৫ রাজাকারকে কুপিয়ে হত্যা করা বীর মুক্তিযোদ্ধা সখিনা বেগম মারা গেছেন

সখিনা বেগম। ছবি: সংগৃহীত
বীর মুক্তিযোদ্ধা সখিনা বেগম মারা গেছেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় যেসব নারী বীরত্বের সঙ্গে রণাঙ্গনে লড়াই করে সাহসিকতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন, তাদের মধ্যে অন্যতম সখিনা বেগম। যুদ্ধের সময় দা দিয়ে কুপিয়ে পাঁচ রাজাকারকে হত্যা করেছিলেন তিনি।
মঙ্গলবার (১৭ জুন) ভোর ৫টার দিকে বার্ধক্যের কারণে তিনি মারা যান। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৯২ বছর। তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন হিলচিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাজহারুল হক নাহিদ।
জানা যায়, কিশোরগঞ্জের হাওর অধ্যুষিত নিকলী উপজেলার গুরুই গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন সখিনা বেগম। তার বাবার নাম সোনাফর মিয়া এবং মায়ের নাম দুঃখী বিবি। সখিনা নিঃসন্তান ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের আগেই তার স্বামী কিতাব আলী মারা যান। নিকলীতে সখিনাকে দেখভাল করার কেউ না থাকায় তিনি বাজিতপুর উপজেলার হিলচিয়ার বড়মাইপাড়া গ্রামে ভাগ্নি ফাইরুন্নেছা আক্তারের কাছে থাকতেন। সেখানেই মঙ্গলবার ভোরে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
হিলচিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি নিয়াজ মামনুন রহমান পুটন বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা সখিনা বেগম বড়মাইপাড়া গ্রামে প্রায় ৪০ বছর ধরে বসবাস করে আসছেন। মঙ্গলবার ভোর ৫টার সময় বার্ধক্যজনিত কারণে তিনি মারা যান। আমাদের বাড়ির পাশে তার বসবাস থাকায় ছোটবেলা থেকেই আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বলতেন। তিনি খেতাবপ্রাপ্ত একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা।
নিকলী উপজেলার গুরুই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. তোতা মিয়া বলেন, গুরুই গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা সখিনা বেগমকে দেখভাল করার জন্য কেউ না থাকায় তিনি বাজিতপুর হিলচিয়া ভাগ্নির কাছে থাকতেন। সেখানে মারা গেছেন। মঙ্গলবার আসর নামাজ বাদ গুরুই ঈদগাহ মাঠে জানাজা শেষে সখিনা বেগমের গ্রামে শাহী মসজিদের পাশে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে।
উল্লেখ্য, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে সখিনা বেগম নেমে পড়েন সশস্র যুদ্ধে। মুক্তিযুদ্ধে সখিনা বেগমের ভাগ্নে মতিউর রহমান সম্মুখযুদ্ধে অংশ নিয়ে হানাদার পাকিস্তানি সেনা ও রাজাকারদের হাতে শহীদ হন। ভাগ্নের অকালমৃত্যু সখিনাকে প্রতিশোধপরায়ণ করে তোলে। মুক্তিযুদ্ধের সময় সখিনা বেগম গুরুই এলাকায় বসু বাহিনীর নেতৃত্বাধীন মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্পে রাধুনির কাজ করতেন। কাজের ফাঁকে রাজাকারদের গতিবিধির বিভিন্ন খবর সংগ্রহ করে মুক্তিযোদ্ধাদের জানাতেন। একপর্যায়ে তিনি পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে ধরা পড়েন। পরে কৌশলে সেখান থেকে পালিয়ে আসেন। আসার সময় সেখান থেকে নিয়ে আসেন একটি ধারালো দা। পরে সেই দা দিয়েই নিকলীর পাঁচ রাজাকারকে কুপিয়ে হত্যা করেন। সখিনা বেগমের ওই দা বর্তমানে ঢাকায় মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে।
