দেশের অর্থনীতির জন্য একটি বড় সুখবর—চলতি ২০২৪–২৫ অর্থবছরে প্রথমবারের মতো প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স ৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। অর্থবছর শেষ হতে এখনো দু’দিন বাকি থাকলেও এরই মধ্যে রেমিট্যান্স এসেছে ৩০ দশমিক ০৪ বিলিয়ন বা ৩ হাজার ৪ কোটি ডলার। এর আগে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স এসেছিল ২০২০–২১ অর্থবছরে, যার পরিমাণ ছিল ২৪ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়, জুন মাসের ২৮ তারিখ পর্যন্ত প্রবাসীরা দেশে পাঠিয়েছেন ২৫৪ কোটি ডলারের সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা। গত অর্থবছরের একই সময়ে যা ছিল ২৩৭ কোটি ডলার। অর্থাৎ চলতি জুন মাসেই রেমিট্যান্স বেড়েছে ১৭ কোটি ডলার বা প্রায় ৭ শতাংশ। ঈদ উপলক্ষে টানা ১০ দিনের ব্যাংক ছুটি থাকা সত্ত্বেও এই প্রবৃদ্ধি এসেছে, যা উল্লেখযোগ্য।
বিশ্লেষকরা বলছেন, রেমিট্যান্স বৃদ্ধির মূল কারণ হলো হুন্ডির মাধ্যমে অর্থপাচার কমে আসা এবং দেশের অভ্যন্তরে ঋণ জালিয়াতি ও দুর্নীতির মাত্রা হ্রাস পাওয়া। আগে করোনা মহামারির সময়ও বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স বেড়েছিল, কারণ সেসময় হুন্ডি কার্যত অকার্যকর ছিল।
এদিকে রেমিট্যান্সে এই প্রবৃদ্ধির পাশাপাশি রপ্তানি আয়েও ৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে। এছাড়াও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ও দেশ থেকে পাওয়া ঋণ এবং অনুদানের ফলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভেও বড় উল্লম্ফন দেখা দিয়েছে। বর্তমানে গ্রস রিজার্ভ ৩০ বিলিয়ন ডলারের ওপরে পৌঁছেছে। আইএমএফের হিসাব অনুযায়ী এই রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ২৫ দশমিক ৫১ বিলিয়ন ডলার, যা গত দুই বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।
উল্লেখ্য, ২০২১ সালের আগস্টে বাংলাদেশের রিজার্ভ ছিল রেকর্ড ৪৮ বিলিয়ন ডলার। তবে পরবর্তী সময়ে অর্থপাচার, আমদানি বিল পরিশোধ ও রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে রিজার্ভ দ্রুত কমতে থাকে এবং আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ সময়ে তা নেমে আসে ২০ দশমিক ৪৮ বিলিয়ন ডলারে। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে রেমিট্যান্স ও রিজার্ভ উভয়েই ঘুরে দাঁড়িয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই উর্ধ্বগতি রপ্তানি ও বৈদেশিক মুদ্রার বাজারে স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে বড় ভূমিকা রাখবে এবং দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।