চীন-পাকিস্তানের ঘনিষ্ঠতায় আফগানিস্তান, ভারতীয় প্রভাব নিয়ে উদ্বেগে নয়াদিল্লি

ছবি: সংগৃহীত
চীন, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যে সম্প্রতি একটি গুরুত্বপূর্ণ ত্রিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে, যা দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। ইসলামাবাদে অনুষ্ঠিত রুদ্ধদ্বার এই বৈঠকে অংশ নেন আফগানিস্তানের ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি, চীনের বিশেষ দূত ইউ জিয়াওয়ং এবং পাকিস্তানের বিশেষ প্রতিনিধি মোহাম্মদ সাদিক।
বৈঠকে আঞ্চলিক পুনর্বিন্যাস এবং চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোর (সিপিইসি) প্রকল্পটি আফগানিস্তানে সম্প্রসারণের বিষয়ে একমত হয়েছে তিন দেশ। সূত্রের বরাতে জানা গেছে, এই প্রকল্প কার্যকরভাবে বাস্তবায়িত হলে আফগানিস্তানে ভারতীয় প্রভাব কেবল কূটনৈতিক মিশনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে কৌশলগত দিক থেকে উদ্বিগ্ন নয়াদিল্লি।
২২ এপ্রিল কাশ্মীরের পহেলগামে ঘটে যাওয়া এক ঘটনায় পাকিস্তানের অবস্থানকে নীরবে সমর্থন করেছে তালেবান, এমন দাবিও করেছে সূত্রটি। এতে বোঝা যাচ্ছে, ভারতীয় অবস্থান থেকে তালেবান নেতৃত্ব ধীরে ধীরে দূরত্ব তৈরি করছে এবং চীন-পাকিস্তান জোটের দিকে আরও ঝুঁকে পড়ছে।
বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, আফগান তালেবান শিগগিরই কাবুলে চীন ও পাকিস্তানের সঙ্গে ত্রিপক্ষীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের ষষ্ঠ দফা আলোচনার আয়োজন করবে। তালেবানের নেতৃত্বে এটিই হবে প্রথম উচ্চ পর্যায়ের এই ধরনের আলোচনা, যা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নতুন বার্তা দেবে।
তিন পক্ষ দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়ায় পশ্চিমা প্রভাব উপেক্ষা করে আফগানিস্তানের সঙ্গে গভীর রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা চালিয়ে নেওয়ার অঙ্গীকার করেছে। বিশেষ করে চীন আফগানিস্তানের ইসলামিক আমিরাতকে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে সমর্থনের ঘোষণা দিয়েছে, যা ভবিষ্যতে আঞ্চলিক সংযোগ এবং সড়কপথে যোগাযোগ আরও মজবুত করবে।
চলমান ত্রিপক্ষীয় আলোচনার অংশ হিসেবে, পাকিস্তানের বিশেষ দূত চীনা প্রতিনিধিকে সঙ্গে নিয়ে আফগান বাণিজ্যমন্ত্রী আজিজির সঙ্গে পৃথক বৈঠকে মিলিত হন। আলোচনাগুলোকে গঠনমূলক আখ্যা দিয়ে বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা জোরদারের সম্ভাবনার কথা তুলে ধরেন বিশেষ দূতগণ।
প্রসঙ্গত, ২০২৩ সালের মে মাসে ইসলামাবাদে অনুষ্ঠিত ত্রিপক্ষীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকের ধারাবাহিকতাতেই এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যার মূল লক্ষ্য ছিল আফগানিস্তানে সিপিইসি সম্প্রসারণ এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা।
এই নতুন কৌশলগত মেরুকরণ ভারতসহ অন্যান্য আঞ্চলিক শক্তির জন্য এক নতুন চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিচ্ছে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, আফগানিস্তানে চীন-পাকিস্তান জোটের এই সক্রিয়তা দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতিতে বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে।
