আশ্রয়প্রার্থীই নন, ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়া ব্যক্তিদেরও ফেরত পাঠানো হচ্ছে বাংলাদেশে।

ভিসা ব্যবস্থার এই অপব্যবহারকারীধের তালিকার শীর্ষে রয়েছে পাকিস্তান। গত বছর, রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছিলেন ১৭ হাজার ৪শ পাকিস্তানি। আর এক্ষেত্রে ভারতীয়ের সংখ্যা ৭ হাজার ৪শ।

২০২৩ সালে বসবাসের অধিকার নেই এমন ২৬ হাজার মানুষকে নিজ দেশে ফেরত পাঠায় যুক্তরাজ্য। এ সংখ্যা ২০২২ সালের তুলনায় ৭৪ শতাংশ বেশি।

নিবন্ধন ছাড়াই নোংরা পরিবেশে তৈরি হচ্ছিল রাফসানের 'ব্লু' ড্রিংকস

ছবি: সংগৃহীত

কুমিল্লায় ‘রাফসান দ্য ছোটভাই’ খ্যাত কন্টেন্ট ক্রিয়েটর ইফতেখার রাফসানের ড্রিংকস ব্লু (BLU) তৈরির কারখানায় অভিযান পরিচালনা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। এ সময় নোংরা পরিবেশে মান নিয়ন্ত্রণহীনভাবে ব্লু ড্রিংকস তৈরি করায় ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত।

গত ২৪ এপ্রিল বিএসটিআই ও কুমিল্লা জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে পরিচালিত ভ্রাম্যমান আদালত এই জরিমানা করে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মেসার্স ড্রিংকব্লু বেভারেজ, বি-৩৩, বিসিক শিল্পনগরী, আদর্শ সদর, কুমিল্লা; প্রতিষ্ঠানটিকে মোড়কজাতকরণ নিবন্ধন সনদ গ্রহণ না করে ‍‍‘ইলেক্ট্রোলাইট ড্রিংক‍‍’ পণ্য প্রস্তুত করে আসছিল। এছাড়া কোন অটোমেশন মেশিন না থাকার পাশাপাশি নোংরা পরিবেশে গরীব দুস্থ নারী কর্মীদের মাধ্যমে কোন নিরাপত্তা কিংবা ড্রেস কোড ছাড়াই এই ব্লু নামক ইলেক্ট্রোলাইট ড্রিংকস প্রস্তুত হচ্ছিল।

এদিকে কারখানায় কোন পরিমাপ যন্ত্র না থাকায় হাতে করে বোতলজাত করা হচ্ছিল এই ড্রিংকগুলো। নিবন্ধন ছাড়াই মোড়কজাত ও বাজারজাত করায় ‍‍‘‘ওজন ও পরিমাপ মানদন্ড আইন -২০১৮’’ এর ৪১ ধারায় ৩০,০০০ (ত্রিশ হাজার টাকা) অর্থদণ্ড করা হয়। ভ্রাম্যমাণ আদালত জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, কুমিল্লার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সিনিয়র সহকারী কমিশনার ফারহানা নাসরিন এর নেতৃত্বে পরিচালিত হয়। প্রসিকিউটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন বিএসটিআই, কুমিল্লা অফিসের কর্মকর্তা আরিফ উদ্দিন প্রিয়, পরিদর্শক (মেট্রোলজি) এবং সার্বিক সহযোগিতা করেন ইকবাল আহাম্মদ, ফিল্ড অফিসার (সিএম)।

উল্লেখ্য, গত বছরের ৭ ডিসেম্বর ব্লু নামে ইলেক্ট্রোলাইটস ড্রিংক ব্লু বাজারজাত করার ঘোষণা দেয় আলোচিত ইউটিউবার রাফসান, যিনি রাফসান দ্য ছোট ভাই হিসেবে পরিচিত। তখন লিচু ও তরমুজের ফ্লেভার নিয়ে দুই ক্যাটাগরিতে তারা দেশের বিভিন্ন পয়েন্টে বাজারজাত শুরু করে। সম্প্রতি ‘ব্লু’ লেবুর ফ্লেভার বাজারজাত করছে।

যারা একবেলা খেতে পারতো না, তারা এখন চারবেলা খায়: প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: সংগৃহীত

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, গ্রামের অর্থনীতি পাল্টে গেছে। যারা একবেলা ভাত খেতে পারতো না, এখন চারবেলা খায়। একসময় গ্রামে হাটবারের বাইরে কিছু পাওয়া যেতো না, এখন সুপার মার্কেট হয়েছে। আমাদের গ্রামের বাজার পাটগাতিতে (টুঙ্গিপাড়ার একটি ইউনিয়ন) ঈদের আগে ২০০টি ফ্রিজ বিক্রি হয়েছে। গ্রামীণ অর্থনীতি যত বেশি মজবুত হচ্ছে, শিল্প-কলকারখানাও তত বাড়ছে।

শুক্রবার (১৭ মে) রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির ২২তম দ্বিবার্ষিক সম্মেলনের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।

আগামী ৬ জুন বাজেট দেওয়া হবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাজেট আমরা ঠিকমতো দিতে পারবো, বাস্তবায়নও করবো। দেশি-বিদেশি নানা কারণে জিডিপি কিছুটা হয়তো কমবে। তবে সেটা পরবর্তী সময়ে উত্তরণ করতে পারবো, সে আত্মবিশ্বাসও আছে।

তিনি বলেন, অর্থনীতি সমিতির এই প্রোগ্রামে অনেকের অনেক বড় বড় ডিগ্রি আছে। অর্থনীতির সূক্ষ্ম ও জটিল বিষয়াদি আপনাদের মতো আমি বুঝি না। তবে এতটুকু বুঝি, কীভাবে দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করতে হয়। কীভাবে মানুষের উপকার হবে।

শেখ হাসিনা আরও বলেন, যুদ্ধবিধ্বস্ত সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে অর্থনীতির আকার ছিল মাত্র ৮ বিলিয়ন ডলার। রিজার্ভ ছিল শূন্য। এমনই ভয়াবহ পরিস্থিতির ওপর দাঁড়িয়ে জাতির পিতা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে হাত দেন। প্রণয়ন করেন দেশের প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা। এতে তিনি কৃষি ও শিল্পের পুনর্গঠন, উৎপাদন বৃদ্ধি, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও দারিদ্র্য নিরসনকে বিশেষ গুরুত্ব দেন। বঙ্গবন্ধু কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে শুরু করে নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো ঢেলে সাজান। বাণিজ্যিক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো জাতীয়করণ করেন। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড প্রতিষ্ঠা করেন।

১৯৭২ সালে স্বাধীন বাংলাদেশের মুদ্রা প্রচলন করা হয় উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু দেশের সেরা অর্থনীতিবিদদের সমন্বয়ে পরিকল্পনা কমিশন গঠন করেন। ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ছিল ৯১ মার্কিন ডলার। জাতির পিতা মাত্র ৩ বছরে তা ২৭৭ মার্কিন ডলারে উন্নীত করেন। প্রবৃদ্ধি ৯ ভাগ অর্জন করেন।

সর্বশেষ সংবাদ

সাড়ে ১০ হাজার বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠাচ্ছে যুক্তরাজ্য
নিবন্ধন ছাড়াই নোংরা পরিবেশে তৈরি হচ্ছিল রাফসানের 'ব্লু' ড্রিংকস
যারা একবেলা খেতে পারতো না, তারা এখন চারবেলা খায়: প্রধানমন্ত্রী
রাজধানীতে নির্মাণাধীন ভবন থেকে পড়ে দুই শ্রমিকের মৃত্যু
শেখ হাসিনা গণতন্ত্রকামী মানুষের নেতা: খাদ্যমন্ত্রী
সৌদি আরবে পৌঁছেছেন ২৪ হাজার ২৩৬ জন হজযাত্রী
যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল
বাংলাদেশে আসছেন কুরুলুস উসমানের নায়ক বুরাক
কোপা আমেরিকার আগে ব্রাজিল শিবিরে দুঃসংবাদ
৫২৩ হজযাত্রীর টাকা নিয়ে উধাও ২ এজেন্সি মালিক
কুমিল্লায় বাস খাদে পড়ে প্রাণ গেল ৫ জনের
নামাজের সময় তালা আটকে মসজিদে দেওয়া হলো আগুন, নিহত ১১
শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস আজ
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডি-ম্যানেজিং কমিটি চালাতে নতুন বিধিমালা
প্রেমের বিয়ে, স্ত্রীকে হত্যার পর হাসপাতালে মরদেহ রেখে পালালেন স্বামী!
শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ: রাষ্ট্রপতি
সুস্থ থাকতে বিশ্বনবি (সা.) যে দোয়া পড়তেন
৪ বছর পর পেলেন স্বেচ্ছায় মৃত্যুর অনুমতি, যেভাবে মৃত্যু হবে তরুণীর
পাঠ্যবই থেকে বাদ যাচ্ছে আলোচিত ‘শরীফ-শরীফার গল্প’
মিঠা পানির ঝিনুকে উৎপাদিত মুক্তার তৈরি গহনা প্রধানমন্ত্রীর কাছে হস্তান্তর