সরকার ও সেনাবাহিনী একসঙ্গে কাজ করছে: সেনা সদরের ব্রিফিং

ঢাকা সেনানিবাসে ব্রিফিং করেছেন সেনা কর্মকর্তা। ছবি: সংগৃহীত
সরকার ও সেনাবাহিনী ঘনিষ্ঠভাবে ও সমন্বিতভাবে একসঙ্গে কাজ করছে বলে জানিয়েছেন সেনাবাহিনীর মিলিটারি অপারেশন্সের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজিম-উল-দৌলা। সোমবার (২৬ মে) দুপুরে সেনানিবাসে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই কথা জানান।
সংবাদ সম্মেলনে করিডর প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজিম-উল-দৌলা বলেন, “করিডরের বিষয়টি অত্যন্ত স্পর্শকাতর। এটি আমাদের দেশ এবং দেশের সার্বভৌমত্বের সঙ্গে প্রত্যেকেই জড়িত। এমন কোনো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি যেখানে বিষয়টি নিয়ে অতিরিক্ত আলোচনা বা সমালোচনা প্রয়োজন হয়।”
তিনি আরও বলেন, “সরকার ও সেনাবাহিনী একে অপরের পরিপূরক হিসেবে কাজ করছে। আমরা সবসময় সরকারের নির্দেশনায় দায়িত্ব পালন করি এবং ভবিষ্যতেও এই সহযোগিতা আরও সুসংহতভাবে চলবে।”
তিনি স্পষ্ট করে দেন, করিডর ইস্যুর সঙ্গে বর্ডারে আরসা (ARSA) গোষ্ঠীর মুভমেন্টের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। এই দুইটি বিষয় সম্পূর্ণ আলাদা।
চট্টগ্রামের একটি কারখানায় সন্ত্রাসী সংগঠন কেএনএফের (KNF) পোশাক পাওয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠলে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জানান, “এটি একটি বাস্তব ও বস্তুনিষ্ঠ খবর। কেএনএফ মূলত বম সম্প্রদায়ভিত্তিক সংগঠন, এবং তাদের অস্ত্রের ব্যবহার আমরা পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রত্যক্ষ করেছি। তাদের হামলায় আমাদের সেনা সদস্য নিহত ও আহত হয়েছেন।”
৩০ হাজার ইউনিফর্ম উদ্ধারের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “ছবিগুলো পাওয়ার পরপরই আমরা বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে নিয়েছি। এত বিপুল পরিমাণ পোশাক কার জন্য তৈরি হয়েছে, তা আমরা খতিয়ে দেখছি। বম সম্প্রদায়ের জনসংখ্যা মাত্র ১২ হাজার, তাই এই সংখ্যা কেএনএফ-এর জন্য কিনা তা নির্ণয়ের প্রয়োজন আছে।”
তিনি বলেন, “বিষয়টি দেশের নিরাপত্তার সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত। কোনোভাবেই এটিকে আমরা হালকাভাবে নিচ্ছি না। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
বাংলাদেশ মিয়ানমার সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “আমরা বর্ডার কখনোই কম্প্রোমাইজ করিনি। যতক্ষণ আমাদের সামান্য শক্তিও থাকবে, আমরা দেশের সীমান্ত রক্ষা করব। এটা আমাদের দেশ, সবাইকে মিলে এই দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে হবে।”
তিনি মিয়ানমারের বর্তমান অস্থিতিশীলতা প্রসঙ্গে বলেন, “মিয়ানমারের সরকার কার্যত বিলুপ্তির পথে, রাখাইন রাজ্যের ৮৫–৯০ শতাংশ এলাকা বর্তমানে আরাকান আর্মির দখলে। তবে আরাকান আর্মি কোনো সরকার-স্বীকৃত সংগঠন নয়। এই এলাকাগুলিতে সরকারি কর্তৃত্ব অনুপস্থিত, ফলে সীমান্তে কিছু সশস্ত্র গোষ্ঠীর উপস্থিতি অস্বাভাবিক নয়।”
তবে তিনি সতর্ক করেন, “এই পরিস্থিতিকে আমরা কখনো স্বীকৃতি দেব না কিংবা উপেক্ষাও করব না। বিজিবি এবং সেনাবাহিনী যৌথভাবে সীমান্তে সর্বোচ্চ নজরদারি রাখছে। যাতে দেশের সার্বভৌমত্ব কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।”
তিনি আরও বলেন, “বর্ডারের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ থাকাটা স্বাভাবিক, কিন্তু আমরা পরিস্থিতির প্রতি সম্পূর্ণ সচেতন এবং প্রতিটি পদক্ষেপ হিসাব করে নিচ্ছি।”
