
সারাবিশ্ব
ফাঁস হওয়া ফোনালাপের জেরে থাই প্রধানমন্ত্রী বরখাস্ত

থাইল্যান্ডে রাজনৈতিক উত্তেজনা নতুন মোড় নিয়েছে। ফাঁস হওয়া এক ফোনালাপের জেরে দেশটির সংবিধানিক আদালত প্রধানমন্ত্রী পেতংতার্ন সিনাওয়াত্রাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করেছে। কম্বোডিয়ার সাবেক নেতা হুন সেনের সঙ্গে আলোচিত ওই কথোপকথনে পেতংতার্ন তাকে “চাচা” বলে সম্বোধন করেন এবং থাই সেনাবাহিনীর এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার সমালোচনা করেন।
এই ফোনালাপ সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হলে জনমনে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। ফলে তার অপসারণ দাবিতে একটি পিটিশন দায়ের করা হয়, যার প্রেক্ষিতে আদালত তার পদত্যাগ না হওয়া পর্যন্ত তাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করে। আদালতের নয়জন বিচারকের মধ্যে সাতজন বরখাস্তের পক্ষে রায় দেন। একই সঙ্গে তাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য ১৫ দিনের সময় দেওয়া হয়েছে।
এ পরিস্থিতিতে উপ-প্রধানমন্ত্রী সুরিয়া জুংরুংরুয়াংকিত ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন।
এ ঘটনার মাধ্যমে থাই রাজনীতিতে প্রভাবশালী সিনাওয়াত্রা পরিবারের আরেক সদস্য ক্ষমতা হারানোর মুখে পড়লেন। পেতংতার্ন হতে যাচ্ছেন এই পরিবারের তৃতীয় সদস্য যিনি পূর্ণ মেয়াদ শেষ করার আগেই ক্ষমতা হারাবেন। এর আগে তার পিতা থাকসিন এবং ফুফু ইংলাক সিনাওয়াত্রা সামরিক হস্তক্ষেপে ক্ষমতা হারিয়েছিলেন।
পেতংতার্নের নেতৃত্বাধীন জোট সরকার ইতোমধ্যেই টালমাটাল অবস্থায় রয়েছে। দুই সপ্তাহ আগে একটি গুরুত্বপূর্ণ রক্ষণশীল মিত্র দল জোট ত্যাগ করেছে, ফলে সরকার সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারানোর মুখে পড়েছে।
এই পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে ওঠে, কারণ একই দিনে পেতংতার্নের পিতা, সাবেক প্রধানমন্ত্রী থাকসিন সিনাওয়াত্রার বিরুদ্ধেও শুরু হয় রাজকীয় অবমাননার মামলা। অভিযোগ অনুযায়ী, তিনি নয় বছর আগে একটি দক্ষিণ কোরিয়ান সংবাদপত্রে রাজপরিবার সম্পর্কে আপত্তিকর মন্তব্য করেছিলেন। বর্তমানে তিনি “লেসে মাজেস্তে” আইনের আওতায় বিচারাধীন।
থাকসিন থাইল্যান্ডের সবচেয়ে আলোচিত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের একজন। ১৫ বছর নির্বাসনে থাকার পর তিনি ২০২৩ সালে দেশে ফেরেন। তার ফেরার পেছনে রাজনৈতিক সমঝোতা কাজ করেছিল, যা হয়েছিল তার দল পিউ থাই পার্টি এবং সেনাবাহিনী ও রাজপরিবার ঘনিষ্ঠ রক্ষণশীল গোষ্ঠীর সঙ্গে।

৩৮ বছর বয়সী পেতংতার্ন থাইল্যান্ডের ইতিহাসে দ্বিতীয় নারী প্রধানমন্ত্রী এবং সবচেয়ে কমবয়সী প্রধান নির্বাহী। স্রেত্তা থাভিসিন বরখাস্ত হওয়ার পর তিনি প্রধানমন্ত্রী হন। তবে দায়িত্ব নেওয়ার শুরু থেকেই তিনি চাপে ছিলেন। দেশের দুর্বল অর্থনীতি চাঙ্গা করতে না পারায় জনপ্রিয়তা দ্রুত হ্রাস পায়—যেখানে মার্চে তার জনপ্রিয়তা ছিল ৩০.৯ শতাংশ, তা গত সপ্তাহে কমে দাঁড়ায় মাত্র ৯.২ শতাংশে।
ফাঁস হওয়া ফোনালাপের দায় স্বীকার করে তিনি দুঃখ প্রকাশ করেছেন এবং বলেন, এটি ছিল সাম্প্রতিক সীমান্ত সমস্যা নিয়ে “কৌশলগত আলোচনা”। কিন্তু রক্ষণশীল রাজনীতিবিদরা বলছেন, এতে থাই সেনাবাহিনীর মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হয়েছে এবং এটি ছিল কম্বোডিয়ার প্রতি অযথা নমনীয়তা।
সব মিলিয়ে থাইল্যান্ড এখন রাজনৈতিকভাবে একটি গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছে। পেতংতার্নের ভাগ্য নির্ধারণ করবে সংবিধানিক আদালতের চূড়ান্ত রায়, যা রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণ ও উত্তেজনার জন্ম দিতে পারে।