মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন বলেছেন, আমরা জনগণের সেবক। জনগণের সেবা করায় আমাদের মূল লক্ষ্য। বর্তমান সরকার স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের কাজ করছে। এজন্য সরকারের প্রতিটি বিভাগকে সততার সঙ্গে কাজ করতে হবে।
শনিবার (৬ মে) সন্ধ্যায় জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে জেলা পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন ও অগ্রগতি বিষয়ক মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, সরকারের মূল উদ্দেশ্য হলো জনগণের সার্বিক সেবার মান উন্নয়ন করা। এজন্য জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করতে হবে। তাদের সঙ্গে সংযত ও সুশৃঙ্খল আচরণ করতে হবে। সরকার জনগণের জীবনমান উন্নয়নে কাজ করছে। সরকারের পক্ষে দেশের সার্বিক উন্নয়নে আমরা কাজ করব। জনগণের সঙ্গে সদাচরণ করায় আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রতি বজায় রাখতে হবে। এর পাশাপাশি সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। কোনো গুজব ছড়ানো যাবে না। যারা গুজব সৃষ্টি করে তাদের প্রতিহত করতে হবে।
মাহবুব হোসেন আরও বলেন, পদ্মা সেতু তৈরিতে যে বিশ্বব্যাংক মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল তারাই আজ বাংলাদেশের উন্নয়ন দেখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ঋণ দেওয়ার জন্য আহ্বান জানাচ্ছে। দেশ আজ অর্থনৈতিকভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে।
জেলা প্রশাসক মোহম্মদ আবু নাসের বেগের সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তব্য রাখেন খুলনা বিভাগীয় কমিশনার মো. জিল্লুর রহমান চৌধুরী, পুলিশ সুপার মশিউদ্দৌলা রেজা, সিভিল সার্জন শহীদুল্লাহ দেওয়ান প্রমুখ।
থাই প্রধানমন্ত্রী পেতংতার্ন সিনাওয়াত্রা। ছবি: সংগৃহীত
থাইল্যান্ডে রাজনৈতিক উত্তেজনা নতুন মোড় নিয়েছে। ফাঁস হওয়া এক ফোনালাপের জেরে দেশটির সংবিধানিক আদালত প্রধানমন্ত্রী পেতংতার্ন সিনাওয়াত্রাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করেছে। কম্বোডিয়ার সাবেক নেতা হুন সেনের সঙ্গে আলোচিত ওই কথোপকথনে পেতংতার্ন তাকে “চাচা” বলে সম্বোধন করেন এবং থাই সেনাবাহিনীর এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার সমালোচনা করেন।
এই ফোনালাপ সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হলে জনমনে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। ফলে তার অপসারণ দাবিতে একটি পিটিশন দায়ের করা হয়, যার প্রেক্ষিতে আদালত তার পদত্যাগ না হওয়া পর্যন্ত তাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করে। আদালতের নয়জন বিচারকের মধ্যে সাতজন বরখাস্তের পক্ষে রায় দেন। একই সঙ্গে তাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য ১৫ দিনের সময় দেওয়া হয়েছে।
এ পরিস্থিতিতে উপ-প্রধানমন্ত্রী সুরিয়া জুংরুংরুয়াংকিত ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন।
এ ঘটনার মাধ্যমে থাই রাজনীতিতে প্রভাবশালী সিনাওয়াত্রা পরিবারের আরেক সদস্য ক্ষমতা হারানোর মুখে পড়লেন। পেতংতার্ন হতে যাচ্ছেন এই পরিবারের তৃতীয় সদস্য যিনি পূর্ণ মেয়াদ শেষ করার আগেই ক্ষমতা হারাবেন। এর আগে তার পিতা থাকসিন এবং ফুফু ইংলাক সিনাওয়াত্রা সামরিক হস্তক্ষেপে ক্ষমতা হারিয়েছিলেন।
পেতংতার্নের নেতৃত্বাধীন জোট সরকার ইতোমধ্যেই টালমাটাল অবস্থায় রয়েছে। দুই সপ্তাহ আগে একটি গুরুত্বপূর্ণ রক্ষণশীল মিত্র দল জোট ত্যাগ করেছে, ফলে সরকার সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারানোর মুখে পড়েছে।
এই পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে ওঠে, কারণ একই দিনে পেতংতার্নের পিতা, সাবেক প্রধানমন্ত্রী থাকসিন সিনাওয়াত্রার বিরুদ্ধেও শুরু হয় রাজকীয় অবমাননার মামলা। অভিযোগ অনুযায়ী, তিনি নয় বছর আগে একটি দক্ষিণ কোরিয়ান সংবাদপত্রে রাজপরিবার সম্পর্কে আপত্তিকর মন্তব্য করেছিলেন। বর্তমানে তিনি “লেসে মাজেস্তে” আইনের আওতায় বিচারাধীন।
থাকসিন থাইল্যান্ডের সবচেয়ে আলোচিত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের একজন। ১৫ বছর নির্বাসনে থাকার পর তিনি ২০২৩ সালে দেশে ফেরেন। তার ফেরার পেছনে রাজনৈতিক সমঝোতা কাজ করেছিল, যা হয়েছিল তার দল পিউ থাই পার্টি এবং সেনাবাহিনী ও রাজপরিবার ঘনিষ্ঠ রক্ষণশীল গোষ্ঠীর সঙ্গে।
থাই প্রধানমন্ত্রী পেতংতার্ন সিনাওয়াত্রা। ছবি: সংগৃহীত
৩৮ বছর বয়সী পেতংতার্ন থাইল্যান্ডের ইতিহাসে দ্বিতীয় নারী প্রধানমন্ত্রী এবং সবচেয়ে কমবয়সী প্রধান নির্বাহী। স্রেত্তা থাভিসিন বরখাস্ত হওয়ার পর তিনি প্রধানমন্ত্রী হন। তবে দায়িত্ব নেওয়ার শুরু থেকেই তিনি চাপে ছিলেন। দেশের দুর্বল অর্থনীতি চাঙ্গা করতে না পারায় জনপ্রিয়তা দ্রুত হ্রাস পায়—যেখানে মার্চে তার জনপ্রিয়তা ছিল ৩০.৯ শতাংশ, তা গত সপ্তাহে কমে দাঁড়ায় মাত্র ৯.২ শতাংশে।
ফাঁস হওয়া ফোনালাপের দায় স্বীকার করে তিনি দুঃখ প্রকাশ করেছেন এবং বলেন, এটি ছিল সাম্প্রতিক সীমান্ত সমস্যা নিয়ে “কৌশলগত আলোচনা”। কিন্তু রক্ষণশীল রাজনীতিবিদরা বলছেন, এতে থাই সেনাবাহিনীর মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হয়েছে এবং এটি ছিল কম্বোডিয়ার প্রতি অযথা নমনীয়তা।
সব মিলিয়ে থাইল্যান্ড এখন রাজনৈতিকভাবে একটি গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছে। পেতংতার্নের ভাগ্য নির্ধারণ করবে সংবিধানিক আদালতের চূড়ান্ত রায়, যা রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণ ও উত্তেজনার জন্ম দিতে পারে।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি: সংগৃহীত
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস দেশের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র রক্ষার লক্ষ্যে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, "জুলাই শুধু একটি মাস নয়, এটি গণজাগরণ, ঐক্য ও গণতান্ত্রিক চেতনার প্রতীক। চলুন, সবাই মিলে এই জুলাইকে পরিণত করি গণজাগরণ এবং জাতীয় ঐক্যের মাসে।"
মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে মাসব্যাপী ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান’ স্মরণ অনুষ্ঠানের উদ্বোধনে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানটি সরাসরি সম্প্রচার করা হয় বাংলাদেশ টেলিভিশনে।
ড. ইউনূস আরো বলেন, স্বৈরাচার পতনের জন্য যেন ১৬ বছর অপেক্ষা করতে না হয়—এই লক্ষ্যেই কাজ চলছে। তিনি শক্ত কণ্ঠে বলেন, "আগামী দিনে কেউ যদি স্বৈরাচার হবার চেষ্টা করে, তাহলে জনগণ যেন সঙ্গে সঙ্গে তাদের পতন ঘটায়। কারণ যখন জনগণ রাস্তায় নামে, তখন কোনো শক্তিই তা থামাতে পারে না।"
তিনি জানান, আমরা ইতিহাস থেকে শিক্ষা গ্রহণ করছি যে, পথ যতই কঠিন হোক না কেন, জনগণের ঐক্য এবং গণজাগরণই শেষ পর্যন্ত বিজয়ী হয়। জুলাই আন্দোলনের মূল বিষয় ছিল—ফ্যাসিবাদ ও স্বৈরাচার রুখে দিয়ে একটি নতুন বাংলাদেশ গঠনের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করা। বর্তমান সরকারও সেই লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে, যাতে আর কখনো স্বৈরাচার মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে।
ড. ইউনূস স্মরণ করিয়ে দেন, ১৬ বছর আগে একটি ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে বিদ্রোহ শুরু হয়েছিল। "আমরা তাৎক্ষণিকভাবে টার্গেট পূরণ করেছিলাম, কিন্তু মূল লক্ষ্য ছিল একটি নতুন রাষ্ট্রব্যবস্থার ভিত্তি নির্মাণ। আমাদের প্রত্যাশা, প্রতি বছর এই মাসটিকে স্মরণ করা হোক এবং স্বৈরাচারের ছায়া পড়লেই তাৎক্ষণিক প্রতিরোধ গড়ে তোলা হোক।"
তিনি জুলাই আন্দোলনের সকল শহীদ ও অংশগ্রহণকারীর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, "মাসব্যাপী এই কর্মসূচি কেবল স্মৃতিচারণ নয়, এটি একটি নতুন শপথ—গণতান্ত্রিক অধিকারের প্রতি জনগণকে সচেতন করা, রাজনৈতিক দায়িত্ববোধ জাগানো এবং মুক্তির জন্য ত্যাগের স্মৃতি অমলিন রাখা।"
ড. ইউনূস আরও উল্লেখ করেন, "গত বছরের জুলাইয়ে দেশের সব শ্রেণি-পেশার মানুষ কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়িয়েছে। সেই ঐক্য পুনরায় গড়ে তোলার সময় এসেছে। শিক্ষার্থীদের সাহসিক আন্দোলন আমাদের পথ দেখিয়েছে। চলুন এই জুলাইকে গণতন্ত্র রক্ষার নতুন প্রত্যয়ের মাস হিসেবে গড়ে তুলি।"
ক্লাব বিশ্বকাপে এবার সবচেয়ে নাটকীয় ও রোমাঞ্চকর ম্যাচ উপহার দিল সৌদি আরবের ক্লাব আল হিলাল। সাত গোলের টান টান উত্তেজনার লড়াইয়ে ইংলিশ জায়ান্ট ম্যানচেস্টার সিটিকে ৪-৩ ব্যবধানে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালের টিকিট কেটেছে দলটি। মার্কোস লিওনার্দোর অতিরিক্ত সময়ের ১১২তম মিনিটে করা জয়সূচক গোলই সৌদি ক্লাবটিকে এনে দিয়েছে এই ঐতিহাসিক জয়।
ম্যাচের শুরুতে অবশ্য এগিয়ে গিয়েছিল সিটি। প্রথমার্ধে বার্নার্ডো সিলভার গোলে ১-০ ব্যবধানে লিড নেয় তারা। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে নাটকীয়ভাবে ম্যাচের মোড় ঘুরে যায়। আল হিলালের হয়ে মার্কোস লিওনার্দো ও ম্যালকম এবং সিটির পক্ষে এরলিং হালান্ডের গোলে ম্যাচ ২-২ সমতায় পৌঁছায়। এতে খেলা গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে।
অতিরিক্ত সময়ের ৯৪তম মিনিটে হেডার থেকে গোল করে আল হিলালকে আবারও এগিয়ে দেন কালিদু কুলিবালি। কিন্তু ১০৪ মিনিটে ফিল ফোডেন গোল করে আবারও সিটিকে সমতায় ফেরান। তবে ম্যাচের ভাগ্য গড়ে দেন সেই মার্কোস লিওনার্দোই, যিনি ১১২ মিনিটে রিবাউন্ড থেকে গোল করে ৪-৩ ব্যবধানে আল হিলালকে এনে দেন অবিশ্বাস্য এক জয়।
ম্যাচ শেষে হতাশ সিটি কোচ পেপ গার্দিওলা বলেন, “আমরা অনেক সুযোগ তৈরি করেছিলাম, কিন্তু আজকের রাতটি ছিল আল হিলালের।” অন্যদিকে ম্যাচসেরা লিওনার্দো বলেন, “এটা আমার ক্যারিয়ারের অন্যতম সেরা মুহূর্ত।”
এই জয়ের ফলে আল হিলাল এখন কোয়ার্টার ফাইনালে মুখোমুখি হবে ব্রাজিলিয়ান ক্লাব ফ্লুমিনেন্সের। ক্লাব বিশ্বকাপে সৌদি আরবের প্রতিনিধি হিসেবে তাদের এমন সাফল্য দেশটির ফুটবলের জন্য একটি নতুন ইতিহাস রচনা করেছে।