কালো টাকা সাদা করার সুযোগ রাষ্ট্রীয় সংস্কারের বিপরীতমুখী পদক্ষেপ: টিআইবি

ছবি: সংগৃহীত
২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ বহাল রাখার সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। আজ সোমবার (৩ জুন) গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সংস্থাটি জানায়, এই সিদ্ধান্ত রাষ্ট্রীয় সংস্কার বিশেষ করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সংস্কারের মূল উদ্দেশ্যের সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী। একে অনৈতিক, বৈষম্যমূলক এবং সংবিধানবিরোধী পদক্ষেপ বলেও উল্লেখ করেছে টিআইবি।
বিজ্ঞপ্তিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “যেভাবেই ব্যাখ্যা করা হোক না কেন, এটি স্পষ্টভাবে প্রমাণ করে যে রাষ্ট্রীয় সংস্কার, বিশেষ করে দুর্নীতিবিরোধী উদ্যোগের মূল লক্ষ্যকে উপেক্ষা করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। বরং তারা দুর্নীতিকে উৎসাহ দিয়ে রিয়েল এস্টেট লবির কাছে আত্মসমর্পণ করেছে।” তিনি বলেন, “সংবিধানের ২০(২) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, অনুপার্জিত আয় অবৈধ হিসেবে বিবেচিত হওয়ার কথা, অথচ এই সিদ্ধান্ত সেই মৌলিক বিধানের পরিপন্থী।”
টিআইবির মতে, এই সিদ্ধান্ত শুধু অনৈতিকই নয়, বরং এটি বৈষম্যমূলকও। এতে করে আবাসন খাতে অবৈধ অর্থের মালিকদের একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা পাবে এবং সৎ উপার্জনকারীরা বৈধ উপায়ে ফ্ল্যাট বা ভবনের মালিক হওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবেন। টিআইবির নির্বাহী পরিচালক আরও বলেন, “সবচেয়ে আশঙ্কাজনক হলো, এ ধরনের সিদ্ধান্ত সারা বছর নাগরিকদের অবৈধ ও অপ্রদর্শিত অর্থ উপার্জনে উৎসাহ দেবে এবং বছর শেষে সেটি বৈধ করার সুযোগ করে দেবে।”
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সরকার যদি সত্যিই দুর্নীতিবিরোধী অবস্থানকে কার্যকর হিসেবে তুলে ধরতে চায়, তবে কালো টাকা বৈধ করার এই ‘দুর্নীতিবান্ধব’ সুযোগ চিরতরে বন্ধ করতে হবে। একই সঙ্গে কালো টাকার উৎস শনাক্ত করে দায়ীদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানায় সংস্থাটি। টিআইবি মনে করে, এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হলে দেশের দুর্নীতির সংস্কৃতি আরও প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পাবে এবং জনগণ দুর্নীতিবিরোধী কর্মকাণ্ডকে কেবল লোকদেখানো বলেই মনে করবে।
টিআইবি মনে করিয়ে দেয়, বর্তমান সরকারের অধীনে গঠিত দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সংস্কার কমিশনের অন্যতম সুপারিশ ছিল কালো টাকা বৈধ করার পথ চিরতরে বন্ধ করা। সে সুপারিশে সব রাজনৈতিক দলের ঐকমত্য থাকলেও, সরকারের বর্তমান অবস্থান স্ববিরোধী ও আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত হিসেবে দেখা দিয়েছে।
বাজেটে দেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনার বিষয়ে তেমন কিছু বলা হয়নি বলেও টিআইবি হতাশা প্রকাশ করে। সংস্থাটি জানায়, পাচারকারীদের বিরুদ্ধে কী ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বা হবে, সে সম্পর্কে একটি মাত্র বাক্যে দায়সারা বক্তব্য দিয়ে বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। এ ছাড়া বাংলাদেশি নাগরিকত্ব পরিত্যাগ করে বিদেশে থাকা ব্যক্তিদের অর্থসম্পদের ওপর কর ও জরিমানা আরোপের ঘোষণা দেওয়া হলেও, তা কীভাবে বাস্তবায়িত হবে—সে বিষয়ে বাজেটে কোনো সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা নেই বলেও উল্লেখ করেছে টিআইবি।
সবশেষে, রাজস্ব আদায়ের ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার অভাবকেই বাজেটের অন্যতম দুর্বলতা হিসেবে চিহ্নিত করেছে টিআইবি। সংস্থাটি মনে করে, সুশাসনের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে এ ধরনের বৈপরীত্য সরকারকে আরও বেকায়দায় ফেলবে এবং জনগণের আস্থা কমিয়ে দেবে।
