নতুন গিলাফে আবৃত পবিত্র কাবা শরিফ

ছবি: সংগৃহীত
পবিত্র কাবা শরিফে নতুন কিসওয়া (গিলাফ) আবৃত পবিত্র ও ঐতিহাসিক কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে। বুধবার (২৫ জুন) আসরের নামাজের পর থেকে শুরু হওয়া এই আধ্যাত্মিক আয়োজনে শেষ হয় বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) সকালে।
সৌদি আরবের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা এসপিএ জানায়, প্রতি বছর হজের দিন অর্থাৎ ৯ জিলহজে কাবার গিলাফ পরিবর্তনের এই রেওয়াজ ইসলামী ঐতিহ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
এ বছরের কিসওয়া তৈরি করেছে সৌদি আরবের ‘কিং আবদুল আজিজ কমপ্লেক্স ফর দ্য কিসওয়া অব দ্য কাবা’। প্রায় ১১ মাসব্যাপী জটিল ও পবিত্র প্রস্তুতি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে তৈরি হয় এই গিলাফটি। এতে ব্যবহৃত হয়েছে উচ্চমানের কালো রেশম, সূক্ষ্ম তুলা, খাঁটি সোনা ও রুপার সুতো—সবই অত্যন্ত নিখুঁত হাতে তৈরি।
গিলাফটির ওজন প্রায় ১ হাজার ৪১৫ কেজি। এর মধ্যে রয়েছে ৮২৫ কেজি কালো রেশম, ৪১০ কেজি তুলা, ১২০ কেজি সোনার প্রলেপযুক্ত রুপার সুতো এবং ৬০ কেজি বিশুদ্ধ রুপা। গিলাফের বাইরের অংশ কালো রেশমে আবৃত হলেও, অভ্যন্তরীণ স্তরে রয়েছে সবুজ, লাল ও সাদা রঙের রেশম ও সুতির কাপড়—যা প্রতীকীভাবে ঐক্য, শান্তি, মর্যাদা ও স্থিতিশীলতার প্রতিফলন।
নতুন কিসওয়ায় সংযোজিত হয়েছে ৪৭টি রেশমি প্যানেল। প্রতিটি প্যানেলে কোরআনের ৬৮টি আয়াত সোনালি রঙের সূচিকর্মে উৎকীর্ণ করা হয়েছে। আল্লাহর নামসমূহ ‘আর-রহমান’, ‘আর-রহিম’ এবং ইসলামি আকিদার মূলবাণী ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ’ বিশেষভাবে স্থান পেয়েছে গিলাফে। প্রতিটি প্যানেলের ওপরে যুক্ত রয়েছে বিখ্যাত সোনালি বেল্ট ‘হিজাম’, যা সোনার প্রলেপ দেওয়া রুপার সুতো দিয়ে অলংকৃত।
এ মহতী কাজে অংশ নিয়েছেন ১৫০ জনেরও বেশি দক্ষ কারিগর, ডিজাইনার, ক্যালিগ্রাফার ও তাঁতি। প্রতিটি ধাপে পবিত্রতা ও গুণগত মান নিশ্চিত করা হয়েছে সর্বোচ্চ সতর্কতার সঙ্গে।
হিজরি ক্যালেন্ডারের ৯ জিলহজ, হজের দিন কাবার গিলাফ পরিবর্তন ইসলামী ঐতিহ্যে এক আধ্যাত্মিক ও ঐক্যের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত। বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর জন্য এই আয়োজন শুধুই একটি আনুষ্ঠানিকতা নয়, বরং তা বিশ্ব মুসলিমের ঐক্য, পবিত্রতা ও আল্লাহর প্রতি আনুগত্যের প্রতীক।
পবিত্র কাবায় নতুন গিলাফ পরানো কেবল সৌন্দর্য বৃদ্ধি নয়, বরং মুসলিম হৃদয়ে নতুন আশার আলো জ্বেলে দেয় প্রতি বছরই।
