শনিবার, ২৮ জুন ২০২৫ | ১৪ আষাঢ় ১৪৩২
Dhaka Prokash

ধারাবাহিক উপন্যাস: পর্ব ৭

বিষাদ বসুধা

মোহিনী অফিসে চলে যান। আনোয়ারা বেগম মোহিনীর শোবার ঘর গোছগাছ করে রাখেন। কাজের লোক দিয়ে ভালো করে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করান। বিকেলে মোহসীন আহমেদ বাসায় এসে জানতে পারেন যে, মোহিনী নিজের বাসা ছেড়ে চলে এসেছে। তখন তিনি বিস্ময়ের সঙ্গে বলেন, সে কি! ও চলে এসেছে মানে! কেন চলে এসেছে? ওদের কি কোনো সমস্যা হয়েছে?

আনোয়ারা বেগম তাকে জানান, আরেফিন বিদেশে গেছে। বিদেশে যাওয়া নিয়ে সম্ভবত ওদের মধ্যে কোনো ঝামেলা হয়েছে।

বলো কি! আমি আগেই বলেছিলাম, ওই ছেলের সঙ্গে মোহিনীর বনিবনা হবে না। ওই ছেলের মনমানসিকতা সুবিধার মনে হয়নি। কেন যে ছেলেটাকে মোহিনী পছন্দ করল!

আনোয়ারা বেগম বললেন, তুমি আবার এসব কথা মোহিনীর সামনে বোলো না। ওকে বুঝতেও দিও না তুমি কিছু জানো।

না না। তুমি পাগল হয়েছ! আচ্ছা, মোহিনী কখন ফিরবে?
সন্ধ্যার মধ্যেই হয়তো ফিরে আসবে। তুমি চলো তো, আমরা বাজার করে আসি। মাছ, মাংস, তরিতরকারি কিছু নিয়ে আসি।

বাসায় এলাম। চা খাওয়াবে না?
হ্যাঁ। চা খেয়েই যাবো। তুমি ড্রেস পরিবর্তন করবে না? এই ড্রেসেই যাবে?
আমি অন্য ড্রেস পরে আসছি।

মোহসীন আহমেদ নিজের ঘরে যান। আনোয়ারা বেগম হালিমাকে ডাকেন। তাকে চা নাশতা টেবিলে দেয়ার জন্য বলেন। হালিমা তড়িঘড়ি করে টেবিলে নাশতা দেয়। চা দিয়ে বলে, খালাম্মা টেবিলে নাশতা দিছি। তাড়াতাড়ি আহেন।
আনোয়ারা বেগম খাবার টেবিলে গিয়ে বসেন। তিনি হাফপ্লেটে নাশতা বেড়ে মোহসীন আহমেদকে ডাকেন। তোমার হয়েছে? তাড়াতাড়ি আসো। ঠাণ্ডা হয়ে যাচ্ছে।


মোহসীন আহমেদ দ্রুত পায়ে এগিয়ে এলেন। চেয়ার টেনে বসেই নাশতা খাওয়া শুরু করলেন। স্ত্রীকে উদ্দেশ করে বললেন, তুমি খাচ্ছো না?

আমি শুধু চা খাবো।
কেন?
আমি ডায়েটে আছি।
এই বুড়ো বয়সে আর ডায়েট করে কি হবে?
এই! তুমি আমাকে বুড়ো বললে কেন? আমি কি বুড়ো হয়ে গেছি?
না না! এখনো তরুণীই আছো। হা হা হা!
নাহ! তোমার হাসিটা ভালো লাগছে না।
সিরিয়াসলি বলছি, ডায়েট করে তুমি বয়স কমিয়ে ফেলেছ।
ফেলতেই হবে। তা না হলে তো চলবে না। কি বলো?
হুম। কথাটা মন্দ বলোনি।

জানি তো! পুরুষ জাতিকে আমার চিনতে বাকি নেই। তারা সব সময় তাদের স্ত্রীদের তরুণী দেখতে চায়। কি ঠিক না?
নিজের স্ত্রীকে তরুণী দেখতে চাওয়া নিশ্চয়ই কোনো অপরাধ নয়। যদি এমন হতো যে তরুণী বিয়ে করার জন্য পাগল হতাশ তাহলে বলতে পারতে।

আনোয়ারা বেগম চোখ বড় করে মোহসীন আহমেদের দিকে তাকিয়ে বললেন, তোমার সাহস তো কম না!
মোহসীন আহমেদ হাসলেন। তারপর বললেন, চলো এবার বাজারে চলো।
আনোয়ারা বেগম মোহসীন আহমেদের পেছনে পেছনে এগিয়ে গিয়ে গাড়িতে উঠলেন। গুলশান দুই থেকে ইউনিমার্ট বেশি দূরে নয়। ইউনিমার্টে ঘুরে ঘুরে সংসারের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনলেন। মোহিনীর পছন্দের বিভিন্ন মাছ, দেশি মুরগী এবং খাসির মাংস কিনলেন। বাসায় ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা হয়ে গেলো। ততক্ষণে মোহিনীও বাসায় এসে হাজির হয়েছে। তাকে দেখে মোহসীন আহমেদ ভীষণ খুশি। তিনি মহা উচ্ছ¡াসের সঙ্গে বললেন, আমার আম্মু যে!

কেমন আছো মামনি?
আমি ভালো আছি বাবা। তুমি কেমন আছো?
আমিও ভালো আছি। চীনের খবর শুনে তো মনটাই খারাপ হয়ে গেলো।
কেন বাবা? চীনের কি খবর শুনেছ?

আমাদের তো কিছু ব্যবসা আছে চীনের সঙ্গে তুই জানিস সেটা। কয়েকজন চীনা নাগরিক আমাদের সঙ্গে কাজও করে। ওরা জানাল, চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে নভেল করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ছে। বেশ কিছু মানুষ আক্রান্ত হয়েছে।
মোহিনী বিস্ময়ভরা কণ্ঠে বললেন, তাই নাকি!

হুম। ভাইরাসটি প্রাণী থেকে মানবদেহে ঢুকেছে। একে বলা হচ্ছে কভিড-১৯; বা করোনা ভাইরাস। এটি মারাত্মক ছোঁয়াচে। এই ভাইরাস বহনকারী আরেকজনের কাছাকাছি গেলেই সংক্রামিত হবে। তাকে ছোঁয়ারও দরকার নেই। কাজেই একজন মানুষের কাছ থেকে হাজার জনে ছড়িয়ে যেতে পারে। ভয়ঙ্কর। উহান শহরে বাংলাদেশের মানুষের ব্যাপক যাতায়াত আছে। আবার ওখান থেকে এখানেও বিপুল সংখ্যক চীনা কাজ করছে। ফলে আমাদের দেশে ছড়াতে খুব বেশি সময় লাগবে না। তাছাড়া আমাদের দেশের সংস্কৃতি হচ্ছে, করমর্দন, কোলাকুলি। একজন আরেকজনের সঙ্গে করমর্দন না করে পারেই না! এভাবেই বেশি ছড়াবে। কারণ, কে করোনা বহন করছে তা তো কেউ জানতে পারছে না। অজানা ভাইরাস। অজানা আতঙ্ক।

কথাগুলো শুনে মোহিনী যেন নিভে গেলেন। তিনি মনে মনে ভাবেন, আরেফিন তো উহান শহরেই গেছে। ওর কি হবে? কি কি ভালো আছে? ওখানে যাওয়ার পর কিছুই তো জানাল না। হয়তো দুএকদিনের মধ্যেই জানা যাবে। ও যে কেন আমার কথা শুনল না? নিজে যা বোঝে তাই করে। আমার কথার কোনো মূল্য নেই ওর কাছে। ও যদি আক্রান্ত হয়।

মোহিনীকে চুপ থাকতে দেখে মোহসীন আহমেদ বললেন, কিরে মা, কি ভাবছিস?
মোহিনী দীর্ঘ নিশ্বাস ছেড়ে বললেন, না বাবা। কিছু না।
মোহিনী মন খারাপ করে নিজের কক্ষের দিকে গেলেন। তার মন খারাপ দেখে মোহসীন আহমেদ চিন্তায় পড়লেন। মনে মনে বললেন, মেয়েটার আবার কী হলো!

রাতে মা বাবার সঙ্গে খেতে বসেন মোহিনী। মোহিনীকে আনোয়ারা বেগম খাবার তুলে দেন। মোহসীন আহমেদকেও তুলে দিয়েছেন। মোহসীন আহমেদ খাওয়া শুরু করেছেন। কিন্তু মোহিনী খাচ্ছেন না। তাকে দেখে মনে হচ্ছে সে গভীর চিন্তায় নিমগ্ন। তার সামনে যে খাবার দেয়া হয়েছে তাও সে টের পেয়েছে কি না সন্দেহ। মোহসীন আহমেদ মেয়ের দিকে তাকান। আনোয়ারা বেগমও কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলেন, মোহিনী শুরু কর না মা। কি এতো চিন্তা করছিস?


মোহসীন আহমেদও মোহিনীর কাছে তার মন খারাপের কারণ জানতে চান। তারপরও মোহিনীর ঘোর কাটছে না। নানারকম নেতিবাচক চিন্তা তার মাথায় ঘুরপাক খায়। আরেফিন যদি ওখানে আক্রান্ত হয়! তাহলে তো মহাবিপদে পড়বে! কে দেখবে ওকে? ও তো আমার সঙ্গে একটু যোগাযোগ করতে পারে। আমাকে নিশ্চিন্ত করতে পারে। ও এমন কেন! আমার কিছু ভালো লাগে না।

মোহসীন আহমেদ আবারও মেয়েকে উদ্দেশ করে বলেন, হ্যা রে মা! কি হয়েছে তোর?
বাবা, চীনের উহানে যেখানে করোনা ভাইরাসের উৎপত্তি; আরেফিন সেখানেই তো গেছে। ওর যে কি অবস্থা খোদা তায়ালাই জানেন। আমি এতো করে বললাম, যেও না। আমার কথা শুনল না। এখন কি হবে?
হুম। আমিও বিষয়টা নিয়ে ভাবছি। গভীরভাবে ভাবছি। ওখানে করোনাভাইরাস যেভাবে ছড়িয়েছে! মাই গড! আচ্ছা, আরেফিন কি টেলিফোন করে? তোর সঙ্গে কোনো কথাবার্তা হয়?

মোহিনী চুপ করে আছেন। তিনি কী বলবেন? কোনো রকম কথাবার্তা তো হয় না। আরেফিন মোহিনীকে একটা ফোন নম্বর দিয়েছিলেন। সেই নম্বরে একবারও মোহিনী তাকে পাননি। আরেফিন ফোন দিলেও দুদিন পর হয়তো একবার দুই মিনিটের জন্য ফোন করেন। মোহিনীকে চুপ থাকতে দেখে মোহসীন আহমেদ বললেন, তার মানে তোকেও সে ফোন করে না? এটা কি কোনো কথা হলো?

আনোয়ারা বেগম বললেন, আসলে ছেলেটা এতো বেশি আত্মকেন্দ্রিক এবং আত্মবিমুখ; ওকে ঠিক বুঝতে পারি না। মোহিনী ওকে কতটুকু চিনেছে জানি না। তবে ওকে চেনা খুব সহজ ব্যাপারও নয়।


মোহিনী চুপ করেই আছেন। কোনো কথা বলছেন না। তিনি যে দ্রুত খেয়ে উঠবেন তাও পারছেন না। খাবার যেন ওর গলা দিয়ে নামছে না। অল্প করে ভাত মুখে দিয়ে এপাশ ওপাশ করেন। দাঁতের শক্তিও যেন হ্রাস পেয়েছে। মাঝেমধ্যে পানি দিয়ে গিলে ফেলেন।

মোহিনীর অবস্থা দেখে দুশ্চিন্তায় পড়েন মোহসীন আহমেদ ও আনোয়ারা বেগম। তারা উভয়েই মোহিনীকে নিয়ে ভাবেন। এক পর্যায়ে পরিস্থিতিটা অন্য দিকে নেয়ার জন্য মোহসীন আহমেদ বলেন, একটা ভালো ব্যাপার লক্ষ্য করলাম। মোহিনী ওর ব্যবসায় বেশ মনোযোগ দিয়েছে। মনোযোগটা আরো বাড়বে বলে মনে হচ্ছে।

তোমাকে এই খবর কে দিল বাবা? মোহিনী জানতে চাইলেন।
মোহসীন আহমেদ হাসলেন। তিনি যে ধারনা করে কথাটা বললেন তা প্রকাশ না করে বললেন, তোর অফিসের লোকজনই আমাকে জানালো।

বাহ! তাহলে তো খুব ভালো খবর! আনোয়ারা বেগম বললেন।
মোহিনী বললেন, আমি সত্যি সত্যিই মনোযোগ বাড়াতে চাচ্ছি। কিন্তু পারছি না। বার বার আরেফিনের কথা মনে পড়ে। ওর জন্য খুব খারাপ লাগছে। ওর যদি কিছু হয়ে যায়!

মোহসীন আহমেদ দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে বলেন, আসলে জীবনে একবার ভুল করলে তার মাশুল সারাজীবন দিতে হয়। মোহিনী নিশ্চয়ই এখন বুঝতে পেরেছে যে, ও কী ভুল করেছে! তুমি ওর সঙ্গে বেশি বেশি গল্প কোরো। ওকে সময় দাও।


আমি চেষ্টা করছি। নানাভাবে ব্যস্ত থাকার পরামর্শ দিচ্ছি। দেখা যাক শেষ পর্যন্ত কি হয়!
খাওয়া শেষ করে মোহসীন আহমেদ নিজের ঘরে গিয়ে টিভি দেখেন। টিভিতে উহানের খবর দেখে মেয়েকে ডাকেন। মোহিনী, মোহিনী!
মোহিনী দৌড়ে এসে বিস্ময়ভরা কণ্ঠে বলেন, কি বাবা! কি হয়েছে!

দেখ দেখ! টিভিতে উহানের খবর দেখাচ্ছে। প্রতিদিন করোনায় আক্রান্ত আর মৃতের সংখ্যা বাড়ছে। অন্যান্য দেশেও ছড়িয়ে পড়ার কথা বলা হচ্ছে। আমাদের দেশেও করোনা ছড়িয়ে পড়তে পারে। প্রতিদিন যে পরিমাণ মানুষের যাতায়াত!

শুধু বাংলাদেশের কেন বলছ বাবা! সারা দুনিয়ার সঙ্গে চীনের যে যোগাযোগ তাতে এই ভাইরাস সর্বত্র ছড়িয়ে পড়বে। শুনলাম, ভাইরাসটা ভয়ঙ্কর ছোঁয়াচে। একজন মানুষ যদি হাজার মানুষকে আক্রান্ত করতে পারে তাহলে এর ভয়াবহতা তো সহজেই বোঝা যায়! এই গ্রহের কোনো দেশ আর বাদ থাকবে না!

বিস্ময় আর হতাশার সঙ্গে আনোয়ারা বেগম বললেন, হায় হায়! একটা ভাইরাস এতো ভয়ঙ্কর! মোহসীন আহমেদ বললেন, হুম। বড় বিপদ আমাদের সামনে। এখনই দেখছ না! বাজারে আগুন! হঠাৎ হঠাৎ বাজার থেকে চাল উধাও! ডাল উধাও! লবন উধাও! আরো কত কী! সুযোগ পেলেই কিছু কুলাঙ্গার ব্যবসায়ী জোট বেঁধে বাজারে শর্টফল করে। ওমনি শুরু হয় নাই নাই! আর মানুষ হাহাকার করতে থাকে। করোনায় যে কত মানুষকে বিপদে ফেলবে তা ভেবে আমার মাথা খারাপ অবস্থা!

আনোয়ারা বেগম ও মোহিনীর কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ।

চলবে..

 

আরও পড়ুন

বিষাদ বসুধা: পর্ব-৬

বিষাদ বসুধা: পর্ব-৫

বিষাদ বসুধা: পর্ব-৪

বিষাদ বসুধা: পর্ব-৩

বিষাদ বসুধা: পর্ব-২

বিষাদ বসুধা: পর্ব-১

Header Ad
Header Ad

ড. ইউনূসের জন্মদিনে তারেক রহমানের পক্ষ থেকে ফুলেল শুভেচ্ছা

তারেক রহমান ও অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি: সংগৃহীত

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ৮৫তম জন্মদিনে ফুলেল শুভেচ্ছা জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

শনিবার (২৮ জুন) সন্ধ্যা ৬টায় রাজধানীতে প্রধান উপদেষ্টার অফিসে বিএনপির চেয়ারপারসনের একান্ত সচিব এ বি এম আব্দুস সাত্তার তারেক রহমানের পক্ষ থেকে ফুল ও কেক পৌঁছে দেন।

প্রধান উপদেষ্টার সামরিক সচিব মেজর জেনারেল ফেরদৌস হাসান সেলিম ফুলের তোড়া ও শুভেচ্ছা সামগ্রী গ্রহণ করেন।

ফুলেল শুভেচ্ছা পেয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূস তারেক রহমানের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং তার সুস্বাস্থ্য ও সফলতা কামনা করেন।

ড. মুহাম্মদ ইউনূস ১৯৪০ সালের ২৮ জুন চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার বথুয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা এবং ক্ষুদ্রঋণ ধারণার প্রবর্তক হিসেবে বিশ্বজুড়ে পরিচিত। তার এই অনন্য অবদানের জন্য ২০০৬ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কারে ভূষিত হন।

Header Ad
Header Ad

পিআর পদ্ধতির নামে নির্বাচন বানচালের অপচেষ্টা চলছে: সালাহউদ্দিন আহমদ

ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশে প্রস্তাবিত পিআর পদ্ধতির মাধ্যমে নির্বাচন আয়োজনের দাবিকে ‘নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ।

শনিবার (২৮ জুন) রাজধানীতে জিয়াউর রহমান স্মরণে আয়োজিত এক স্মারক প্রকাশনা ও আর্কাইভ উন্মোচন অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

সালাহউদ্দিন বলেন, “যারা পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন চাচ্ছেন, তাদের উদ্দেশ্য স্পষ্ট—তারা নির্বাচন বিলম্ব কিংবা সম্পূর্ণভাবে নির্বাচন প্রক্রিয়া বানচাল করতে চায়। পিআর পদ্ধতি বাংলাদেশের বাস্তবতায় প্রয়োগযোগ্য নয়।”

তিনি আরও বলেন, “সংস্কার মানে বাইবেল নয়, এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। সংস্কারের মূল প্রবক্তা বিএনপি নিজেই। আমরা এরইমধ্যে ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাব জাতির সামনে উপস্থাপন করেছি। তাই জাতীয় ঐক্যের নামে একপাক্ষিক দৃষ্টিভঙ্গি চাপিয়ে দেওয়া গ্রহণযোগ্য নয়।”

সালাহউদ্দিন আহমদ জোর দিয়ে বলেন, “কেউ যদি মনে করেন সবাইকে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মত মেনে নিতেই হবে, তাহলে ঐকমত্য কখনোই সম্ভব নয়। একতরফা মানসিকতা থেকে বেরিয়ে এসে জাতীয় বাস্তবতাকে বুঝতে হবে।”

বিএনপি এখন জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানান তিনি। তবে সরকারের পক্ষ থেকে দ্রুত নির্দিষ্ট দিন-তারিখ ঘোষণা না করায় নির্বাচন প্রক্রিয়ায় অনিশ্চয়তা তৈরি হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

“সরকার যদি সত্যিই নির্বাচন চায়, তাহলে তাদের উচিত দ্রুত সময়সূচি ঘোষণা করা। বর্তমানে স্থানীয় নির্বাচনের মতো আয়োজন উপযুক্ত নয়; জাতীয় নির্বাচনই এখন দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু।”

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন পরিবেশ বিষয়ক উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসান, সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী এবং প্রেস সচিব শফিকুল আলম প্রমুখ।

উল্লেখ্য, সাম্প্রতিক সময়ে ইসলামি দলগুলোর পক্ষ থেকে জাতীয় নির্বাচনে পিআর পদ্ধতির দাবি জোরালো হচ্ছে। বিশেষ করে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ তাদের মহাসমাবেশে এ পদ্ধতি চালুর দাবি তোলে। বিএনপি এই পদ্ধতির বিরোধিতা করে বলছে, এটি বাস্তবসম্মত নয় এবং এতে নির্বাচনের স্বাভাবিক গতিপথ ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

বিশ্লেষকদের মতে, এই ইস্যুতে দেশের প্রধান রাজনৈতিক শক্তিগুলোর মধ্যে মতপার্থক্য আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে, যা আগামী নির্বাচনের আগে একটি বড় রাজনৈতিক বিতর্কে রূপ নিতে পারে।

Header Ad
Header Ad

জোটবদ্ধ ইসলামি দল হবে আগামী দিনের প্রধান রাজনৈতিক শক্তি: চরমোনাই পীর

সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম । ছবি: সংগৃহীত

ইসলামপন্থীদের ঐক্যের প্রতি গণমানুষের প্রবল প্রত্যাশা তৈরি হয়েছে উল্লেখ করে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির ও চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম বলেছেন, “যদি আমরা ঐক্যবদ্ধ হতে পারি, তাহলে জোটবদ্ধ ইসলামি দলই হবে আগামী দিনের প্রধান রাজনৈতিক শক্তি। ইনশাআল্লাহ, রাষ্ট্রক্ষমতা আমাদের হাতেই আসবে।”

শনিবার (২৮ জুন) বিকেলে রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।

চরমোনাই পীর বলেন, “আমরা স্বাধীনতার পর ৫৪ বছরে বহু রাজনৈতিক দলকে ক্ষমতায় দেখেছি, কিন্তু ইসলামি দল আজও রাষ্ট্রক্ষমতায় আসতে পারেনি। এর বড় কারণ—আমরা বারবার নেতৃত্ব ও নীতির বাছাইয়ে ভুল করেছি। এবার আর সে ভুল নয়, এবার আমরা ঐক্যবদ্ধ হবো।”

তিনি জানান, শুধু ইসলামি দলগুলো নয়, বরং দেশপ্রেমিক আরও কিছু রাজনৈতিক শক্তিকে একত্রে নিয়ে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য গড়ার প্রক্রিয়া চলছে। সেই ঐক্যই হতে পারে রাষ্ট্রক্ষমতায় যাওয়ার সেতুবন্ধ।

চরমোনাই পীর বলেন, “আমি বহু আগেই বলে আসছি—ইসলামপন্থী ভোট এক বাক্সে আনতে হবে। আমরা যদি কার্যকর ঐক্য গড়ে তুলতে পারি, তাহলে জনগণ আমাদের ওপর আস্থা রাখবে এবং ইসলামি শক্তিই হবে এই দেশের ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব।”

তিনি নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারের ওপর জোর দিয়ে বলেন, “আগামী নির্বাচনে ‘সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতি’ চালু করতে হবে। যে দল যত ভোট পাবে, তারা তত আসনে প্রতিনিধিত্ব পাবে। এটা এখন জনদাবি—বহু রাজনৈতিক দল এই দাবিতে একমত।”

বিএনপির প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, “বিএনপির উচিত পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনে অংশগ্রহণের চিন্তা করা। এতে করে প্রকৃত জনপ্রতিনিধিত্ব প্রতিষ্ঠা পাবে।”

এ সময় তিনি ইসলামী আন্দোলনের সংস্কার প্রস্তাবনাগুলোর প্রতি দলটির অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, “সংস্কার প্রশ্নে আমরা আপসহীন। দেরি করা মানেই ২০২৪-এর গণ-আন্দোলনের সঙ্গে বেইমানি। আমরা বিশ্বাস করি, ৭২-এর সংবিধান জনআকাঙ্ক্ষার প্রতি বধির ছিল, তাই সেটিতে প্রয়োজনীয় সংশোধন অপরিহার্য।”

তিনি আরও বলেন, “ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ সবসময় শান্তিপূর্ণ উপায়ে জনমত গঠনে বিশ্বাসী। তবে জনগণের ইচ্ছাকে উপেক্ষা করে যদি নির্বাচন হয়, তাহলে দেশজুড়ে নতুন গণজাগরণ শুরু হবে।”

মহাসমাবেশে হাজার হাজার নেতাকর্মীর উপস্থিতি ও ঐক্যবদ্ধ কণ্ঠে এই বক্তব্য নতুন রাজনৈতিক সমীকরণের বার্তা দিয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। দেশের ভবিষ্যৎ রাজনীতিতে ইসলামপন্থীদের সক্রিয় ও সংগঠিত ভূমিকাই যে এখন আলোচনার কেন্দ্রে, সেটাই যেন প্রতিফলিত হলো এই বক্তব্যে।

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

ড. ইউনূসের জন্মদিনে তারেক রহমানের পক্ষ থেকে ফুলেল শুভেচ্ছা
পিআর পদ্ধতির নামে নির্বাচন বানচালের অপচেষ্টা চলছে: সালাহউদ্দিন আহমদ
জোটবদ্ধ ইসলামি দল হবে আগামী দিনের প্রধান রাজনৈতিক শক্তি: চরমোনাই পীর
খামেনির প্রাণ বাঁচালাম, ধন্যবাদটুকুও দিলো না: ট্রাম্প
পুরস্কার না নিয়ে মনু মিয়ার জানাজায় অভিনেতা খায়রুল বাসার
মা হারালেন ব্যান্ড তারকা তানজির তুহিন
ক্ষমতায় গেলে ১৮ মাসে ১ কোটি কর্মসংস্থান নিশ্চিত করবে বিএনপি: আমীর খসরু
ফিলিস্তিনের মতো সাইপ্রাসও দখলে নিচ্ছে ইসরায়েল!
কালও চলবে এনবিআরের ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ ও ‘মার্চ টু এনবিআর’
‘এনবিআরের প্রশাসনিক আন্দোলনের সঙ্গে বিএনপির কোনো সম্পর্ক নেই’
সিইসির সঙ্গে ড. ইউনূসের বৈঠক নিয়ে যা বললেন প্রেস সচিব
নওগাঁয় ছাত্রদলের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নব গঠিত কমিটির পরিচিতি সভা অনুষ্ঠিত
করোনায় আরও দুইজনের মৃত্যু,  শনাক্ত ৭
এক সপ্তাহের মধ্যে গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হতে পারে: ট্রাম্প
ইসলামী আন্দোলনের মহাসমাবেশে ১৬ দফা ঘোষণা
নতুন রক্তের গ্রুপের সন্ধান পেলেন বিজ্ঞানীরা
গোলাপ জলে গোসল করে রাজনীতি ছাড়লেন আওয়ামী লীগ নেতা
সাগরতীরে বিলাসবহুল রিসোর্ট উদ্বোধন করলেন কিম জং উন
গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে একজনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ২৬২
কূটনৈতিক অস্ত্র পানি নিয়ে ভারতের কঠোর অবস্থান, শঙ্কায় বাংলাদেশ ও পাকিস্তান