কুষ্টিয়ায় বিএনপির সার্চ কমিটি গঠন নিয়ে দুই পক্ষের গোলাগুলি, ভাঙচুর ও লুটপাট

ছবি: সংগৃহীত
কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলায় বিএনপির সার্চ কমিটি গঠন নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ, গোলাগুলি, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। মঙ্গলবার (১৭ জুন) রাত ১০টার পর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত উপজেলার ধরমপুর ইউনিয়নের গো-হাট সংলগ্ন এলাকায় এ উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
সংঘর্ষে অন্তত তিনজন আহত হন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খায়। পরে সেনাবাহিনী গিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে।
পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে পাঁচটি গুলির খোসা ও চারটি তাজা গুলি উদ্ধার করেছে। তবে বুধবার সকাল পর্যন্ত এ ঘটনায় কাউকে আটক করা হয়নি এবং থানায় কোনো লিখিত অভিযোগও জমা পড়েনি।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ধরমপুর ইউনিয়ন বিএনপির সার্চ কমিটির নেতৃত্বে মঙ্গলবার বিকেল চারটায় একটি ওয়ার্ড কমিটি গঠনের প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভা চলে রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত। বৈঠকে সার্চ কমিটির সদস্য রবিউল ইসলাম সরকার, আসাদুজ্জামান মিঠু ও শামসুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকের শেষ দিকে শামসুল ইসলাম ও অপর সদস্যদের মধ্যে তর্ক-বিতর্ক শুরু হয়, যা একপর্যায়ে রূপ নেয় সংঘর্ষে। এ সময় গুলির শব্দ ছড়িয়ে পড়ে এবং দুই পক্ষ মুখোমুখি অবস্থান নেয়।
সংঘর্ষে একপক্ষের কর্মী হামিদুল ও আরিফ এবং অপর পক্ষের কর্মী টিপু আহত হন। আহতদের ভেড়ামারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, এক জনের মাথায় এবং অন্যজনের কনুইয়ে গুলির চিহ্ন রয়েছে।
বিএনপির এক পক্ষের নেতা আসাদুজ্জামান মিঠু অভিযোগ করে বলেন, বৈঠক শেষে সবাই চলে যাওয়ার সময় শামসুল ইসলাম ও তার লোকজন পরিকল্পিতভাবে হামলা চালায় এবং গুলি ছোড়ে। অপর পক্ষের নেতা রবিউল ইসলাম সরকারও শামসুলের বিরুদ্ধে ‘বেপরোয়া আচরণ’ এবং আক্রমণের অভিযোগ করেন।
তবে শামসুল ইসলাম এসব অভিযোগ অস্বীকার করে পাল্টা দাবি করেন, “আমি বৈঠক শেষে মিঠুর গাড়িতেই উঠে চলে এসেছি। পরে যারা হামলা করেছে তারা মূলত আমাদের লক্ষ্য করেই কাজটি করেছে। আসাদুজ্জামান, রবিউল এবং যুবদল নেতা নান্টু পরিকল্পিতভাবে এই সংঘর্ষ ঘটিয়েছে।”
এদিকে ছাত্রদল নেতা আকাশের বাড়িতে হামলার অভিযোগও উঠেছে। তার বোন চাঁদনী খাতুন বলেন, “ভাঙচুর ও লুটপাটকারীরা আমাদের ঘরের সোনার গহনা ও টাকা নিয়ে গেছে। আমার ভাই রাজনীতিতে যোগ দেয়ার পর থেকেই হুমকি পাচ্ছিল। এই ঘটনার বিচার চাই।”
ভেড়ামারা উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মিজানুর রহমান জানিয়েছেন, আহতদের মধ্যে একজন মাথায় এবং অপরজন কনুইয়ে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।
ভেড়ামারা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) রাকিবুল ইসলাম বলেন, “ঘটনাস্থল থেকে গুলির খোসা ও তাজা গুলি উদ্ধার করা হয়েছে। তবে তিনজন আহত হলেও তারা গুলিতে আহত হয়েছেন কি না, তা এখনও নিশ্চিত নই।” বর্তমানে ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে এবং পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে বলেও জানান তিনি।
এই ঘটনায় এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে এবং স্থানীয়রা নতুন করে সহিংসতার আশঙ্কা করছেন। তবে প্রশাসন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রেখেছে এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সতর্ক রয়েছে।
