শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪ | ১২ শ্রাবণ ১৪৩১
Dhaka Prokash

আন্দোলন-নির্বাচন দুই ইস্যুতেই তৎপর জামায়াতে ইসলামী

আন্দোলন ও নির্বাচন দুই ইস্যুতেই তৎপর রয়েছে জামায়াতে ইসলামী। যদিও ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে বিতর্কিত ভূমিকার বিতর্কিত জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন আইনি জটিলতায় ঝুলে আছে, তারপরও তলে তলে বিএনপির সঙ্গে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে দলটি।

সূত্র জানায়, দেশ-বিদেশের বিভিন্ন মহলের চাপে প্রকাশ্যে জামায়াতের সঙ্গে দূরত্ব বজায় রাখছে বিএনপি। তবে ভেতরে ভেতরে দুই দলের নেতাদের মধ্যে যোগাযোগ হচ্ছে। নির্বাচনকে সামনে রেখে জামায়াতের সঙ্গে বিএনপিও তলে তলে পুরোনো সম্পর্ক বজায় রেখে সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলন ও নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। মূলত রাজপথে জামায়াতের শক্তি ও ভোট ব্যাংকের কারণেই অনেকটাই ওপেন সিক্রেট কৌশলে জামায়াতকে কাছে রাখার চেষ্টা অব্যাহত রাখছে বিএনপি নেতৃত্ব।

জামায়াতে ইসলামীর একাধিক দায়িত্বশীল নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নির্দলীয় সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের দাবিতে বিএনপির চলমান যুগপৎ আন্দোলনে এককভাবে সম্পৃক্ত জামায়াতে ইসলামী। জোটবদ্ধ না হলেও এককভাবে আন্দোলন চালিয়ে যাবে দলটি। রাজনীতিতে শেষ বলে কিছু নেই। ২০১৪ সালে একই দাবিতে নির্বাচন বয়কট করে ২০১৮ সালে যদি বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারে। সেক্ষত্রে এবারও তো শেষ মুহূর্তে কোনো সিদ্ধান্ত আসতে পারে।

তাই আন্দোলনের পাশাপাশি নির্বাচনের প্রস্তুতিও নিতে জামায়াতে ইসলামী। জামায়াত নেতৃত্ব বলছে, জামায়াত নির্বাচনমুখী একটি রাজনৈতিক দল। কোনো কারণে বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নিলে জামায়াত যাতে নিবন্ধিত অন্য দলের প্রতীকে নির্বাচন করতে পারে সে প্রস্তুতিও রাখা হচ্ছে। দলগুলোর সঙ্গে জামায়াত যোগাযোগ রাখছে। একইসঙ্গে নিজেদের দলের নিবন্ধন ফেরত পাওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।

সংশ্লিষ্টদের মতে, ২০ দলীয় জোট অকার্যকর হয়ে গেলেও এ জোটের বেশ ক’টি দলের সঙ্গে জামায়াতের নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কোনো কারণে বিএনপি অংশ না নিলে কিংবা জামায়াতের প্রার্থীরা বিএনপির প্রতীক ব্যবহার করতে না পারলে যেকোনো একটির সঙ্গে মিশে নির্বাচন করার চেষ্টা করা হবে।

জামায়াতে ইসলামী দেশের অন্যতম প্রধান বিরোধী রাজনৈতিক দল বিএনপির দীর্ঘ দিনের পথ চলার জোট-ভোটের অন্যতম সঙ্গী। আইনি জটিলতায় নিবন্ধন প্রক্রিয়া ঝুলে থাকায় দলীয় প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ নেই দলটির। ফলে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটে থেকে ভোটযুদ্ধে অংশ নেওয়াটাই ছিল তাদের রাজনৈতিক দল হিসেবে টিকে থাকার শেষ ভরসা।

কিন্তু সম্প্রতিকালে বিএনপি তাদের নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটকে অকার্যকর ঘোষণা দেয়। পক্ষান্তরে ২০ দলীয় জোটে অন্তর্ভুক্ত দলগুলোও আনুষ্ঠানিকভাবে জোট ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছে। ১২টি রাজনৈতিক দল একত্রিত হয়ে গঠন করেছে ১২ দলীয় জোট। জোটের অন্যান্য দলগুলো মিলে গঠন করেছে জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট। এই দুই জোটের কারও সঙ্গেই জোটবদ্ধ নেই ২০ দলীয় জোটের অন্যতম দল জামায়াতে ইসলামী। তবে প্রত্যেকটি দলের সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে তাদের।

এদিকে, বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট থেকে বের হয়ে আলাদা আলাদা জোট গঠন করলেও সেই রাজনৈতিক দলগুলো বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে মাঠে থাকার ঘোষণা দিয়েছে। একই দিনে একই রকমের কর্মসূচিও পালন করে আসছে। কিছুটা ব্যতিক্রম শুধু জামায়াতে ইসলামী। শুরুতে বিএনপি ঘোষিত কর্মসূচিতে জামায়াতের নেতা-কর্মীরা অংশগ্রহণ করতে গিয়ে পুলিশি হামলার শিকার হওয়ার পর বিএনপির পক্ষ থেকে কোনো প্রকার সমবেদনা জানিয়ে বিবৃতি প্রদান করা হয়নি। এরপর থেকে বিএনপির চলমান যুগপৎ আন্দোলনে একই দিনে কর্মসূচি পালন করা থেকে বিরত থাকছে জামায়াতে ইসলামী।

দলটির দায়িত্বশীল একাধিক নেতা ঢাকাপ্রকাশ-কে জানান, বিএনপির সঙ্গে জোটবদ্ধ নেই; আবার জোটবদ্ধ আছে জামায়াতে ইসলামী। বিএনপি আনুষ্ঠানিকভাবে ২০ দলীয় জোট বিলুপ্ত ঘোষণা দেয়নি; পক্ষান্তরে জামায়াতে ইসলামীও বিএনপির সঙ্গে নাই এমনটার কোনো আনুষ্ঠানিকতা নাই। দুই দলের সর্ম্পককে ঘিরে যে গুঞ্জন সেটা হলো রাজনৈতিক কৌশল। কারণ বিএনপি নির্দলীয় সরকারের অধীনে দাবি আদায় করতে যুগপৎ আন্দোলনে করে যাচ্ছে। জামায়াতে ইসলামীও একই দাবিতে কর্মসূচি পালনে মাঠে রয়েছে।

ইদানিং বিএনপির সঙ্গে সরকারবিরোধী বেশকিছু সমমনা রাজনৈতিক দলের নতুন করে সখ্যতা গড়ে উঠেছে। তাদের সুবিধার্থে এবং বিএনপিও সেই দলগুলোকে দাবি আদায়ের আন্দোলনে পাশে ধরে রাখতে জামায়াতের সঙ্গে দৃশ্যত কিছুটা দূরত্ব বজায় রেখে চলছে। স্পষ্ট কথা-শুরুতে সরকারবিরোধী সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো মুখে মুখে জামায়াতের বিরুদ্ধে অবস্থান থাকলেও এখন সেই অবস্থান তাদের নেই। বেশ কিছু দলের নেতা জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে আদর্শগত পার্থক্য থাকলেও সাংবিধানিক অধিকারসহ ন্যায্য দাবি আদায়ে কোনো পার্থক্য নেই। একে অপরের দীর্ঘদিনের ভোট জোটের অন্যতম বন্ধু। বিএনপি এবং জামায়াত এক সূত্রে গাঁথা। কেউ চাইলেই এই দুই দলের দীর্ঘদিনের বোঝাপড়ার সম্পর্ক ভেঙে ফেলা যাবে না বলেই মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

তারা বলছেন, ভোটের রাজনীতিতে জামায়াতে ইসলামী একটা বড় ফ্যাক্টর। ফলে জামায়াতে ইসলামী রাজনীতিতে না থেকেও আছে; জামায়াতকে নিয়ে রাজনীতিও আছে। দলগতভাবে জামায়াতে ইসলামী সুসংগঠিত, সুশৃঙ্খল ও জনসমর্থন নিয়ে গড়া দল। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ শত চেষ্টা আর অত্যাচার-নির্যাতন-নিপীড়ন চালিয়েও বিএনপি-জামায়াতের সম্পর্কে ফাটল ধরাতে পারেনি, পারবে না। উভয় দল একে অপরকে ছেড়ে দেওয়ার কথা কখনো ভাবছে না।

এখন দৃশ্যত যা হচ্ছে সেটাই রাজনীতি। আগামী দিনেও রাজপথ আন্দোলনেও জামায়াতে ইসলামী থাকবে। মাঠ ছাড়বে না। পক্ষান্তরে জামায়াতে ইসলামীর দীর্ঘ দিনের রাজনৈতিক মিত্র বিএনপির নেতারা বলছেন, তারা এই সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ নেবে না।

বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, ‘জামায়াতে ইসলামী কোনো নিষিদ্ধ রাজনৈতিক দল নয়, সরকারও তাদেরকে রাজনৈতিক দল হিসেবে নিষিদ্ধ করেনি। কাজেই বিএনপির সঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর নির্বাচনী জোট হলেও তাতে দোষের কিছু নেই। বরং আজকে যারা জামায়াতে ইসলামীকে নিয়ে বিতর্ক তৈরি করছে তাদের সঙ্গেও তো জামায়াত জোটবদ্ধ হয়ে রাজপথে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন করেছে। তাহলে এখন সমস্যাটা কোথায়?’

গয়েশ্বর চন্দ্র রায় আরও বলেন, আসলে ক্ষমতাসীনদের আতঙ্কের নাম বিএনপি। ফলে বিএনপির সঙ্গে যারাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে সরকারবিরোধী প্রতিবাদ করবে তাদের বিরুদ্ধেই মিথ্যাচার ও বিতর্ক তৈরি করবে সরকার।

জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, আনুষ্ঠানিকভাবে জোট ছাড়ার কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। জোটে থাকা না থাকার বিষয়েও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। জোটে থাকলেও এই সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে আছি আর জোটে না থাকলেও তো এই সরকারের বিরুদ্ধেই যুগপৎ আন্দোলন করতে রাজপথে আছি।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামের সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আবদুল হালিম ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, জামায়াতে ইসলামী গতানুগতিক কোনো রাজনৈতিক দল নয় বরং জামায়াত একটি গণতান্ত্রিক, আদর্শবাদী ও কল্যাণমুখী ইসলামী দল। মূলত গণমানুষের কল্যাণ ও ন্যায়-ইনাসাফের ভিত্তিতে কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা জামায়াতে ইসলামের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য। ভোটের রাজনীতিতে জামায়াতে ইসলামী নিজেদের মতো করে সক্রিয় আছে। তৃণমূলে মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ বহাল আছে। তাই অকারণে শক্তিনাশের পথে না হেঁটে তারা কৌশলে শক্তি বাড়িয়ে যাচ্ছে। জামায়াতকে নিয়ে রাজনীতি এবং জামায়াতের রাজনীতি সহজে শেষ হওয়ার নয়। জামায়াতে ইসলামী রাজনীতির মাঠে আছে এবং থাকবে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দুর্নীতি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হওয়ার পর থেকে তাদের পরীক্ষিত জোটবন্ধু জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির কিছুটা দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে। অথচ বাস্তবতা হচ্ছে এটা দূরত্ব নয়, এটা উভয় দলের রাজনৈতিক কৌশল। সরকারবিরোধী সমমনা অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোকে পাশে পেতেই উভয় দল নিজেদের গুটিয়ে রেখেছে। জোট ও রাজনৈতিক বিষয়ে এখনো তাদের মধ্যে সুসম্পর্ক বিরাজমান।

বরং জামায়াতের নেতারা অনেকটাই গর্ব করে বলে থাকেন শত প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও বিএনপি-জামায়াত সম্পর্কে কেউ চির ধরাতে পারবে না। যুগপৎ আন্দোলন নিয়ে বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে আনুষ্ঠানিক কোনো বৈঠক না হলেও গোপনে দুই দলের সিনিয়র নেতাদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা হয়েছে এবং আরও হবে।

জামায়াতের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের বলেন, রাজনীতিতে শেষ বলে কোনো কথা নেই। কাউকে না কাউকে তো কিছু ছাড় দিতেই হবে। কারণ আজকে যারা আওয়ামী লীগ সরকারে বিরুদ্ধে ঐক্যে পৌঁছাতে যাচ্ছেন তাদের অনেকের জীবনের বেশি সময় কেটেছে আওয়ামী লীগের পক্ষে কথা বলে। তারাই যখন জামায়াত নিয়ে কথা বলে তখন বিষয়টা ভূতের মুখে রাম নাম ছাড়া অন্য কিছু নয়।

আরইউ/এমএমএ/

Header Ad

আবু সাঈদের পরিবারকে সাড়ে ৭ লাখ টাকা দিল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন

আবু সাঈদের পরিবারকে সাড়ে ৭ লাখ টাকা দিল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ছবি: সংগৃহীত

কোটা আন্দোলনে নিহত বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) শিক্ষার্থী আবু সাঈদদের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

শুক্রবার (২৬ জুলাই) সকাল সাড়ে ১০টায় তাঁর গ্রামের বাড়িতে গিয়ে বাবা-মায়ের হাতে সাড়ে ৭ লাখ টাকার চেক তুলে দেয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি দল।

এ সময় নিহত আবু সাঈদের বৃদ্ধ বাবা মকবুল হোসেন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এর আগে আরেকদিন আমাদের সঙ্গে দেখা করতে আসে। সেই সময় ভিসি স্যার আমার সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলেছেন। আমাদের খোঁজখবর নিয়েছেন। আমাদের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। আমি স্যারকে বলেছিলাম আমাদের পরিবারের একজনকে যেন বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি দেওয়া হয়। ভিসি স্যার আশ্বস্ত করেছেন। প্রতিদিনই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কেউ না কেউ খোঁজ রেখেছেন।

এ ছাড়া পরিচিত-অপরিচিত অনেকেই সহায়তা করছেন বলেও জানায় আবু সাঈদের পরিবার।

মকবুল হোসেন আরও বলেন, আমার কলিজার টুকরা ছিল আবু সাঈদ। তার প্রাইভেট পড়ানোর (টিউশনের) জমানো টাকায় আমার সংসার চলতো। সন্তান হারিয়েছি, এ শোকের কোনো সান্ত্বনা নেই। বাবা হয়ে সবচেয়ে ভারী কাজ হলো সন্তানের লাশ কাঁধে নেওয়া।

এখন শুধু সবার কাছে সন্তানের জন্য দোয়া চান বৃদ্ধ এ বাবা।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষে আর্থিক সহায়তা প্রদানের সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর শরিফুল ইসলাম, বাংলা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. তুহিন ওয়াদুদ, শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান মন্ডল আসাদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর শরিফুল ইসলাম বলেন, ভিসি মহোদয়ের নির্দেশে আবু সাঈদের বাবা-মায়ের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সব সময় যোগাযোগ রাখছে। ভিসি স্যার নিজেও সাঈদের পরিবারের খোঁজ রাখছেন, পরিবারের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এরই অংশ হিসেবে আজকে সাড়ে সাত লাখ টাকার আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। এ সহযোগিতার ধারা অব্যাহত থাকবে।

উল্লেখ্য, গত ১৬ জুলাই বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন পার্ক মোড়ে কোটা সংস্কারে দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশ ও ছাত্রলীগের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে মিছিলের সম্মুখে থেকে বুক পেতে দেওয়া আবু সাঈদ নিহত হন। এ ঘটনার পর আন্দোলনের উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ে গোটা জেলাজুড়ে। নিহত আবু সাঈদ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কোটা সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ছিলেন।

সহিংসতার অভিযোগে ঢাকায় ২০৯ মামলায় গ্রেপ্তার ২৩৫৭

প্রতীকী ছবি। ছবি: সংগৃহীত

কোটা সংস্কার আন্দোলনের নামে ঢাকাসহ সারা দেশে সরকারি স্থাপনায় ভাঙচুর, সহিংসতা ও নাশকতার ঘটনায় এখন পর্যন্ত ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে ২০৯টি। নাশকতা ও সহিংসতার ঘটনায় জড়িত অভিযোগে এসব মামলায় এখন পর্যন্ত ২ হাজার ৩৫৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)।

শুক্রবার (২৬ জুলাই) ডিএমপি মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) কে এন রায় নিয়তি এ তথ্য জানান।

তিনি জানান, সহিংসতা নাশকতার ঘটনায় গোয়েন্দা তথ্য ও সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করে জড়িতদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত ২০৯টি মামলায় ২৩৫৭ জনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।

সারাদেশে সহিংসতার ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তারে চলছে সাঁড়াশি অভিযান। অভিযানে ঢাকায় ৬৩ ও ঢাকার বাইরে ২০৩ জনসহ মোট ২৬৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব।

এদিকে আজ নিজ কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেছেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনের আড়ালে পরিকল্পিতভাবে হত্যাকাণ্ড ও ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়েছে। বিএনপি-জামায়াত অনেকবার গণতান্ত্রিক সরকারকে অবৈধভাবে ক্ষমতাচ্যুত করা বা দেশকে অকার্যকর করার চেষ্টা করেছে। কিন্তু পুলিশের কারণে তারা বারবার ব্যর্থ হয়েছে। এ জন্য তারা এবার পুলিশকেই টার্গেট করেছে।

যারা পুলিশকে হত্যা করেছে, সাধারণ মানুষকে হত্যা করেছে, স্বপ্নের মেট্রোরেলসহ সরকারি স্থাপনায় নাশকতা চালিয়েছে। যারা এসবের নেতৃত্ব দিয়েছে, অর্থ আদান-প্রদান করেছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। তারা যেখানেই থাকুক না কেন তাদের ছাড় দেওয়া হবে না।

‘মুক্তিযোদ্ধা কোটার বাইরে বাকি ৯৫ শতাংশ নিয়ে আদালতে বোঝাপড়া করব’

বক্তব্য রাখছেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজ্জাম্মেল হক। ছবি: সংগৃহীত

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজ্জাম্মেল হক বলেছেন, সরকার মুক্তিযোদ্ধা কোটা শতকরা পাঁচ ভাগ রেখেছে। এটি মুক্তিযোদ্ধারা মেনে নিয়েছেন। কিন্তু পরিষ্কার হওয়া দরকার, বাকি পদে কাদের নেওয়া হবে। আমরা বাকি ৯৫ শতাংশ কোটা নিয়ে আদালতের সঙ্গে আইনি প্রক্রিয়ায় বোঝাপড়া করব।

শুক্রবার (২৬ জুলাই) দুপুরে নরসিংদীর পাঁচদোনায় সম্প্রতি দুর্বৃত্তদের হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন পরিদর্শন ও মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে আলোচনাসভায় মন্ত্রী এ কথা বলেন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে এই পাঁচদোনা মোড়ে বীর মুক্তিযোদ্ধারা ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। স্মৃতিধন্য এই স্থানে নির্মাণ করা হয় মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স। দুঃখের বিষয়, সেই মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সেই হামলা চালানো হয়েছে। একাত্তরের পরাজিত শক্তি জামায়াত-শিবিরের সন্ত্রাসী ও বিএনপির ক্যাডাররা মুক্তিযুদ্ধকে মেনে নিতে পারেনি। তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধ্বংস করতে চায়। মুক্তিযুদ্ধের সেই গর্বের ধন আজ পরাজিত শক্তির কাছে আক্রান্ত হচ্ছে।

এসময় তিনি রাজাকারদের তালিকা প্রস্তুত করার আহ্বান জানান। তিনি আরও বলেন, কোটার বিষয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের মতামত গ্রহণের জন্যও আদালতকে অনুরোধ জানানো হবে। পাশাপাশি মুক্তিযোদ্ধাদের হৃদয়ে যে রক্তক্ষরণ হচ্ছে সেটিও আইনি প্রক্রিয়ায় সমাধান করা হবে।

তিনি বলেন, যারা দেশে তাণ্ডব চালিয়েছে, তারা কখনো ছাত্র হতে পারে না। বিএনপি, জামায়াত ও রাজাকারের দল এ নৈরাজ্য সৃষ্টি করে দেশকে অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করতে চেয়েছিল। তাদের কার্যকলাপে আমাদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সে যারা আঘাত করেছে, তারা মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষের শক্তি বিএনপি, জামায়াত, শিবির ও ছাত্রদলের ক্যাডার।

নরসিংদী জেলা প্রশাসক ড. বদিউল আলমের সভাপতিত্বে সভায় উপস্থিত ছিলেন খাদ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সদস্য শাহজাহান খান, নরসিংদী সদর আসনের সংসদ সদস্য লে. কর্নেল (অব.) মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম হিরো, পুলিশ সুপার মো. মোস্তাফিজুর রহমান, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ডের সাবেক চেয়ারম্যান হেলাল মোর্শেদ প্রমুখ।

সর্বশেষ সংবাদ

আবু সাঈদের পরিবারকে সাড়ে ৭ লাখ টাকা দিল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন
সহিংসতার অভিযোগে ঢাকায় ২০৯ মামলায় গ্রেপ্তার ২৩৫৭
‘মুক্তিযোদ্ধা কোটার বাইরে বাকি ৯৫ শতাংশ নিয়ে আদালতে বোঝাপড়া করব’
কোটা আন্দোলনে নিহত রুদ্রের নামে শাবিপ্রবির প্রধান ফটকের নামকরণ
সহিংসতায় আহতদের চিকিৎসা-রোজগারের ব্যবস্থা করবে সরকার: প্রধানমন্ত্রী
এক সপ্তাহে বঙ্গবন্ধু সেতুতে ৬ কোটি টাকা লোকসান
পাকিস্তানের ইসলামাবাদ-পাঞ্জাবে ১৪৪ ধারা জারি
রিমান্ড শেষে কারাগারে নুরুল হক নুর
ক্ষমতায় থাকার নৈতিক অধিকার নেই সরকারের: মির্জা ফখরুল
নরসিংদী কারাগার থেকে লুট হওয়া ৪৫ অস্ত্র উদ্ধার
বাংলাদেশকে ১০ উইকেটে হারিয়ে নারী এশিয়া কাপের ফাইনালে ভারত
মোবাইল ইন্টারনেট কবে চালু হবে, জানাল বিটিআরসি
পুলিশকে দুর্বল করতেই পরিকল্পিতভাবে হামলা-ধ্বংসযজ্ঞ: ডিবি হারুন
মৃত্যুর দিনক্ষণ গোপন রাখা হয়েছে যে কারণে
অলিম্পিক উদ্বোধনের আগেই প্যারিসে উচ্চগতির রেল নেটওয়ার্কে ভয়াবহ হামলা
তারেক রহমানের নির্দেশেই রাষ্ট্রের ওপর হামলা হয়েছে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
পাকিস্তানকে কড়া হুঁশিয়ারি দিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি
শিক্ষার্থীদের হত্যা করে সরকারের ওপর দায় চাপানো হয়েছে: ওবায়দুল কাদের
‘বাংলাদেশে ছাত্র-ছাত্রীদের রক্ত ঝরছে’, মমতাকে কড়া বার্তা দিল্লির
বাজারে সরবরাহ বাড়লেও সবজির দামে এখনো অস্বস্তি