শুক্রবার, ২১ মার্চ ২০২৫ | ৭ চৈত্র ১৪৩১
Dhaka Prokash

৩ বছর বন্ধ শাহজালালের কনকোর্স হল, দুর্ভোগে যাত্রী ও স্বজনরা

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের অভ্যন্তরীণ কনকোর্স হল বন্ধ ৩ বছর ধরে। করোনার কারণে বন্ধ হওয়া কনকোর্স হল করোনা কেটে গেলেও খুলে দেওয়ার কোন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। তাই সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছেন যাত্রী ও স্বজনরা।

বিদেশগামী ও আগমনী যাত্রীর স্বজনদের জন্য ৩০০ টাকার বিনিময়ে কনকোর্স হল থেকে তাদের স্বজনদের অভ্যর্থনা ও বিদায় জানানোর সুযোগ থাকলেও গত প্রায় তিন বছর এটি বন্ধ রয়েছে। অথচ প্রতিদিন এ বিমানবন্দর দিয়ে অন্তত ২০ হাজার যাত্রী আসা-যাওয়া করেন। আর যাত্রীর সঙ্গে সর্বনিম্ন অন্তত ২/৩ জন স্বজন থাকেন। সেক্ষেত্রে বিমানবন্দরে প্রায় ৪০/৫০ হাজার লোকের সমাগম ঘটে।

কনকোর্স চালু থাকলে যাত্রীর স্বজনরা তাদের নির্ধারিত ব্যক্তিদের সহজেই রিসিভ করে বাইরে আনতে পারতেন। আর এটি বন্ধ থাকার কারণে খুঁজে স্বজনদের পাওয়াই কষ্টকর হয়ে যায়। এছাড়াও ঘন্টার পর ঘন্টা যাত্রীর স্বজনদের অপেক্ষা করতে হয় বাইরে প্রখর রোদে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন কামরুল ইসলাম বলেন, কনকোর্স হল খুলে দেওয়ার এখনো পরিকল্পনা হয়নি। পরিকল্পনা হলে জানতে পারবেন।

কামরুল ইসলাম আরও বলেন, এই মুহূর্তে দর্শনার্থীদের জন্য বিমানবন্দরের হলটি খোলার কোনো পরিকল্পনা নেই। বিভিন্ন জেলা থেকে বিমানবন্দরে যাত্রীদের অভ্যর্থনা জানাতে আসা স্বজনদের বসার জন্য বিকল্প পরিকল্পনা রয়েছে। বিমানবন্দরের সামনে ছোট পরিসরে কয়েকটি ছাউনি তৈরি করা হবে।

কামরুল ইসলাম আরও জানান, যাত্রী ও স্বজনদের সুবিধার্থে বিমানবন্দরের কাছেই নিরাপদ ও মনোরম পরিবেশে একটি আবাসিক হোস্টেল নির্মাণ করেছে ওয়েজ অনার্স কল্যাণ বোর্ড। সেখানে একজন যাত্রী মাত্র ২০০ টাকার বিনিময়ে নিরাপদে রাত্রীযাপন থাকতে পারবেন। যাত্রীরা সময়মতো ফ্লাইট ধরতে আগের দিন এসে এখানে অবস্থান করতে পারবেন।

বিমানবন্দরে দায়িত্বপালনকারী এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জিয়াউল হক পলাশ বলেন, সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ যদি কনকোর্স হল খুলে দেয় সেক্ষেত্রে নিরাপত্তার কোন সংকট হবেনা বলে মনে করি। আমরা শতভাগ নিরাপত্তা বিধানে প্রস্তুত রয়েছি।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, করোনা প্রাদুর্ভাবের কারণে ২০২০ সালের মার্চ মাসে বন্ধ করে দেওয়া হয় দর্শনার্থী সম্মেলনের কনকোর্স হল। এরপর প্রায় তিন বছর হতে চললেও এখনও খোলা হয়নি হলটি। যাত্রীর বা স্বজনদের জন্য বিমানবন্দরে করা হয়নি কোনো বসার ব্যবস্থাও।

যাত্রীর স্বজনরা জানান, আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হলেও যাত্রীর স্বজনদের জন্য বসার ব্যবস্থা নেই। এতে রোদ-বৃষ্টি কিংবা দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষায় চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয় তাদের।

তাদের দাবি, বৈদেশিক মুদ্রা পাঠিয়ে দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখলেও প্রবাসী কিংবা তাদের স্বজনদের সেভাবে মূল্যায়ন করা হচ্ছে না। বিমানবন্দরে বসার জায়গাও নেই। নানাভাবে হয়রানির অভিযোগও তাদের।

প্রবাসী মোতালেব জানান, তিনি দুবাইয়ের একটি বাগানে কাজ করেন। গ্রামের বাড়ি নওগাঁ জেলায়। দুই মাসের ছুটি শেষে কাজের জন্য আবার দুবাই রওনা হয়েছেন। বিমানবন্দর বহির্গমন কনকোর্স হল পর্যন্ত এসে তাকে বিদায় জানান স্বজনরা। কিন্তু হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর টার্মিনাল পর্যন্ত যেতেই গেটে আইন প্রয়োগকারী সদস্যদের বাধা। প্রিয়জনকে বিদায় জানাতে টার্মিনালের গেট কিংবা টিকিট কেটে কনকোর্স হলে যেতে পারেননি স্বজনেরা।

বিমানবন্দরে আসা এক যাত্রীর স্বজন জরিনা বেগম জানান, মালয়েশিয়া থেকে তার ছেলে আসবেন। গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জের ভৈরব এলাকায়। সকাল সাড়ে ১১টায় মালয়েশিয়ার একটি ফ্লাইটে বিমানবন্দরে অবতরণ করার কথা। সকাল থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত অপেক্ষা করেও ছেলের দেখা পাননি।

দীর্ঘদিন পর দেশে ফিরছেন টাঙ্গাইলের রোকেয়া খাতুনের স্বামী প্রবাসী আওলাদ হোসেন। তার জন্য রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অপেক্ষা করছেন রোকেয়াসহ কয়েক স্বজন। কিন্তু কোথাও বসার জায়গা নেই। তাই প্রখর রোদ থেকে বাঁচতে তারা অবস্থান নেন বিমানবন্দরের গাড়ি পার্কিং এলাকার একটি বটগাছের নিচে।

শুধু আওলাদের স্বজনরাই নন, নিত্যদিন এমন ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন দেশের নানা প্রান্ত থেকে বিমানবন্দরে আসা প্রবাসীদের স্বজনরা।

বিমানবন্দরে যাত্রী নিতে আসা আশরাফুল ইসলাম বলেন, তিনি তার এক ভাইকে রিসিভ করতে এসেছেন। তার ভাই সৌদি আরব থেকে ৫ বছর পর দেশে আসছেন। সে কোন গেট দিয়ে বেরুবে তা তিনি বুঝতে পারছেন না।

আশরাফুল ইসলাম বলেন, যদি আগমনীর ক্যানোপিতে দর্শনার্থী প্রবেশ উন্মুক্ত থাকতো তাহলে তিনি ভেতরে যেতে পারতেন। তার ভাইকে সহজেই নিয়ে আসতে পারতেন। কিন্তু বন্ধ থাকার ফলে তারা গ্রাম থেকে ২ জন এসেছেন। তিনি রয়েছেন টার্মিনাল-১ এ আর তার আরেক আত্নীয় রয়েছেন টার্মিনাল-২ এ। পরে টার্মিনাল-১ থেকে তাদের ভাইকে পেয়ে বাসায় নিয়ে যান।

যাত্রীর স্বজনদের অভিযোগ, অনেক স্বল্প-শিক্ষিত ব্যক্তি বিদেশ যাচ্ছেন কিংবা বহু বছর পর দেশে আসছেন। তারা কিভাবে যাবেন, কোন দিক দিয়ে আসবেন এসব কিছু ভালোভাবে বুঝতে পারেন না। এ কারণে ভেতরে প্রবেশের যে সুবিধা সেটি পুনরায় চালু করলে অনেক সুবিধা পাওয়া যায়। দেশি যাত্রীদের পাশাপাশি যারা বিদেশি যাত্রী রয়েছেন তারাও পড়ছেন নানা সমস্যায়। কনকর্স হল খোলা থাকলে বিভিন্ন হোটেলের প্রতিনিধিরা বিদেশি অতিথিদের নামের কাগজ নিয়ে গ্রিন চ্যানেলের বাইরে থাকতেন। নাম দেখে ওই যাত্রী নির্দিষ্ট লোকের সঙ্গে দেখা করে তার ঠিকানায় চলে আসতে পারতেন। কিন্তু বর্তমানে এই সুবিধা না থাকায় তারাও পড়ছেন নানা সমস্যায়।

এতো গেলো দেশের বাইরে থেকে আসা যাত্রীদের সমস্যা। বহির্গমনের ক্ষেত্রেও নানা বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন যাত্রীরা। দেখা যাচ্ছে অনেক বয়স্ক যাত্রী তাদের লাগেজ নিয়ে কাউন্টার পর্যন্ত যেতে পারছেন না। তাদের সাহায্যে এগিয়ে আসার মতও কেউ নেই। অথচ বহির্গমন কনকর্স হল খোলা থাকলে বৃদ্ধ ও রোগীদের সাহায্যার্থে আসা ব্যক্তি ক্যানোপি পর্যন্ত যেতে পারতেন। বর্তমানে এই সুবিধাও বন্ধ।

যাত্রী ও তাদের স্বজনরা বলছেন, এমনিতেই তারা বিমানবন্দরে আসছেন। ক্যানোপির বাইরে অবস্থান করছেন। এক্ষেত্রে যদি নিরাপত্তার সমস্যা না হয় তবে ক্যানোপির ভেতরে কি সমস্যা। যখন একটি লোক ক্যানোপির ভেতরে প্রবেশ করবেন তাকে যথাযথ তল্লাশির মাধ্যমে প্রবেশ করালে সমস্যা কোথায়। দেশের বাইরে অন্যান্য বিমানবন্দরগুলোতে এই সমস্যা নেই। অথচ আমাদের বিমানবন্দরে এই সমস্যা। তারা দ্রুত কনকর্স হলে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবি জানান।

স্বজনরা জানান, বর্তমানে করোনা সংকট কেটে গেছে। এছাড়াও ভেতরে প্রবেশের সময় শতভাগ চেকিং এমনকি আর্চওয়ে গেট পার হয়েই ভেতরে যেতে হচ্ছে। সেক্ষেত্রে নিরাপত্তার বিষয়টি যে রয়েছে সেটিও শতভাগ সম্পন্ন হচ্ছে। পাশাপশি ভেতরে ঢুকতে টাকাও পাচ্ছে। সেক্ষেত্রে আয়েরও একটি ব্যবস্থা হচ্ছে। তাই দ্রুত খুলে দেয়ার দাবি তাদের।

এপিবিএনের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জিয়াউল হক পলাশ বলেন, এটি সম্পূর্ণ সিভিল এভিয়েশনের এখতিয়ার। তারা যা ভালো মনে করবেন সেটিই করবেন। আমাদের নিরাপত্তার যে বিষয়টি আছে আমরা সেটি শতভাগ পালন করছি।

আরইউ/এএস

Header Ad
Header Ad

নরসিংদীতে আ. লীগ-বিএনপির সংঘর্ষে নিহত ২, গুলিবিদ্ধসহ আহত ১০

ছবি: সংগৃহীত

নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার চাঁনপুর ইউনিয়নের মোহিনীপুর গ্রামে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে ২ জন নিহত হয়েছেন এবং অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। শুক্রবার (২১ মার্চ) ভোরে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

নিহতরা হলেন রায়পুরা উপজেলার মোহিনীপুর গ্রামের আমিন (২৩) ও বাশার (৩৫), যারা আওয়ামী লীগ সভাপতি সালাম মিয়ার সমর্থক বলে জানা গেছে। নিহত আমিনের পায়ে গুলির চিহ্ন পাওয়া গেছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, চাঁনপুর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ও মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর সালাম মিয়া এবং ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সম্পাদক সোহাগের সঙ্গে বিএনপি নেতা সামসু মেম্বারের দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল। এই বিরোধের জেরে সামসু মেম্বার ও তার সমর্থকদের এলাকা ছাড়া করেছিলেন সালাম ও সোহাগ।

তবে গত ৫ আগস্টের পর সামসু মেম্বার ও তার সমর্থকরা এলাকায় ফিরে এলে উত্তেজনা বেড়ে যায়। শুক্রবার ভোর ৫টার দিকে সালাম মিয়া ও তার সমর্থকরা এলাকায় প্রবেশের চেষ্টা করলে সামসু মেম্বারের সমর্থকরা তাদের বাধা দেয়।

পরে দেশীয় অস্ত্র, টেঁটা-বল্লম, দা, ছুরি, ককটেল ও আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করে উভয়পক্ষ সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। এতে প্রতিপক্ষের ছোড়া গুলিতে আমিন এবং টেঁটা ও ছুরিকাঘাতে বাশার ঘটনাস্থলেই নিহত হন। সংঘর্ষে অন্তত ১০ জন আহত হন।

রায়পুরা থানার অফিসার্স ইনচার্জ (ওসি) আদিল মাহামুদ জানান, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে দুইজন নিহত ও একজন গুলিবিদ্ধসহ আরও ১০ জন আহত হয়েছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ কাজ করছে।

Header Ad
Header Ad

বাতিল হচ্ছে শেখ মুজিবসহ চার শতাধিক নেতার মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি

ছবি: সংগৃহীত

মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদসহ ১৯৭০ সালের নির্বাচনে বিজয়ী চার শতাধিক রাজনীতিবিদের মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি বাতিলের প্রস্তাব করা হয়েছে। জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) আইনের সংশোধিত খসড়ায় এই নেতাদের পরিচয় ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’ হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে।

জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল জামুকার ৯৪তম সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গত ১০ মার্চ এ-সংক্রান্ত কার্যপত্রে (খসড়াসহ অন্যান্য বিষয়) স্বাক্ষর করেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম। সম্প্রতি দেশের একটি গণমাধ্যমে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।

প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে- এমএনএ (জাতীয় পরিষদের সদস্য) ও এমপিএ (প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য) হিসেবে নির্বাচিত এই নেতারা মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ১৯৭২ সালে গণপরিষদ গঠিত হলে তাদের সদস্য হিসেবে মনোনীত করা হয়। তবে নতুন খসড়া আইনে তাদের মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি বাতিল করে ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’ হিসেবে চিহ্নিত করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের (জামুকা) ৯৪তম সভায় এই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ১০ মার্চ মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম সংশ্লিষ্ট খসড়ায় স্বাক্ষর করেন। সংশোধনীতে মুক্তিযুদ্ধের সময় রাজনীতিবিদদের পাশাপাশি আরও চার শ্রেণির মুক্তিযোদ্ধাদের ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’ হিসেবে নতুন পরিচয়ে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

এই চার শ্রেণির মধ্যে রয়েছে—

১. মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে প্রবাসে পেশাজীবী হিসেবে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে প্রচার চালানো ও বিশ্বজনমত গঠনে ভূমিকা রাখা ব্যক্তিরা।
২. মুজিবনগর সরকারের অধীনে কর্মকর্তা, কর্মচারী, দূত ও অন্যান্য সহযোগী।
৩. স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী, কলাকুশলী ও মুক্তিযুদ্ধকালীন সাংবাদিকরা।
৪. স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের সদস্যরা।

এই খসড়া কার্যকর হলে বিদ্যমান মুক্তিযোদ্ধা তালিকার অন্তত ১০ হাজার ব্যক্তির পরিচয় বদলাতে হবে বলে জানিয়েছে মন্ত্রণালয়-সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র। যারা এতদিন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়ে আসছিলেন, তাদের নতুনভাবে ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’ হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হবে।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম গণমাধ্যমকে বলেন, 'বীর মুক্তিযোদ্ধা কেবল তারাই থাকবেন, যারা অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করেছেন। রাজনীতিবিদরা সরাসরি যুদ্ধ করেননি, তাই তাদের মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি বাতিল করে নতুন পরিচয়ে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এতে কোনো মর্যাদা কমানো হয়নি, বরং মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে আরও সুনির্দিষ্ট করা হয়েছে।'

তবে এই সিদ্ধান্ত নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে। বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ ও ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেছেন, 'আইন বদলে মুক্তিযোদ্ধাদের অবদান পরিবর্তন করা যায় না। এটি অপ্রয়োজনীয় এবং অপচয়মূলক উদ্যোগ। মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারীদের স্বীকৃতি নিয়ে প্রশ্ন তোলা উচিত নয়। যদি কেউ ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা হয়ে থাকে, তাহলে সেটি যাচাই করে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।'

মানবাধিকার কর্মী ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা সুলতানা কামাল বলেন, 'মুক্তিযুদ্ধ ছিল একটি জনযুদ্ধ, কেবল সামরিক যুদ্ধ নয়। এ লড়াইয়ে রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। ঢালাওভাবে এমএনএ, এমপিএ ও গণপরিষদ সদস্যদের মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি বাতিল করা পুনর্বিবেচনা করা উচিত।'

খসড়া আইনে মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞায় বড় পরিবর্তন আনা হয়েছে। নতুন সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, 'যারা ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশের অভ্যন্তরে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়েছেন এবং মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণ করেছেন, তারাই বীর মুক্তিযোদ্ধা।'

সংশোধনীতে রাজনীতিবিদদের নাম বাদ দেওয়ার পাশাপাশি মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় থাকা স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী, সাংবাদিক, চিকিৎসক ও নার্সদের মুক্তিযোদ্ধার পরিবর্তে ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। তবে সীমান্তবর্তী মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পে দায়িত্ব পালনকারী চিকিৎসক ও নার্সদের স্বীকৃতি বহাল রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম।

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাবেক সভাপতি ও বীর মুক্তিযোদ্ধা মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, 'মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী ব্যক্তিদের স্বীকৃতি নিয়ে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে, যা ইতিহাসকে বিকৃত করার শামিল। মুক্তিযুদ্ধ একটি পরিকল্পিত সংগ্রাম ছিল, যেখানে রাজনীতিবিদরাই মূল নেতৃত্ব দিয়েছেন।'

মুক্তিযুদ্ধ গবেষক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা হারুন হাবীব বলেন, 'এটি মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য অপমানজনক সিদ্ধান্ত। মুক্তিযুদ্ধ জাতির ইতিহাসের মীমাংসিত অধ্যায়। এটি নিয়ে বিতর্ক তৈরি করা অযৌক্তিক।'

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ বীরবিক্রম বলেন, 'এই সিদ্ধান্ত ভালোভাবে পর্যালোচনা করা দরকার। আমি সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করব।'

মুক্তিযোদ্ধাদের নতুন যাচাই-বাছাই:

অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর গত ১৪ আগস্ট মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা পুনরায় যাচাই-বাছাই করার সিদ্ধান্ত নেয়। তবে এখন শুধু ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা চিহ্নিত করার পরিবর্তে মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞা পরিবর্তনের মাধ্যমে অনেকের স্বীকৃতি বাতিলের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

প্রস্তাবিত আইন চূড়ান্ত অনুমোদনের পর যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে নতুন তালিকা প্রকাশ করা হবে। এটি কার্যকর হলে বেসামরিক গেজেটে অন্তর্ভুক্ত প্রায় দুই লাখ মুক্তিযোদ্ধার মধ্যেও অনেকের স্বীকৃতি হারানোর সম্ভাবনা রয়েছে।

বর্তমান আইনে মুক্তিযুদ্ধের সংজ্ঞায় বলা হয়েছিল, '১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত স্বাধীনতার জন্য যে লড়াই হয়েছে, তা মুক্তিযুদ্ধ। এতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘোষণায় সাড়া দিয়ে যারা অংশ নিয়েছেন, তারা মুক্তিযোদ্ধা।'

কিন্তু নতুন খসড়ায় মুক্তিযুদ্ধের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, '১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের দোসরদের বিরুদ্ধে যারা লড়াই করেছেন, তারাই মুক্তিযোদ্ধা।'

এই পরিবর্তনের ফলে মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী রাজনৈতিক নেতাদের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা পরিষদের সভায় এই খসড়া অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে। এরপর এটি অধ্যাদেশ আকারে প্রকাশের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।

এই নতুন খসড়া আইনের ফলে মুক্তিযোদ্ধাদের স্বীকৃতি ও মর্যাদা সংক্রান্ত ব্যাপক পরিবর্তন আসবে। এটি বাস্তবায়িত হলে মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা এবং মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে বড় ধরনের বিতর্ক সৃষ্টি হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

Header Ad
Header Ad

বাইতুল মোকাররমে ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি হামলার বিচার দাবিতে মিছিল

বিক্ষোভ মিছিল। ছবি: সংগৃহীত

ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি বাহিনীর বর্বর হামলার বিচার দাবি করে শুক্রবার (২১ মার্চ) রাজধানীর বাইতুল মোকাররম মসজিদের উত্তর গেটে বিক্ষোভ মিছিল করেছে খেলাফত মজলিস ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখা। জুমার নামাজ শেষে তারা "নারায়ে তাকবির, আল্লাহু আকবার" স্লোগানে মুখরিত হয়ে পল্টন মোড়ের দিকে মিছিল করে।

এ সময় বিক্ষোভকারীরা নানা স্লোগান দিয়ে তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করেন। একই সময়, বাইতুল মোকাররম মসজিদের উত্তর গেটে হেফাজত ইসলাম বাংলাদেশ ঢাকা মহানগর শাখাও পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী বিক্ষোভ মিছিলের জন্য সমাবেশ শুরু করে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, মসজিদের প্রবেশমুখে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা অবস্থান নেন, এবং নাইটিঙ্গেল মোড়ে বিজিবি সদস্যদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়। এছাড়া, মসজিদে প্রবেশের সময় মুসল্লিদের সঙ্গে থাকা ব্যাগ তল্লাশি করতে পুলিশ সদস্যদের কাজ করতে দেখা গেছে।

প্রসঙ্গত, পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী হেফাজত ইসলাম বাংলাদেশ ও খেলাফত মজলিসের পক্ষ থেকে বাইতুল মোকাররমের উত্তর গেটে আজ বিক্ষোভ মিছিল আয়োজন করা হয়। এর পাশাপাশি, ছাত্রশিবির ও জামায়াতের সদস্যরাও মসজিদ এলাকায় উপস্থিত ছিলেন।

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

নরসিংদীতে আ. লীগ-বিএনপির সংঘর্ষে নিহত ২, গুলিবিদ্ধসহ আহত ১০
বাতিল হচ্ছে শেখ মুজিবসহ চার শতাধিক নেতার মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি
বাইতুল মোকাররমে ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি হামলার বিচার দাবিতে মিছিল
হিথ্রো বিমানবন্দরে অগ্নিকাণ্ড, হাজার হাজার যাত্রী আটকা
গাজায় ইসরায়েলি হামলায় ট্রাম্পের ‘পূর্ণ সমর্থন’ রয়েছে: হোয়াইট হাউস
ওমরাহ থেকে ফিরে অভিনয় ছাড়ার ঘোষণা বর্ষার
যৌথ বাহিনীর অভিযানে এক সপ্তাহে ২৪৯ অপরাধী গ্রেপ্তার
ভিজিএফের চালের বস্তায় শেখ হাসিনার নামে স্লোগান; স্থানীয়দের ক্ষোভ
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার জাকিরকে সাময়িক বরখাস্ত
ভিনিসিয়ুসের শেষ মুহূর্তের জাদুতে ব্রাজিলের রোমাঞ্চকর জয়
ইউনূস-মোদি বৈঠকের জন্য দিল্লির কাছে ঢাকার চিঠি
কুমিল্লায় শিশু ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগে ভারতীয় নাগরিক গ্রেপ্তার
গাজায় ইসরায়েলের হামলায় আরও ৮৫ জন নিহত, তিনদিনে প্রাণ গেল ৬০০ ফিলিস্তিনির
আত্মপ্রকাশ করলো সাবেক সেনা কর্মকর্তা-আমলাদের ‘জনতার দল’
১৯৪ জন উপসচিবকে যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি
ভোরে মাঠে নামছে ব্রাজিল, যেমন হবে একাদশ
মার্চে রেমিট্যান্সে রেকর্ড গড়তে যাচ্ছে বাংলাদেশ
ঢাকা সফরে আসছেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার
হামাসের রকেট হামলায় কাঁপল ইসরাইল, বিমান চলাচল ব্যাহত
কবরস্থানের মালিকানা নিয়ে বিরোধে মারামারি, আ.লীগ নেতার মৃত্যু