বাংলাদেশে সিগারেট অত্যন্ত সস্তা ও সহজলভ্য হওয়ায় এটি তরুণদের জন্য মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করছে বলে মন্তব্য করেছেন তরুণ চিকিৎসকরা। তারা বলছেন, তামাকের সহজলভ্যতা কমাতে কার্যকর কর ও মূল্যবৃদ্ধি এখন সময়ের দাবি। এজন্য আসন্ন ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে সিগারেটের মূল্যস্তর কমিয়ে তিনটিতে নামিয়ে আনা এবং দাম বাড়ানোর দাবি জানান তারা।
শনিবার (১০ মে) রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে তারা এসব কথা বলেন। ‘প্ল্যাটফর্ম ডক্টরস ফাউন্ডেশন’-এর উদ্যোগে এবং ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ-এর সহযোগিতায় এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে তরুণ চিকিৎসকরা বলেন, দেশে বর্তমানে সিগারেটের চারটি মূল্যস্তর (নিম্ন, মধ্যম, উচ্চ ও প্রিমিয়াম) থাকায় কর কাঠামো জটিল হয়ে পড়েছে এবং তা তামাক নিয়ন্ত্রণে কার্যকর হচ্ছে না। বিশেষ করে নিম্ন ও মধ্যম স্তরের সিগারেটের দামের ব্যবধান খুব কম হওয়ায় ধূমপায়ীরা এক স্তর থেকে অন্য স্তরে সহজে সরে যেতে পারছে। তারা প্রস্তাব করেন, নিম্ন ও মধ্যম স্তরকে একীভূত করে ১০ শলাকার প্যাকেটের দাম ৯০ টাকা নির্ধারণ করা হোক, উচ্চ স্তরের দাম ১৪০ টাকা অপরিবর্তিত রাখা হোক এবং প্রিমিয়াম স্তরের দাম নির্ধারণ করা হোক ১৯০ টাকা।
এই প্রস্তাবনা বাস্তবায়িত হলে প্রায় ২৪ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক ধূমপান থেকে বিরত থাকতে উৎসাহিত হবেন এবং প্রায় ১৭ লাখ মানুষের অকালমৃত্যু প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে বলে জানান প্ল্যাটফর্ম ডক্টরস ফাউন্ডেশনের প্রতিনিধি ডা. ফারজানা রহমান মুন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. শাফিউন নাহিন শিমুল বলেন, সিগারেটের কর কাঠামো পুনর্গঠন ও মূল্যবৃদ্ধির মাধ্যমে সরকারের রাজস্ব আয় ৪৩ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে। বর্তমানে তামাকজাত পণ্যে যে রাজস্ব আসে তা স্বাস্থ্য খাতে তামাকজনিত রোগের ব্যয় মেটাতে যথেষ্ট নয়।
ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের রোগতত্ত্ব বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সোহেল রেজা চৌধুরী বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রতি বছর তামাকজনিত অসংক্রামক রোগে মৃত্যু হয় ১ লাখ ৬১ হাজারের বেশি মানুষের। এই মৃত্যু প্রতিরোধে তামাকজাত পণ্যের ওপর কঠোর শুল্ক আরোপ করে সেগুলো সাধারণের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে নিয়ে যাওয়া জরুরি।
চিকিৎসকরা আরও বলেন, শুধুমাত্র সিগারেট নয়, বিড়ি, জর্দা ও গুলের দামও বাড়াতে হবে। ফিল্টারবিহীন ২৫ শলাকার বিড়ির দাম ২৫ টাকা এবং ফিল্টারযুক্ত ২০ শলাকার বিড়ির দাম ২০ টাকা নির্ধারণ করে ৪৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপের দাবি জানানো হয়। পাশাপাশি জর্দা ও গুলের ক্ষেত্রে যথাক্রমে ৫৫ এবং ৩০ টাকা খুচরা মূল্য নির্ধারণ করে ৬০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপের প্রস্তাব দেওয়া হয়।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের তামাক নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির পরামর্শক ও জয়ীতা ফাউন্ডেশনের পরিচালক মো. নাইমুল আজম খান, প্রজ্ঞার হেড অব প্রোগ্রামস মো. হাসান শাহরিয়ার, বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি মো. রাশেদ রাব্বিসহ বিভিন্ন তামাকবিরোধী সংগঠনের প্রতিনিধিরা।