কিশোরগঞ্জের ইটনায় বিনা পারিশ্রমিকে ৩ হাজার ৫৭টি কবর খননকারী মানুষটি, যিনি জীবনের প্রায় অর্ধশতাব্দী সময় ব্যয় করেছেন নিঃস্বার্থ এই কাজে— সেই মনু মিয়া (৬৭) আর নেই। তার মৃত্যুতে শোক ছড়িয়ে পড়েছে স্থানীয়দের মাঝে, হৃদয়ে আঘাত লেগেছে দূরের মানুষদেরও।
তার প্রতি ভালোবাসা জানাতে ছুটে গেছেন জনপ্রিয় অভিনেতা খায়রুল বাসার। পুরস্কার নিতে নয়, বরং শেষবারের মতো প্রকৃত এক নায়কের পাশে দাঁড়াতে।
শনিবার (২৮ জুন) এক অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার কথা ছিল অভিনেতা খায়রুল বাসারের। কিন্তু মনু মিয়ার মৃত্যুসংবাদ শোনার পর সেই অনুষ্ঠানে না গিয়ে সরাসরি কিশোরগঞ্জের ইটনায় ছুটে যান তিনি।
সন্ধ্যায় এক প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, “মনু কাকা আমার আত্মীয় না হলেও তার জীবনদর্শন আমাকে নাড়া দিয়েছে। কয়েকদিন আগে কথা হয়েছিল, আমাকে বাড়িতে আসার জন্য বলেছিলেন। আজ এলাম, কিন্তু পেলাম না তাকে জীবিত। তার ঘর, তার তৈরি সরঞ্জাম দেখে মুগ্ধ হয়েছি। ঠিক যেমন বলেছিলেন, তেমন করেই সাজানো। আমি চোখে দেখলাম একজন সৎ, সহজ ও আলোকিত মানুষের শেষ চিহ্নগুলো।”
খায়রুল বাসার আরও বলেন, “পুরস্কার তো জীবনে আরও পাওয়া যাবে। কিন্তু জীবিত এই মানুষটিকে শেষবার না দেখার আফসোস সারাজীবন বয়ে বেড়াতে হতো। তাই আমি মনে করেছি— আজ এই জানাজায় উপস্থিত হওয়াটাই সবচেয়ে জরুরি ছিল।”
এর আগে মনু মিয়া অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলে, সংবাদমাধ্যমে উঠে আসে তার মানবিক জীবনের গল্প। সেই সময় কেউ বা কারা তার একমাত্র সঙ্গী ঘোড়াটিকে মেরে ফেলে। অভিনেতা খায়রুল বাসার তখন তাকে একটি নতুন ঘোড়া উপহার দিতে চাইলেও মনু মিয়া শুধু দোয়ার আবেদন করেন।
মনু মিয়ার জীবনদর্শনে মুগ্ধ খায়রুল বাসার তখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেছিলেন— “আজ এক নায়কের সাথেই দেখা হলো আমার। আমি নিজ চোখে এক নায়ককেই দেখে আসলাম, বুক মেলালাম এক নায়কের সাথে! আজন্ম এক নায়ক মনু মিয়া। এই নায়কের গল্প বলবো শিগগিরই। মনু চাচা দোয়া ছাড়া কিছু চান না আপনাদের কাছে। উনি আপনাদের জন্য দোয়া করেন, যেন ভালো থাকেন।”
জীবনভর কোনো পারিশ্রমিক কিংবা উপহার না নিয়ে নিঃস্বার্থভাবে মানুষের কবর খুঁড়ে যাওয়ার এই মহান কর্মযোদ্ধা বলেছিলেন, “আমি কবর খুঁড়ি আল্লাহকে খুশি করার জন্য। মানুষের কাজ করি, তার বিনিময়ে কিছু নেই।”