
আমানতের ৮.২৫ শতাংশই খেলাপি
১৭ নভেম্বর ২০২২, ১১:৩৬ পিএম | আপডেট: ২৭ নভেম্বর ২০২৩, ০৯:২৫ এএম

বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে কর্তরত টোকন। ভবিষ্যতের কথা বিবেচনা করে মার্কেন্টাইল ব্যাংকে ২০০৭ সালে একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলেন। সংসারের খরচ মিটিয়ে প্রতি মাসে তিনি কিছু সঞ্চয়ও রাখেন। এভাবে সারা দেশের লাখ লাখ গ্রাহক মাথার ঘাম পায়ে ফেলে বিভিন্ন ব্যাংকে গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১৬ লাখ ২৮ হাজার ৪৮৪ কোটি টাকা সঞ্চয় করেছেন। সেই সঞ্চয় দিয়েই ব্যাংকগুলো ১৩ লাখ ৫২ হাজার কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে।
এদিকে ব্যাংক মালিক থেকে শুরু করে এক শ্রেণির সুবিধাবাদী ব্যাংক কর্মকর্তাদের জোগসাজসে এসব ঋণের ৮ দশমিক ২৫ শতাংশই খেলাপি হয়েছে। অর্থাৎ মোট ঋণের খেলাপি হয়ে গেছে ১ লাখ ৩৪ হাজার ৩৯৬ কোটি টাকা। এরমধ্যে আদায় অযোগ্য (ব্যাড লোন) ঋণ বা কুঋণ হচ্ছে ১ লাখ ১৮ হাজার ৫৫৩ কোটি টাকা বা প্রায় আট শতাংশ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঋণ নিয়ে পরিশোধ না করলেও চলে। তাই বাড়ছে খেলাপি ঋণ, কুঋণ। কঠোরভাবে আইনের প্রয়োগ না করলে এভাবে বাড়তেই থাকবে খেলাপি ঋণ।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, জনগণ সঞ্চয়ী থেকে শুরু করে বিভিন্ন মেয়াদে ব্যাংকে (ফিক্সড ডিপোজিট) আমানত জমা রাখছেন। এই আমানত প্রতিনিয়ত বাড়ছে। এক শ্রেণির গ্রাহক নিরাপদ মনে করে ব্যাংকেই বেশি করে সঞ্চয় করছেন। চলতি বছরের গত জুনে বিভিন্ন ব্যাংকে আমানত জমা হয়েছে ১৬ কোটি ২৪ লাখ ৪৭১ কোটি টাকা। এই আমানত থেকে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দেওয়া হয়েছে ১৩ লাখ ২০ হাজার ৭৮০ কোটি টাকা। এভাবে তিন মাসের ব্যবধানে ব্যাংকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আমানত জমা হয়েছে ১৬ লাখ ২৮ হাজার ৪৮৪ কোটি টাকা। এরমধ্যে ঋণ দেওয়া হয়েছে ১৩ লাখ ৫১ হাজার ৮৪৬ কোটি টাকা বা মোট আমানতের ৮৩ শতাংশ।
রাষ্ট্রয়ত্ব ছয় ব্যাংকের কুঋণ ৫৬ হাজার ৮৪২ কোটি টাকা
ব্যাংকগুলো বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দিলেও এক শ্রেণির ব্যবসায়ী ও শিল্পোদ্যোক্তারা বিভিন্ন অজুহাতে ঋণ ঠিকমতো পরিশোধ করছেন না। এরফলে অবিশ্বাস্যভাবে খেলাপি ঋণ বাড়ছে সমানতালে। সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিতরণ করা ঋণের মধ্যে খেলাপি ঋণ ১ লাখ ৩৪ হাজার কোটি টাকার বেশি বা ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশ দাঁড়িয়েছে। এই খেলাপি ঋণের ১ লাখ ১৮ হাজার কোটি টাকার বেশি ব্যাড বা আদায় অযোগ্য বা কুঋণ হয়ে গেছে।
এরমধ্যে রাষ্ট্রয়ত্ব সোনালী, অগ্রণী, রুপালী, জনতা, বাংলাদেশ ডেভলপমেন্ট ব্যাংক ও বেসিক- এই সাতটি ব্যাংকের কুঋণ হচ্ছে ৫৬ হাজার ৮৪২ কোটি টাকা বা ২১ দশমিক ৬৫ শতাংশ। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি হচ্ছে বেসিক ব্যাংকের ৭ হাজার ৮৮৯ কোটি টাকা বা ৫৮ শতাংশের বেশি। সাধারণত ঋণের মেয়াদ পার হওয়ার পরও মামলা মোকদ্দমা করলেও ৫ বছরে কোনো ঋণ আদায় করতে না পারলে তা কুঋণ হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংক হিসাব করে। এই ঋণের বেশির ভাগই আদায় অযোগ্য হয়ে যায়।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য মতে, ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংকিং খাতের মোট ঋণ স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১৪ লাখ ৩৬ হাজার ১৯৯ কোটি ৮২ লাখ টাকা। এর মধ্যে খেলাপিতে পরিণত হয়েছে ১ লাখ ৩৪ হাজার ৩৯৬ কোটি টাকা। যা মোট ঋণের ৯ দশমিক ৩৬ শতাংশ। খেলাপির এ অংক চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে বেড়েছে ৩১ হাজার ১২২ কোটি টাকা। কারণ ২০২১ সালের ডিসেম্বরে খেলাপি ঋণ ছিল ১ লাখ ৩ হাজার ২৭৪ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৭ দশমিক ৯৩ শতাংশ। আর গত বছরের সেপ্টেম্বরে খেলাপি ঋণ ছিল ১ লাখ ১ হাজার ১৫০ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৮ দশমিক ১২ শতাংশ।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক জিএম আবুল কালাম আজাদ ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, ‘তৃতীয় প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) ক্লাসিফাইড (খেলাপি) ঋণ বেড়েছে, এটা সত্য। তবে খেলাপি ঋণ কমানোর ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করেছে। কারণ জনগণের আমানত থেকেই ঋণ দেওয়া হয়। এই আমানত ভালোভাবে সংরক্ষিত থাকবে ব্যাংকে। খেলাপি ঋণ কমানোর ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংক কঠোর পথে যাচ্ছে।’
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান, এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘কোনো ব্যবসায়ীর সমস্যার কারণে হয়ত কিছুটা খেলাপি হতে পারে। কিন্তু কুঋণ লাখ কোটি টাকার উপরে। এটা খুবই ভয়াবহ চিত্র। এই ঋণের বিপরীতে ১০০ শতাংশ প্রভিশন রাখতে হবে ব্যাংকগুলোকে। তাহলে কীভাবে তারা চলবে। অনেকেই ইচ্ছাকৃত খেলাপি হয়ে যাচ্ছে। তাদের মনে ঢুকে গেছে ব্যাংকের ঋণ নিলে ফেরত না দিলেও চলে। এই সংস্কৃতি খেলাপিদের মধ্যে ঢুকে গেছে। তাই ব্যাংক বাঁচাতে হলে বাংলাদেশ ব্যাংককে কঠোরভাবে আইনের প্রয়োগ করতে হবে। তাহলেই কুঋণসহ খেলাপি ঋণ কমবে। জনগণের আমানত হেফাজতে থাকবে।
এই অর্থনীতিবিদ আরও বলেন, খেলাপি ঋণ এমনিতেই ব্যাংক খাতের জন্য সমস্যা। এর ওপর দেওয়া হয়েছে ঋণ পরিশোধ না করেও নিয়মিত থাকার সুযোগ। এই ছাড়ের কারণে খেলাপিরা ভাবছে, ঋণ পরিশোধ না করলেও চলবে। আবারও অনেকে সুবিধা পেতে পেতে ঋণ পরিশোধে অনাগ্রহী হয়ে গেছেন। তাই যারা ঋণ পরিশোধ করছে না তাদের বিরুদ্ধে সরাসরি অ্যাকশনে যেতে হবে। এর সঙ্গে কোনো ব্যাংকার, পরিচালক জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।’
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী, ব্যাংকের অশ্রেণিকৃত বা নিয়মিত ঋণের বিপরীতে দশমিক ২৫ থেকে পাঁচ শতাংশ হারে প্রভিশন রাখতে হয়। নিম্নমান বা সাব-স্ট্যান্ডার্ড ঋণের বিপরীতে রাখতে হয় ২০ শতাংশ, সন্দেহজনক ঋণের বিপরীতে ৫০ শতাংশ এবং মন্দ বা কু-ঋণের বিপরীতে ১০০ শতাংশ প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হয়। খেলাপি ঋণ বেড়ে যাওয়ায় অনেক ব্যাংক প্রভিশনও রাখতে পারছে না। এরফলে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রভিশন ঘাটতি হয়েছে ১৯ হজোর ৮৩৩ কোটি টাকা।
জেডএ/এসএন

গাজীপুরে যাত্রীবাহী বাসে আগুন
২৯ নভেম্বর ২০২৩, ১১:৪৩ এএম | আপডেট: ২৯ নভেম্বর ২০২৩, ১১:৪৯ এএম

গাজীপুর সিটি করপোরেশনের উত্তর সালনা এলাকায় ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়কের যাত্রীবাহী একটি বাসে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। বুধবার (২৯ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ৬টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণ আনে।
ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বুধবার সকাল সাড়ে ৬টার দিকে উত্তর সালনা এলাকায় কয়েকজন দুর্বৃত্ত একটি বাসে দাহ্য পদার্থ নিক্ষেপ করে আগুন ধরিয়ে পালিয়ে যায়। পরে আশপাশের লোকজন ফায়ার সার্ভিসে খবর দিলে জয়দেবপুর ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে আধঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণ আনে।
গাজীপুর ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক আবদুল্লাহ আল আরেফিন বলেন, বাসে অগ্নিসংযোগের খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে আধঘণ্টা পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। আগুনে বাসের সামনের অংশ পুড়ে গেছে। তবে কেউ হতাহত হয়নি।

মোটরসাইকেল তল্লাশিতে বেরিয়ে এল ১৬ কোটি টাকার সোনা
২৮ নভেম্বর ২০২৩, ১২:২১ পিএম | আপডেট: ২৯ নভেম্বর ২০২৩, ১১:৪৭ এএম

চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা সীমান্ত থেকে ১৬ কেজি ওজনের ৯৬টি সোনার বার জব্দ করেছে বিজিবি। এসময় গ্রেপ্তার করা হয়েছে নাজমুল ইসলাম (৩১) নামের এক পাচারকারীকে।
মঙ্গলবার (২৮ নভেম্বর) সকালে দামুড়হুদার সীমান্তবর্তী রুদ্রনগর গ্রামে এ অভিযান চালানো হয়। গ্রেপ্তার নাজমুল দর্শনার শ্যামপুরের আসাদুল হকের ছেলে।
চুয়াডাঙ্গা-৬ ব্যাটালিয়নের (বিজিবি) পারচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাঈদ মোহাম্মদ জাহিদুর রহমান জানান, অভিযানের সময় চোরাকারবারী নাজমুল ইসলাম মোটরসাইকেল ফেলে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু বিজিবি সশস্ত্র টহলদল তাকে আটক করতে সক্ষম হয়। এসময় তল্লাশি চালিয়ে ৯৬টি সোনার বার উদ্ধার করা হয়, যার ওজন ১৬ কেজি ১৪ গ্রাম। এর আনুমানিক মূল্য ১৬ কোটি ১৫ লাখ টাকা। এ ঘটনায় দর্শনা থানায় মামলার প্রক্রিয়া চলছে।

‘ভোটার আইডি হ্যাক করে বিএনপি নেতাদের মনোনয়নপত্র তোলা হচ্ছে’
২৮ নভেম্বর ২০২৩, ১১:৪৭ এএম | আপডেট: ২৯ নভেম্বর ২০২৩, ১১:৪৮ এএম

ভোটার আইডি হ্যাক করে বিএনপির নেতাদের নামে মনোনয়নপত্র তোলা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে দলটি। মঙ্গলবার (২৮ নভেম্বর) এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এ অভিযোগ করেন।
তিনি বলেন, জাতীয় পরিচয়পত্রের মাধ্যমে সরকার প্রতারণা করার চেষ্টা করছে। নেতারা জানেনও না, এরপরও তাদের নামে মনোনয়নপত্র কেনা হচ্ছে। যেহেতু পরিচয়পত্রের সব তথ্য সরকারের হাতে, অতএব এটার মাধ্যমে বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের নামে মনোনয়ন ফরম কিনছে। এখন সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকা জাতীয় পরিচয়পত্রকেও ব্যবহার করা হচ্ছে মহাজালিয়াতির জন্য।
রিজভী বলেন, নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি গিয়াস উদ্দিন জানেন না, তার নাম দিয়ে, হ্যাক করা ন্যাশনাল আইডি কার্ড নিয়ে তার ফরম তোলা হয়েছে। পরে তিনি সংবাদ সম্মেলন করে এর প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, বাংলাদেশ এখন এক দীর্ঘ মেয়াদি সংকটের দিকে যাচ্ছে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সরকারের মাস্টারপ্ল্যানের অংশ হিসেবে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের ওপর তাণ্ডব শুরু করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
সোমবার ডিবি প্রধান ২৮ অক্টোবরে ঘটনার পেছনে যুব দলের নেতাকর্মীরা জড়িত বলে আটকদের স্বীকারোক্তি দিয়ে যেসব বক্তব্য রেখেছেন তাকে মিথ্যাচার বলে প্রতিবাদ জানিয়েছেন রিজভী।
তিনি আরও বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে ৩৩৫ জনের বেশি নেতাকর্মী গ্রেপ্তার ও ৯ মিথ্যা মামলায় ১ হাজার ১৩৫ জন নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। বিএনপির এ নেতা বলেন বলেন, দলের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টুর ফেনীর গ্রামের বাড়িতে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা বোমা নিক্ষেপ করে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ব্যাপক ক্ষতি করেছে। এ ঘটনায় তিনি নিন্দা জানান।
বিভাগ : জাতীয়
বিষয় : বিএনপি , মনোনয়নপত্র , অভিযোগ , সংবাদ-সম্মেলন , ভোটার-আইডি-হ্যাক , রুহুল-কবির-রিজভী , জাতীয়-পরিচয়পত্র , জাতীয়-নির্বাচন