শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪ | ১২ শ্রাবণ ১৪৩১
Dhaka Prokash

নষ্ট প্রেমের দহন

নাজনীনের অস্থিরতা বেড়েই চলছে। কোনভাবেই নিজেকে স্থির রাখতে পারছেনা।একটা অশুভ চিন্তা তার মনের কোনায় বারবার হানা দিয়ে যায়।মনের সাথে যুদ্ধ করে সে। এ কি করে সম্ভব? এমনটি সে ভাবতেই পারে না! তাহলে আকাশের মোবাইল ফোনটা বন্ধ কেন?এরই মাঝে আকাশের বন্ধু, অফিসের বস,যাদের সাথে ঘনিষ্টতা রয়েছে আকাশের, সকলকেই ফোন করেছে নাজনীন। কেউ তার হদিস বলতে পারছেনা ওর কাছের বন্ধুদের মধ্যে আবির, দুর্জয় ওরাও বর্তমান অবস্থান জানে না। মোবাইল ফোন বন্ধ হওয়ার আগের বিকেলে নাকি দুর্জয়ের সাথে ছিল,রাতে ঘুমায় বন্ধুর বাসায়। শেষ রাতের দিকে উঠেই কাউকে না জানিয়ে চলে যায় আকাশ। তারপর থেকে ফোন বন্ধ। অল্প কিছুক্ষণ হলো নাজনীন মেয়েকে নিয়ে স্কুল থেকে ফিরেছে। এই সময়েই ফোনটা আসে। কথাটা শুনেই স্তব্ধ হয়ে থাকে অনেকক্ষণ। নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছে না সে। এ যে হতেই পারে না! কিন্তু রোদেলার স্বামী স্পষ্ট করেই বলে দিল। আপু তোমার স্বামী আমার বউকে নিয়ে চলে গেছে।

গত তিন দিন থেকেই আকাশের মোবাইল ফোন বন্ধ। নাজনীন প্রথমেই ফোন করেছিল আকাশের অফিসে। তার বস জানিয়ে দিল সে গত বেশ ক'দিন অফিসে আসছে না। অফিস থেকে উল্টো জানতে চায়, আকাশের কি হয়েছে? অফিসকে না জানিয়ে , ছুটি ছাড়াই সে সপ্তাহ খানেক অফিসে যাচ্ছে না। সব মিলিয়ে নাজনীন কিছুই ভাবতে পারে না। কেন এমন হবে? সে ত কোন ভাবেই অপূর্ণ রাখেনি আকাশকে। তাদের সংসারে ভালবাসার অভাব ছিলনা কখনোই। চাঁদের আলোর মতো দু'টি কন্যা নাজনীনে'র কোল আলো করে আসে। ভালবাসার চির বন্ধনকে অটুট রাখতে। সাজানো সুখের সংসার কালবৈশাখী ঝড়ে সব এলোমেলো করে দেয়।নাজনীনের দুগাল বেয়ে অশ্রু ঝড়ে। হাজার পাওয়ারের বাতি ঢিপঢিপ করে জ্বলতে থাকে দুচোখের তারায়। টর্নেডোর আওয়াজ শুনে হাজার মাইল জুড়ে। ছোট মেয়েটি কোলে এসে জড়িয়ে ধরে। কি হয়েছে মা? তুমি কাঁদছ কেন? তুমাকে কে বকেছে মা? আমাকে বলো, বাবা বাড়ী এলে, যে তোমাকে বকেছে তাকে মারতে বলবো। মৃত্তিকার আদো আদো বুলে এই কথাগুলি আরো বেশি আঘাত করে নাজনীনকে।

সে আর নিজেকে সামলে রাখতে পারে না। এমন সময় গেটে কলিং বেল বেজে উঠে। উঠে গিয়ে গেট খুলে দেখে শাওলি। স্কুল ড্রেস পরা মেয়েকে আজ খুব আহলাদি মনে হয়। কাঁধে স্কুল ব্যাগ ঝুলিয়ে, হেলতে দুলতে উঠে যায় দু'তলায়। শাওলি রুমে ঢুকেই স্কুল ব্যাগ ছুড়ে ফেলে দেয় খাটের উপর। ড্রয়িং রুমের সোফায় একটু বসার পর বাথ রুমে যায় ফ্রেস হতে। বেরিয়ে এসে হাত-মুখ মুছতে মুছতে বলে: আম্মু ভাত দাও, প্রচন্ড ক্ষুধা লেগেছে। নাজনীন এবার মুখ তুলে কান্না জড়িত কন্ঠে বলে: রান্না করিনি মা। ফ্রিজে খাবার আছে এখন বের করে খেয়ে নাও। মায়ের মুখের দিকে চেয়ে স্তব্ধ হয়ে যায় শাওলি। একি চেহারা মায়ের? আলুথালু বেশ,এলো চুল,চোক দুটি লাল জবা ফুলের মতো। দুগাল বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে নামছে অনর্গল। শাওলি অবাক হয়ে এগিয়ে যায় মায়ের কাছে।মাকে জড়িয়ে ধরে বলে, কি হয়েছে মা? গভীর কান্নায় কন্ঠ রোধ হয়ে আছে নাজনীনের। অস্পষ্ট স্বরে বলে তোমাদের কপাল পুড়েছে মা। তুমার বাবা তোমাদের ছেড়ে চলে গেছে। আমার পৃথিবী জুড়ে গভীর অমানিশার অন্ধকার।

সেদিনের সেই সন্ধায় আকাশ নিজেকে আবিষ্কার করে ভিন্ন মাত্রায়! সেকি কখনো এইভাবে কল্পনা করেছে রোদেলাকে? নাজনীনের দুর সম্পর্কের আত্মীয় রোদেলা। ছোট বেলা থেকেই রোদেলা মানুষ হয়েছে তাদের কাছে।আপন ছোট বোনের মতোই এই সংসারে বেড়ে উঠেছে রোদেলা। আকাশ-রোদেলা, দু'জনই মানসিকভাবে কখনো ভাবেনিঃ ভিন্ন কিছু। রোদেলার পড়ালেখা শেষ হতেই আকাশ একটি সুপাত্রের সন্ধান করতে থাকে। একটি ভাল ছেলে পেয়ে যায়। বেশ ঘটা করেই বিয়ের অনুষ্ঠান হয়। রোদেলার বিয়েতে প্রচুর খরচ করে আকাশ। সোনা,গয়না, ফার্নিচার থেকে শুরু করে বেশ কয়েক হাজার মানুষকে দাওয়াত করেন। বেস আনন্দ ঘণ পরিবেশে বিয়ের অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়। সমস্যা তৈরি হয় রোদেলাকে শশুর বাড়ী তুলে নেওয়ার পরে। স্ত্রী, সন্তান,মা, ভাই-বোন সব থাকার পরও আকাশের সবকিছুই শূন্য মনে হচ্ছিল! আকাশ ভাবে, কেন এমন হবে? তাদের মাঝেতো কোনরূপ অপবিত্র সম্পর্ক ছিল না। একসাথে থাকা-খাওয়া,হাসি-আনন্দ, জীবনের সবকিছুই ভাগ করা ছিল। কিন্তু তারা কেউ ভিন্ন চিন্তা করেনি পরস্পরকে ঘিরে। কিন্তু জীবন যখনি আলাদা, তখন কেন এমনি হচ্ছে? রোদেলা যাওয়ার পর থেকে, আকাশের জীবনে শূন্য অনুভুতি নেমে আসে। সংসার, কাজ, বন্ধু,আড্ডা,রাজনীতি সবকিছুই মনে হয়ে অর্থহীন।

সেদিন অফিসে যাওয়ার পথে নাজনীন আকাশকে বলে দেয়, রোদেলা শশুর বাড়ী গেল একমাস পার হয়ে গেল।কোন খবর নেই! ফোন করলেও অল্প কথা বলে। আজ অফিস থেকে ফেরার পথে, একটু খোঁজ নিয়ে এসো। ওদের বলে এসো আগামী সোমবার আসতে। ১০ ফেব্রুয়ারি শাওলির জন্মদিন। তোমার মনে আছেতো মেয়ের জন্মদিনের কথা? আকাশ চোখ তুলে বলে, মেয়ে আমার আর মনে করিয়ে দিবে তুমি! তারপর বলে ঠিক আছে আমি অফিস থেকে ফেরার পথে ওদের বলে আসব। আকাশ একটু আগেই অফিস থেকে বের হয়ে যায়। লোকাল বাসে করেই চলে যায় রোদেলার শশুর বাড়ী। দরজায় কলিংবেল বাজাতেই, রোদেলা দরজা খুলে দেয়। আকাশকে দেখে রোদেলা বলে ভাইয়া! তুমি? আমার কথা মনে পড়লো তোমার? রোদেলার সাথে ড্রয়িং রুমে গিয়ে বসে আকাশ। রেদেলাকে দেখে অবাক হয় আকাশ! একি চেহারা হয়েছে মেয়েটার? এই ক'দিনেই চোখ,মুখ বসে গেছে। গায়ের রং কালো হয়ে গেছে, শুকিয়ে কঙ্কাল। সামনে বসা রোদেলাকে প্রশ্ন করে আকাশ, একি অবস্থা তোমার? রোদেলা উত্তর দেয়ার আগেই ওর শাশুড়ী ঢুকে যায়। সেই বলে: কেমন আছ বাবা? রোদেলাকে নিয়ে আমরা খুব বিপদে: আকাশ উদ্বিগ্ন স্বরে বলে কেন, কি হয়েছে? দেখ বাবা: তোমাদের বাড়ী থেকে আসার পর থেকেই সারাক্ষণ মনমরা হয়ে থাকে। কিছু খেতে চায় না,কারো সাথে তেমন কথাও বলে না, রাতে নাকি ঘুমায় না! এখন কি করবো বল তো? আকাশ রোদেলাকে উদ্দেশ্য করে বলে : এসব কি রোদেলা! কি হয়েছে তোমার? মাথা নিচু করে উত্তর দেয় রোদেলা, আমার কিছুই ভাল লাগেনা ভাইয়া।
এসময় চাই, নাস্তা নিয়ে আসে কাজের বোয়া। রোদেলার শাশুড়ী কে আকাশ বলে, রোদেলাকে তার আপু আগামী সোমবার যেতে বলেছে, শাউলির জন্মদিন। রোদেলা বলে, আমাকে আজকে নিয়ে যাও। আমার বাড়ী যেতে খুব ইচ্ছে করছে। রোদেলাকে সমর্থন করে তার শাশুড়ী বলে তাই করো বাবা। ওকে নিয়ে গিয়ে দেখ, জায়গাবদল হলে হয়ত-তার শারিরীক, মানসিক পরিবর্তন আসতে পারে।
আধ ঘন্টার মধ্যেই রোদেলা প্রস্তুত হয়ে আসে। বাসার গেট পার হতেই ওদের বুকের পাথর নেমে যায়। আকাশের মনে হয়, কি যেন ফিরে পেল সে। অল্প সময়েই পাল্টে যায় রোদেলা। কথা বলতে শুরু করে অনর্গল। সিএনজি ধরেই তারা বাসায় ফিরে। রাতেই রোদেলাকে পেয়ে নাজনীন,শাওলির আনন্দ যেন আর ধরে না। একমাস পরে এই বাড়ীতে যেন প্রাণ ফিরে আসে।

এই কটা দিন বেশ আনন্দেই কেটে যায়। শাউলির জন্মদিনের অনুষ্ঠান শেষ হলো দুই দিন। আজ রোদেলার বর এসেছে তাকে নিয়ে যেতে। আবারো অন্ধকার ঘণিয়ে আসে দু'জনের। এই ক'দিনে নতুন দুর্ঘটনা ঘটে যায়। সে দি ন শাওলি স্কুলে, মৃত্তিকাকে নিয়ে কিন্ডার গার্ডেনে গিয়েছে নাজনীন। নিরিবিলি বাসায় রোদেলা-আকাশ। চা নিয়ে ড্রয়িং রুমে আসে রোদেলা। আকাশের সামনে চা দিয়ে পাশেই বসে। মাথা নিচু করে কাচুমাচু করে বলে, ভাইয়া তোমাকে ছেড়ে থাকতে আমার খুব কষ্ট হয়। রোদেলার কথায় বাধ ভেঙ্গে যায় আকাশের। কিছুক্ষণ রোদেলার দিকে চেয়ে থাকে। তারপর কাছে টেনে নেয়। এবার আকাশের বুকে গড়িয়ে পরে রোদেলা।

আকাশ বলে, তোকে ছাড়া আমার পৃথিবী যে অন্ধকার! তারপর বাধভাঙ্গা জোয়ার, যা কল্পনা করা যায় না, তাই ঘটে যায়। ঘন্টা খানেক পরে ওরা ফিরে আসে আপন সত্তায়। কিন্তু ততক্ষণে ওরা অন্য পৃথিবীর বাসিন্দা। পাল্টে যায় সম্পর্কের গন্ডি। এই কদিনে বেশ ক'বার একাকিত্বে সময় কাটিয়েছে ওরা দুইজন। তারা যেন হাজার বছরের চেনা। প্রেমিক প্রেমিকা!

আজ স্বামীর সাথে চলে যায় রোদেলা। আবার শুরু হয় অস্থিরতা।ওদিকে রোদেলা, এদিক আকাশ একই অবস্থা।রাতে মোবাইলে কথা হয়ে ঘন্টা ধরে। বাড়তে থাকে অস্থিরতা। রোদেলা-আকাশ ছাড়া কেউ আঁচ করতে পারে না। দুই জীবন দুই দিকে গুমরে গুমরে মরে। কাউকে বলতেও পারে না। সমাজ,সংসার, সামাজিক অবস্থান তাদের বুকে পাথর চাপা দেয়। সময়ের চাকা ঘুরে। বাড়তে থাকে অস্থিরতা, কষ্ট। বেঁচে থাকাটাই অসম্ভব মনে হয় ওদের কাছে। তখনই ঘটে চুড়ান্ত দুর্ঘটনা।
প্রতি রাত আর দিনের আলোয় নিজেদের নতুন করে আবিষ্কার করে, অশুভ প্রেমের পরিণতি। জীবনের গতি অনিশ্চয়তায় মুঁছে যেতে থাকে। আগামীর নতুন পৃথিবী ওদের ডাক দিয়ে যায়। ঠিকানা বিহীন এক যাত্রা পথের মাত্রা নির্দেশ করে।
মোবাইলে কথা হয়েছিল রাতেই। খুব ভোরেই পালিয়ে যায় ওরা। চেনা পৃথিবীর গন্ডি ছেড়ে হারিয়ে যায় ওরা। সকল বাধা পিছনে ফেলে, ছুটে চলে অজানার ঠিকানায়। যেখানে কেউ তাদের চিনবে না কোন প্রশ্ন করবে না। বন্ধনহীন জীবনে নতুন বাঁধনে জড়িয়ে।

 

ডিএসএস/ 

Header Ad

আবু সাঈদের পরিবারকে সাড়ে ৭ লাখ টাকা দিল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন

আবু সাঈদের পরিবারকে সাড়ে ৭ লাখ টাকা দিল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ছবি: সংগৃহীত

কোটা আন্দোলনে নিহত বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) শিক্ষার্থী আবু সাঈদদের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

শুক্রবার (২৬ জুলাই) সকাল সাড়ে ১০টায় তাঁর গ্রামের বাড়িতে গিয়ে বাবা-মায়ের হাতে সাড়ে ৭ লাখ টাকার চেক তুলে দেয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি দল।

এ সময় নিহত আবু সাঈদের বৃদ্ধ বাবা মকবুল হোসেন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এর আগে আরেকদিন আমাদের সঙ্গে দেখা করতে আসে। সেই সময় ভিসি স্যার আমার সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলেছেন। আমাদের খোঁজখবর নিয়েছেন। আমাদের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। আমি স্যারকে বলেছিলাম আমাদের পরিবারের একজনকে যেন বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি দেওয়া হয়। ভিসি স্যার আশ্বস্ত করেছেন। প্রতিদিনই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কেউ না কেউ খোঁজ রেখেছেন।

এ ছাড়া পরিচিত-অপরিচিত অনেকেই সহায়তা করছেন বলেও জানায় আবু সাঈদের পরিবার।

মকবুল হোসেন আরও বলেন, আমার কলিজার টুকরা ছিল আবু সাঈদ। তার প্রাইভেট পড়ানোর (টিউশনের) জমানো টাকায় আমার সংসার চলতো। সন্তান হারিয়েছি, এ শোকের কোনো সান্ত্বনা নেই। বাবা হয়ে সবচেয়ে ভারী কাজ হলো সন্তানের লাশ কাঁধে নেওয়া।

এখন শুধু সবার কাছে সন্তানের জন্য দোয়া চান বৃদ্ধ এ বাবা।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষে আর্থিক সহায়তা প্রদানের সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর শরিফুল ইসলাম, বাংলা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. তুহিন ওয়াদুদ, শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান মন্ডল আসাদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর শরিফুল ইসলাম বলেন, ভিসি মহোদয়ের নির্দেশে আবু সাঈদের বাবা-মায়ের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সব সময় যোগাযোগ রাখছে। ভিসি স্যার নিজেও সাঈদের পরিবারের খোঁজ রাখছেন, পরিবারের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এরই অংশ হিসেবে আজকে সাড়ে সাত লাখ টাকার আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। এ সহযোগিতার ধারা অব্যাহত থাকবে।

উল্লেখ্য, গত ১৬ জুলাই বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন পার্ক মোড়ে কোটা সংস্কারে দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশ ও ছাত্রলীগের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে মিছিলের সম্মুখে থেকে বুক পেতে দেওয়া আবু সাঈদ নিহত হন। এ ঘটনার পর আন্দোলনের উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ে গোটা জেলাজুড়ে। নিহত আবু সাঈদ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কোটা সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ছিলেন।

সহিংসতার অভিযোগে ঢাকায় ২০৯ মামলায় গ্রেপ্তার ২৩৫৭

প্রতীকী ছবি। ছবি: সংগৃহীত

কোটা সংস্কার আন্দোলনের নামে ঢাকাসহ সারা দেশে সরকারি স্থাপনায় ভাঙচুর, সহিংসতা ও নাশকতার ঘটনায় এখন পর্যন্ত ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে ২০৯টি। নাশকতা ও সহিংসতার ঘটনায় জড়িত অভিযোগে এসব মামলায় এখন পর্যন্ত ২ হাজার ৩৫৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)।

শুক্রবার (২৬ জুলাই) ডিএমপি মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) কে এন রায় নিয়তি এ তথ্য জানান।

তিনি জানান, সহিংসতা নাশকতার ঘটনায় গোয়েন্দা তথ্য ও সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করে জড়িতদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত ২০৯টি মামলায় ২৩৫৭ জনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।

সারাদেশে সহিংসতার ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তারে চলছে সাঁড়াশি অভিযান। অভিযানে ঢাকায় ৬৩ ও ঢাকার বাইরে ২০৩ জনসহ মোট ২৬৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব।

এদিকে আজ নিজ কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেছেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনের আড়ালে পরিকল্পিতভাবে হত্যাকাণ্ড ও ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়েছে। বিএনপি-জামায়াত অনেকবার গণতান্ত্রিক সরকারকে অবৈধভাবে ক্ষমতাচ্যুত করা বা দেশকে অকার্যকর করার চেষ্টা করেছে। কিন্তু পুলিশের কারণে তারা বারবার ব্যর্থ হয়েছে। এ জন্য তারা এবার পুলিশকেই টার্গেট করেছে।

যারা পুলিশকে হত্যা করেছে, সাধারণ মানুষকে হত্যা করেছে, স্বপ্নের মেট্রোরেলসহ সরকারি স্থাপনায় নাশকতা চালিয়েছে। যারা এসবের নেতৃত্ব দিয়েছে, অর্থ আদান-প্রদান করেছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। তারা যেখানেই থাকুক না কেন তাদের ছাড় দেওয়া হবে না।

‘মুক্তিযোদ্ধা কোটার বাইরে বাকি ৯৫ শতাংশ নিয়ে আদালতে বোঝাপড়া করব’

বক্তব্য রাখছেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজ্জাম্মেল হক। ছবি: সংগৃহীত

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজ্জাম্মেল হক বলেছেন, সরকার মুক্তিযোদ্ধা কোটা শতকরা পাঁচ ভাগ রেখেছে। এটি মুক্তিযোদ্ধারা মেনে নিয়েছেন। কিন্তু পরিষ্কার হওয়া দরকার, বাকি পদে কাদের নেওয়া হবে। আমরা বাকি ৯৫ শতাংশ কোটা নিয়ে আদালতের সঙ্গে আইনি প্রক্রিয়ায় বোঝাপড়া করব।

শুক্রবার (২৬ জুলাই) দুপুরে নরসিংদীর পাঁচদোনায় সম্প্রতি দুর্বৃত্তদের হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন পরিদর্শন ও মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে আলোচনাসভায় মন্ত্রী এ কথা বলেন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে এই পাঁচদোনা মোড়ে বীর মুক্তিযোদ্ধারা ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। স্মৃতিধন্য এই স্থানে নির্মাণ করা হয় মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স। দুঃখের বিষয়, সেই মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সেই হামলা চালানো হয়েছে। একাত্তরের পরাজিত শক্তি জামায়াত-শিবিরের সন্ত্রাসী ও বিএনপির ক্যাডাররা মুক্তিযুদ্ধকে মেনে নিতে পারেনি। তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধ্বংস করতে চায়। মুক্তিযুদ্ধের সেই গর্বের ধন আজ পরাজিত শক্তির কাছে আক্রান্ত হচ্ছে।

এসময় তিনি রাজাকারদের তালিকা প্রস্তুত করার আহ্বান জানান। তিনি আরও বলেন, কোটার বিষয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের মতামত গ্রহণের জন্যও আদালতকে অনুরোধ জানানো হবে। পাশাপাশি মুক্তিযোদ্ধাদের হৃদয়ে যে রক্তক্ষরণ হচ্ছে সেটিও আইনি প্রক্রিয়ায় সমাধান করা হবে।

তিনি বলেন, যারা দেশে তাণ্ডব চালিয়েছে, তারা কখনো ছাত্র হতে পারে না। বিএনপি, জামায়াত ও রাজাকারের দল এ নৈরাজ্য সৃষ্টি করে দেশকে অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করতে চেয়েছিল। তাদের কার্যকলাপে আমাদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সে যারা আঘাত করেছে, তারা মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষের শক্তি বিএনপি, জামায়াত, শিবির ও ছাত্রদলের ক্যাডার।

নরসিংদী জেলা প্রশাসক ড. বদিউল আলমের সভাপতিত্বে সভায় উপস্থিত ছিলেন খাদ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সদস্য শাহজাহান খান, নরসিংদী সদর আসনের সংসদ সদস্য লে. কর্নেল (অব.) মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম হিরো, পুলিশ সুপার মো. মোস্তাফিজুর রহমান, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ডের সাবেক চেয়ারম্যান হেলাল মোর্শেদ প্রমুখ।

সর্বশেষ সংবাদ

আবু সাঈদের পরিবারকে সাড়ে ৭ লাখ টাকা দিল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন
সহিংসতার অভিযোগে ঢাকায় ২০৯ মামলায় গ্রেপ্তার ২৩৫৭
‘মুক্তিযোদ্ধা কোটার বাইরে বাকি ৯৫ শতাংশ নিয়ে আদালতে বোঝাপড়া করব’
কোটা আন্দোলনে নিহত রুদ্রের নামে শাবিপ্রবির প্রধান ফটকের নামকরণ
সহিংসতায় আহতদের চিকিৎসা-রোজগারের ব্যবস্থা করবে সরকার: প্রধানমন্ত্রী
এক সপ্তাহে বঙ্গবন্ধু সেতুতে ৬ কোটি টাকা লোকসান
পাকিস্তানের ইসলামাবাদ-পাঞ্জাবে ১৪৪ ধারা জারি
রিমান্ড শেষে কারাগারে নুরুল হক নুর
ক্ষমতায় থাকার নৈতিক অধিকার নেই সরকারের: মির্জা ফখরুল
নরসিংদী কারাগার থেকে লুট হওয়া ৪৫ অস্ত্র উদ্ধার
বাংলাদেশকে ১০ উইকেটে হারিয়ে নারী এশিয়া কাপের ফাইনালে ভারত
মোবাইল ইন্টারনেট কবে চালু হবে, জানাল বিটিআরসি
পুলিশকে দুর্বল করতেই পরিকল্পিতভাবে হামলা-ধ্বংসযজ্ঞ: ডিবি হারুন
মৃত্যুর দিনক্ষণ গোপন রাখা হয়েছে যে কারণে
অলিম্পিক উদ্বোধনের আগেই প্যারিসে উচ্চগতির রেল নেটওয়ার্কে ভয়াবহ হামলা
তারেক রহমানের নির্দেশেই রাষ্ট্রের ওপর হামলা হয়েছে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
পাকিস্তানকে কড়া হুঁশিয়ারি দিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি
শিক্ষার্থীদের হত্যা করে সরকারের ওপর দায় চাপানো হয়েছে: ওবায়দুল কাদের
‘বাংলাদেশে ছাত্র-ছাত্রীদের রক্ত ঝরছে’, মমতাকে কড়া বার্তা দিল্লির
বাজারে সরবরাহ বাড়লেও সবজির দামে এখনো অস্বস্তি