ভোলায় বেড়াতে এসে বন্ধুর বোনকে বিয়ে করলেন চীনা যুবক

ছবি: সংগৃহীত
দ্বীপ জেলা ভোলায় ঘটে গেছে এক অসাধারণ প্রেমের গল্প। প্রযুক্তির দুনিয়ায় পরিচয়, তারপর সরাসরি প্রেম—শেষ পর্যন্ত এসে বিয়ে! চীনের লানজু শহর থেকে বাংলাদেশে এসে এক কলেজছাত্রীকে বিয়ে করেছেন চীনা যুবক ইরিছা চং। এই খবর এখন ভোলার গ্রামে গ্রামে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে।
ঘটনার সূত্রপাত প্রায় দুই বছর আগে। ভোলার ভেলুমিয়া ইউনিয়নের চন্দ্রপ্রসাদ গ্রামের বাসিন্দা রনি হাওলাদারের সঙ্গে ইউচ্যাট নামক একটি অ্যাপে পরিচয় হয় চীনের ইরিছা চংয়ের। সেই পরিচয় দ্রুত বন্ধুত্বে রূপ নেয়। নিয়মিত কথাবার্তার মাধ্যমে একে অপরের পরিবারের খবরও জানতে শুরু করেন তারা।
এই বন্ধুত্বই এক সময় এমন মোড়ে গিয়ে দাঁড়ায়, যেখানে ইরিছা সিদ্ধান্ত নেন সরাসরি বাংলাদেশে আসার। গত ১১ এপ্রিল, সব প্রস্তুতি সেরে চীন থেকে উড়ে আসেন তিনি। রনির বাড়িতে উঠেন, অতিথি হয়ে নয়, যেন আপনজন হয়েই থাকেন সেখানে।
একপর্যায়ে, রনির ছোট বোন, কলেজে পড়ুয়া নাবিয়া আক্তারের প্রতি গভীর অনুরাগ জন্মে তার। সরাসরি বিয়ের প্রস্তাব দেন মেয়ের পরিবারকে। প্রথমদিকে পরিবার কিছুটা দ্বিধায় থাকলেও শেষ পর্যন্ত তাদের মত সম্মতি মেলে—কাবিন ঠিক হয় ১০ লাখ টাকা। স্থানীয় গণ্যমান্যদের উপস্থিতিতে গত ৫ মে রাতে অনুষ্ঠিত হয় এই বহুল আলোচিত বিয়ে।
নবদম্পতির বিয়েতে শুধু পরিবার নয়, পুরো এলাকা যেন উৎসবে মাতোয়ারা। হাজারো মানুষ ছুটে আসে একনজর দেখতে ‘বিদেশি জামাই’কে। এত মানুষের ভিড়ে নববধূর পরিবার যেন সময় পাচ্ছে না স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে। রান্না-বান্নাও থেমে যাচ্ছে মানুষের আগমনে। একপর্যায়ে ইরিছা কিছু সময়ের জন্য আত্মগোপন করে একটি আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হন।
নাবিয়ার পরিবার জানায়, ইরিছা একজন ধর্মপ্রাণ মুসলিম। তার জন্ম চীনের লানজু শহরে। তিন ভাইবোনের মধ্যে ইরিছা দ্বিতীয়। একটি মাদ্রাসায় ইসলামি শিক্ষায় শিক্ষিত এই যুবক নিজের বিশ্বাস ও মূল্যবোধ নিয়ে খুবই সচেতন। নাবিয়ার মতোই সে পরিবারকেও দারুণ শ্রদ্ধা করে।
নাবিয়ার ভাই রনি বলেন, “আমি কখনো ভাবিনি, একটা অনলাইন বন্ধুত্ব এমন একটা পরিণতির দিকে যাবে। কিন্তু এখন আমি খুশি, কারণ আমার বন্ধুই আজ আমার বোনের স্বামী।”
নাবিয়ার বাবা ইলিয়াস হাওলাদার বলেন, “প্রথমে আমরা ভয় পেয়েছিলাম। বিদেশি ছেলে, জানি না কেমন হবে! পরে খোঁজখবর নিয়ে বুঝি, সে ভালো ছেলে। মেয়ের ভবিষ্যতের কথা ভেবে আমরা রাজি হয়ে যাই। এখন আমরা সবাই খুব খুশি।”
এদিকে, ইরিছা চং নিজেও নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করছেন। তিনি বলেন, “নাবিয়ার মতো মেয়েকে স্ত্রী হিসেবে পেয়ে আমি গর্বিত। আমি তার পরিবারকেও ভালোবাসি। খুব শিগগিরই আমরা চীন ফিরে যাব। আমি তাদের জন্য সব কাগজপত্র প্রস্তুত করছি।”
ভোলা সদর থানার ওসি হাসনাইন পারভেজ জানান, চীনা যুবকের বিয়ের বিষয়ে পুলিশকে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো হয়নি। তবে এ ধরনের বিয়ে নিয়ে কোনো অভিযোগ না থাকলে পুলিশ সাধারণত হস্তক্ষেপ করে না।
