অন্তর্বর্তী সরকার আমাদের সংস্কারের ‘কলা’ দেখাচ্ছে: সালাহউদ্দিন আহমদ

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। ছবি: সংগৃহীত
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, সংস্কারের নামে কলা ঝুলানো হচ্ছে অভিযোগ করে ডিসেম্বরের আগেই নির্বাচন দিতে হবে, এটা জনগণের দাবি। ডিসেম্বরের পর নির্বাচন দেয়ার কোনো কারণ নাই। শনিবার (৩১ মে) রাজধানীতে কৃষকদলের আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এই বক্তব্য দেন।
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, আমরা বলেছি, সংস্কার নিয়ে যেগুলো আলোচনা হয়েছে সেগুলো কম্পাইল করে জাতির কাছে প্রকাশ করেন। আগামী ২ জুন আবার ডেকেছেন আমাদের প্রধান উপদেষ্টা। ভাবটা আমরা বুঝছি এরকম আনুষ্ঠানিকতা-আয়োজনের কোনো কমতি নেই। কিন্তু কাজের কাজের কোনো খবর নেই। আবার ডেকেছেন ২ তারিখে তৃতীয় পর্বের আলোচনার আবার শুভ উদ্বোধন হবে। কেনো? উদ্বোধন কয়বার করতে হয়। এই সংস্কার নিয়ে আর কতবার উদ্বোধন করবেন? প্রথম পর্যায়ে একবার উদ্বোধন করেছেন আলোচনার, দ্বিতীয় পর্যায়ের আবার উদ্বোধন করলেন, তৃতীয় পর্যায়ে গিয়ে আবার আপনারা এটা একত্রিত করলেন… এভাবে আপনারা আমাদেরকে সংস্কারের কলা দেখাচ্ছেন।
তিনি বলেন, সংস্কার নিয়ে আলোচনা তো চলছে, কিন্তু বাস্তব কাজের কোনো খবর নেই। বারবার একই আলোচনা পুনরায় উদ্বোধন করা হচ্ছে। এতে জনগণের ধৈর্য কমে যাচ্ছে। সংস্কারের নামে শুধু আনুষ্ঠানিকতা আর টালবাহানা হচ্ছে।
সালাহউদ্দিন আরও বলেন, সংস্কার অবশ্যই আমাদের প্রধান দাবি, তবে তার চেয়ে বেশি জরুরি ফ্যাসিস্ট ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার। যারা দেশের মানুষকে নির্যাতন করেছে, তাদের বিচার হবে—এটাই আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার।
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, একটি গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকার প্রতিষ্ঠার জন্যই তো, ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য তো, বৈষম্যহীন একটি সমাজ প্রতিষ্ঠান জন্য তো, একটি শক্তিশালী সাংবিধানিক রাষ্ট্র পাওয়ার জন্যই তো, আমরা আমাদের সমস্ত গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরে পাওয়ার জন্যই তো, আমরা রক্ত দিয়েছি, সংগ্রাম করেছি, অবিরাম আমরা নির্যাতিত হয়েছি, কারাবাসে গিয়েছি, আয়না ঘরে গিয়েছি কীসের জন্য? এই অধিকার আদায়ের জন্যই তো। আর সেই অধিকার আদায়ের কথা বললেই যদি আপনারা নারাজ হন মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা সেটা খুব দুঃখনজনক। সংস্কারের কথা বলে আর কত বিলম্ব করবেন।
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, নির্বাচন বিলম্বিত হওয়া একটিও কারণ নাই, আপনার সামনে যুক্তি নাই। কেনো আপনি ডিসেম্বরের বাইরে গিয়ে নির্বাচন দেবেন, সেটার পক্ষে একটিও যুক্ত নাই। কিন্তু শুধু বলেন, ডিসেম্বর থেকে জুন, ডিসেম্বর থেকে জুন যেন আছর করেছেন আপনারা যে, ‘ডিসেম্বর থেকে জুন’ এটা বলতে থাকতে হবে। ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন দিতে হবে দেশের মানুষের দাবি। একটি কারণও নাই ডিসেম্বরের বাইরে নির্বাচন যাওয়ার। সাংবাদিক বন্ধুদের কাছে আমার অনুরোধ আপনারা জাতির সামনে উন্মুক্ত করবে যে, যদি ডিসেম্বরের পরে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্যে একটি যুক্তিও তাদের কাছে থাকে তার সেটা যেন তারা প্রকাশ করে।
তিনি বলেন, আমরা বলতে চাই, সংস্কার এবং নির্বাচন চলমান প্রক্রিয়া। যারাই রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসুক তারা প্রতিশ্রুত সেই সংস্কার এবং বিচার প্রক্রিয়া চালিয়ে নিয়ে যাবে। বিচার এটা বিভাগের স্বাধীন এখতিয়ার। এটা তারা তাদের মতো স্বাধীনভাবে বিচার পরিচালনা করবে। আমরা শুধু সহায়তা করব। আর সংস্কার এটা কখনও শেষ হয় না… এটা পৃথিবী যতদিন থাকবে, দেশ যত দিন থাকবে, মানব যতদিন থাকবে ততদিন তাদের চাহিদা অনুসারে, দেশের চাহিদা অনুসারে সংস্কার হতেই থাকবে, এটা চলমান প্রক্রিয়া। আর ওনার ভাষ্য, সংস্কার সমাপ্ত করেই নির্বাচন হতে হবে… কেনো?
রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটের মুক্তিযোদ্ধা হলে জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের উদ্যোগে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৪৪তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ‘বাংলাদেশে কৃষি বিপ্লবে জিয়াউর রহমানের অবদান’ শীর্ষক এই আলোচনা সভা হয়।
সালাহউদ্দিন বলেন, আমরা গণতন্ত্রের পক্ষে যারা কথা বলি, যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে সুদৃঢ় করবার জন্য সারাজীবন নির্যাতিত হয়েছি, নির্বাসিত হয়েছি, কারাবাসে থেকেছি এবং কোনো কোনো সময়ে আমরা আয়না ঘরে থেকেছি। নির্যাতনে-নির্বাসনে-কারাবাসে-আয়না ঘরে যার জীবন ১৬/১৭ বছরতাকে আজকে দেশদ্রোহী বনানো হচ্ছে, এটা হওয়া উচিত। এভাবে আমার নেতা তারেক রহমানের নেতৃত্বে ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনে যারা আমরা সংগ্রাম করেছি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র নির্মাণের জন্য, বৈষ্যমবিরোধী সাম্যভিত্তিক রাষ্ট্র নির্মাণের জন্য তারা সবাই আজকে দেশবিরোধী শক্তি হয়ে গেছি, এই হচ্ছে আমাদের বিরুদ্ধে তকমা।
তিনি বলেন, কারা করছে? যারা আমরা নির্বাচন চাই, যারা আমরা গণতান্ত্রিক উত্তরণে ঘটাতে চাই এবং গণতন্ত্রের কথা বলি… নির্বাচনের কথা বলি, গণমানুষের কথা বলি তারা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে হয়ে গেছি কুচক্রী মহলের দৃষ্টিতে। কারণ তারা চায় না বাংলাদেশে কোনো নির্বাচন হোক, তারা চায় না বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক শক্তির ভিত্তি, তারা চায় এদেশ সবসময় বিদেশ নির্ভর হোক। তারা আমাদেরকে দেশদ্রোহী এবং অন্যান্য দেশের এজেন্ট বানাতে তৎপর হয়ে উঠেছে। এমন পর্যায় গিয়েছে যে, আমাদের ছেলে-সন্তানদের বিরুদ্ধেও কুৎসা রটনা করছে। একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সৈমদ ইউসুফ আহমেদ সম্পর্কেও ‘কুচক্রী’ মহলের মিথ্যাচারের নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি। কৃষকদলের নেতাকর্মীদের ‘অনলাইনে অ্যাক্টিভিটি’ বাড়িয়ে ‘কুচক্রীদের’ বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে বলেন সালাহউদ্দিন।
কৃষকদলের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুলের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মাহদি আমিন, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য তাবিথ আউয়াল, কৃষকদলের আবুল বাশার আখন্দ, নাছির হায়দার, জামাল উদ্দিন খান মিলন, মামুনুর রশীদ খান, এসএম ফয়সাল, আসলাম মিয়াসহ কৃষক দলের কেন্দ্রীয় নেতারা বক্তব্য রাখেন।
