প্রধান শিক্ষককে পিটিয়ে গুরুতর জখম করল দশম শ্রেণির এক ছাত্র

শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন। ছবি : ঢাকাপ্রকাশ
জ্ঞান বিতরণের পবিত্রতম স্থানে, যেখানে একটি জাতির ভবিষ্যৎ গড়ে ওঠে—সেই বিদ্যালয়ে নেমে এসেছে নৈতিকতার সংকট। বগুড়ার আদমদীঘিতে কৈকুড়ী রহিম-মজিদ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আতিয়ার রহমান ক্লাসে মোবাইল ব্যবহার নিষেধ করায় হৃদয় নামের এক দশম শ্রেণির ছাত্রের মারধরে মারাত্মকভাবে আহত হয়েছেন।
ঘটনাটি ঘটে গত ৩০ এপ্রিল সন্ধ্যায়, যখন আতিয়ার রহমান তার নিজস্ব মাছের পুকুরে খাবার দিতে যান। সেখানেই হৃদয়, তার মায়ের উপস্থিতিতে, লাঠি দিয়ে এলোপাতাড়ি মারধর করে তাঁর মুখমণ্ডলে গুরুতর জখম করে।
আহত শিক্ষক আতিয়ার রহমান বলেন, ‘দশম শ্রেণীর বাংলা ক্লাসে হৃদয়কে মোবাইল ফোন ব্যবহার নিষেধ করার পর সে ক্ষিপ্ত হয়ে আমার অফিসে এসে হুমকি দিয়ে চলে যায়। এরপর সকল শিক্ষকদের নিয়ে হৃদয়ের আচরন এবং কর্মকান্ডের বিষয় অবগত করতে একটি মিটিং করি। সেখানে হৃদয়ের ফুপু অর্থাৎ শিক্ষক দুলালী খাতুনও উপস্থিত ছিলেন। সম্ভবত তিনি বিষয়টি বাড়িতে গিয়ে জানিয়েছেন। এরপর গত ৩০ এপ্রিল সন্ধ্যায় হৃদয়ের বাড়ির পাশে আমার মাছ চাষের পুকুরে খাবার দিতে গেলে তার মায়ের সামনেই এলোপাতারীভাবে আমাকে মারপিট করে রক্তাক্ত জখম করে। স্থানিয়রা এগিয়ে এসে আমাকে উদ্ধার করেন। পরের দিন আমার স্ত্রী আম্বিয়া আক্তার বাদী হয়ে হৃদয়, তার বাবা-মা ও ফুপুর বিরুদ্ধে আদমদীঘি থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।’

এই ঘটনায় ৫ মে (সোমবার) সকাল ১১টায় শত শত শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা বিদ্যালয় মাঠে মানববন্ধন করেন। মানববন্ধনে তাঁরা বলেন, হৃদয় অত্যন্ত বেপরোয়া হয়ে উঠেছিল। তার উশৃঙ্খল আচরন, মাদক সেবন, ইভটিজিং এবং মাত্রাতিরিক্ত মোবাইল ফোন ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকার জন্য প্রধান শিক্ষক আতিয়ার রহমান ক্লাসে তাকে উপদেশ দেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে হৃদয়। এরপর তার ফুপু একই স্কুলের শিক্ষক দুলালী খাতুনের প্ররোচনায় প্রধান শিক্ষককে হত্যার উদ্দেশ্যে বাঁশের লাঠি (খাঁটা) দিয়ে মারপিট করে মুখের ঠোঁট ও নাকে মারাত্মক জখম করে। মানববন্ধন শেষে ওই ছাত্রের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী করে শিক্ষার্থীরা জেলা প্রশাসক বরাবর একটি স্মারকলিপি প্রদান করেন।

শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি মানববন্ধনে আরও বক্তব্য রাখেন, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক-কর্মচারী সমিতির সভাপতি নজরুল ইসলাম, সাধারন সম্পাদক এনামুল হক, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আবুল কালাম আজাদ, তিলোচ শিববাটি বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মঞ্জুরুল ইসলাম, কৈকুড়ী রহিম-মজিদ উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারি প্রধান শিক্ষক মোস্তাক আহম্মেদ, সহকারী শিক্ষক সাইফুল ইসলাম ও নূরুল ইসলাম ।
এই ঘটনা সম্পর্কে আদমদীঘি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এসএম মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, মামলার পর থেকেই আসামীরা পলাতক রয়েছে। তাদের গ্রেপ্তার করতে পুলিশি তৎপরতা অব্যহত রয়েছে ।
