উরুগুয়ের সাবেক প্রেসিডেন্ট হোসে ‘পেপে’ মুজিকা আর নেই। জীবনের ৮৯ বছরের সংগ্রামী পথচলা থেমে গেল ক্যানসারের কাছে। মঙ্গলবার (১৩ মে) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ মৃত্যুসংবাদ জানান উরুগুয়ের বর্তমান প্রেসিডেন্ট ইয়ামান্দু ওর্সি।
২০২৪ সালের শুরুতে মুজিকার গলায় ক্যানসার ধরা পড়ে। দীর্ঘ চিকিৎসার পরও শেষ রক্ষা হয়নি। মৃত্যুর খবর জানিয়ে প্রেসিডেন্ট ওর্সি লিখেছেন, "আপনি আমাদের জন্য যা রেখে গেছেন, তা ইতিহাস হয়ে থাকবে। আপনার মানুষকে ভালোবাসার শিক্ষা আমাদের পথ দেখাবে।"
হোসে মুজিকার জীবন ছিল নাটকীয় বাঁকে ভরা। একসময় তিনি ছিলেন তুপামারোস নামের সশস্ত্র বামপন্থী আন্দোলনের সদস্য, যিনি রাষ্ট্রীয় দমন-নিপীড়নের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরেছিলেন। ওই সময় ব্যাংক ডাকাতি থেকে শুরু করে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়েছিলেন। এর জেরে একাধিকবার গ্রেফতার হন এবং প্রায় ১৪ বছর বন্দিজীবনে কাটান, যার মধ্যে এক দশকই কাটে একাকী কারাবন্দিত্বে।

১৯৮৫ সালে গণতন্ত্র ফিরে এলে সাধারণ ক্ষমায় মুক্তি পান মুজিকা। এরপর শুরু হয় তার রাজনৈতিক রূপান্তর। তিনি কেন্দ্র-বাম রাজনৈতিক জোট ‘ফ্রেন্তে অ্যাম্পলিও’-তে যোগ দেন এবং ২০০৯ সালে ৭৪ বছর বয়সে উরুগুয়ের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।
রাষ্ট্র পরিচালনায় আসার পর মুজিকা একের পর এক সাহসী সংস্কার চালান। গর্ভপাত ও সমলিঙ্গ বিয়ে বৈধ করেন, গাঁজা ব্যবহারে আইন শিথিল করেন এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানির ওপর জোর দিয়ে উরুগুয়েকে এগিয়ে নিয়ে যান পরিবেশবান্ধব রাষ্ট্র হিসেবে।
কিন্তু তাকে নিয়ে সবচেয়ে বেশি আলোচনা হয় তার জীবনযাপন ঘিরে। প্রাসাদ ছেড়ে একটি ছোট খামারে বসবাস, পুরনো ভক্সওয়াগন বিটল গাড়ি চালানো, নিজের বেতনের ৯০ শতাংশ দান—এসবই তাকে ‘বিশ্বের সবচেয়ে গরিব প্রেসিডেন্ট’ উপাধি এনে দেয়।
একবার বলেছিলেন, “রাজনীতি বিলাসের জায়গা নয়, সাধারণ মানুষের মতো জীবনযাপন করাই উচিত একজন নেতার। নয়তো তারা মানুষ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।”

মুজিকার মৃত্যুতে লাতিন আমেরিকার রাজনীতিতে এক শূন্যতা সৃষ্টি হলো। মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট ক্লাউডিয়া শেইনবাউম বলেন, “তার প্রজ্ঞা ও সরলতা ছিল বিশ্ববাসীর জন্য এক অনন্য উদাহরণ।” চিলির প্রেসিডেন্ট গ্যাব্রিয়েল বোরিচ স্মরণ করে লেখেন, “তিনি দেখিয়ে গেছেন, সব কিছু আরও ভালোভাবে করা সম্ভব।”
২০২৪ সালের শেষ দিকে চিকিৎসায় সাময়িক উন্নতি হলেও ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে জানা যায়, ক্যানসার তার যকৃতে ছড়িয়ে পড়েছে। শেষ সময় পর্যন্ত রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন তিনি, বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় আয়োজনে যোগ দিয়েছেন, পরামর্শ দিয়েছেন তরুণ রাজনীতিকদের।
এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, “আমি মরতে যাচ্ছি—তবে একজন যোদ্ধা হিসেবে, যে তার কাজ শেষ করে বিশ্রামে যাচ্ছে।”