শনিবার, ১৪ জুন ২০২৫ | ৩১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
Dhaka Prokash

রানী


-‘এতো ভাব নিচ্ছস কেন?’
-‘যেদিকে তাকাই, সব জায়গাতেই গোলাপ আর গোলাপ। দেখলেই মন ভালো হয়ে যায়। নিজেকে মনে হচ্ছে গোলাপের রানি।’
-‘ও, বুঝসি। সেজন্য ভাব নিচ্ছস’?
-‘হু হু হু। তুই নে। এই ফুলের মাঝে অনুভূতিই অন্যরকম।’
-‘হ রে! তর মনে বসন্ত এসে গেছে। প্রেম করবি?’
-‘কী? কী বললি? প্রেম? হইছে- আমার কখনো প্রেম-টেম হবে না। টের পাচ্ছস? দেখ, সুমধুর সুগন্ধ ভেসে আসছে।’
-‘এটা মাধবীলতা ফুলের গন্ধ।’
-‘মাধবীলতা?’
-‘হ, মাধবীলতার ফুল ছোট আর ঘিয়ে রঙের। অত্যন্ত সুগন্ধময় ও দুর্লভ গাছ। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মাধবীলতা নিয়ে কী বলেছেন জানস?’
-‘আমি কবিতা খুব কম বুঝি। পড়িও কম। কালেভ্রদ্রে দু-একটা পড়ি। তুই বল কী বলেছেন।’
-‘তিনি বলেছেন-‘‘বসন্তের মাধবী মঞ্জরী মিলনের স্বর্ণপাত্রে সুধা দিল ভরি।’’
-‘বাহ! অসাধরণ। তবে বসন্তে মেয়েরা করবী ফুল খোঁপায় দেয়। চল সামনে হাঁটি.. করবী পেলে তরে কিনে দিচ্ছি।’

রানী আর মাসউদ হাঁটছে। কাল বসন্ত দিন। রঙিন বসনে, ফুল্ল সাজে বসন্তের প্রথম দিন কখনো কাটানো হয়নি রানীর। আজ অনেকে সেজেছে সে। মেরুন রংয়ের থ্রিপিস পড়েছে। চুলের একপাশে সিঁথি করেছে। চুল বেণি করে ক্লিপ দিয়ে আটকে রেখেছে। কিছুটা রোমাঞ্চের পরশ দিচ্ছে মাসউদকে। সাদুল্লাহপুর গোলাপ বাগান।এই বাগানে এর আগে কখনো আসেনি রানী। পত্র-পত্রিকা আর টেলিভিশনে অনেক খবর দেখেছে এই বাগান নিয়ে।বিশেষ করে প্রতি বছর ফাল্পুন এলেই খবরের কেন্দ্রবিন্দু এই গোলাপ বাগান।

ওরা হাঁটছে। মোটামুটি আজ ভালোই ভিড়ভাট্টা। কারও মাথায় গোলাপের রিং, কারও খোঁপায় গোঁজা গোলাপ। অনেকে মালা করে গলায় পরেছেন গোলাপ। কেউবা হাঁটু গেড়ে প্রিয় মানুষটিকে উপহার দিচ্ছেন গোলাপ। এ যেন গোলাপের ভুবন। সর্বত্রই গোলাপ, গোলাপ। মাসউদ বলল, অন্য ফুলও আছে। হলুদ গাঁদা, জারবেরা, ক্যালেন্ডিয়া, চন্দ্রমল্লিকাসহ নানান জাতের ফুলের চাষ হয় এখানে। রানী বলল, দারুণ প্রকৃতি। প্রতিদিন যদি এখানে আসতে পারতাম।
-‘রানী, তরে একটা কথা বলতে চাই।’
-‘কী কথা?’
-‘ইদানীং আমার একটা প্রেম করতে ইচ্ছে হচ্ছে। কয়েকদিন ধরে ইউটিউবে প্রচুর রোমান্টিক নাটক দেখছিলাম, গান শুনছিলাম।’
-‘গুড। তো প্রেম কর। ইচ্ছে হইছে কর, না করছে কে।’
-‘ইচ্ছে হলেই তো আর প্রেমে পড়া হয় না। কে করবে প্রেম, কে আমাকে সময় দেবে? এই প্রযুক্তির যুগে সবাই ডিজিটাল প্রেমে ব্যস্ত। আমার আবার এসব ভাল্লাগে না। আমার ইচ্ছে-যেই প্রেমে পড়–ক, ভার্চুয়ালি নয়, সরাসরি প্রেম হবে। একসাথে ঘুরব। পার্কে যাব। বাগানে প্রকৃতি দেখব। মাঠে যাব, ঘাসের উপর শুয়ে থাকব। পাশে বসে থাকবে প্রেমিকা। ঘাসের পাতা ছিঁড়ে আমার নাকে ধরবে- এরকম প্রেমিকা চাই। দেখ, আজ তুই আর আমি এই গোলাপ বাগানে ঘুরতেছি। কী অদ্ভুত অনুভূতি, মজাই আলাদা।’
-‘তা ঠিক বলছস। বাট!’।
-‘বাট কী?’
-‘এই নগরীর যা অবস্থা, তাতে ডিজিটাল ছাড়া উপায় কী বল। জ্যাম, যান্ত্রিক জীবন, করোনাকাল। দম বন্ধ জীবন। সেই আগিলা যুগের প্রেম কেউ করতে চায় না। সময়ও ম্যাচ করে না। বুঝলি তো।’

বিকেল শেষ হয়ে আসছে। সবাই নিজ নিজ গন্তব্যে ছুটছে। রানী আর মাসউদ গোলাপের বাগানে ভেতর ডুবে আছে নিঃশব্দের মতো।

কিছুটা ক্লান্ত দেহ। বাসায় এসেই ঘুমিয়ে পড়ে মাসউদ। মধ্যরাতে ঘুম ভেঙে যায়। বিছানা থেকে উঠে মুখটা ধুয়ে নিলো। ড্রয়িং রুমে গিয়ে টিভিটা অন করে স্পোর্টস চ্যানেলে খেলার খবরটা দেখছে। হঠাৎ গোলাপ বাগানের কথা মনে পড়ে গেলো। বিশেষ করে রানীর কথা। মেয়েটা এত সরল সোজা, বাট প্রেমটাই বুঝে না। কখনো বলল না, ‘মাসউদ, তোমায় ভালোবাসি’। মাসউদও তাকে সরাসরি কখনো বলেনি ভালোলাগার কথা।

গত বছর পহেলা বৈশাখে রমনায় তাদের প্রথম দেখা। পথম যেদিন রানীকে দেখেছিল, তখনই ভালো লেগেছিল তাকে। দেখতে বেশ সুন্দরী। লাল ফর্সা চেহারা। হাত, পা ধবধবে সাদা। হাত পায়ের দিকে তাকালে আর চোখ ফেরাতে ইচ্ছে করে না। বেশ সুন্দর। সে সময়ই রানীকে বলেছিল, চলো বন্ধু হই। হাসিমুখে উওর দিয়ে তখন রানী বলেছিল, ধন্যবাদ। এরপর সময় পেলেই দুজনে মাঝে মাঝে বিভিন্ন জায়গা ঘুরতে যায়। হাতে সেলফোনটা নিয়ে রানীকে ফোন দিলো-
-‘হ্যালো, ধুর! তুমি যে কী, ফোন দিবা না?’
-‘কেনো?’
-‘ঠিকমতো পৌঁছাইছো কিনা জানাব না।’
-‘ধুর, এসে দিছি একটা ঘুম।’
-‘ভালো তো। কাল তো ফাগুনের দিন। চলো ঢাকার বাইরে কোনো গ্রামে যাই। ঘুরে আসি।’
-‘সম্ভব না’, বলেই ফোনটা কেটে দিলো।

টেলিভিশন বন্ধ করে দিলো। মোবাইলটা রেখে জানালার গ্রিল ধরে দাঁড়ালো মাসউদ। বাইরে তাকিয়ে দেখে মধ্যরাত। আবারও বিছানায় এলো। একবার বসছে, আবার শুয়ে ফ্যানের দিকে তাকিয়ে ভাবছে। রাত বাড়ছে। পায়চারি করতে করতে ঘুমিয়ে পড়লো মাসউদ।

রানীকে কালকের ওই কথাটা বলার আগে আরও কবার ভাবা উচিত ছিলো। কিন্তু কি করার, গোলাপের বাগানে গোলাপের মাঝে নিজেকে সামলে নিতে পারেনি মাসউদ। ভাবনা বাদ দিয়ে ফোন দিলো রানীকে।
-‘হ্যালো, তুমি কই?’
-‘আমি.. বাসায়। কেনো?’
-‘বিকেলে দেখা করতে পারবা?’
-‘ওকে। টেক্সট দিয়ে রাখ। আমি চলে আসবনি।’
-‘ওকে। রাখছি।’

ফোনটা রেখে কিছুক্ষণ শুয়ে থাকল। নাহ! আজ সব খুলে বলতেই হবে। দুইদিন পর ফ্লাইট। একটা মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে চাকরি হয়েছে। কোম্পানিতে চলে যেতে হবে। যেতে হবে কানাডায়। ছাড়তে হবে ঢাকা। বিছানা থেকে উঠে গোছল সেওে কাপড় চোপড় পওে রেডি হলো। আজ নীল রঙের জিন্স প্যান্টের সঙ্গে হালকা আকাশি রঙের ফুল শার্ট পরেছে। বের হলো মাসউদ। ভিসা সেন্টারে কিছু কাজ আছে। এরপর হোটেলে লাঞ্চ সেরে বিকেলে যাবে আশুলিয়ায়। ওখানে রানীকে আসার জন্য বার্তা দিয়ে রেখেছে মাসউদ।

আবহাওয়াটা চমৎকার। বেশি শীত নেই। রোদ আছে। আকাশে কাক উড়ছে। মাসউদ চলে আসল আশুলিয়ায়। ঢাকার দূষিত বায়ু ছেড়ে বাঁচতে মাঝে মাঝেই এখানে আসে সে। আজ একটু অন্যরকম। দুুদিন পর এই আলো বাতাস ছেড়ে চলে যাবে দূরপরবাসে। এ কথা ভাবতেই শরীর শিউরে উঠে মাসউদের। রানী চলে আসল। মাসউদ বলল,
-‘কী খবর? তোমাকে তোমাকে দারুণ লাগছে।’ মাসউদের কথা শুনে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে রানী। কোন কথা নেই মুখে।
-‘কী ব্যাপার কথা বলছ না কেন? তোমাকে একটা কথা বলতে চাই। হয় তো আজই তোমার সঙ্গে শেষ দেখা। ফ্লাইট ঠিক হয়ে গেছে। নতুন চাকরি হয়েছে। যেতে হবে কানাডায়।’

মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো রানীর। মনটা বিষন্ন।চোখের কোনায় জল আসছে। কিছুক্ষণ মাসউদের চোখের দিকে তাকিয়ে থাকল। বলল,
-‘তার মানে চলে যাচ্ছ।’
মাথা নিচু করে বসে আছে মাসউদ। তিন মাস পর অনার্স ফাইনাল পরীক্ষা রানীর। পরীক্ষা শেষে কয়েকদিনের জন্য মাসউদকে নিয়ে বেড়ানোর পরিকল্পনা করেছিল রানী। মাকেও রাজি করিয়েছিল। মাসউদের কথা মাকে অনেক বলেছে। রানী বলল,
-‘অভিনন্দন। নতুন জীবন শুভ হোক।’
-‘তোমায় অনেক মিস করব।’
-‘পরীক্ষার পর তোমাকে নিয়ে ঘুরার প্ল্যান করেছিলাম। মাকেও রাজি করিয়েছিলাম।’
মাাসউদ রানীর হাতটা ধরে একটা হাসি দিল। কিছুক্ষণ বসার পর রানী বলল,
-‘চলো। সামনে হাঁটি।’

ঠিক সন্ধার আগে। হঠাৎ আকাশ মেঘলা হয়ে গেলো। ওরা হাঁটছে। কিছুদূর যাওয়ার পর ছোট্ট একটা ব্রিজে দাঁড়ালো। এরই মধ্যে হালকা বৃষ্টি শুরু হলো। রানী মাসউদকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে লাগল। বলল,
-‘চাকরির খবর কখনো বলোনি কেন? ওখানে গিয়ে কতদিন থাকবে? ঢাকায় তো আর মনে হয় দুই-তিন বছরের মধ্যে আসা হবে না। ততদিনে বাবা হয়তো বিয়ের ব্যবস্থা করবে। বাট আমি..।’ কথা বলতে পারছে না রানী। চোখ থেকে জল পড়ছে। মাসউদও কিছুক্ষণ জড়িয়ে ধরে রাখলো।

বৃষ্টি থেমে গেছে। মাগরিবের আজান শোনা যাচ্ছে। ওরা হেঁটে হেঁটে বাসস্ট্যান্ডে আসল। রানী বাসে উঠবে। হাতটা ধরে মাসউদ বলল,‘মিস ইউ। ভালো থেকো।’

 

ডিএসএস/ 

Header Ad
Header Ad

পেজেশকিয়ান-নেতানিয়াহুকে পুতিনের ফোন, প্রস্তাব মধ্যস্থতার

ছবি: সংগৃহীত

ইরান-ইসরায়েলের মধ্যে চলমান যুদ্ধ থামাতে সরাসরি দুই দেশের নেতার সঙ্গে কথা বলেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। একইসঙ্গে তিনি রাশিয়াকে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে প্রস্তাব দিয়েছেন

শুক্রবার (১৩ জুন) ক্রেমলিন এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান এবং ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন পুতিন।

বিবৃতিতে বলা হয়, পুতিন ইরানে ইসরায়েলের হামলায় নিহতদের পরিবারের প্রতি শোক জানিয়েছেন এবং বলেছেন, এই হামলা জাতিসংঘ সনদ ও আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করেছে। একই দিনে নেতানিয়াহুর সঙ্গেও কথা বলে মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা না বাড়ানোর আহ্বান জানান রুশ প্রেসিডেন্ট।

ইসরায়েল এবং ইরানের মধ্যে যে উত্তেজনা শুরু হয়েছে, তা থামানোর জন্য মধ্যস্থতাকারী দেশ হিসেবে রাশিয়ার নাম প্রস্তাব করেছেন প্রেসিডেন্ট পুতিন। তিনি বলেছেন, পরমাণু প্রকল্প ও অন্যান্য যেসব ইস্যু নিয়ে দুই দেশের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছে— সেসব আলোচনা ও কূটনৈতিক পন্থায় সমাধান করা সম্ভব।

গত ১৩ জুন শুক্রবার ভোর ৪টার দিকে ইরানের রাজধানী তেহরানসহ অন্তত ৮টি শহরে বড় ধরনের বিমান হামলা করে ইসরায়েলের বিমানবাহিনী (আইএএফ)। এতে নিহত হয়েছেন অন্তত ৭৮ জন এবং আহত হয়েছেন আরও প্রায় ৩০০ জন। এছাড়া ইরানের সেনাপ্রধান মোহাম্মদ বাঘেরিসহ সামরিক বাহিনীর বেশ কয়েকজন কর্মকর্তাও নিহত হয়েছেন।

ইরানের পরমাণু প্রকল্প ও সামরিক বাহিনীর স্থাপনাগুলোকে লক্ষ্য করে এ হামালা চালানো হয়েছিল। বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, হামলায় ইরানের অন্তত ১০০টি স্থাপনার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ইরানের প্রতিরক্ষা বাহিনী এ সামরিক অভিযানের নাম দিয়েছে ‘দ্য রাইজিং লায়ন’।

অতর্কিত হামলার পর শুক্রবার রাতে ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে ‘অপারেশন ট্রু প্রমিজ থ্রি’ সেনা অভিযান শুরু করে ইরান। এতে একজন নিহত এবং ৪১ জন আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে দু’জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

ইরানের পরমাণু স্থাপনা ধ্বংসের ব্যাপার ইসরায়েল দৃঢ় প্রতিজ্ঞ উল্লেখ করে সিএনএনকে ইয়েশিয়েল লেইটার বলেন, “আমাদের হিসেব বলছে, আগামী ৪ থেকে ৫ দিনের মধ্যে আমরা ইরানের পরমাণু প্রকল্প সম্পূর্ণ ধ্বংস করে ফেলতে পারব। মধ্যপ্রাচ্য ও বিশ্ববাসীর মঙ্গলের জন্য এটা আমাদের করতে হবে।”

Header Ad
Header Ad

চাকরির নামে ইউক্রেন যুদ্ধে পাঠানো চক্রের মূলহোতা গ্রেপ্তার

ছবি: সংগৃহীত

চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে মানব পাচার ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে অংশগ্রহণে বাধ্য করা চক্রের মূলহোতা মুহাম্মদ আলমগীর হোছাইনকে (৪০) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

চট্টগ্রামের শাহ আমানত বিমানবন্দর থেকে গত বুধবার (১২ জুন) ভোরে তাকে গ্রেপ্তার করে সিআইডি এর টিএইচবি (মানব পাচার প্রতিরোধ) শাখা।

সিআইডি বলছে, আকর্ষণীয় বেতনে চকলেট কারখানায় পরিচ্ছন্নতাকর্মী বা বাবুর্চির কাজের প্রলোভন দেখিয়ে বাংলাদেশ থেকে লোকজনকে রাশিয়ায় নিয়ে যায় একটি চক্র। কিন্তু সেখানে যাওয়ার পর তাদের সামরিক প্রশিক্ষণ দিয়ে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশ নিতে বাধ্য করে। ওই যুদ্ধে অংশ নিয়ে কয়েকজন নিহতও হয়েছেন।

সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (মিডিয়া) জসীম উদ্দিন খান জানান, গত ৪ ফেব্রুয়ারি বনানী থানায় হওয়া মানব পাচার আইনের মামলায় আলমগীরকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। গতকাল তিনি ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। আদালত জবানবন্দি নিয়ে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। আলমগীরের বাড়ি চট্টগ্রামের লোহাগড়া থানার আমতলী মাঝেরপাড়া গ্রামে।

তিনি বলেন, সিআইডি প্রাথমিকভাবে জানতে পারে, এই চক্রের সদস্যরা রাশিয়ায় মাসে দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা বেতনে চকলেট কারখানায় পরিচ্ছন্নতাকর্মী বা বাবুর্চির কাজের প্রলোভন দেখিয়ে ১০ জনকে প্রথমে ওমরাহ ভিসায় সৌদি আরব পাঠান। সেখানে তাদের ওমরাহ করানোর পর রাশিয়ায় নিয়ে গিয়ে এক সুলতানের কাছে বিক্রি করে দেন।

ওই সুলতান তাদের দাস হিসেবে রাশিয়ার সেনাদের কাছে হস্তান্তর করেন। সেখানে তাদের সামরিক প্রশিক্ষণ দিয়ে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশ নিতে বাধ্য করা হয়। যুদ্ধে অংশ নিতে না চাইলে তাদের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হয়। খাবার বন্ধ করে দিয়ে তাদের মানসিক শক্তি ভেঙে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। পরে ভুক্তভোগীরা বাধ্য হয়ে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশ নেন।

সিআইডি জানিয়েছে, যুদ্ধে নাটোরের সিংড়া উপজেলার হুমায়ুন কবির নিহত এবং ঢাকার কেরানীগঞ্জের আমিনুল নামের একজন গুরুতর আহত হন। রাশিয়ায় পাঠানো ১০ জনের মধ্যে একজন নরসিংদীর পলাশ থানার বাসিন্দা মো. আকরাম হোসেন (২৪) প্রশিক্ষণ ক্যাম্প থেকে পালিয়ে যান। পরে তিনি নিজ ব্যবস্থাপনায় গত ২৬ জানুয়ারি বাংলাদেশে ফিরে আসেন। এরপর তিনি ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তার কাছে তথ্য পেয়ে যুদ্ধাহত আমিনুলের স্ত্রী ঝুমু আক্তার ঢাকার বনানী থানায় মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে মামলা করেন।

তদন্তে সিআইডি আরও জানতে পারে, ১০ জনের আরেকটি দল সৌদি আরবে অবস্থান করছে। রাশিয়ায় নিয়ে তাদের জোরপূর্বক যুদ্ধে অংশ নেওয়ার বিষয়ে জানাজানি হওয়ায়, তারা রাশিয়ায় যেতে অস্বীকৃতি জানান। এ কারণে সেখান থেকে তাদের পাসপোর্ট কেড়ে নেওয়া হয়। তাই তারা সৌদি আরবে কোনো কাজ করতে পারছেন না এবং দেশে ফিরতেও পারছেন না।

সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (মিডিয়া) জসীম উদ্দিন খান বলেন, গত ৫ ফেব্রুয়ারি রাতে সিআইডি নেপালে পালিয়ে যাওয়ার সময় মানব পাচারকারী চক্রের অন্যতম সদস্য ফাবিহা জেরিন ওরফে তামান্নাকে ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে গ্রেপ্তার করে। ফাবিহা জেরিন ঢাকার বনানীর ড্রিম হোম ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস লিমিটেডের অংশীদার।

সিআইডি ভুক্তভোগীদের দেশে ফিরিয়ে আনতে সংশ্লিষ্ট সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করছে।

অভিযান তদারকির সঙ্গে যুক্ত সিআইডির অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, গ্রেপ্তার আলমগীর ২০০৮ সালে ছাত্র ভিসায় রাশিয়ায় যান। সেখানে বিয়ে করে তিনি ওই দেশের নাগরিকত্ব পান। এ পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশ থেকে তিন ক্যাটাগরির ভিসায় ৫০ জনকে রাশিয়ায় নেন। গত এক বছরে ১১ জনকে ওয়ার্ক পারমিট ভিসায় রাশিয়ার সেনা ক্যাম্পে কাজ করার কথা বলে নিয়ে যান। কিন্তু শর্ত ভঙ্গ করে তাদের ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধে অংশ নিতে বাধ্য করেন। সেখান থেকে পাওয়া টাকাও বিভিন্ন খাতে খরচ হয়েছে ফিরিস্তি দিয়ে আলমগীর কেড়ে নেন।

সিআইডি জানিয়েছে, রাশিয়ার হয়ে ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধে অংশ নিয়ে এ পর্যন্ত তিনজন নিহত হয়েছেন। তবে রাশিয়ার সরকার দুজন বাংলাদেশি নিহত হওয়ার তথ্য নিশ্চিত করে তাদের লাশ বাংলাদেশে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে বলে জানিয়েছে।

সিআইডি ভুক্তভোগীদের দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য সংশ্লিষ্ট সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করছে। একই সঙ্গে মানব পাচারের এই নেটওয়ার্ক পুরোপুরি ভেঙে দেওয়ার পাশাপাশি নিবিড় তদন্ত এবং গ্রেপ্তার প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখা হয়েছে।

Header Ad
Header Ad

সৎ মা ও দাদিকে গলা কেটে হত্যা

ছবি: সংগৃহীত

সৎ মা ও দাদিকে গলা কেটে হত্যার অভিযোগ উঠেছে মো. আল আমিন (২৫) নামের এক মানসিক ভারসাম্যহীন যুবকের বিরুদ্ধে। শুক্রবার (১৩ জুন) দুপুরে পটুয়াখালী সদর উপজেলার মাদারবুনিয়া ইউনিয়নের চারাবুনিয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

অভিযুক্ত মো. আল আমিন আবদুর রাজ্জাক খানের ছেলে। নিহতরা হলেন—কুলসুম বিবি (১০৫) ও সহিদা বেগম (৫০)। কুলসুম বিবি আল আমিনের দাদি এবং সহিদা বেগম তার সৎ মা।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কিছুদিন আগে হঠাৎ নিখোঁজ হয়ে যান আল আমিন। পরে স্বজনরা তিন-চার দিন আগে তাকে খুঁজে পেয়ে বাড়িতে নিয়ে আসেন। শুক্রবার রাতে তাকে পাবনার একটি মানসিক হাসপাতালে পাঠানোর কথা ছিল, এমনকি তার জন্য বাসের টিকিটও কাটা হয়েছিল।

এদিন দুপুরে আল আমিনের বড় ভাই তার জাতীয় পরিচয়পত্র সংগ্রহ করতে সংরক্ষিত মহিলা ইউপি সদস্যের কাছে যান এবং তার বাবা রাজ্জাক খান কাজের উদ্দেশে বাড়ির বাইরে যান। এ সময় বাড়িতে একা পেয়ে সৎ মা ও দাদিকে ধারালো দা দিয়ে কুপিয়ে ও গলা কেটে হত্যা করেন তিনি। ঘটনার পরপরই পালিয়ে যান তিনি।

পটুয়াখালী সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, রাজ্জাক খানের ছেলে আল আমিন তার সৎ মা ও দাদিকে কুপিয়ে ও গলা কেটে হত্যা করেছেন। ঘটনার পর তিনি পালিয়ে গেছেন। তাকে গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান চলছে। নিহতদের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

পেজেশকিয়ান-নেতানিয়াহুকে পুতিনের ফোন, প্রস্তাব মধ্যস্থতার
চাকরির নামে ইউক্রেন যুদ্ধে পাঠানো চক্রের মূলহোতা গ্রেপ্তার
সৎ মা ও দাদিকে গলা কেটে হত্যা
ইসরায়েলের দিকে দুই শতাধিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে ইরান
দেশের উদ্দেশে লন্ডন ছাড়লেন প্রধান উপদেষ্টা
ড. ইউনূসকে দেশের কাজে যুক্ত রাখতে চায় বিএনপি
শেখ হাসিনা-জয়সহ ২২২ জনের বিরুদ্ধে আরেক হত্যাচেষ্টা মামলা
ইরানে ইসরায়েলি হামলায় নিহত ৭০, আহত ৩২০ জনের বেশি
বিএনপির আশীর্বাদের চিঠি এখন অভিশাপে পরিণত হয়েছে: নুর
আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি সোলায়মান জোয়ার্দার মারা গেছেন
ইরানকে সমঝোতায় আসতে হবে, সবকিছু শেষ হওয়ার আগেই: ট্রাম্পের হুঁশিয়ারি
দেশে ২৪ ঘণ্টায় করোনায় ২ জনের মৃত্যু, নতুন শনাক্ত ১৫
তারেক রহমানের দেশে ফেরা নিয়ে যা জানালেন আমীর খসরু
বিশ্বের সব দূতাবাস বন্ধ করবে ইসরায়েল
ইরানে ইসরায়েলের হামলায় বাংলাদেশের নিন্দা
ভোটের তারিখ শিগগিরই ঘোষণা করবে ইসি : খলিলুর রহমান
ডেঙ্গুতে এক দিনে সর্বোচ্চ ৫ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ১৫৯
বিরামপুর সীমান্ত দিয়ে ১৫ জনকে পুশইন করল বিএসএফ
রমজান শুরুর আগের সপ্তাহেও নির্বাচন হতে পারে: প্রধান উপদেষ্টা
রোজার আগে নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তাব তারেক রহমানের