রসুন আমাদের দৈনন্দিন খাবারের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান; এই রসুনে রয়েছে থিয়ামিন (ভিটামিন বি১), রিবোফ্লাবিন (ভিটামিন বি২), নায়াসিন (ভিটামিন বি৩), প্যান্টোথেনিক অ্যাসিড (ভিটামিন বি৫), ভিটামিন বি৬, ফোলেট (ভিটামিন বি৯) ও সেলেনিয়াম। সেলেনিয়াম ক্যানসার প্রতিরোধে দারুণ কাজ করে। রসুনের মধ্যে রয়েছে এলিসিন নামে এক জরুরি ও গুরুত্বপূর্ণ উপাদান, যা ক্যানসারসহ বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা দূর করতে কার্যকর। এই এলিসিন নামে যে কম্পাউন্ড রসুনে পাওয়া যায়, তার কারণে রসুনকে সুপারফুডে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
শীতকালে প্রতিদিন রসুন খেলে অনেক ধরণের সংক্রমণ এবং পেটের সমস্যা থেকে রক্ষা পাবেন। এটি আপনার শরীরেও গরম যোগাবে।
ইউনিভার্সিটি অব কানেক্টিকাট স্কুল অব মেডিসিনের কার্ডিওভাসকুলার রিসার্চ টিমের মতে, কাঁচা রসুন খেলে হার্ট অনেক বেশি সুস্থ থাকে। চিকিৎসকরা জানিয়েছে, রান্না করা রসুনের থেকেও কাঁচা রসুনের উপকারিতা অনেক বেশি। তাই রসুনের সম্পূর্ণ উপকারিতা পেতে হলে প্রতিদিন এক কোয়া কাঁচা রসুন খাওয়ার চেষ্টা করতে হবে। তা হলেই পাওয়া যাবে এর পুষ্টিগুণ। চলুন জেনে নেওয়া যাক কাঁচা রসুন খেলে আরও কি কি উপকার মিলবেঃ
ঠান্ডা ও ফ্লু কমায় রসুনঃ
ইউএস ন্যাশনাল লাইব্রেরি অফ মেডিসিন-এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রসুনের এমন অনেক গুণ রয়েছে, যা শীতকালে ঠান্ডা ও ফ্লু থেকে রক্ষা করে। প্রতিদিন কাঁচা রসুন খেলে শীতকালীন ঠান্ডা ও ফ্লু হওয়ার আশঙ্কা কমে যায় ৬৩ শতাংশ।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকেঃ
রসুনের মধ্যে থাকা বায়োঅ্যাকটিভ সালফার, রক্তচাপ কমাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। শরীরের সালফারের ঘাটতি দেখা দিলে তবেই রক্তচাপ বাড়তে শুরু করে।
রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়েঃ
রসুনে থাকা ফাইটোনিউট্রিয়েন্টস, যা দেহের আনাচকানাচে জমতে থাকা ক্ষতিকর টক্সিক উপাদানদের বের করে দেয়। ফলে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতার উন্নতি ঘটতে সময় লাগে না।
হার্টের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটেঃ
রসুনে প্রচুর মাত্রায় অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট প্রপাটিজ রয়েছে। এই উপাদানটি একদিকে যেমন শরীরে উপস্থিত খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়, তেমনি উচ্চ রক্তচাপকেও নিয়ন্ত্রণে রাখে। আর এ কথা তো সবারই জানা আছে যে এই দুটি জিনিস নিয়ন্ত্রণে থাকবে তো হার্টের স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটার আশঙ্কা একেবারেই থাকে না।
জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কমেঃ
ওয়েদার চেঞ্জের সময় যারা সর্দি-কাশিতে খুব ভুগে থাকেন। তারা আজ থেকেই দুই কোয়া রসুন অথবা গার্লিক টি খাওয়া শুরু করুন। তাহলেই দেখবেন আর কোনও দিন এমন ধরনের শারীরিক সমস্যা মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে না। কারণ রসুন শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাকে খুব শক্তিশালী বানিয়ে দেয়। ফলে ভাইরাসদের আক্রমণে শরীরের কাহিল হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা কমে।
সংক্রমণ সব দূরে থাকেঃ
রসুনে থাকা একাধিক কার্যকর উপাদান ব্যাকটেরিয়া, ফাঙ্গাসসহ একাধিক জীবাণুর সংক্রমণ আটকাতে যে কোনও আধুনিক মেডিসিনের থেকে তাড়াতাড়ি কাজে আসে। প্রতিদিন ১-২ কোয়া রসুন খেলে এমন ধরনের সব রোগের খপ্পরে পরার কোনও সম্ভাবনাই থাকে না।
ত্বক সুন্দর হয়ে ওঠেঃ
শরীরে উপস্থিত ক্ষতিকর উপাদান বা টক্সিনের কারণে ত্বকের যাতে কোনও ধরনের ক্ষতি না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখে রসুন। সে সঙ্গে কোলাজিনের মাত্রা স্বাভাবিক রাখার মধ্যে দিয়ে ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতেও বিশেষ ভূমিকা নেয়।
রক্ত বিষমুক্ত হয়ঃ
প্রতিদিন এক গ্লাস গরম পানির সঙ্গে দুটি রসুনের কোয়া খেলে রক্তে থাকা নানা বিষাক্ত উপাদান শরীর থেকে বেরিয়ে যেতে শুরু করে। ফলে ধীরে ধীরে ত্বক এবং শরীর উভয়ই চাঙা হয়ে ওঠে।
হাড়ের গঠন শক্ত হয়ঃ
নিয়মিত রসুন খাওয়া শুরু করলে দেহের অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটারি প্রপাটিজের মাত্রা বাড়তে শুরু করে। ফলে একদিকে যেমন নানাবিধ যন্ত্রণা কমে, তেমনি হাড়ের ক্ষয় হওয়ার আশঙ্কাও হ্রাস পায়।
পুরুষের যৌনক্ষমতা বাড়ায়ঃ
পুরুষের যৌনক্ষমতা নানান কারণে কমে যেতে পারে, সে ক্ষেত্রে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে দুই কোয়া রসুন খেলে ধীরে ধীরে যৌনক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। এটা নিয়ে মানুষের মধ্যে দুই ধরনের মতামত থাকলেও পুরুষের ক্ষমতার মূল উৎস হচ্ছে রক্তের সাবলীল গতি। রসুনে এই কাজ করে বলেই যৌনক্ষমতার কথা বলা হয়ে থাকে।
ফুসফুসের সংক্রমণ প্রতিরোধকঃ
ফুসফুসে বিভিন্ন কারণে সংক্রমণ হতে পারে। অ্যালার্জি সমস্যা, ঠান্ডা লাগার প্রবণতা থেকে ফুসফুসে সংক্রমণ ঘটতে পারে, যা থেকে মুক্তি পেতে রসুন পিষে রস খেলে সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি রোধ করে, সঙ্গে হলুদগুঁড়া গরম পানি দিয়ে চায়ের মতো খেলে সংক্রমণ থাকে না। আর প্রতিদিন দুই কোয়া রসুন খালি পেটে খাওয়া ফুসফুসের সংক্রমণ রোধে অত্যন্ত কার্যকর।
কীভাবে রসুন খাবেন?
প্রতিদিন খালি পেটে মাত্র দুই কোয়া রসুন খেলে যদি উচ্চ কোলেস্টেরল এবং উচ্চ ইউরিক অ্যাসিডের সমস্যা নিয়ন্ত্রণে থাকে। এজন্য সকালে খালি পেটে রসুন চিবিয়ে খেতে হবে।
আয়ুর্বেদ বিশেষজ্ঞরা বলেন, রাতে ঘুমানোর আগে ২টি রসুনের কোয়া পানিতে ভিজিয়ে রাখুন, এরপর সকালে খান। দারুণ ফল মিলবে।